এক রৌদ্রোজ্বল বিকেলে...

এক রৌদ্রোজ্বল বিকেলে...
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে

সোমবার, ৩ আগস্ট, ২০১৫

ক্যারি অন পুনর্বহালের দাবি

মেডিকেল স্টুডেন্টরা ইতোপূর্বে যত আন্দোলন করেছে তার মধ্যে সবচেয়ে যৌক্তিক আন্দোলন হচ্ছে চলমান 'ক্যারি অন পুনর্বহাল' আন্দোলন । মেডিকেলের একেকটা পরীক্ষায় লিখিত(২ পার্ট), ভাইভা(২ বোর্ড), এমসিকিউ, অসপি, প্রাক্টিকাল, ক্লিনিক্যাল(২ পার্ট) ইত্যাদি মিলিয়ে অনেকগুলো পার্ট পরীক্ষা দিতে হয় । এবং পাশ করার জন্য প্রতিটা সাবজেক্টের পরীক্ষার প্রতিটি অংশে আলাদা আলাদা ভাবে ৬০% মার্কস পেতে হয়।
তো কোন কারণে যদি এতসব পরীক্ষার কোন একটি অংশে কোনভাবে ৬০% এর কম মার্ক পায় তাহলেই ফেইল । এতদিন সিস্টেম ছিল কোন সাবজেক্টে ফেল করলেও সেই শিক্ষার্থী পরবর্তী ইয়ারের সকল ক্লাসে অংশগ্রহন করতে পারতো । এই সময়ে অনুষ্ঠিত পরবর্তী পরীক্ষায় অংশগ্রহন করে পাশ করলেই চলতো। ইয়ার লস হতনা । এখন এই সিস্টেম বাতিল করার অর্থ হলো কোন একটি অংশে ফেল করলেই এক বছর লস! নিজের ব্যাচ থেকে ছিটকে পড়া ! এই সিদ্ধান্ত মেডিকেল স্টুডেন্টদের ওপর কী পরিমাণ মানসিক চাপ সৃষ্টি করবে, কী পরিমাণ হতাশা ছড়াবে সেটা যে কেউ অনুমান করতে পারেন । এমনিতেই চলমান সিস্টেমের চাপে পিষ্ট হয়েই প্রতিবছর কয়েকজন করে মেডিকেল ছাত্রছাত্রী আত্মহত্যা পর্যন্ত করছে । নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী 'ক্যারি অন' বাতিল হলে হয়তো সারা বছরই আমাদের শুনতে হবে- মেডিকেল শিক্ষার্থীর আত্মহত্যার খবর । কে নেবে তার দায়? যার হারাবে তাঁর তো সবটুকুই হারাবে । এভাবে একজন ছাত্রছাত্রীও যদি হারিয়ে যায়, কেউ কি তাঁকে ফিরিয়ে দিতে পারবেন? 

----

'ক্যারি অন' সিস্টেম বাতিলের আরেকটা ফল দাঁড়াবে- গরীবের ছেলেদের ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন, স্বপ্নই থেকে যাবে । স্বাভাবিকভাবে এক দিন লস না করেও এমবিবিএস পাস করে বের হতে ইন্টার্নশিপ সহ সাড়ে ছয় বছর সময় লাগে । ক্যারি অন বাতিলের পরে অনেকের জন্যে এই সময় গিয়ে দাঁড়াবে গড়ে আট থেকে সাড়ে আট বছরে । এই দীর্ঘ সময় লেখাপড়ার খরচ চালাতে নাভিশ্বাস উঠে যাবে গরীব বা নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের। ডাক্তার হয়ে পরিবারের হাল ধরবে, বাবা মাকে হাড়ভাঙ্গা খাটুনি থেকে একটু রেহাই দেবে, সেই সৌভাগ্য হবেনা ছেলেটির। মেডিকেল কলেজ হতে যখন সে এমবিবিএস সার্টিফিকেট খানা হাতে নিয়ে বের হবে, তখন জাতি পাবে চোখে শর্ষেফুল দেখা একজন জরাজীর্ণ তরুণ । তার ইঞ্জিনিয়ারিং-ভার্সিটি পড়ুয়া বন্ধুরা ততদিনে অনার্স মাস্টার্স শেষ করে 'জব'-এ ঢুকে যাবে... স্টার্টিং এ পাবে......
এবং একটা সময় গরীব-মধ্যবিত্তের মেধাবী ছেলেরা আর মেডিকেল কলেজমুখো হবার সাহস করবে না। তখন অনেকের জন্যে ডাক্তার হওয়ার 'এইম ইন লাইফ' হয়ে দাঁড়াবে 'গরীবের ঘোড়া রোগ' !

ছেলেদের কথা বললাম , কিন্তু ডাক্তার মেয়েটি ? ওহ ! তার বয়সও কিন্তু তখন প্রায় ২৭-২৮ ! যাহারা ফার্স্ট ইয়ার সেকেন্ড ইয়ারে বিবাহের পিড়িতে বসিয়া যাইবে তাহাদের কথা বলিবার দরকার নাই । কিন্তু যাহারা ঐ পথ ধরিবে না তাহারা যে কী করিবে, তাহা আমার বলিতে পারার কথা নয় ।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন