টেবিলের ওপর খামটা রেখে সামনের চেয়ারে বসে আছে ডায়াগনোস্টিক সেন্টারের
প্রতিনিধি। বেশ ফুলে ফেঁপে আছে খামটা। ভেতরে কত টাকা আছে, এখনো জিজ্ঞেস
করেননি ডাঃ রফিক। কিন্তু এমাউন্টটা যে একেবারে নগন্য নয়, সেটা আন্দাজ করতে
অসুবিধা হয় না।
এর আগে অনেকবার এরকম খামের প্রলোভন নিঃসংকোচে প্রত্যাখ্যান করেছেন ডাঃ রফিক। কিন্তু আজ প্রত্যাখ্যান করতে পারছেন না সহজে। গত কয়েকদিনে যে অভিজ্ঞতা তাঁর হয়েছে, তাতে একা একা এই সততার অহংকার নিয়ে কতদিন চলতে পারবেন তা নিয়ে আজ তিনি বড্ড সন্দিহান।
কয়েকদিন আগে পাসপোর্ট অফিসে গিয়েছিলেন। নিয়ম অনুযায়ী সব কাগজপত্রই রেডি করে নিয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু পাসপোর্ট অফিসে গিয়ে মনে হলো, তিনি বোধহয় পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্তও পড়েন নাই। এটা এভাবে কেন লিখেছেন, এখানে আরেকটা সিল লাগবে, কাল আসেন। বারবার নানা ঝামেলা করতে লাগলো তারা। দারোয়ান কানে কানে বললো, স্যার এত ঝামেলা করতেছেন কেন? দুই হাজার টাকা দেন। আপনের আর কিছু করতে হবে না।
এর আগে অনেকবার এরকম খামের প্রলোভন নিঃসংকোচে প্রত্যাখ্যান করেছেন ডাঃ রফিক। কিন্তু আজ প্রত্যাখ্যান করতে পারছেন না সহজে। গত কয়েকদিনে যে অভিজ্ঞতা তাঁর হয়েছে, তাতে একা একা এই সততার অহংকার নিয়ে কতদিন চলতে পারবেন তা নিয়ে আজ তিনি বড্ড সন্দিহান।
কয়েকদিন আগে পাসপোর্ট অফিসে গিয়েছিলেন। নিয়ম অনুযায়ী সব কাগজপত্রই রেডি করে নিয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু পাসপোর্ট অফিসে গিয়ে মনে হলো, তিনি বোধহয় পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্তও পড়েন নাই। এটা এভাবে কেন লিখেছেন, এখানে আরেকটা সিল লাগবে, কাল আসেন। বারবার নানা ঝামেলা করতে লাগলো তারা। দারোয়ান কানে কানে বললো, স্যার এত ঝামেলা করতেছেন কেন? দুই হাজার টাকা দেন। আপনের আর কিছু করতে হবে না।
বাবার পেনশন আটকে আছে বহুদিন। গত সপ্তাহে গিয়েছিলেন অবসর বোর্ডে। সেখানেও
তাকে যথেষ্ট পরিমাণে ঘুষ দিতে হয়েছে। ঘুষ না দিয়ে বহুদিন অপেক্ষা করেছেন।
বাবারও বয়স বাড়ছে। টাকাটা হাতে পেলে বাবা তার ইচ্ছামত কিছু খরচ দান খয়রাত
করতে পারতেন। কিন্তু এভাবে চললে হয়তো বাবা আর টাকাটা দেখে যেতে পারবেন না।
বাধ্য হয়ে বখশিষের নামে ঘুষ দিতে হলো সেখানে।
ভেবেছিলেন নিজের এলাকায় নিজেই একটা ছোট হাসপাতাল করবেন। এত টাকা কোথায় পাবেন? এক বন্ধুর পরামর্শে ঋণের জন্য একদিন গেলেন ব্যাংকে। ব্যাংকের ম্যানেজার ঋণ দিতে রাজী হয়েছিলেন। কিন্তু একটা শর্তঃ ঋণের ২% টাকা তাকে দিতে হবে।
হাসপাতালের স্বপ্নটা সেদিন সেখানেই ফেলে আসেন ডাঃ রফিক।
ছোট ভাই বিসিএস দিয়ে নিয়োগের জন্য সুপারিশ পেয়েছে। গত পরশু পুলিশ ভেরিফিকেশনের জন্য থানা থেকে একজন এসআই এসেছিলেন। অন্য একটি গোয়েন্দা সংস্থা থেকে এসেছিলেন আরেকজন। দু'জনই বেশ মোটা অংকের টাকা দাবি করে গেছেন। এবার দিতেই হবে। নইলে তারা রিপোর্ট লিখে দিবেন মনের মত করে। এতবছর পড়াশোনা করে অর্জন করা একটা সরকারি চাকরি আটকে যাবে তথাকথিত নিরাপত্তা যাচাইয়ের নামে।
কয়েক বছর আগে নিজের বেলায় 'ঘুষ দেবেন না' বলে জেদ ধরেছিলেন ডাঃ রফিক। কিন্তু সেই জেদের ফলাফল ভালো হয়নি। ঘুষ না দেয়ায় তার ব্যাপারে রিপোর্ট দেয়া হয়েছিল- "রাষ্ট্রবিরোধি কর্মকান্ডে জড়িত'। তিনি বাদ পড়েছিলেন নিয়োগের সেই তালিকা থেকে।
এভাবে গত কয়েক বছরে প্রায় সবখানেই অতিরিক্ত টাকা গুনতে হয়েছে তাঁকে। যখনই কোন প্রয়োজনে কোথাও যান, কেউ না কেউ দাঁত কেলিয়ে বলে 'আরে ভাই আপনারা ডাক্তার মানুষ, আপনাদের কি টাকার অভাব আছে? ডাঃ রফিকের মেজাজ বিগড়ে ওঠে। মনে হয়- খেতা পুরি সততার। টাকা আসবে কোত্থেকে? সব শালাই আছে টাকার ধান্দায়, এইবার আমিও নিমু সামনে যা আসে।
কিন্ত শেষমেষ পারেন না। প্রতিবারই তার হাত ফিরে আসে।
আজও পারলেন না।
যদি সমাজের পিশাচ কুলাঙ্গার দূর্নীতিবাজদের টাকা আলাদাভাবে নেয়া যেত, তাহলে তিনি অবশ্যই নিতেন। কিন্তু, হাসপাতাল-ডায়াগনস্টিক সেন্টারের এইসব টাকায় যে সেই কৃষকের টাকাটাও আছে, যার শেষ সম্বল ছিল গতকাল বিক্রি করা গরুটা।
পরিশিষ্টঃ
পুরো সমাজ যখন দূর্নীতিতে আকন্ঠ ডুবে আছে, তখন ডাক্তার একা সৎ থাকবে এইটা আশা করা বোকামী । তবুও তুলনামূলকভাবে সৎ ডাক্তারের সংখ্যাই বেশি। এ দেশে সবাই সবাইকে শোষণ করছে। এ যেন এক মহা শোষণচক্র। দিনরাত এতসব শোষণ বঞ্চনা হতাশা আর প্রলোভনের মাঝে দাঁড়িয়েও যেসব ডাক্তার কোনভাবেই কমিশন নেন না, কোনরকম অবৈধ আয় করেন না, তাদেরকে আমার মানুষ মনে হয় না। তারা প্রত্যেকেই আসলে একেকজন সত্যিকারের 'মহামানব'।
ভেবেছিলেন নিজের এলাকায় নিজেই একটা ছোট হাসপাতাল করবেন। এত টাকা কোথায় পাবেন? এক বন্ধুর পরামর্শে ঋণের জন্য একদিন গেলেন ব্যাংকে। ব্যাংকের ম্যানেজার ঋণ দিতে রাজী হয়েছিলেন। কিন্তু একটা শর্তঃ ঋণের ২% টাকা তাকে দিতে হবে।
হাসপাতালের স্বপ্নটা সেদিন সেখানেই ফেলে আসেন ডাঃ রফিক।
ছোট ভাই বিসিএস দিয়ে নিয়োগের জন্য সুপারিশ পেয়েছে। গত পরশু পুলিশ ভেরিফিকেশনের জন্য থানা থেকে একজন এসআই এসেছিলেন। অন্য একটি গোয়েন্দা সংস্থা থেকে এসেছিলেন আরেকজন। দু'জনই বেশ মোটা অংকের টাকা দাবি করে গেছেন। এবার দিতেই হবে। নইলে তারা রিপোর্ট লিখে দিবেন মনের মত করে। এতবছর পড়াশোনা করে অর্জন করা একটা সরকারি চাকরি আটকে যাবে তথাকথিত নিরাপত্তা যাচাইয়ের নামে।
কয়েক বছর আগে নিজের বেলায় 'ঘুষ দেবেন না' বলে জেদ ধরেছিলেন ডাঃ রফিক। কিন্তু সেই জেদের ফলাফল ভালো হয়নি। ঘুষ না দেয়ায় তার ব্যাপারে রিপোর্ট দেয়া হয়েছিল- "রাষ্ট্রবিরোধি কর্মকান্ডে জড়িত'। তিনি বাদ পড়েছিলেন নিয়োগের সেই তালিকা থেকে।
এভাবে গত কয়েক বছরে প্রায় সবখানেই অতিরিক্ত টাকা গুনতে হয়েছে তাঁকে। যখনই কোন প্রয়োজনে কোথাও যান, কেউ না কেউ দাঁত কেলিয়ে বলে 'আরে ভাই আপনারা ডাক্তার মানুষ, আপনাদের কি টাকার অভাব আছে? ডাঃ রফিকের মেজাজ বিগড়ে ওঠে। মনে হয়- খেতা পুরি সততার। টাকা আসবে কোত্থেকে? সব শালাই আছে টাকার ধান্দায়, এইবার আমিও নিমু সামনে যা আসে।
কিন্ত শেষমেষ পারেন না। প্রতিবারই তার হাত ফিরে আসে।
আজও পারলেন না।
যদি সমাজের পিশাচ কুলাঙ্গার দূর্নীতিবাজদের টাকা আলাদাভাবে নেয়া যেত, তাহলে তিনি অবশ্যই নিতেন। কিন্তু, হাসপাতাল-ডায়াগনস্টিক সেন্টারের এইসব টাকায় যে সেই কৃষকের টাকাটাও আছে, যার শেষ সম্বল ছিল গতকাল বিক্রি করা গরুটা।
পরিশিষ্টঃ
পুরো সমাজ যখন দূর্নীতিতে আকন্ঠ ডুবে আছে, তখন ডাক্তার একা সৎ থাকবে এইটা আশা করা বোকামী । তবুও তুলনামূলকভাবে সৎ ডাক্তারের সংখ্যাই বেশি। এ দেশে সবাই সবাইকে শোষণ করছে। এ যেন এক মহা শোষণচক্র। দিনরাত এতসব শোষণ বঞ্চনা হতাশা আর প্রলোভনের মাঝে দাঁড়িয়েও যেসব ডাক্তার কোনভাবেই কমিশন নেন না, কোনরকম অবৈধ আয় করেন না, তাদেরকে আমার মানুষ মনে হয় না। তারা প্রত্যেকেই আসলে একেকজন সত্যিকারের 'মহামানব'।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন