নাস্তিক সেক্যুলার জাতীয়তাবাদিরা নানান ব্যাপারে নিজেদের মধ্যেও বিরোধ রাখে । কোন্দল কামড়াকামড়ি চলে তাদের নিজেদের ভেতরে অহরহ । কিন্তু জামায়াত প্রশ্নে তারা সবাই ‘সব শিয়ালের এক রা’ প্রবাদের পুর্ণ অনুসরণ করে । এর কারণটা কী ?
জামায়াত তাদের কী ক্ষতিটা করলো ? মুক্তিযুদ্ধে জামায়াতের ভুমিকা যে তাদের জামায়াত বিরোধিতার মূল কারণ নয় তা এই নোটে ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করেছি ।(http://goo.gl/yky1F)
বাংলাদেশে ইসলামী দল আছে অনেকগুলি । আছে নানা গ্রুপ- উপগ্রুপ । আছে ওলামা দল , ওলামা লীগ !! আছে পীর মুরিদ খেলাফত । কওমি গোষ্ঠি । কিন্তু এদের বেশিরভাগই কাজে-কর্মে শুধুমাত্র ধর্মীয় ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধ । ধর্মীয় ইস্যু নিয়ে কথা বলে ।
এই বিষয়টা বরং ঘুরেফিরে কিছুটা হলেও ধর্মনিরপেক্ষতাবাদী দের পক্ষেই যায় । তাদের বক্তব্যই তো হলো
‘ধর্ম যার যার- রাষ্ট্র সমাজ পরিচালনায় এর কোন ভূমিকা নেই । মহান আল্লাহ তায়ালা বুখারি শরীফে (!!) বলেন লাকুম দিনুকুম অয়ালিয়া দী-ন ।!!'
সেক্ষেত্রে জামায়াত যে বিষয়টা করেছে সেটা হলো সকল সেক্টরে কাজ শুরু করেছে । প্রচলিত ধারাকে চ্যালেঞ্জ করছে সকল সেক্টরে । শিক্ষা সাহিত্য, মিডিয়া, এনজিও, হাসপাতাল, ব্যাংক, সাংস্কৃতিক গোষ্ঠি, বুদ্ধিজীবি সাংবাদিক শিক্ষক শিল্পী, স্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় , ব্যবসা বানিজ্য সকল ক্ষেত্রে তারা বিকল্প প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তি গঠন করেছে কিংবা সাপোর্ট দিচ্ছে । রাজনৈতিক ময়দানে তো অলরেডি আন্দোলনকারী ও নির্দিষ্ট ভোটব্যাংক হিসেবে যেকোন পক্ষের জয় পরাজয় নির্ধারণে একটা বড় ফ্যাক্টর হয়ে দাঁড়িয়েছে ।

ধর্মীয় ক্ষেত্রে জামায়াত সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়েছে । তবু বলা যায় এক্ষেত্রে তাদের সফলতা একেবারে ফেলনা নয় । এই উপমহাদেশের মানুষের মনের বদ্ধমূল ধারণা ‘রাষ্ট্র পরিচালনায় ইসলামের ভূমিকা নেই বা অপ্রয়োজনীয়’ এই বিষয়টিকে ভুল প্রমাণ করে ‘ইসলাম একটি পুর্ণাংগ জীবন ব্যবস্থা’ এই সত্য প্রতিষ্ঠিত করার মূল কাজটি আঞ্জাম দিয়েছে জামায়াত । আল্লামা আজিজুল হক , হাফেজ্জি হুজুর, চরমোনাই পীরসহ যারা রাজনীতি হারাম ফতোয়া দিয়েছিলেন তারা এখন রাজনীতিতে অংশ নিয়েছেন । এতে নিঃসন্দেহে ইসলামী আদর্শবাহী শক্তির শক্তিবৃদ্ধি হয়েছে । তবে অন্যরা এখনো সকল সেক্টরে হুমকি হয়ে ওঠেনি ।
ইসলামী বিধানের ওপর কোন আঘাত এলে এখন পর্যন্ত নামে বেনামে সবচেয়ে বড় এবং সফল আন্দোলন পরিচালনা করে জামায়াত ।
নাস্তিক্যবাদের কঠিন থাবায় আবদ্ধ আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত সমাজকে ইসলামী রাজনীতির ধারায় নিয়ে আসছে জামায়াত । মোল্লারা শুধু মসজিদে ইমামতি মুয়াজ্জিনগিরি করবে এই ধারণা এখন বাংলাদেশে অচল হয়ে পড়েছে । অন্যান্য ইসলামী দলগুলো দেখা যায় বেশিরভাগ ক্ষেত্রে শুধুমাত্র মাদ্রাসাভিত্তিক । এক্ষেত্রে জামায়াত এগিয়ে । তারা প্রচলিত শিক্ষায় শিক্ষিত লোকদেরকে আকৃষ্ট করছে । ফলে ক্রমাগত হ্রাস পাচ্ছে নাস্তিক-বামদের গ্রহনযোগ্যতা ।
জামায়াতের অনেক সীমাবদ্ধতা আছে । ভুল-ত্রুটি আছে । প্রত্যাশার তুলনায় ব্যর্থতার পাল্লাও অনেক ভারী । আমরা চাইলেই হাজার ভুল ধরতে পারি এবং ধরিও । কিন্তু এর মাঝেও যতটা অগ্রসর জামায়াত হতে পেরেছে নাস্তিক-সেক্যুলার-ধর্মনিরপেক্ষতাবাদীদের ঘুমের ব্যাঘাত ঘটানোর জন্য কম নয় !
নাস্তিক সেক্যুলার জাতীয়তাবাদিরা চায় নির্বিঘ্নে ক্ষমতাচর্চা করতে । তাদের ভিত্তিহীন ভোগসর্বস্ব আদর্শ (!!) সমাজে ছড়িয়ে দিতে । এজন্য তাদের ভয়, প্রকৃতপক্ষে ইসলামী শক্তি যদি সামনে অগ্রসর হয় তাহলে তাদের হয়তো রাজ্য হারাতে হবে । হারানো রাজত্ব হয়তো আর জনগনের কাছ থেকে ফিরে পাবে না । আর এক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ নিয়ে ময়দানে হাজির আছে জামায়াত । এজন্যই জামায়াত প্রশ্নে ‘সব শিয়ালের এক রা’ !
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন