এক রৌদ্রোজ্বল বিকেলে...

এক রৌদ্রোজ্বল বিকেলে...
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে

শুক্রবার, ৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৩

পতিতাপল্লীতে হামলা কি মানবাধিকারের লংঘন ?

কয়েকদিন আগে একটা খবর পড়ে আমি ক্ষুব্ধ হই ।

খবরটার মূলকথা হচ্ছে-
‘২৭ আগস্ট মাদারীপুর শহরের পুরান বাজারের যৌনপল্লিতে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাট হয়েছে। দিনদুপুরে ‘ইসলাহে কওম’ পরিষদ নামের একটি সংগঠন উচ্ছেদ ও হামলায় নেতৃত্ব দিলেও তাদের পাশে ছিল প্রশাসন ও রাজনৈতিক নেতৃত্ব এবং সমাজের ‘গণ্যমান্যরা’। লুটপাটে অংশ নিয়েছে স্থানীয় লোকজন। আক্রমণে আহত হয়েছেন ৩০-৪০ নারী। বিস্ময়কর ব্যাপার যে, উচ্চ আদালতের নির্দেশনা ছিল যৌনকর্মীদের হয়রানি না করতে এবং তাঁদের পেশা চালিয়ে যেতে প্রশাসন যেন কোনো বিঘ্ন সৃষ্টি না করে। আড়াই শ বছর ধরে যৌনকর্মীরা সন্তানসন্ততি নিয়ে ওই জায়গায় বাস করছেন। বর্তমানে তাঁদের সংখ্যা প্রায় ৫০০। তাঁদের যথাযথ পুনর্বাসনের ব্যবস্থা না করে এমন বর্বরোচিতভাবে উচ্ছেদ করা মানবাধিকার লঙ্ঘন ও ফৌজদারি অপরাধ। মূল উদ্দেশ্য ছিল ভূমি দখল’ ।

এ নিয়ে বামপন্থি বুদ্ধিজীবিরা কলামও লিখেছেন । তারা এটাকে মানবাধিকারের চরম লংঘন বলেছেন ।

পুরো প্রক্রিয়াটা নিয়েই আমি ক্ষুব্ধ হয়েছি ।

প্রথমতঃ ‘ইসলাহে কওম’ নামের যে সংগঠন এই হামলা চালিয়েছে আমি তাদের কাজকে সমর্থন করিনা । যারা এই নিকৃষ্ট পেশায় জড়িয়েছে , মানবতার জন্য অপমানজনক পেশায় জড়িয়েছে সম্ভবত তারা কেউই এরকম জীবন চায়নি । বিভিন্ন পরিস্থতিতে পড়ে বাধ্য হয়েই তারা তাদের জীবনটাকে এই অভিশপ্ত পেশার সাথে জড়িয়েছে বা বাধ্য হয়েছে ।

তাদের উত্তম শিক্ষাসহ যথাযথ কর্মসংস্থানের মাধ্যমে পুনর্বাসন করা দরকার । এটা সমাজের দায়িত্ব । সেই দায়িত্ব পালনের জন্য কার্যকরী কোন পদক্ষেপ না নিয়ে শুধু হামলা চালিয়ে উৎখাত করা কোন সমাধান নয় ।

দ্বিতীয়তঃ এইসব নারীদের ওপর হামলা করা সহজ । কিন্তু যাদের ছত্রছায়ায়, যাদের প্রয়োজনে এদেরকে এভাবে টিকিয়ে রাখা হয়েছে, জিইয়ে রাখা হয়েছে তাদের বিরুদ্ধে আমরা কথা বলার সাহস রাখি না কেন ? এদের আশ্রয়দাতা, পৃষ্ঠপোষক,আসল ব্যবসায়ীদের ওপর হামলা করতে হবে । তবেই আসবে সমাধান । নইলে আজ এদের ওপর হামলা করে সাময়িক উৎখাত করা গেছে, কিন্তু এদের দিয়ে যারা ব্যবসা করে খুব শীঘ্রই তারা এদেরকে নতুন স্থানে জায়গা করে দেবে । ফিরিয়ে নিয়ে যাবে সেই অভিশপ্ত জীবনে ।

তৃতীয়তঃ দেশের উচ্চ আদালত নাকি নির্দেশনা দিয়েছে যৌনকর্মীদের হয়রানি না করার ! এবং পতিতাবৃত্তিকে পেশা হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে প্রশাসনকে সহযোগিতা করতে বলেছে ।

ছিঃ ছিঃ । আদালত কি নির্দেশনা দিতে পারতোনা সরকারকে যে , পতিতাবৃত্তি কোন পেশা নয়, এটা মানবতার জন্য চরম অপমানজনক । এইসব নারীকে পুনর্বাসন করে তাদের এই অভিশপ্ত জীবন থেকে উদ্ধার করা হোক ?

এই আদালতকে বাধ্য করতে হবে এরকম নির্দেশনা দিতে । নারীদের ওপর হামলা করে স্থায়ী সমাধান আসবে না ।

চতুর্থতঃ আবুল মকসুদ সহ যেসব বুদ্ধিজীবি এই হামলাকে ‘মানবাধিকার লংঘন’ বলেছেন তাদের কাছে আমার প্রশ্ন – নারীদের বাধ্য করে ভোগ করার ব্যবস্থাটা কি আপনাদের মানবাধিকার ? পতিতা হিসেবে কাজ করা কি মানবাধিকার ? একজন নারীকে স্বাভাবিক জীবনের বাইরে পতিতা হিসেবে অভিশপ্ত জীবন কাটাতে হচ্ছে- এটাই তো মানবাধিকারের লংঘন । মানবাধিকার লংঘন তো আপনারা আগেই করেছেন- এইসব নারীকে ভোগের সামগ্রী হতে বাধ্য করার মাধ্যমে । পতিতাবৃত্তিকে পেশা হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া এবং তাদের যৌনকর্মী নাম দিয়ে ভোগ করার জন্য আদালতের নির্দেশনা শুধু মানবাধিকারের চরম লংঘনই নয়, মানবতার চরম অপমান ।

পতিতারা সবাই যে পরিস্থিতির শিকার তাও হয়তো নয় । তারাও চাইলে হয়তো পারতো স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যেতে । কিন্তু তারাও চায়নি, তাদের হৃদয় কলুষিত হয়ে গেছে । তাদেরকে তাদের কাজের খারাপ দিক বোঝাতে হবে, তাদের জন্য বিকল্প কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে, আশ্রয়ের ব্যবস্থা করতে হবে । এরপরও যদি তারা ব্যভিচারে লিপ্ত হয়- তাদের শাস্তি দিতে হবে , অবশ্যই পুরুষ-পতিতাকে সহ ।

বাংলাদেশে যেহেতু ইসলামী শাসনব্যবস্থা চালু নেই , তাই ইসলামী দন্ডবিধি প্রয়োগেরও সুযোগ নেই ।

পতিতাদের ওপর হামলা না করে তাদের দিয়ে যারা ব্যবসা করছে তাদেরকে ধরতে হবে । সেই সাহস কি আছে ?

দুর্বল নারীর ওপর হামলা নয়, পুরো সিস্টেমের বিরুদ্ধে লড়াই করতে হবে । বাম, সেক্যুলার,ধর্মনিরপেক্ষ, মানবতার অপমানকারীদের হাত থেকে দেশ, আদালত ও মানুষকে বাঁচাতে হবে । সতিকারভাবে এসবকে উচ্ছেদ করতে চাইলে ইসলামের আদর্শের আলোকে একটি সুন্দর সমাজ গঠনের বিকল্প নাই ।

..........................
পতিতাপল্লীতে হামলা কি মানবাধিকারের লংঘন ?/ ০৬-০৯-২০১৩

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন