এক রৌদ্রোজ্বল বিকেলে...

এক রৌদ্রোজ্বল বিকেলে...
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে

মঙ্গলবার, ২৬ জানুয়ারী, ২০১৬

শীতবস্ত্র বিতরনঃ গরীবের কষ্টলাঘব নাকি আত্মতৃপ্তির এডভেঞ্চার?

কাউকে নিরুৎসাহিত করা এই লেখার উদ্দেশ্য নয় । শীতবস্ত্র বিতরন অবশ্যই ভালো কাজ, সন্দেহ নেই । কিন্তু প্রতিবছর ঠিক যে প্রক্রিয়ায় ঘটা করে শীতবস্ত্র বিতরনের মহোৎসব হয়, সেই প্রক্রিয়াটি নিয়েই আমার কিঞ্চিৎ ভিন্নমত ।
প্রশ্নটা হচ্ছে, এইযে প্রতিবছর এত এত শীতবস্ত্র বিতরণ করা হয়, শীতার্ত মানুষ কি আসলে কমে? যারা শীতবস্ত্র বিতরন করেছেন, তাঁরা কি কেউ নিশ্চিত করে বলতে পারেন, তাঁর দেয়া কাপড়টা সত্যিই গ্রহীতার কষ্টলাঘব করেছে কিনা? পুরো একটি পরিবারের সবার শীত-কষ্ট দূর হয়েছে কিনা?
নাকি ব্যাপারটা আসলে এমন- সবাই শীতের কাপড় বিলায়, কিন্তু কেউ শীতমুক্ত হয় না !

শীতবস্ত্র বিতরন যেমন ভালো কাজ, তেমনি আত্মতৃপ্তির উপায়ও বটে ! বেশকিছু শীতবস্ত্র বিতরন করলে অন্তত এই আত্মতৃপ্তিটা আসে- গরীব দুঃখী মানুষের জন্য কিছুটা হলেও ভালো কাজ করলাম ! আর দূর-দূরান্তে গিয়ে শীতবস্ত্র বিতরন করে আসার মধ্যে একটা এডভেঞ্চারও থাকে !
মনে আছে, মানুষের কষ্ট লাঘবের নেক-নিয়তেই এক রাতের বেলা রেলস্টেশনে পথশিশু- ভিক্ষুকদের মাঝে শীতবস্ত্র দিতে বেড়িয়েছিলাম । কাজটা ভালো ছিল, নিয়তও সহি ছিল , রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে ফুটপাতে-প্লাটফর্মে ঘুমানো মানুষের মাঝে কম্বল তুলে দেয়ার মাঝে একটা এডভেঞ্চারও ছিল । কিন্তু তা দিয়ে কার কতটুকু শীতলাঘব হয়েছিল তা আমার জানা হয়নি ।
সকাল হতে না হতেই কম্বলখানি কে-কে বিক্রি করে দিয়েছিল সে খবরও জানা হয়নি ।
আপনি কি সত্যিই মানুষের কল্যাণ, মানুষের কষ্ট দূর করতে চান? নাকি একটা শীতবস্ত্র বিতরনের এডভেঞ্চার নিতে চান? নাকি ‘মানুষের জন্য কিছু করলাম’ ভেবে কিছুটা আত্মতৃপ্তি পেতে চান? যদি প্রথমটি হয়, তাহলে আমি অনুরোধ করবো, এলোপাথারি শীতবস্ত্র ছড়াবেন না । এবছর রাস্তার ছেলেদের, পরেরবছর রেলস্টেশনে, তারপর এই বস্তিতে,আর তারপর সেই গ্রামে, এরকম বিক্ষিপ্তভাবে শীতবস্ত্র দিয়ে কোন লাভ নেই । বরং আপনি বা আপনার গ্রুপ টার্গেট করুন একটা নির্দিষ্ট গ্রামকে । ঐ গ্রামে কার কার আসলেই শীতবস্ত্র প্রয়োজন যথাসম্ভব হিসাব করে নিন । তারপর লিস্ট ধরে সবাইকে কাপড়-কম্বল দিন । এককভাবে সামর্থে না কুলালে অন্য কোন গ্রুপকে আপনার সাথে নিন বা আপনিই অন্য কোন গ্রুপের সাথে যোগ দিন । টার্গেট থাকুক, অন্তত ঐ একটি গ্রামের মানুষকে আপনারা শীতের কষ্ট থেকে সত্যিকারার্থে মুক্তি দেবেন । এবং পরেরবছরও আগে ঐ গ্রামের মানুষের খোঁজ নিবেন । তারপর অন্যদিকে নজর দিবেন । আর শুধু শীতবস্ত্র দিয়েই শেষ নয়, যাদেরকে দেয়া হবে তাদেরকে এই মোটিভেশনও দেয়ার চেষ্টা করুন- তারা যেন এসব কাপড়-কম্বল বিক্রি না করে ।
ভালো কাজগুলো বিফলে না যাক, আমাদের কষ্টগুলো সত্যিকাররার্থেই মানুষের কল্যানে কাজে লাগুক । যারা সত্যিই গরীব মানুষের কষ্টে ব্যথিত হন, তাঁদের জন্য রইলো শ্রদ্ধা ও অভিনন্দন ।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন