ডাঃ
আব্দুল হক কিছুক্ষণ ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকলেন রহমত চাচার দিকে । তারপর উঠে
গিয়ে ইঞ্জেকশনটা পুশ করে এলেন । এবং তার পরদিনই একটা সাইনবোর্ড বানিয়ে বাড়ির পাশে
টাঙ্গিয়ে দিলেন । ডাঃ আব্দুল হক, এমবিবিএস, এফসিপিএস । সিদ্ধান্তটাও চূড়ান্ত করে
ফেললেন, এখানেই প্র্যাকটিস করবেন নিয়মিত । রহমত চাচাদের জন্য ।
পড়াশোনার
প্রয়োজনে ছোটবেলাতেই বাড়ি ছেড়েছিলেন দিনাজপুরের আব্দুল হক । বাবা ছিলেন গরীব । নিজের চেষ্টাতেই এতদূর আসা । কীভাবে কী
করেছেন ঠিকমত তাঁর বাবাও বলতে পারবেন না । পেছন ফিরে তাকাবার সুযোগ হয়নি কখনো । পড়াশোনা
করেছেন , নিজের জন্য যতটুকু প্রয়োজন রোজগার করেছেন । বাবা মার খবর রেখেছেন, ব্যস ।
বিয়েটা পর্যন্ত করা হয়নি ।
এফসিপিএস
পাস করার সংবাদ পেয়ে ভাবলেন , এবার কিছুদিন বাড়িতে কাটিয়ে আসি । বাড়িতে তিনি
সকালবেলা আঙ্গিনায় বসে আছেন- এমন সময় পাশের পাড়ার রহমত চাচা এসে হাজির । তাঁর হাতে
একটা কাগজ, একটা সিরিঞ্জ ও একটা ইঞ্জেকশন ।
রহমত
চাচা বললেন, আব্দুল হক , তুই নাকি ডাক্তোর হচিস রে বাপই । আয় তো একনা হামার বাড়ি ।
এঞ্জেকশানটা একনা শরীলত ঢুকি দেতো বাবা । বড় ডাক্তোরে দিছে , রমানাথ ডাক্তোর । তুই কি ওনার লেখা বুঝবার
পারবু ? এই দেখ পেসকিপশোন ।
আব্দুল
হক সাহেব কাগজটি হাতে নিলেন ।
ডাঃ
রমানাথ রায় , এল.এম.এ.এফ, মেডিসিন ও সার্জারিতে বিশেষ অভিজ্ঞ ! (রংপুর
মেডিকেলের ছাত্ররা বলে L.M.A.F মানে হল লোক মারার আসল ফন্দি । আসলে এটি মাঠপর্যায়ের স্বাস্থ্যকর্মীর
জন্য ৬ মাসের একটি ট্রেনিং । মাইন্ড করার কিছু নাই, আমার একজন চাচা আছেন L.M.A.F
। তবে তাঁর কোন সাইনবোর্ড
বা নিজনামে ছাপানো প্যাড নাই, শিক্ষকতা করেন বলেই হয়তো)
আব্দুল
হক সাহেব কিছুক্ষণ ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে থাকলেন । তিনি বোধহয় ডাঃ রমানাথের লেখা
বুঝতে পারছিলেন না ।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন