বর্তমান বাংলাদেশ এক জগাখিচুড়ী অবস্থা পার করছে । ক্ষমতায় আছে
স্বঘোষিত স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি । তারা নিজেদের প্রয়োজন মাফিক সবাইকে
যুদ্ধাপরাধী এবং রাজাকার বলে আখ্যা দেন । সর্বশেষ রাজাকার ঘোষিত হয়েছেন
বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী । টাঙ্গাইলের আওয়ামী লীগ নেতারা কাদের সিদ্দিকীকে
রাজাকার আখ্যা দিয়ে মিছিল সমাবেশ করেন । কাদের সিদ্দিকীর দল কৃষক শ্রমিক
জনতা লীগ সেখানে সমাবেশ ডাকলে সেটা পন্ড করে দেয় আওয়ামী লীগ । (কাদের
সিদ্দীকি একমাত্র ব্যক্তি যিনি বঙ্গবন্ধু হত্যার পর প্রতিবাদ করেছিলেন ।
আজকের সুবিধাভোগীরা তখন গর্তে লুকিয়ে ছিল । কেউ টু শব্দটি করেনি ।)
অপরদিকে বিরোধী দলগুলো সরকারের আজ্ঞাবাহী পুলিশ , গোয়েন্দা সংস্থা , আদালত এবং সন্ত্রাসী বাহিনীর মাধ্যমে চরম নিপীড়নের শিকার । চারিদিকে শোষণ , বঞ্চনা ও অব্যবস্থাপনার মহামারীরুপ । এই বিষয়গুলোর সবই পরিবর্তনের নিয়ামক । বিরোধী রাজনৈতিক দল শক্তিশালী হলে পরিবর্তন হবে দ্রুত । অন্যথায় জনগনের বিপ্লব বিলম্বিত হবে ।
ইতিহাস সবসময় শোষণ , বঞ্চনা ও নির্যাতনের বিরুদ্ধে । কিন্তু নিপীড়নকারীরা তবুও নিপীড়ন চালিয়ে যায় । চালিয়ে যায় নির্যাতন । একজন মণিষী বলেছিলেন ইতিহাসের সবচেয়ে বড় শিক্ষা নাকি এটাই যে ইতিহাস থেকে কেউ শিক্ষা নেয় না । সেজন্যই বারবার ফিরে আসে ইতিহাস ।
প্রথমেই ১৯৭১ এর মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে বলি । যুদ্ধটা হয়েছিল কেন ? পাকিস্তান গঠনের পর থেকেই পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী পুর্ব পাকিস্তানের জনগনকে নানাভাবে বঞ্চিত করে আসছিলো । তারা পুর্ব পাকিস্তানের মানুষকে দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিক মনে করত । এতে করে মানুষ ক্রমাগতভাবে ত্যক্তবিরক্ত হয়ে উঠেছিল । জমা হয়েছিল আক্রোশের বারুদ । কিন্তু তবুও যুদ্ধ শুরু হয়নি ২৩টি বছর । আন্দোলন হয়েছে । পুলিশের লাঠিপেটা , হামলা মামলা গুলি হয়েছে । শেখ মুজিবুর রহমানের মত নেতাকে ষড়যন্ত্রের মামলায় গ্রেপ্তার করে জেলে পুরে রাখা হয়েছে । এরপর ২৫ মার্চ ১৯৭১ ।
রাতের আঁধারে নিরীহ মানুষের ওপর ঝাপিয়ে পড়েছে সেনাবাহিনী রাইফেল আর কামান নিয়ে ।
তারপর ধীরে ধীরে সংগঠিত হয় সাধারন মানুষ । শুরু হয় যুদ্ধ । যুদ্ধ শুরুর সময় যারা ছিলো নিরস্ত্র , অপ্রশিক্ষিত । তারাই জিতলো যুদ্ধে । ২৫শে মার্চ সেনাবাহিনী নিরীহ জনতার ওপর ঝাঁপিয়ে না পড়লে কি যুদ্ধটা শুরু হত ? সম্ভবত হত না । অত্যাচারের চুড়ান্তরুপ ছিলো সেটা । তাই চুড়ান্ত পতন হয় অত্যাচারীদের ।
এটা সবাই জানেন । কিন্তু এ থেকে শিক্ষা নেয়না কেউই । কোন দল বা গোষ্ঠির প্রতি বঞ্চনা , নিপীড়ন করলে তা মানুষকে বিক্ষুব্ধ করে । বঞ্চিত মানুষেরা একসময় ঘুরে দাড়াবেই । আপাতদৃষ্টিতে তাঁদের দুর্বল মনে হলেও শেষ বিজয়টা তাঁদেরই হবে ।
মধ্যপ্রাচ্যের সাম্প্রতিক পরিবর্তনের জোয়ারটা কোথায় শুরু হয়েছিল মনে আছে ? তিউনিশিয়ার মোহাম্মদ বুআজিজি স্নাতক পাশ করে কোন চাকরি পাননি । বেকার বুআজিজি রাস্তার ধারে একটা সবজির দোকান দেন । পুলিশ তাকে সেখান থেকেও উচ্ছেদ করে । রাগে ক্ষোভে দুঃখে আত্নহত্যা করেন তিনি । এ খবর ছড়িয়ে পড়লে বিক্ষুব্ধ জনতা রাস্তায় নেমে আসে । একজন নিরীহ মানুষের মৃত্যু আগুন ধরিয়ে দেয় বারুদের স্তুপে । একের পর এক উত্খাত হয় তিউনিশিয়ার বেন আলি , মিশরের হোসনি মোবারক । একই জোয়ারের ঢেউ লেগেছে সিরিয়ায় , ইয়েমেনে ।
শাসকশ্রেণী কি ভেবেছিল এই সামান্য কাজের জন্য এতবড় বিপদ হবে তাঁদের ? ভাবেনি ।
বাংলাদেশের বর্তমান শাসকশ্রেণী মুক্তিযুদ্ধের চেতনার দাবিদার । কিন্তু অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে , তারা মুক্তিযুদ্ধ থেকে শিক্ষাগ্রহন করেনি । ,মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ছিল শোষণ বঞ্চনা ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে যুদ্ধ । দুর্ভাগ্যজনক যে এই শাসকগোষ্ঠী পাকিস্তানি শাসকদের মত আচরন করছে । বিরোধীদলগুলো এবং জনগনের ওপর এমন আচরন করা হচ্ছে যেন তারা এদেশেরই মানুষ না । নিজেদের মহাশক্তিমান ভেবে সবাইকে তুচ্ছজ্ঞান করছে । জ্বালানি , দ্রব্যমুল্য ও জীবনযাত্রার ব্যয়ের উর্ধ্বগতি , গ্যাস পানি বিদ্যুতসংকট , দেশবিরোধী চুক্তি , হত্যা ,ধর্ষণ , গুম , দুর্নীতি , শেয়ারবাজার লুট ইত্যাদি মানুষকে দিন দিন ক্রুদ্ধ করে তুলছে । মুখের ভাষা বাধাগ্রস্ত করায় মানুষ হাতের ব্যবহারে উদ্বুদ্ধ হচ্ছে । শান্তিপুর্ন প্রতিবাদে বাধা দেয়ায় প্রতিবাদ হয়ে উঠছে সহিংস । দেশ আবারো চরম সংকটের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে ।
ইতিহাস থেকে শিক্ষা না নিলে ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি ঠেকানো যাবে না । নিজের দেশেই জীবনের প্রয়োজনে মানুষ মুক্তির জন্য নতুন পথ খুঁজবে । সুত্রপাত হবে হয়তো নতুন যুদ্ধের । সেটা কি গৃহযুদ্ধ হতে পারে ? যাই হোক না কেন , নিপীড়নকারীদের পতন হবেই । সকল ইতিহাস তাই বলে ।
মঙ্গলবার, সেপ্টেম্বর 20, 2011
অপরদিকে বিরোধী দলগুলো সরকারের আজ্ঞাবাহী পুলিশ , গোয়েন্দা সংস্থা , আদালত এবং সন্ত্রাসী বাহিনীর মাধ্যমে চরম নিপীড়নের শিকার । চারিদিকে শোষণ , বঞ্চনা ও অব্যবস্থাপনার মহামারীরুপ । এই বিষয়গুলোর সবই পরিবর্তনের নিয়ামক । বিরোধী রাজনৈতিক দল শক্তিশালী হলে পরিবর্তন হবে দ্রুত । অন্যথায় জনগনের বিপ্লব বিলম্বিত হবে ।
ইতিহাস সবসময় শোষণ , বঞ্চনা ও নির্যাতনের বিরুদ্ধে । কিন্তু নিপীড়নকারীরা তবুও নিপীড়ন চালিয়ে যায় । চালিয়ে যায় নির্যাতন । একজন মণিষী বলেছিলেন ইতিহাসের সবচেয়ে বড় শিক্ষা নাকি এটাই যে ইতিহাস থেকে কেউ শিক্ষা নেয় না । সেজন্যই বারবার ফিরে আসে ইতিহাস ।
প্রথমেই ১৯৭১ এর মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে বলি । যুদ্ধটা হয়েছিল কেন ? পাকিস্তান গঠনের পর থেকেই পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী পুর্ব পাকিস্তানের জনগনকে নানাভাবে বঞ্চিত করে আসছিলো । তারা পুর্ব পাকিস্তানের মানুষকে দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিক মনে করত । এতে করে মানুষ ক্রমাগতভাবে ত্যক্তবিরক্ত হয়ে উঠেছিল । জমা হয়েছিল আক্রোশের বারুদ । কিন্তু তবুও যুদ্ধ শুরু হয়নি ২৩টি বছর । আন্দোলন হয়েছে । পুলিশের লাঠিপেটা , হামলা মামলা গুলি হয়েছে । শেখ মুজিবুর রহমানের মত নেতাকে ষড়যন্ত্রের মামলায় গ্রেপ্তার করে জেলে পুরে রাখা হয়েছে । এরপর ২৫ মার্চ ১৯৭১ ।
রাতের আঁধারে নিরীহ মানুষের ওপর ঝাপিয়ে পড়েছে সেনাবাহিনী রাইফেল আর কামান নিয়ে ।
তারপর ধীরে ধীরে সংগঠিত হয় সাধারন মানুষ । শুরু হয় যুদ্ধ । যুদ্ধ শুরুর সময় যারা ছিলো নিরস্ত্র , অপ্রশিক্ষিত । তারাই জিতলো যুদ্ধে । ২৫শে মার্চ সেনাবাহিনী নিরীহ জনতার ওপর ঝাঁপিয়ে না পড়লে কি যুদ্ধটা শুরু হত ? সম্ভবত হত না । অত্যাচারের চুড়ান্তরুপ ছিলো সেটা । তাই চুড়ান্ত পতন হয় অত্যাচারীদের ।
এটা সবাই জানেন । কিন্তু এ থেকে শিক্ষা নেয়না কেউই । কোন দল বা গোষ্ঠির প্রতি বঞ্চনা , নিপীড়ন করলে তা মানুষকে বিক্ষুব্ধ করে । বঞ্চিত মানুষেরা একসময় ঘুরে দাড়াবেই । আপাতদৃষ্টিতে তাঁদের দুর্বল মনে হলেও শেষ বিজয়টা তাঁদেরই হবে ।
মধ্যপ্রাচ্যের সাম্প্রতিক পরিবর্তনের জোয়ারটা কোথায় শুরু হয়েছিল মনে আছে ? তিউনিশিয়ার মোহাম্মদ বুআজিজি স্নাতক পাশ করে কোন চাকরি পাননি । বেকার বুআজিজি রাস্তার ধারে একটা সবজির দোকান দেন । পুলিশ তাকে সেখান থেকেও উচ্ছেদ করে । রাগে ক্ষোভে দুঃখে আত্নহত্যা করেন তিনি । এ খবর ছড়িয়ে পড়লে বিক্ষুব্ধ জনতা রাস্তায় নেমে আসে । একজন নিরীহ মানুষের মৃত্যু আগুন ধরিয়ে দেয় বারুদের স্তুপে । একের পর এক উত্খাত হয় তিউনিশিয়ার বেন আলি , মিশরের হোসনি মোবারক । একই জোয়ারের ঢেউ লেগেছে সিরিয়ায় , ইয়েমেনে ।
শাসকশ্রেণী কি ভেবেছিল এই সামান্য কাজের জন্য এতবড় বিপদ হবে তাঁদের ? ভাবেনি ।
বাংলাদেশের বর্তমান শাসকশ্রেণী মুক্তিযুদ্ধের চেতনার দাবিদার । কিন্তু অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে , তারা মুক্তিযুদ্ধ থেকে শিক্ষাগ্রহন করেনি । ,মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ছিল শোষণ বঞ্চনা ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে যুদ্ধ । দুর্ভাগ্যজনক যে এই শাসকগোষ্ঠী পাকিস্তানি শাসকদের মত আচরন করছে । বিরোধীদলগুলো এবং জনগনের ওপর এমন আচরন করা হচ্ছে যেন তারা এদেশেরই মানুষ না । নিজেদের মহাশক্তিমান ভেবে সবাইকে তুচ্ছজ্ঞান করছে । জ্বালানি , দ্রব্যমুল্য ও জীবনযাত্রার ব্যয়ের উর্ধ্বগতি , গ্যাস পানি বিদ্যুতসংকট , দেশবিরোধী চুক্তি , হত্যা ,ধর্ষণ , গুম , দুর্নীতি , শেয়ারবাজার লুট ইত্যাদি মানুষকে দিন দিন ক্রুদ্ধ করে তুলছে । মুখের ভাষা বাধাগ্রস্ত করায় মানুষ হাতের ব্যবহারে উদ্বুদ্ধ হচ্ছে । শান্তিপুর্ন প্রতিবাদে বাধা দেয়ায় প্রতিবাদ হয়ে উঠছে সহিংস । দেশ আবারো চরম সংকটের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে ।
ইতিহাস থেকে শিক্ষা না নিলে ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি ঠেকানো যাবে না । নিজের দেশেই জীবনের প্রয়োজনে মানুষ মুক্তির জন্য নতুন পথ খুঁজবে । সুত্রপাত হবে হয়তো নতুন যুদ্ধের । সেটা কি গৃহযুদ্ধ হতে পারে ? যাই হোক না কেন , নিপীড়নকারীদের পতন হবেই । সকল ইতিহাস তাই বলে ।
মঙ্গলবার, সেপ্টেম্বর 20, 2011
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন