জাতীয় পর্যায়ের একটি এবং স্থানীয় দুইটি পত্রিকার সাংবাদিক এসেছে শামীমের সাক্ষাত্কার নিতে ।
-আপনি বাচ্চাটাকে কোথায় পেলেন?
-আমি নিয়মিত মর্নিং ওয়াকে বের হই । আজও তেমনি বের হয়েছিলাম ।
শামীম গুছিয়ে বলার চেষ্টা করে । পত্রিকায় শামিমের ছবিসহ ছাপা হবে । শিরোনাম হয়তো থাকবে 'একজন শামীমের মহানুভবতা' বা এরকম কিছু । সুতরাং যতটা সম্ভব গুছিয়ে সুন্দর করে বলতে হবে ঘটনাটা । যেন মানুষের হৃদয় স্পর্শ করে যায় ।
গলা খাকারি দিয়ে শামীম বলে যায়,
-আমি যখন বের হয়েছিলাম তখন ভোর ছয়টা । দুএকজন মর্নিং ওয়াক করা লোক ছাড়া রাস্তায় কেউই ছিলনা । মেডিকেল কলেজ মাঠের পাশে যে পায়ে চলার পথটা গিয়েছে , ওটা দিয়ে হাঁটছিলাম । হঠাত্ কানে এলো শিশুর কান্নার মত একটা অস্ফূট শব্দ । আমি থমকে দাঁড়ালাম । একবার মনে হলো , হ্যালুসিনেশন হবে হয়তো । কিন্তু তবু কৌতুহল দমন করতে পারলাম না । ভালো করে কান পেতে আবার শোনার চেষ্টা করলাম । আবার শোনা গেল শব্দটা । বোঝার চেষ্টা করলাম কোনদিক থেকে শব্দটা আসছে । আশেপাশে তাকিয়ে দেখলাম , কিছুই নেই । তারপর খেয়াল করে দেখলাম, কয়েক গজ দূরে একটা ছোট ঢিবির মত মাটির স্তুপ । আবার কান্নার শব্দ এলে মোটামুটি নিশ্চিত হলাম শব্দটা ঐ ঢিবির কাছে থেকেই আসছে ।
সতর্ক পায়ে ঢিবির দিকে এগিয়ে গেলাম । তখনই চোখে পড়লো চটের বস্তাটা । বাচ্চাটার পুরো শরীর চটের বস্তার ভেতরে ছিল , শুধু মাথাটা ছিল বাইরে । আমি ওভাবেই তুলে নিয়ে তাড়াতাড়ি হাসপাতালে চলে এসেছি ।
-এই মুহুর্তে আপনার অনুভূতি কী?
-আমি খুবই খুশি যে আমি একটা জীবন রক্ষার জন্য কাজ করতে পেরেছি । সেই সাথে আমি অনেক দুঃখ পেয়েছি , মানুষ কীভাবে এতটা নিষ্ঠুর হয়? এমন একটা ফুটফুটে শিশুকে কীকরে এভাবে মেরে ফেলার উদ্দেশ্যে ফেলে যায়? এরা কি মানুষ?
-এখন কী অবস্থা শিশুটির ?
-আমি ডাক্তারের সাথে কথা বলেছি , বাচ্চার অবস্থা এখন অনেক ভালো । ডাক্তাররা অনেক হেল্প করছেন । ইন্টার্ণ ডাক্তাররা নিজেদের টাকায় সম্পূর্ণ বিনাখরচে শিশুটির চিকিত্সার ব্যবস্থা করেছেন । আর তাছাড়া আমি সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখছি । কোনকিছুর প্রয়োজন হলে আমি তত্ক্ষনাত্ সেটার ব্যবস্থা করছি । শিশুর জন্য যা লাগে আমি সবকিছু করবো ।
-হাসপাতাল থেকে ডিসচার্জ করলে বাচ্চাকে নিয়ে কী করবেন?
-সেটা এখনো ভাবিনি । তবে ভালো কোন দম্পতির কাছে দত্তক দেব ।
-আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ ।
-আপনাকেও ধন্যবাদ ।
-আপনি বাচ্চাটাকে কোথায় পেলেন?
-আমি নিয়মিত মর্নিং ওয়াকে বের হই । আজও তেমনি বের হয়েছিলাম ।
শামীম গুছিয়ে বলার চেষ্টা করে । পত্রিকায় শামিমের ছবিসহ ছাপা হবে । শিরোনাম হয়তো থাকবে 'একজন শামীমের মহানুভবতা' বা এরকম কিছু । সুতরাং যতটা সম্ভব গুছিয়ে সুন্দর করে বলতে হবে ঘটনাটা । যেন মানুষের হৃদয় স্পর্শ করে যায় ।
গলা খাকারি দিয়ে শামীম বলে যায়,
-আমি যখন বের হয়েছিলাম তখন ভোর ছয়টা । দুএকজন মর্নিং ওয়াক করা লোক ছাড়া রাস্তায় কেউই ছিলনা । মেডিকেল কলেজ মাঠের পাশে যে পায়ে চলার পথটা গিয়েছে , ওটা দিয়ে হাঁটছিলাম । হঠাত্ কানে এলো শিশুর কান্নার মত একটা অস্ফূট শব্দ । আমি থমকে দাঁড়ালাম । একবার মনে হলো , হ্যালুসিনেশন হবে হয়তো । কিন্তু তবু কৌতুহল দমন করতে পারলাম না । ভালো করে কান পেতে আবার শোনার চেষ্টা করলাম । আবার শোনা গেল শব্দটা । বোঝার চেষ্টা করলাম কোনদিক থেকে শব্দটা আসছে । আশেপাশে তাকিয়ে দেখলাম , কিছুই নেই । তারপর খেয়াল করে দেখলাম, কয়েক গজ দূরে একটা ছোট ঢিবির মত মাটির স্তুপ । আবার কান্নার শব্দ এলে মোটামুটি নিশ্চিত হলাম শব্দটা ঐ ঢিবির কাছে থেকেই আসছে ।
সতর্ক পায়ে ঢিবির দিকে এগিয়ে গেলাম । তখনই চোখে পড়লো চটের বস্তাটা । বাচ্চাটার পুরো শরীর চটের বস্তার ভেতরে ছিল , শুধু মাথাটা ছিল বাইরে । আমি ওভাবেই তুলে নিয়ে তাড়াতাড়ি হাসপাতালে চলে এসেছি ।
-এই মুহুর্তে আপনার অনুভূতি কী?
-আমি খুবই খুশি যে আমি একটা জীবন রক্ষার জন্য কাজ করতে পেরেছি । সেই সাথে আমি অনেক দুঃখ পেয়েছি , মানুষ কীভাবে এতটা নিষ্ঠুর হয়? এমন একটা ফুটফুটে শিশুকে কীকরে এভাবে মেরে ফেলার উদ্দেশ্যে ফেলে যায়? এরা কি মানুষ?
-এখন কী অবস্থা শিশুটির ?
-আমি ডাক্তারের সাথে কথা বলেছি , বাচ্চার অবস্থা এখন অনেক ভালো । ডাক্তাররা অনেক হেল্প করছেন । ইন্টার্ণ ডাক্তাররা নিজেদের টাকায় সম্পূর্ণ বিনাখরচে শিশুটির চিকিত্সার ব্যবস্থা করেছেন । আর তাছাড়া আমি সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখছি । কোনকিছুর প্রয়োজন হলে আমি তত্ক্ষনাত্ সেটার ব্যবস্থা করছি । শিশুর জন্য যা লাগে আমি সবকিছু করবো ।
-হাসপাতাল থেকে ডিসচার্জ করলে বাচ্চাকে নিয়ে কী করবেন?
-সেটা এখনো ভাবিনি । তবে ভালো কোন দম্পতির কাছে দত্তক দেব ।
-আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ ।
-আপনাকেও ধন্যবাদ ।
********
হোস্টেলে ফিরে অগোছালো বিছানাতে শরীর এলিয়ে দিল শামীম । সারাদিন বেশ ধকল গেল বলা চলে । তবে বাইরের চেয়ে ভেতরের ধকলটাই ছিল বেশি । বানানো কাহিনীটা ভালোই বিশ্বাসযোগ্য করে বলতে পেরেছে সে । বিকেলের দিকে এক নিঃসন্তান দম্পতি যোগাযোগ করেছিল শামীমের সাথে । দুজনেই শিক্ষক । তাঁরা বাচ্চাটিকে দত্তক নিতে চান ।
শামীম রাজি হয়েছে । এমন দম্পতির কাছে হয়তো ভালো থাকবে বাচ্চাটি । হয়তো একদিন সে মানুষের মত মানুষ হবে ।
দত্তকের কথা পাকা হবার পর থেকে বুকটা খুব ফাঁকা ফাঁকা লাগছে শামীমের ।
সবাইকে মিথ্যা কাহিনী শুনিয়েছে বটে, কিন্তু এ যে তার নিজের সন্তান ! যে ভুল সে করে ফেলেছে তার জন্য হয়তো দুনিয়া আখেরাতে শাস্তি পেতে হবে । অথবা তওবা করে ক্ষমা চাইতে থাকলে আল্লাহ রাব্বুল আ'লামীন মাফ করেও দিতে পারেন । কিন্তু 'ভুলের' ফসল কিংবা 'অবৈধ' যাই হোক, নিজের সন্তানকে মেরে ফেলার মত অতটা পাষাণ এখনো হতে পারেনি শামীম । ফেলে দেয়ার পরেও তাই আবার কুড়িয়ে নিয়ে এসেছে ।
দত্তকের ধারণাটা হঠাৎ করেই মাথায় আসে শামীমের । অন্তত এটুকু সান্ত্বনা থাকলো- নিজের কাছে না থাকুক, অন্য কোথাও হলেও তার সন্তান বেঁচে থাকবে পৃথিবীর বুকে ।
হোস্টেলে ফিরে অগোছালো বিছানাতে শরীর এলিয়ে দিল শামীম । সারাদিন বেশ ধকল গেল বলা চলে । তবে বাইরের চেয়ে ভেতরের ধকলটাই ছিল বেশি । বানানো কাহিনীটা ভালোই বিশ্বাসযোগ্য করে বলতে পেরেছে সে । বিকেলের দিকে এক নিঃসন্তান দম্পতি যোগাযোগ করেছিল শামীমের সাথে । দুজনেই শিক্ষক । তাঁরা বাচ্চাটিকে দত্তক নিতে চান ।
শামীম রাজি হয়েছে । এমন দম্পতির কাছে হয়তো ভালো থাকবে বাচ্চাটি । হয়তো একদিন সে মানুষের মত মানুষ হবে ।
দত্তকের কথা পাকা হবার পর থেকে বুকটা খুব ফাঁকা ফাঁকা লাগছে শামীমের ।
সবাইকে মিথ্যা কাহিনী শুনিয়েছে বটে, কিন্তু এ যে তার নিজের সন্তান ! যে ভুল সে করে ফেলেছে তার জন্য হয়তো দুনিয়া আখেরাতে শাস্তি পেতে হবে । অথবা তওবা করে ক্ষমা চাইতে থাকলে আল্লাহ রাব্বুল আ'লামীন মাফ করেও দিতে পারেন । কিন্তু 'ভুলের' ফসল কিংবা 'অবৈধ' যাই হোক, নিজের সন্তানকে মেরে ফেলার মত অতটা পাষাণ এখনো হতে পারেনি শামীম । ফেলে দেয়ার পরেও তাই আবার কুড়িয়ে নিয়ে এসেছে ।
দত্তকের ধারণাটা হঠাৎ করেই মাথায় আসে শামীমের । অন্তত এটুকু সান্ত্বনা থাকলো- নিজের কাছে না থাকুক, অন্য কোথাও হলেও তার সন্তান বেঁচে থাকবে পৃথিবীর বুকে ।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন