এক রৌদ্রোজ্বল বিকেলে...

এক রৌদ্রোজ্বল বিকেলে...
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে

মঙ্গলবার, ৩ ডিসেম্বর, ২০১৩

নারী নেতৃত্ব হারাম ? -১৪

মিশরের সাবেক গ্র্যান্ড মুফতি আলী জুমা’র ফতোয়া

মুফতি আলী জুমা মিশরের ১৮ তম গ্রান্ড মুফতি হিসেবে কাজ করেছেন । তিনি শাফে’ঈ ধারার একজন ফকীহ । তিনি আল আজহার বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উসুল-ফিকাহ বিষয়ে পিএইচডি করেছেন এবং আল আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘ফ্যাকাল্টি অব ইসলামিক এন্ড এরাবিক স্টাডিজ’ – এর অধ্যাপক ছিলেন ।

শাসন ক্ষমতায় নারীর অংশগ্রহণ সম্পর্কে এক ফতোয়ায় তিনি বলেন-
‘ইসলাম কখনোই সমাজের কোন কোন ব্যাপারে মেয়েদের ভূমিকাকে অন্যদের তুলনায় সীমিত করেনি। সর্বপ্রথম যে ব্যাক্তি নবী মুহাম্মাদ (সাঃ) এর দাওয়াত কবুল করে ইসলাম ধর্ম কবুল করেছিলেন তিনি ছিলেন একজন নারী । ইসলামের প্রথম শহীদ ছিলেন একজন নারী, ঠিক তেমনি প্রথম মুহাজির ও ছিলেন একজন নারী । শত শত বছর ধরে নারীরা উচ্চ উচ্চ পদে দায়িত্ব পালন করেছেন । তারা ছিলেন শাসক, বিচারক, যোদ্ধা, শিক্ষক, মুফতি, ইত্যাদি । ইসলামের ইতিহাসের যে কোন সৎ ছাত্রই এই সাক্ষী দেবে।

রাষ্ট্রের প্রধানের ব্যাপারে একটি হাদিস আছে যা পরোক্ষভাবে নারী নেতৃত্বকে নিরুতসাহিত করেছে । হাদিসে বলা হয়েছে, যেসব লোক কোন নারীকে তাদের নেতা নিয়োগ করে তারা উন্নতি করতে পারবে না । অবশ্য, ইসলামের ইতিহাসে বিভিন্ন সময়ে পঞ্চাশেরও বেশি নারী শাসক দেখা যায় । যেমন মিশরের সিত আল-মুলক, সিনায় রানী আসমা ও আরওয়া, আল-আন্দালুসে জায়নাব আল-নাফযাভিয়া, দিল্লিতে সুলতানা রাজিয়া, মিশরে শাজারাত আল-দুর ইত্যাদি। বিভিন্ন সামাজিক জীবনে, যুদ্ধে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে, পুলিশে এবং বাজারে নারীদের অংশগ্রহনের ক্ষেত্রে রসুলুল্লাহর সম্মতির ব্যাপারে কোন বিতর্ক নাই।

উপরে উল্লেখিত হাদিসের কারনে, অনেকেই নারীদের রাষ্ট্র প্রধান হওয়াকে নিষিদ্ধ বলে মনে করেন । হানাফি মাজহাবে কিছুটা সীমিত পরিসরে নারীদের বিচারক হওয়াকে জায়েজ বলে মনে করা হয়। অবশ্য , নারীদের বিচারক ও রাষ্ট্র প্রধান হওয়াকে সম্পূর্ণ ভাবে জায়েজ বলে মত দিয়েছেন কেউ কেউ, যেমন ইবনে জারির আল-তাবারি, ইবনে হাজম আল-যাহিরি, আবু আল ফাতহ ইবনে তারার, ইবনে আল-কাসিম, ইত্যাদি।

এটা মনে রাখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ যে এই হাদিসটি একটি বিশেষ পরিপ্রেক্ষিতে ও অবস্থায় রসুলুল্লাহর উক্তি, যখন কিনা পারস্যবাসীরা শেষ উপায হিসেবে, কিসরা ও তার ছেলের নিহত হওয়ার পর একজন নারীকে (কিসরার কন্যাকে ) তাদের প্রধান হিসাবে নিয়োগ করেছিলেন। নবীর এই হাদিসটি নির্দেশনা হিসাবে গ্রহন করা যাবে না, বরং এটি পারস্যদের পতনের একটি ইঙ্গিত । আইনশাস্ত্রের মুলনীতিতে এটি পরিস্কার যে একটি বিশেষ ঘটনা (খাস) সর্ব অবস্থায় (আম) প্রয়োগ করা যায় না। অধিকন্তু, আল্লাহ্‌ নিজেই বিলকিস (শেবার রানী) এর যোগ্যতা ও বিচক্ষণতার প্রশংসা করেছেন কুর’আনে ।

ইসলামে খলিফার উচ্চস্থান এবং সমসাময়িক রাষ্ট্রের প্রধানের মধ্যে যে বিশেষ পার্থক্য আছে সে বিষয়টিও খেয়াল রাখতে হবে। খলিফা একটি ধর্মীয় পদ, যার অনেকগুলি দায়িত্বের একটি যা বর্তমান শাসকদের করতে হয়না তা হল মুসলিমদের নামাজের ইমামতি করা । এই শর্তটির ব্যাপারে সকল স্কলাররাই একমত। অন্যদিকে, সমসাময়িক রাষ্ট্রের প্রধানের পদটি একটি সরকারি পদ যেখানে সকল মুসলিম উম্মার প্রধান হওয়ার বিষয়টি নেই। সুতরাং, এই পদটিতে আসীন হওয়ার অধিকার নারীদের আছে ।

মুফতি আলী জুমা ২০০৩ সালে হোসনি মোবারকের আমলে গ্রান্ড মুফতি হিসেবে নিয়োগ পান । তবে মিশরে সাম্প্রতিক বিপ্লবে তাঁর ভূমিকা নিয়ে সমালোচনা করেছেন ডঃ ইউসুফ আল কারযাভী ।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন