আমাদের সমাজে জামাই আদর নামে একটা কথা খুব প্রচলিত আছে। কোথাও খাওয়া
দাওয়া একটু ভালো হলেই অথবা এটা সেটা খাবারের আইটেম বেশি থাকলেই সেটাকে বলা
হয় 'জামাই আদর'।
কিন্তু ঠাট্টাচ্ছলে বলা হলেও এইটার সাইকো-সোশ্যাল ইমপ্যাক্ট হয়েছে বহুমাত্রিক।
বিয়ের সময় 'জামাই আদরে'র ভিক্টিম হতে হয়েছে অনেক মেয়েকে। এমন ঘটনা অহরহ ঘটেছে যে, 'মেয়ের মা বেঁচে নেই' এই কারণ দেখিয়ে মেয়েকে অপছন্দ করা হয়েছে। বিয়ের প্রস্তাব বাতিল করা হয়েছে। কারণ, যে মেয়ের মা নেই, সেখানে বিয়ে হলে ছেলের নাকি 'জামাই আদর' হবে না!!!
কী অদ্ভুত যুক্তি!! মা মারা গেছেন, সেটাতে মেয়ের কী দোষ? অথচ এমন ভাব করা হয় যে, মেয়ের বিয়ের আগে মা মারা গেছেন, এ যেন তার বিরাট অপরাধ!!
কিন্তু ঠাট্টাচ্ছলে বলা হলেও এইটার সাইকো-সোশ্যাল ইমপ্যাক্ট হয়েছে বহুমাত্রিক।
বিয়ের সময় 'জামাই আদরে'র ভিক্টিম হতে হয়েছে অনেক মেয়েকে। এমন ঘটনা অহরহ ঘটেছে যে, 'মেয়ের মা বেঁচে নেই' এই কারণ দেখিয়ে মেয়েকে অপছন্দ করা হয়েছে। বিয়ের প্রস্তাব বাতিল করা হয়েছে। কারণ, যে মেয়ের মা নেই, সেখানে বিয়ে হলে ছেলের নাকি 'জামাই আদর' হবে না!!!
কী অদ্ভুত যুক্তি!! মা মারা গেছেন, সেটাতে মেয়ের কী দোষ? অথচ এমন ভাব করা হয় যে, মেয়ের বিয়ের আগে মা মারা গেছেন, এ যেন তার বিরাট অপরাধ!!
আপনি নিজেই কখন মারা যাবেন তার কোন ঠিকঠিকানা আছে? ভবিষ্যতে আপনার ছেলে মেয়েরাও যে বাপহারা মাহারা হবে না তার কোন নিশ্চয়তা আছে?
যার মা নেই, এমনিতেই তার মনে অনেক কষ্ট। তার ওপর যখন তাকে নাম দেয়া হয় 'মা মরা মেয়ে' তখন সেই মেয়ে কতটা কষ্ট পায় তা শুধু তারাই জানে। আর এই অজুহাতে যদি বিয়ে ভেঙ্গে দেয়া হয়, সেটাকে আমি পৈশাচিকতা ছাড়া অন্য কিছু বলতে পারি না।
বিয়ের পরের জীবনেও এর এডভার্স ইফেক্ট আছে। জামাই বাবু (যদিও জামাই মানেই বাবু হতে হবে বিষয়টা তেমন না) মনে মনে একটা ধারণা বদ্ধমূল করে বসে থাকে যে, শ্বশুর বাড়িতে গেলেই তাকে হুলস্থুল করে খাওয়া দাওয়া করানো হবে! তাই যখনই শ্বশুর বাড়িতে কবজি ডুবিয়ে খাওয়া হয় না, তখনই তার মন খারাপ হয়। আর এর প্রভাব পড়ে অন্যখানে। সুযোগ পেলেই বউকে খোটা দেয়, তোমার বাপের বাড়িতে কী খাওয়াইলো শুনি!!!!
এই 'জামাই আদরে'র প্রথা শ্বশুরবাড়িতেও বাড়তি চাপ সৃষ্টি করে। জামাই এলেই অনেক কিছু রান্না করে খাওয়াতে হবে- এই সামাজিক চাপে শ্বশুর শাশুড়িকে প্রায়শই কষ্টে পড়তে হয়। জামাই কী মনে করবে, শ্বশুরবাড়িতে মেয়েটার বদনাম হবে, কটু কথা শুনতে হবে, এই আশঙ্কায় অনেক কষ্ট হলেও তাঁরা জামাই আদরের ব্যবস্থা করেন। হাতে টাকা না থাকলে ধার করে হলেও জামাইয়ের জন্য মোঘলাই ধাঁচের খানাপিনার ব্যবস্থা করেন শ্বশুর শাশুড়ি।
***
এই যুগটাকে বলা হয় উত্তরাধুনিক যুগ। মানে, আধুনিকতার চরম মাত্রায় এসে পৌঁছেছে পৃথিবী। এই সময়ে এসেও যদি কেউ 'মেয়ের মা নেই' শুনে বিয়ে করতে না চায়, শ্বশুর বাড়িতে জম্পেশ খাওয়া না হলে বউকে খোটা দেয়, বউকে যদি শ্বাশুড়ি ননদের কাছে কটু কথা শুনতে হয়, তাহলে বলতে হবে- সে বা তারা মন-মানসিকতায় এখনো আদিম যুগেই রয়ে গেছে। তাদের চেতনায় আধুনিকতার বিন্দুমাত্র আলোক ছটা প্রবেশ করে নাই।
ডাল ভাত খেয়ে যদি কেউ শ্বশুরবাড়ির প্রশংসা না করতে পারে, বুঝতে হবে শ্বশুরবাড়ির সাথে তার সম্পর্কটা আন্তরিক হয়ে ওঠেনি। বউয়ের প্রতি তার ভালোবাসায়ও যথেষ্ট ঘাটতি আছে। নিজের ঘরে কচুপাতা খেলেও কেউ কি মায়ের ওপর অসন্তুষ্ট হয় বা বদনাম করে?
আমি ডাক্তার মানুষ। জামাই আদরের স্বাস্থ্যগত দিকটা না বললে বোধহয় নিজের নামের প্রতি অবিচার হবে
:)
তাই বর্তমান ও ভবিষ্যত জামাইদের বলি- বেরাদর, জামাই আদরের নামে যা খেয়ে
তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলবেন বলে ভাবছেন- তাতে সাময়িক রসনা বিলাস হলেও শরীরের
ক্ষতি কিন্তু কম হবে না! পেট খারাপ থেকে শুরু করে ভবিষ্যতে হাইপারটেনশন
ডায়াবেটিস সবই হতে পারে। চর্বি জমতে জমতে দিনে দিনে শরীরটা যেমন নাদুশনুদুশ
হবে, তেমনি ভুঁড়িটাও হতে পারে দেখার মতন
:P
:D
সুতরাং, আসুন আধুনিক হই। অবসান ঘটাই জামাই আদরের নামে প্রচলিত অদ্ভুত প্রথার। এই আধুনিক যুগে- ডাল ভাত ভর্তা আর ডিমভাজিই হোক জামাই আদরের আধুনিক রীতি।
(বিবাহ কথন-২৫) চলবে....
যার মা নেই, এমনিতেই তার মনে অনেক কষ্ট। তার ওপর যখন তাকে নাম দেয়া হয় 'মা মরা মেয়ে' তখন সেই মেয়ে কতটা কষ্ট পায় তা শুধু তারাই জানে। আর এই অজুহাতে যদি বিয়ে ভেঙ্গে দেয়া হয়, সেটাকে আমি পৈশাচিকতা ছাড়া অন্য কিছু বলতে পারি না।
বিয়ের পরের জীবনেও এর এডভার্স ইফেক্ট আছে। জামাই বাবু (যদিও জামাই মানেই বাবু হতে হবে বিষয়টা তেমন না) মনে মনে একটা ধারণা বদ্ধমূল করে বসে থাকে যে, শ্বশুর বাড়িতে গেলেই তাকে হুলস্থুল করে খাওয়া দাওয়া করানো হবে! তাই যখনই শ্বশুর বাড়িতে কবজি ডুবিয়ে খাওয়া হয় না, তখনই তার মন খারাপ হয়। আর এর প্রভাব পড়ে অন্যখানে। সুযোগ পেলেই বউকে খোটা দেয়, তোমার বাপের বাড়িতে কী খাওয়াইলো শুনি!!!!
এই 'জামাই আদরে'র প্রথা শ্বশুরবাড়িতেও বাড়তি চাপ সৃষ্টি করে। জামাই এলেই অনেক কিছু রান্না করে খাওয়াতে হবে- এই সামাজিক চাপে শ্বশুর শাশুড়িকে প্রায়শই কষ্টে পড়তে হয়। জামাই কী মনে করবে, শ্বশুরবাড়িতে মেয়েটার বদনাম হবে, কটু কথা শুনতে হবে, এই আশঙ্কায় অনেক কষ্ট হলেও তাঁরা জামাই আদরের ব্যবস্থা করেন। হাতে টাকা না থাকলে ধার করে হলেও জামাইয়ের জন্য মোঘলাই ধাঁচের খানাপিনার ব্যবস্থা করেন শ্বশুর শাশুড়ি।
***
এই যুগটাকে বলা হয় উত্তরাধুনিক যুগ। মানে, আধুনিকতার চরম মাত্রায় এসে পৌঁছেছে পৃথিবী। এই সময়ে এসেও যদি কেউ 'মেয়ের মা নেই' শুনে বিয়ে করতে না চায়, শ্বশুর বাড়িতে জম্পেশ খাওয়া না হলে বউকে খোটা দেয়, বউকে যদি শ্বাশুড়ি ননদের কাছে কটু কথা শুনতে হয়, তাহলে বলতে হবে- সে বা তারা মন-মানসিকতায় এখনো আদিম যুগেই রয়ে গেছে। তাদের চেতনায় আধুনিকতার বিন্দুমাত্র আলোক ছটা প্রবেশ করে নাই।
ডাল ভাত খেয়ে যদি কেউ শ্বশুরবাড়ির প্রশংসা না করতে পারে, বুঝতে হবে শ্বশুরবাড়ির সাথে তার সম্পর্কটা আন্তরিক হয়ে ওঠেনি। বউয়ের প্রতি তার ভালোবাসায়ও যথেষ্ট ঘাটতি আছে। নিজের ঘরে কচুপাতা খেলেও কেউ কি মায়ের ওপর অসন্তুষ্ট হয় বা বদনাম করে?
আমি ডাক্তার মানুষ। জামাই আদরের স্বাস্থ্যগত দিকটা না বললে বোধহয় নিজের নামের প্রতি অবিচার হবে



সুতরাং, আসুন আধুনিক হই। অবসান ঘটাই জামাই আদরের নামে প্রচলিত অদ্ভুত প্রথার। এই আধুনিক যুগে- ডাল ভাত ভর্তা আর ডিমভাজিই হোক জামাই আদরের আধুনিক রীতি।
(বিবাহ কথন-২৫) চলবে....
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন