ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। এই একটা বাক্যই একজন মানুষের জীবনকে অন্যরকম করে দিতে পারে। মানুষ মারা গেলে, কোন বিপদ হলে অথবা কিছু হারালে আমরা মুসলিমরা পড়ি- ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। যার অর্থ হলোঃ নিশ্চয় সবকিছুই আল্লাহর আর তার কাছেই আমাদের ফিরে যেতে হবে। মানুষ মারা গেলে এটা আমাদের সামনে একেবারে চাক্ষুষ এবং অকাট্য প্রমাণ হয়ে দাঁড়ায়, নিশ্চয় তার কাছেই আমাদের ফিরে যেতে হবে।
কোরআন শরীফে সুরা বাকারার ১৫৫-৫৬ নম্বর আয়াতে এই অংশটুকু আছে। যেখানে বলা হয়েছে- পৃথিবীতে মানুষকে ভয়, ক্ষুধা, দারিদ্র্য, জীবন ও সম্পদের ক্ষতির মাধ্যমে পরীক্ষা করা হবে। মানুষের ভেতর তাদেরকে সুসংবাদ দেয়া হয়েছে- যারা এসময় ধৈর্যধারণ করবে, আর স্মরণ করবে- নিশ্চয়ই সবকিছু আল্লাহর এবং তার কাছেই আমাদের ফিরে যেতে হবে।
কোন কিছু হারালে বা কোন ক্ষতি হলে আমাদের খারাপ লাগে। আমাদের কষ্ট হয়। এটা স্বাভাবিক মানবিক প্রবৃত্তি। কিন্তু দীর্ঘমেয়াদে হতাশায় ভোগার কোন সুযোগ নেই। সেটা স্বাভাবিক নয়। ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন অর্থ কী? নিশ্চয়ই আমাদের আল্লাহর কাছেই ফিরে যেতে হবে। তো, যেখানে আমি নিজেই এই পৃথিবীতে থাকবো না, আমার নিজের জীবনই যেখানে অনিশ্চিত, আমি নিজেই যেখানে যেকোন মুহূর্তে নাই হয়ে যাবো, সেখানে এই দুনিয়ার এইসব ক্ষতি নিয়ে ভেবে কী হবে?
ধরা যাক, আমার ১ কোটি টাকা ক্ষতি হয়ে গেছে। আচ্ছা, আজ যদি আমি মারা যাই, তাহলে এই ক্ষতির কী মূল্য থাকবে আমার কাছে? আমার যদি আরো হাজার কোটি টাকা থাকে তারই বা কী মূল্য থাকবে?
এটাই হলো 'ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহে রাজিউন' এর স্পিরিট।
ধরা যাক, আমার ১ কোটি টাকা ক্ষতি হয়ে গেছে। আচ্ছা, আজ যদি আমি মারা যাই, তাহলে এই ক্ষতির কী মূল্য থাকবে আমার কাছে? আমার যদি আরো হাজার কোটি টাকা থাকে তারই বা কী মূল্য থাকবে?
এটাই হলো 'ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহে রাজিউন' এর স্পিরিট।
২.
গত জানুয়ারিতে সেন্টমার্টিনে গিয়েছিলাম। সকাল বেলা বাইসাইকেল নিয়ে দ্বীপের পশ্চিম তীর ধরে ছেড়া দ্বীপে গেলাম। সাধারণত ঐ পথে কেউ ছেড়া দ্বীপ যায় না। অনেক এবড়ো থেবড়ো, অনেক প্রবাল, পাথর আর ঝোঁপ ঝাড়। অনেকটা নির্জনও। অনেকটা পথ সাইকেল হাতে নিয়ে হাঁটতে হয়।
গত জানুয়ারিতে সেন্টমার্টিনে গিয়েছিলাম। সকাল বেলা বাইসাইকেল নিয়ে দ্বীপের পশ্চিম তীর ধরে ছেড়া দ্বীপে গেলাম। সাধারণত ঐ পথে কেউ ছেড়া দ্বীপ যায় না। অনেক এবড়ো থেবড়ো, অনেক প্রবাল, পাথর আর ঝোঁপ ঝাড়। অনেকটা নির্জনও। অনেকটা পথ সাইকেল হাতে নিয়ে হাঁটতে হয়।
এই এডভেঞ্চারে কখন যে আমার মানিব্যাগ কোথায় পড়ে গেছে বুঝতে পারিনি। ফিরে এসে যখন শিপে ওঠার প্রস্তুতি নিচ্ছি, তখন বুঝলাম মানিব্যাগ নেই। ৭-৮ হাজার টাকা, কয়েকটা আইডি কার্ড, এটিএম কার্ড, চাবি, কিছু জরুরি কাগজ- অনেক কিছু ছিল। যেপথে হারিয়েছি, ফিরে পাওয়ার কোন সম্ভাবনা নাই। তৎক্ষনাৎ স্মরণ করলামঃ ইন্নালিল্লাহে ওয়া ইন্না ইলাইহে রাজিউন। খুব একটা মন খারাপ করলাম না।
জাহাজে ওঠার সময় আমাকে আশ্চর্য করে দিয়ে এক বন্ধু মানিব্যাগটা নিয়ে এলো, ওটা নাকি সে কুডিয়ে পেয়েছে। ওরা কয়েকজন ছেড়াদ্বীপ যায়নি, এমনিই হাওয়া খেতে বেরিয়েছিল, বালুর ওপর মানিব্যাগটা পড়ে থাকতে দেখে নিয়ে এসেছে। আমি খুব খুব খুবই আশ্চর্য হলাম। আল্লাহ আমাকে খুব ছোট একটা পরীক্ষা করলেন!! আলহামদুলিল্লাহ্ আমি ধৈর্যের পরীক্ষায় পাশ করলাম, আর তারপর আল্লাহ আমাকে আমার জিনিস পুরোটাই ফিরিয়ে দিলেন!!! সুবহানাল্লাহ।
মার্চ মাসের এক রাতে এক বন্ধুকে সি-অফ করতে কমলাপুর স্টেশনে যাচ্ছিলাম রিকশায়। মোটরসাইকেল আরোহী ছিনতাইকারিরা টান মেরে ব্যাগটা নিয়ে গেলো। ল্যাপটপ ছিলোনা, বই, স্টেথো, চাঁদর, হস্পিটালের ড্রেস, কিছু কাপড় এগুলো ছিল। স্মরণ করলামঃ ইন্নালিল্লাহে ওয়া ইন্না ইলাইহে রাজিউন। যদি আমার রিযিকে থাকে, তাহলে ওটা ঠিকই ফিরে আসবে। আমার তো আরো বেশি ক্ষতি হতে পারতো, রিকশা থেকে পড়ে আহত হতেও পারতাম। আল্লাহর শোকর করলাম, মন খারাপ করলাম না।
ঘন্টা দুয়েক পরের কথা। তখনো কমলাপুর স্টেশনেই আছি। ১১ টার দিকে একটা ফোন পেলাম। মালিবাগ থেকে একজন লোক ফোন করে জানালেন, আমার ব্যাগটা কেউ একজন ফেলে রেখে গেছে। ব্যাগে থাকা আইডি কার্ডে নম্বর পেয়ে উনি ফোন করেছেন। অত রাতে আর গেলাম না। উনার কাছেই রাখতে বললাম।
সপ্তাহখানেক পর উনার বন্ধু মালিবাগের ট্রাফিক সার্জেন্ট এসে সবকিছুসহ ব্যাগটা আমাকে দিয়ে গেলেন।
সপ্তাহখানেক পর উনার বন্ধু মালিবাগের ট্রাফিক সার্জেন্ট এসে সবকিছুসহ ব্যাগটা আমাকে দিয়ে গেলেন।
পরপর দুটো ঘটনায় আমার বিশ্বাস অনেক পোক্ত হলো। আমি অন্তরে তৃপ্তি পেলাম, বিশ্বাসের তৃপ্তি। এরপরে আরো অনেক বড় বড় (আপাত) ক্ষতি হয়েছে। সাময়িক খারাপ লেগেছে, তারপর স্মরণ করেছি- ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। আমরা আল্লাহর কাছ থেকে এসেছি, আর তার কাছেই আমাদের ফিরে যেতে হবে। যেটা আমার, সেটা যেকোনভাবে আমারই থাকবে। আর না থাকলেও কোন ব্যাপার না। সবকিছুই আল্লাহর, আমাদের সবাইকে তাঁর কাছেই ফিরে যেতে হবে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন