এক রৌদ্রোজ্বল বিকেলে...

এক রৌদ্রোজ্বল বিকেলে...
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে

শনিবার, ৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৫

টাকাটা মুখ্য নয় !

ইন্টার্ন ডাক্তারদের ভাতা বৃদ্ধির আন্দোলন নিয়ে গতকাল বিকালে টেলিফোনে আলাপচারিতায় গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন- ইন্টার্নশিপ কোনো চাকরি নয়, এটা ডাক্তারদের ট্রেনিংয়ের একটি অংশ। এই ইন্টার্নশিপ সময়টা বর্তমানের এক বছর থেকে দুই বছর করা দরকার। তিনি বলেন, ডাক্তারদের ইন্টার্নশিপকালে টাকাটা মুখ্য বিষয় নয়। সেবা, ট্রেনিং ও ভাতা এই তিনটা মিলিয়ে ইন্টার্নশিপ। তিনি নিজের মেডিকেল শিক্ষা জীবনের স্মৃতিচারণ করে বলেন, আমি যখন ছাত্রনেতা ছিলাম তখন ইন্টার্ন ডাক্তারদের ভাতা শুরু হয় মাসে ২৫০ টাকা দিয়ে। তিনি বলেন, গ্রাম হচ্ছে বাংলাদেশের প্রাণ। নতুন ডাক্তারদের তিন বছর গ্রামে ইউনিয়ন পর্যায়ে কাটাতে হবে।
.
ভেরি ওয়েল । নষ্টের গোড়া কোথায় সেটা আমরা জানতে পারলাম । আমাদেরই সিনিয়র যারা নীতিনির্ধারনী পর্যায়ে আছেন তাদের চিন্তাগুলো মোটামুটি এই রকমই । BCPS নামে যারা আছেন, তারা তো ডাক্তারদের বিনামূল্যে খাটাচ্ছেনই, উপরি হিসেবে হেনতেন নানা উপায়ে টাকা আদায় করছেন । রেসিডেন্সিতে যে নামেমাত্র দশহাজার টাকা দেয়া শুরু করেছিল, সেটাও কারো কারো গাত্রদাহের কারণে এখন বন্ধের পথে ।
তারা ভুলে গেছেন, ক্যারিয়ার গঠনে এখন যতটা চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হতে হচ্ছে তাদের ততটা করতে হয়নি । একটা সময় ছিল যখন ভালো ছাত্রদের ধরে ধরে মেডিকেল কলেজে ভর্তি করেছে সরকার । এখন যেমন লাখ পরিক্ষার্থীর ভেতর একজন হতে হয় , তখন এটা লাগেনি । আমার এলাকার এক সিনিয়র ডাক্তার, বেচারার খুব ইচ্ছা ছিল ঢাকা ভার্সিটিতে পড়বেন । কিন্তু সরকার তাঁকে ধরে নিয়ে স্টাইপেন্ড দিয়ে মেডিকেল কলেজে ভর্তি করিয়ে দিয়েছিল ।
.
পাস করে এখন যেমন ডাক্তারদের বিসিএস দিয়েও দুই তিনবছর পরে সরকারি চাকরিতে ঢুকতে হয়, কোন উচ্চতর ডিগ্রীর ট্রেনিং এ আসার আগে গ্রামে চাকরি করতে হয় বছরের পর বছর, তখন এইটা ছিলনা । পাস করলেই নিশ্চিত সরকারি চাকরি । সেদিনই একজন অধ্যাপক স্যার স্মৃতিচারণ করলেন, ইন্টার্নশিপের শেষদিন তাঁর হাতে সরকার নিয়োগপত্র ধরিয়ে দিয়েছিল এসিস্টেন্ট রেজিস্ট্রার হিসেবে । চাকরি জীবনের শুরুতে তাঁর বেতন ছিল পাঁচশ টাকা । গুরুত্বপূর্ণ কথাটা হলো- সেসময় একশ টাকায় একটা মোটাতাজা গরু পাওয়া যেত । তখনকার সময়ের হিসাবে প্রতি মাসে কমপক্ষে দুই তিনশ টাকা বেঁচে যেত । নিঃসন্দেহে বলা যায়, সম্মানজনক সুখী জীবন । সেই সিনিয়ররা এখনো সুখেই আছেন । জুনিয়রদের দুঃখ-কষ্ট তাই তাঁদের খুব বেশি স্পর্শ করেনা ।
.
জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেছেন, তাঁরা ২৫০ টাকা ভাতা পেতেন । জনাব, একটু খেয়াল করবেন কি - তখন তো ৮০-১০০ টাকায় একটা মোটাতাজা গরু কেনা যেত, এখন কি দশ হাজার টাকায় একটা মোটাতাজা ছাগলও পাওয়া যায়?
জনাবের প্রস্তাব হচ্ছে, ইন্টার্নশিপ দুই বছর করতে হবে(আট বছর শেষ), এবং তিনবছর পর বিসিএস এর মাধ্যমে নিয়োগ দিয়ে(এর কমে আসলে হয় না) আবার গ্রামে পাঠিয়ে কমপক্ষে তিনবছর রাখতে হবে । তো জনাব, এই সময়ে জুনিয়র ডাক্তাররা নিজে কী খাবে আর বৃদ্ধ বাপ-মাকে কী খাওয়াবে?
শ্রদ্ধেয় জনাব, দয়া করে বলবেন কি- এর বিনিময়ে আপনি জুনিয়র ডাক্তারদের জন্য কোন্‌ অশ্বের কতগুলি ডিম্ব প্রস্তাব করছেন?

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন