আমি জানি কাউকে কোন বিষয়ে আহবান করার মত সামর্থ- যোগ্যতা-বয়স কোনটাই আমার হয়নি । তবু আমি ভাই-বোনদের জন্য এই আহ্বান ও অনুরোধ জানাতে চাই । সবার ঐক্যবদ্ধ প্রয়াসেই আমরা একদিন সফলতা পাবো । এই অনুরোধ – আহ্বান মুলঃত তাদের জন্য যারা আমার মত তরুণ । বয়স ২০-৩০ এর মধ্যে ।
আমি মোটামুটি নিশ্চিত করে বলতে পারি আগামী ২০ বছর পরে বাংলাদেশ সহ বিশ্বের রাজনৈতিক ও আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপটে একটা আমূল পরিবর্তন আসবে । বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে যদি আমরা চিন্তা করি তাহলে দেখি - এখন যারা রাজনীতি, আমলাতন্ত্র, মিডিয়া, শিক্ষাক্ষেত্রে নেতৃত্ব দিচ্ছে এরা সবাই একই সময়ের লোকজন । এদের সবার চিন্তাধারায় একটা বিশেষ সময়ের ছাপ স্পস্ট । সেটা সত্তর কিংবা সর্বোচ্চ আশির দশকের প্রতিনিধিত্ব করে ।
আগামী ২০ বছর পরে এই শেখ হাসিনা , খালেদা জিয়া , এরশাদ , নিজামী , মুজাহিদ , সাঈদী কেউই আর রাজনৈতিক ময়দানে নেতৃত্ব দিতে সক্ষম থাকবেন না । তাদের বিদায় নিতে হবে চিরাচরিত নিয়মেই । বিদায় নিতে হবে অন্যান্য সেক্টরের সবাইকে যারা আজকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন । বুদ্ধিজীবি আমলা কামলা সাংবাদিক শিক্ষাবিদ সকলকেই । তখনকার সময়টাতে যে রাজনীতি, যে সামাজিক সাংস্কৃতিক ধ্যান-ধারণার চর্চা হবে তা হবে সম্পুর্ণরুপে নতুন ধারার । হবে বর্তমান সময় হতে অনেকটাই আলাদা ।
আমাদের যাদের বয়স এখন ২০ থেকে ৩০এর মধ্যে আমি নিশ্চিত সেই সময়টার নেতৃত্ব দেবো আমরাই । আল্লাহ যদি হায়াত রাখেন তখন আমাদের বয়স হবে ৪০ থেকে ৬০ এর ভেতর । বিপ্লব করার , বিপ্লবে নেতৃত্ব দেবার উপযুক্ত সময় ।
সুতরাং আমাদের প্রস্তুতি নিতে হবে এক নতুন প্রেক্ষাপট, নতুন ধারার রাজনীতিতে সক্ষমভাবে নেতৃত্ব দেয়ার জন্য । সবধরণের জ্ঞান- গরিমায় গোলা পুর্ণ করে ত্যাগ তিতিক্ষা ও অভিজ্ঞতার আবাদ করতে হবে এখন থেকেই । তীক্ষ্ণ নজর রাখতে হবে সবার ওপর । সারাবিশ্বের ওপর ।প্রতিটি ঘটনা ও কার্যকারণ চুলচেরা বিশ্লেষণ করে তার নির্যাস নিংড়ে নিতে হবে নিজের ভেতর । জানতে হবে প্রকৃত রহস্য ।
আমরা যারা ইসলামী বিপ্লবের স্বপ্ন দেখি তাদেরকে সেই নতুন প্রেক্ষাপটে ইসলামী বিধিবিধান কীরূপে জনগনের সমস্যার সমাধান দেবে তারও পুর্নাংগ রুপরেখা তৈরি করতে হবে । রাষ্ট্র ও সমাজের প্রতিটি অঙ্গ প্রত্যঙ্গে এবং জনগনের প্রতিটি সমস্যার সমাধানে ইসলামকে কীভাবে প্রতিস্থাপন করা হবে সে ব্যাপারে আমাদের থাকতে হবে সুস্পষ্ট বক্তব্য । থাকতে হবে পুর্ণ জ্ঞান ।

বাংলা ভাষায় ইসলামী সাহিত্যের বিশাল ভান্ডার তৈরি করতে হবে । দীর্ঘদিন ধরে এই ক্ষেত্রে একটা বন্ধ্যাত্ব চলছে । মানুষের সকল প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে মাতৃভাষায় । ফতোয়াগুলোকে সাজাতে হবে আমাদের সময়ের আলোকে । সহজ ও প্রাঞ্জল করে । করতে হবে সহজলভ্য । থাকতে হবে স্থানিক প্রভাব ।
বিভিন্ন সেক্টরে রেফারেন্স হওয়ার মত স্পেশালিষ্ট তৈরি হওয়া দরকার যিনি ঐ সেক্টরে ইসলামী অনুশাসনের বাস্তব প্রয়োগ করে মডেল তৈরি করবেন । এমন অবস্থায় নিয়ে যেতে হবে আমাদের ।
সত্যিকার বিষয়টা হলো , আমরা ইসলামী আদর্শের আলোকে সমাজ প্রতিষ্ঠার কথা বললেও , ‘রোল মডেল’ দাড় করাতে ব্যর্থ । এখনো মুসলমানরা গর্ব করে সেই ইবনে সিনা আর আল খারেজমিকে নিয়েই ( যদিও এদেরকে তৎকালিন কিছু আলেম কাফের ফতোয়া দিয়েছিলেন ! যেমন ইমাম গাজ্জালী ) । এর মাঝের দীর্ঘ সময়টাতে আর খুব বেশি গর্ব করার মত অবদান রাখতে ব্যর্থ আমরা শ্রেষ্ঠ উম্মতের দাবিদার মুসলিমরা । এই সময়ে আমাদের মাঝে ছিল শুধু ফিকহী বিতর্ক । এমনকি আমরা কি পেরেছি এমন একটা গ্রাম, ইউনিয়ন কিংবা উপজেলা পুনর্গঠন করতে , যাতে আমরা মানুষকে বলতে পারি- দেখো এই হলো ইসলামী শাসন ও সামাজিক ব্যবস্থার অনুপম রুপ ? খেলাফতের সেই ৪০ বছরই এখনো আমাদের সম্বল । এই অবস্থার অবসান করতে হবে । এবং সেটা করার জন্য এগিয়ে আসতে হবে আমাদেরকেই ।
এই দুযোগে এই দুর্ভোগে আজজাগতেই হবে জাগতেই হবে তোমাকেজীবনের এই মরু বিয়াবানেপ্রাণ আনতেই হবে আনতেই হবে তোমাকেজড়তার দেশে দাও দাও হিন্দোলবহাও বন্যা তৌহিদি হিল্লোলঅমারাত্রির সকল কালিমা মুছেসুর্য উঠাতেই হবে উঠাতেই হবে তোমাকে ।- মতিউর রহমান মল্লিক
Related post - http://goo.gl/RK5dd
শনিবার, আগস্ট 4, 2012
http://goo.gl/9p5DL
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন