এক রৌদ্রোজ্বল বিকেলে...

এক রৌদ্রোজ্বল বিকেলে...
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে

মঙ্গলবার, ২২ এপ্রিল, ২০১৪

ডাক্তারদের কর্মবিরতি - ইন ট্রু সেন্স

ইন ট্রু সেন্স , ডাক্তারদের ধর্মঘট সত্যি সত্যি একটা ভয়ংকর ব্যাপার । ঠান্ডা মাথায় চিন্তা করলে গা শিউরে ওঠার মত ব্যাপার ।

একটা দৃশ্য কল্পনা করলেই ভয়াবহতা বুঝতে পারবেন । আজকে যদি ডাক্তাররা সত্যি সত্যি পূর্ণমাত্রায় কর্মবিরতি দেন, বিশেষ করে আইসিইউ(নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র) এবং সিসিইউ (হৃদরোগ বিভাগ)তে যদি মাত্র এক ঘন্টা ডাক্তার না থাকেন তাহলেই দেখবেন শহরে লাশের মিছিল বের হয়েছে । ক্রন্দনরত মানুষে ভরে যাবে পথঘাট । কিন্তু অন্যরা ডাক্তারদের মানুষ হিসেবে বিবেচনায় না আনলেও ডাক্তাররা তাঁদের মানবিকতা পুরোপুরি বিসর্জন দিতে পারেন না । সেজন্যই জীবনের নিরাপত্তার প্রয়োজনে একান্ত বাধ্য হয়ে ধর্মঘটে গেলেও তাঁদের ধর্মঘট হয় খুব সাময়িক, প্রতিকী । এক গ্রুপ কর্মবিরতিতে থাকলেও আরেক গ্রুপ ঠিকই চিকিৎসা দিতে থাকে ।

এইযে সাংবাদিকরা মার খাচ্ছে , এই অবস্থা তো একদিনে তৈরি হয়নি । সহ্য করতে করতে ডাক্তারদের সহ্যের বাঁধ ভেঙ্গে গেছে । কোন দুর্ঘটনা ঘটলে (অনেকসময় কোন দুর্ঘটনা ছাড়াই) একতরফাভাবে ডাক্তারদের ওপর দোষারোপ করার এবং যখন তখন ডাক্তারদের ওপর হামলে পড়ার একটা কালচার শুরু হয়েছে । আর সবসময় সাংবাদিকরা সন্ত্রাসীদের পিঠ চাপড়ে দেয়, উৎসাহ দেয় । কখনো কখনো নিজেও তেড়ে যায় ডাক্তারের দিকে । কোনরকম চিন্তাভাবনা ছাড়াই , মেডিকেল জ্ঞান ছাড়াই ডাক্তারের ওপর দোষ চাপিয়ে সংবাদ ছাপিয়ে দেয় । আর এতে করে জনগন বরং দিনদিন এই সন্ত্রাসে উৎসাহিত হচ্ছে ।

পত্রিকায় এমন কোন সংবাদ দেখেছি বলে আমার স্মরণে আসে না যেখানে দুর্ঘটনার জন্য রোগীর আত্মীয়দের দোষারোপ করা হয়েছে । কোন যাচাই বাছাই তদন্ত ছাড়াই সবক্ষেত্রেই ডাক্তারকে দোষী বলে আগেই ঘোষণা করে বসে সাংবাদিক । যদিও বাস্তবে দেখা যায় বেশিরভাগ ক্ষেত্রে রোগীর স্বজনরাই ডাক্তারের কথামত কাজ না করে রোগীর বারোটা বাজান । যেমন বারডেমের ঘটনায় রোগীর স্বজনরা ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী রোগীকে যথাসময়ে আইসিইউতে নেননি ।

খেয়াল করলে বোঝা যায়, দেশের চিকিৎসাব্যবস্থার ওপর দেশের মানুষকে আস্থাহীন করে তোলার একটা প্রচেষ্টা চলছে । ফলে কী হবে ? রোগীরা যাবে পাশের দেশে । দেশের অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হবে । আমাদের সাংবাদিকরা বেকুবের মত সেই কাজটি করে চলেছে । অথচ আমাদের দেশের স্বাস্থ্যখাত, চিকিৎসাব্যবস্থা কোনভাবেই কম নয় ।

ডাক্তারদের কর্মস্থল হতে বেরিয়ে এসে আন্দোলন করা কারো জন্য মঙ্গলজনক নয় । সচেতন সবারই এই অবস্থা নিরসনে এগিয়ে আসতে হবে । নিজের নিরাপত্তা না থাকলে কেউ আপনার স্বজনের জীবন বাঁচাতে আপ্রাণ চেষ্টা করবে কেন ? দেশের ডাক্তারদের ওপর আস্থা রাখুন । কোন চিকিৎসক চান না তার রোগীর ক্ষতি হোক । সহজ কথা, এতে যে সেই চিকিৎসকেরই বদনাম ।

ডাক্তারের ভুল হতেও পারে । সেক্ষেত্রে যথাযথ পন্থায় তার প্রতিকার হোক । আপনি ভুল মনে করলেই সেটা ভুল নয় । অনেক সময় সাধারণভাবে আপনি যা ভুল মনে করেন চিকিৎসাবিদ্যা অনুযায়ী সেটাই সঠিক ।

আর যেন কোন চিকিৎসক কর্মক্ষেত্রে অপমানিত না হন , লাঞ্চিত না হন , হামলার শিকার না হন । ডাক্তারদের যেন ধর্মঘট করতে না হয় । কেউ কি নিশ্চয়তা দিতে পারে , অসুস্থ অবস্থায় এই ধর্মঘটের শিকার একদিন আপনারই মা-বাবা কিংবা আপনি নিজেই হবেন না ?

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন