এক রৌদ্রোজ্বল বিকেলে...

এক রৌদ্রোজ্বল বিকেলে...
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে

শনিবার, ২১ মার্চ, ২০১৫

দেখে দেখে ডাক্তারি শেখা !

আমাদের দেশের মানুষের একটা মারাত্মক অভ্যাস হলো, দেখে দেখে ডাক্তারি শেখার চেষ্টা করা ! এটা যে কত ভয়ংকর একটা ব্যাপার বলে বোঝানো যাবে না । আঃ মতিন সাহেব একদিন পাতলা পায়খানা নিয়ে হাসপাতালে গিয়েছিলেন, ডাক্তার তাকে এই এই ঔষধ দিয়েছিলেন । এরপর থেকে কারো পাতলা পায়খানার কথা শুনলে আঃ মতিন সাহেব নির্দ্বিধায় সেই সেই ঔষধ কিনে খেতে বলেন ! একদিন রতন সাহেব হাই প্রেসার নিয়ে ডাক্তারের কাছে গিয়েছিলেন, ডাক্তার তাকে এই এই ঔষধ দিয়েছিলেন । এরপর থেকে কারো হাই ব্লাড প্রেসার শুনলে রতন সাহেব সেই সেই ঔষধ খাওয়ার পরামর্শ দেন ! একদিন মৃত্যুঞ্জয় সাহেব শ্বাসকষ্ট নিয়ে হাসপাতালে গিয়েছিলেন, সেদিন থেকে তিনি শ্বাসকষ্টের চিকিৎসা শিখে ফেলেন এবং চিকিৎসা দিতেও শুরু করেন ! আর এইভাবে আঃ মতিন সাহেব, রতন সাহেব আর মৃত্যুঞ্জয় সাহেবরা যে কতজনের মৃত্যুর কারণ হয়েছেন তার ইয়ত্তা নেই ।  

একইভাবে ঔষধের দোকানদার, ঔষধ কোম্পানির রিপ্রেজেন্টেটিভ, হাসপাতালের ব্রাদার সিস্টার আয়া দারোয়ান লিফটম্যান, বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের চেম্বারের দারোয়ান সবাই ডাক্তারি শিখে ফেলে ! তাদেরই কেউ কেউ কোথাও কোথাও নামের সামনে 'ডাক্তার' লিখে প্রাকটিসও শুরু করে ! তারা হয় সর্বরোগের ডাক্তার ! (মারহাবা মারহাবা !) তাদের কাছে রোগের নাম ব্লাড প্রেসার ! রোগের নাম শ্বাসকষ্ট ! রোগের নাম জ্বর ! অথচ এগুলো কোনটাই রোগ নয়, রোগের উপসর্গ মাত্র । হাজারটা কারণে জ্বর হতে পারে, শ্বাসকষ্ট হতে পারে, পাতলা পায়খানা হতে পারে । একই ওষুধ কারো জন্য জীবন রক্ষাকারী হতে পারে, কারো জন্য প্রাণঘাতি হতে পারে । কোন কোন ওষুধ হার্টের ক্ষতি করতে পারে, কিডনি লিভার নষ্ট করে ফেলতে পারে । পেটের বাচ্চাকে বিকলাঙ্গ করতে পারে । বয়স, ওজন, শারীরিক গঠন, রোগের কারণ, শরীরের বিভিন্ন অবস্থা অনুযায়ী ড্রাগের চয়েস ও ডোজিং ভিন্ন হয় । হাজার হাজার বছরের গবেষণার পর এইগুলো আবিস্কৃত হয়েছে । বছরের পর বছর লেখাপড়া আর প্রশিক্ষণ নিয়ে বিশেষজ্ঞ ডাক্তাররাও নতুন একটা ঔষধ লিখতে ভয় পান, শতবার চিন্তা করেন । আর এরা কিনা একদিনে কয়েকটা ওষুধের বাজারি নাম দেখেই বিরাট ডাক্তার বনে যায় !! 

বলাবাহুল্য, এইসব স্বশিক্ষিত(!!) ডাক্তার(?)দের পরামর্শ নেয়ার লোকেরও অভাব আমাদের দেশে কোনকালে হয়নি । হবেওনা । অশিক্ষিতদের কথা বাদ দিলাম, শিক্ষিত(?)রাও কিন্তু এই কাজে কম যায় না ।  দুই লাইন বেশি বুঝে নিজের পায়ে কুড়াল মেরেই যাচ্ছে বাঙালি জাতির গর্বিত সদস্যরা । 


২১-০৩-২০১৫ 

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন