এক রৌদ্রোজ্বল বিকেলে...

এক রৌদ্রোজ্বল বিকেলে...
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে

শুক্রবার, ১৪ জুলাই, ২০১৭

ধার্মিকতা কাকে বলে?

সহযোগী অধ্যাপক ফজল সাহেব তার একটা ফাইল নিয়ে বিপদে আছেন। তার কলেজে নতুন জয়েন করা কয়েকজন শিক্ষকের বিল সংক্রান্ত ফাইল শিক্ষা অফিসে আটকে আছে। বহুদিন ধরে চেষ্টা তদবির করেও কুলকিনারা করতে পারছেন না। এর আগে অন্যদের পাঠিয়েছিলেন, কাজ হয়নি। এবার তাই নিজেই এসেছেন।
ভেবেছিলেন ঘুষ ছাড়াই হয়তো কাজটা হয়ে যাবে, কিন্তু এখন আর সেরকম ভাবতে পারছেন না। তাই নতুন শিক্ষকদের কাছ থেকে চাঁদা তুলে তিনি এসেছেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে।
চেয়ারে যিনি বসে আছেন তাকে বেশ পরহেজগার মনে হচ্ছে। নাম স.ম. তরফদার। এই লোক ঘুষ খায়? বিশ্বাস হচ্ছেনা ফজল সাহেবের।
-- ভাই সাহেব, আমার কলেজের ফাইলটা যদি একটু দেখতেন। অনেক মাস হয়ে গেল, ছেলেরা বেতন পাচ্ছে না। পরিবার নিয়ে বেশ কষ্টে আছে আরকি। যদি একটু তাড়াতাড়ি করা যেত।
-- দেখেন ফজল সাহেব, আপনার কাজটা জটিল। আমি কাজ করছি। তবে আরো সময় লাগবে। বুঝলেন ভাই, সময় লাগবে।
বেশ কিছুক্ষণ রিকুয়েস্ট করে ফজল সাহেব বুঝলেন, এ চিড়িয়া খালি হাতে কথা বলবে না। তিনি হাতে রাখা প্যাকেটটা বের করলেন।
-- ভাই, আপনার জন্য সামান্য হাদিয়া ছিল। বোঝেনই তো, ছেলেরা কষ্টে আছে। একটু দেখেন ফাইলটা তাড়াতাড়ি কিছু করা যায় কিনা...
চোখ মুখ কুঁচকে তাকালেন তরফদার সাহেব। যেন তাকে ঘুষ সাধাটা অপরাধ হয়ে গেছে। ফজল সাহেবও একটু বিব্রত হলেন। নাহ, একজন ভালো মানুষকে সন্দেহ করা ঠিক হয় নাই।
তিনি প্যাকেটটা আবার পকেটে পুরে উঠে দাড়ালেন। ঠিক এসময় তরফদার সাহেবের ত্রস্ত কন্ঠ কানে এলোঃ ভাই সাহেব, রমজান মাস না! বোঝেনই তো, রোজা আছি। চিন্তা করবেন না, আমি কাজ করে দেবো! আপনি ঐটা নিয়ে ইফতারের পরে যোগাযোগ করেন কেমন?
২.
আব্দুর রহমান সাহেব সৌদি আরবে থাকেন বিগত ১৫ বছর ধরে। এবার মেয়ের বিয়ে উপলক্ষে দেশে এসেছেন। ড্রইং রুমে বসে নতুন বেয়াই এর সাথে গল্প করছিলেন।
-- বুঝলেন বেয়াই, ১৫ বছরে ৮ বার হজ্জ্ব করছি। আল্লাহর অশেষ রহমত বেয়াই। এরকম সৌভাগ্য কয়জনের হয়?
-- বলেন কী বেয়াই? নিয়ম অনুযায়ী তো এই সময়ে সর্বোচ্চ তিনবার হজ্জ্ব করতে পারতেন, নাকি!! ৮ বার কেমনে করলেন?
-- আরে বেয়াই, এইডা কোন ব্যাপার? তিনবার নিয়ম অনুযায়ী করছি, আর বাকি ৫ বার চুরি কইরা করছি আরকি বুঝলেন!!
৩.
তাবলিগে এক চিল্লা লাগিয়ে আজই বাসায় ফিরেছেন কবির সাহেব। সমস্যাটা হিলো, তিনি অফিস থেকে ছুটি নিয়েছিলেন মাত্র ৭ দিনের। এখন আরো ত্রিশ দিনের ছুটি দরকার। কী করা যায়?
তিনি গেলেন ডাক্তারের চেম্বারে। অসুস্থতার মিথ্যা সার্টিফিকেট দেয়ার জন্য ডাক্তারকে পীড়াপীড়ি করতে লাগলেন। সার্টিফিকেট দিতে অস্বীকৃতি জানালে কিছুটা ক্ষুব্ধ কন্ঠে তিনি ডাক্তারকে বললেন- 'ডক্টর, আমি তো ভালো কাজেই সময় দিয়েছি তাই না? আপনি দিয়ে দেন, দিয়ে দেন, কোন অসুবিধা নাই। আপনার কোন পাপ হবে না ডক্টর। আপনিও সওয়াবের ভাগীদার হবেন!!!'
***
সাধারণভাবে অধার্মিকদের তুলনায় ধার্মিকরা ভালো মানুষ। সমস্যাটা হলো- কেউ কেউ ধর্ম পালন করছেন বটে, কিন্তু ধর্মের মূল স্পিরিট ধারণ করতে পারছেন না। ধর্মের মূল কথা তাদের ভেতরে প্রবেশ করছে না। ধর্ম, বিশেষ করে ইসলাম যে কেবল কিছু রীতি প্রথার সমষ্টি নয়, তা তারা উপলব্ধি করেন না।
ধর্ম মানুষের ভেতর যে সততা, মানবিকতা, ভালো ব্যবহার, মানুষকে না ঠকানো, মানুষের ক্ষতি না করা, মানুষ ও অন্যান্য প্রাণীর প্রতি দয়ার যে গুণ সৃষ্টির তাগিদ দেয়- তা অনেক ধার্মিকই ধারণ করতে পারছেন না। 

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন