বহুদিনের
সুসম্পর্ক, বন্ধুতা , ভালোবাসার বন্ধনগুলি কেন হঠাৎ ভেঙ্গে যায় ? হয়ে পড়ে শিথিল ,
হয়ে যায় তিক্ত !
আমরা
একজন মানুষকে তাঁর কোন একটা কাজ দিয়ে সমগ্রটা বিচার করতে চাই । মানুষের জীবন একটা
কাজের জন্য নয় । অসংখ্য ছোট বড় কাজের সমষ্টি হলো জীবন । একজন বন্ধু অথবা একজন ভাই
একটা কাজ ভুল করলেন, অথবা একটা দরকারি কাজ করলেন না , তার মানে কি তার সমগ্র জীবন
ব্যর্থ হয়ে গেল ? তিনি জীবনে কত ভালো কাজ করেছেন – হঠাৎ করেই যেন আমরা সবকিছু ভুলে
যাই । দূরে ঠেলে দেই । ভেঙ্গে ফেলি সম্পর্ক ।
আমি
কাউকে তাঁর একটা কাজ দিয়ে তাঁর সমগ্র জীবনকে বিচার করিনা । মূল্যায়ন করিনা । একজন
ভাই একটি ভুল কাজ করলেন, আমি তাঁর ঐ কাজটির সমালোচনা করি । সংশোধনী দেই । তবে একই
সাথে তাঁর কৃত আগের ভালো কাজগুলির জন্য আমার ভালোবাসা, শ্রদ্ধা বজায় থাকে । কেউ
যদি ক্রমাগত ভুল কিংবা খারাপ কাজ করতেই থাকে তাহলে ভালোবাসা এবং শ্রদ্ধাও ধীরে
ধীরে কমতে থাকে , একদিনে নয় । কিন্তু যদি ভুলের জন্য অনুতপ্ত হয়, কাউকে
ক্ষতিগ্রস্ত করে থাকলে তাঁর কাছে মাফ চায়- ক্ষতিপুরণ দেবার চেষ্টা করে তাহলে
ভালোবাসা থেকে যায় আগের মতই ।
মানুষ
সবাই নিজের ভালো চায় , কষ্ট থেকে মুক্তি চায় । নানান রকম বিরুপ পরিস্থিতিতে পড়ে
মানুষ ভুল করে বসে । কখনো কখনো নীতিচ্যুত হয় । দিনের পর দিন অনাহারে থাকলে দরবেশও
চুরি করতে পারে । হযরত ওমর রাঃ এর শাসনামলে একবার দুর্ভিক্ষ হলে তিনি চোরের
হাতকাটার শাস্তি স্থগিত করেছিলেন । তেমনিভাবে কোন ভাই, বন্ধু যদি ভুল করে বসেন
কিংবা নীতিচ্যুত কাজ করেন – প্রথমে দেখতে হবে তিনি কোন পরিস্থিতিতে পড়ে , কী
অবস্থায় ভুল করে ফেলেছিলেন । নিজেকে একবার তাঁর অবস্থায় রেখে চিন্তা করতে হবে – ঐ অবস্থায়
থাকলে আমি কী করতাম ? তাহলে হঠাৎ করেই ভালোবাসাটা শুন্যের কোঠায় গিয়ে ঠেকবে না ।
দায়িত্বশীল
ব্যক্তি বা নেতৃত্বের একটি ভুল একটি সংগঠনের জন্য , একটি সমাজের জন্য অনেক বড়
বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে । সেজন্য দায়িত্বশীলের ভুলকে চেপে যাওয়া নয়, আনতে হয় কঠোর
জবাবদিহীতা, কঠোর সমালোচনার আওতায় । যেখানে নেতার চেয়ে কর্মীর জবাবদিহীতা বেশি হয়ে
যায়- সেখানে ধ্বংস এগিয়ে আসতে থাকে হামাগুড়ি দিয়ে ।
নেতার
ভুলকে কীভাবে বিচার করবো ? যদি সেটা হয়ে থাকে বিশ্বাসঘাতকতামূলক কিংবা
কর্মীবাহিনী-জনগনের সাথে প্রতারণামূলক, তাহলে ক্ষমা নয়- কঠোর সমালোচনা ও শাস্তির
আওতায় আনতে হবে । কিন্তু যদি হয় নিছক ‘অক্ষমতা’ , তাহলে নীরবে মেনে নিতে হবে ।
এটিও
স্মরণ রাখা দরকার যে, একটি ভুলই একজন নেতাকে নিঃশেষ করে দেয় না । স্বতস্ফূর্ত
নেতৃত্বের গুণাবলী থাকলে ভুল শুধরে এসে আবারো নেতৃত্বের সুযোগ থাকতে হবে ।
সমস্যাটা
দাঁড়ায় উল্টোদিক থেকে । আমি যখন আমার একজন প্রিয় ভাইয়ের, বন্ধুর, দায়িত্বশীল নেতার
সমালোচনা করি – কখনো কখনো তা করি বেশ নির্দয়ভাবেই । আমি জানি যে আমি শুধু তাঁর
নির্দিষ্ট একটি কাজের সমালোচনা করছি – কিন্তু তাঁর করে আসা আরো অনেক ভালো কাজ আছে
সেগুলোর দাম, সেগুলোর পরিমাণ এই একটি ভুলের চেয়েও অনেক বেশি । আমি জানি আমার এই নির্দয় সমালোচনার শেষেও আমি তাঁকে
ভালোবাসি, ভাই এবং বন্ধু ভাবি ।
কিন্তু
উল্টোপাশে কী হয় ? যে ভাইয়ের সমালোচনা করলাম , ভুল ধরলাম তিনি মনে করে বসেন -
বোধহয় তাঁর প্রতি আমার আর ভালোবাসা নেই । দেখা যায় , আমি আছি- কিন্তু তিনি সরে
গেছেন দূরে । সম্পর্ক হয়ে গেছে ফিকে ।
যাহোক ,
দিনশেষে আমি আমার সান্তনাটুকু অনুভব করি । আমি তো ভুল বুঝিনি , কেউ যদি ভুল বুঝে
থাকে একদিন হয়তো তারা বুঝবে । কিংবা বুঝবে না । কিন্তু আমি এভাবেই করে যাব
সম্পর্কের আবাদ । ভ্রাতৃত্ব ও ভালোবাসার চাষ ।
........................
ভালোবাসার চাষাবাদ / ০১-০৯-২০১৩
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন