এক রৌদ্রোজ্বল বিকেলে...

এক রৌদ্রোজ্বল বিকেলে...
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে

শুক্রবার, ১৪ এপ্রিল, ২০১৭

না না চাইনা, না না চাইনা, কোনো রম্ভা উর্বশী...

এইটুকুই তো দাবি আমার এইটুকু দাবি
বউতো হবে লক্ষ্মীমন্ত লাখ টাকার চাবি..
না না চাইনা, না না চাইনা, কোনো রম্ভা উর্বশী...
শুধু মেয়ের বাবার ব্যাংক ব্যালেন্সটা হতে হবে বেশি..

নচিকেতার গানে উঠে এসেছিলো বিয়েকে কেন্দ্র করে এই উপমহাদেশের একশ্রেণীর মানুষের অর্থলিপ্সা। এইযে সবাই লক্ষ্মী বউ চায়, এইটার পেছনেও সেই অর্থলিপ্সাই প্রধান, কারণ হিন্দু ধর্ম মতে লক্ষ্মী হলো সম্পদের দেবতা। লক্ষ্মী বউ শব্দটাও সেখান থেকেই এসেছে।

এই অর্থলিপ্সাকে আবার কেউ কেউ উৎসাহ ও বৈধতা দিতে চায়। তারা বলে- "If your Father is Poor, it's not your Fault... But if your Father in Law is Poor, it's definitely your Fault...!!!

অর্থলিপ্সা আর কূপমন্ডুকতার কারণে আজও বাংলাদেশের বেশিরভাগ জায়গায় টিকে আছে অভিশপ্ত পণ প্রথা। কেউ কেউ সরাসরি যৌতুক চায়, কেউ চায় আকারে ইঙ্গিতে।

কোথাও কোথাও মেয়ের বাপ মা দাবির মুখে যৌতুক দিতে বাধ্য হয়, কোথাও বাধ্য হয় 'খুশি হয়ে' দিতে। কারণ, মেয়ের বাপে 'খুশি হয়ে' মেয়েজামাইকে কিছু না দিলে সেই মেয়েকে শ্বশুর বাড়িতে নিজের বাপ মা সম্পর্কে প্রতিনিয়ত নানান অপমানজনক কথাবার্তা হজম করতে হয়।

আর তাই, মেয়ের বিয়ে নিয়ে বাবা মাকে চিন্তিত থাকতে হয় মেয়ের জন্মের পর থেকেই! কেউ কেউ মেয়ের জন্মের পরেই ব্যাংকে ডিপিএস একাউন্ট খোলেন, কেউ গাছ লাগান, কেউ স্বর্ণ কিনে রাখেন। কেউ মনে মনে ঠিক করেন, কোন জমিটা বিক্রি করবেন। কারণ মেয়ের বিয়ে দিতে গেলেই লাগবে লক্ষ লক্ষ টাকা। কীভাবে মেয়ের বিয়ে দেবেন সেই চিন্তায় অনেক বাবারই অর্ধেক চুলে পাক ধরে যায় অকালেই।
নিজের মেয়ের বিয়েতে যৌতুক দিচ্ছে, আবার ছেলের বিয়েতে যৌতুক নিচ্ছে। নিজের বিয়েতে নিচ্ছে, আবার বোনের বিয়েতে দিচ্ছে। এ এক ভয়ংকর অভিশপ্ত দুষ্টচক্র। আর এই দুষ্টচক্রের পার্ট শুধু অশিক্ষিতরা নয়, তথাকথিত শিক্ষিত জনগোষ্ঠিও।
এই অবস্থার পরিবর্তন করতেই হবে। সেজন্য এগিয়ে আসতে হবে এই প্রজন্মের ব্যাচেলরদের। এই কুপ্রথাকে যারা চ্যালেঞ্জ করতে চান, বিয়েকে যারা সহজ করতে চান, আমি তাদেরকে সাহসী হবার আহবান জানাই। বিয়েকে কঠিন করা হয়েছে বলে যারা গার্জিয়ানদের ওপর ক্ষুব্ধ, তাদের জন্যেও একই কথা। শুধু গার্জিয়ানদের দোষারোপ করলে হবে না, নিজেকেও বদলাতে হবে। কমিয়ে আনতে হবে চাহিদা ও প্রত্যাশা। ধনীর দুলালী নয়, আপনার নিজের ফ্যামিলির চেয়ে তুলনামূলক দরিদ্র পরিবারে বিয়ে করুন। বিয়েও অনেক সহজ হবে, নিজেও সম্মানিত হবেন।

কোনভাবেই যৌতুক নেবেন না। শ্বশুরের কষ্ট হয়- এমন কোনকিছু 'খুশি হবার' নাম করে দিলেও নেবেন না।
কী হবে কিছু টাকার যৌতুক না নিলে? কেন নিজেকে আজীবনের জন্য ছোট করবেন? নাহয় এখন একটা ফ্রিজ নাই থাকলো আপনার নতুন সংসারে! এক বছর টাকা জমান। নিজেই কিনতে পারবেন। একটা ৪৮ ইঞ্চি ফ্ল্যাট টিভি নাইবা থাকলো! কিছুদিন অপেক্ষা করুন। একদিন নিজেই কিনতে পারবেন। দামী ব্র‍্যান্ডের ড্রেসিং টেবিল নাইবা থাকলো! নিজের ঘাম ঝরানো টাকায় একটা আয়না কিনে আনুন না! সেই আয়নার পেছনেই হয়তো আছে ক্রনিকলস অব নার্নিয়ার মত সুখের সাগর।

নতুন টাইলস লাগানো ঝকমকে ফ্ল্যাট বাসা ভাড়ায় কুলাতে পারছেন না, একটা টিনশেড বাসাই নাহয় খুঁজে বের করুন। কিংবা, দুইহাজার স্কয়ার ফিটের বাসা না হোক, দুটো খুপরি ঘর তো পাবেন!
আর সেই ঘরের বারান্দায় বসে, খোলা আকাশের দিকে তাকিয়ে, বউয়ের হাতে হাত রেখে গলা ছেড়ে গেয়ে উঠুন হেমন্তের পুরনো গান-

নীড় ছোট... ক্ষতি নেই...
আকাশ তো বড়ো...
হে মন বলাকা মোর, অজানার আহবানে..
চঞ্চলও পাখা মেলে ধরো...
দেখবেন, সুখ এসে খেলা করছে আপনাদের চোখের তারায়।
(বিবাহ কথন-২১)

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন