এক রৌদ্রোজ্বল বিকেলে...

এক রৌদ্রোজ্বল বিকেলে...
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে

বুধবার, ১৪ আগস্ট, ২০১৩

আলমে আরওয়ায় দেয়া সাক্ষ্য স্মরণে নেই কেন ?

আল্লাহ তায়ালা সকল মানুষকে রুহের জগতে একত্রিত করেছিলেন । তাদের কাছে সবার সামনে সবার কাছ থেকে স্বীকৃতি নিয়েছিলেন যে তিনিই আমাদের প্রভু । কিয়ামতের দিন এই ঘটনাকে মানুষের বিচারের জন্য সাক্ষ্য হিসেবে ব্যবহার করা হবে ।
মনে প্রশ্ন জাগে, এই ঘটনাতো আমাদের কারো মনে নাই । তবুও এটাকে আমাদের বিপক্ষে সাক্ষ্য হিসেবে ব্যবহার করাটা কি যৌক্তিক হবে ?

এ সম্পর্কে কুরআন বলে -
‘আর হে নবী! লোকদের স্মরণ করিয়ে দাও সেই সময়ের কথা যখন তোমাদের রব বনী আদমের পৃষ্ঠদেশ থেকে তাদের বংশধরদের বের করিয়েছিলেন এবং তাদেরকে তাদের নিজেদের ওপর সাক্ষী বানিয়ে জিজ্ঞেস করেছিলেনঃ আমি কি তোমাদের রব নই ? তারা বলেছিলঃ নিশ্চয়ই তুমি আমাদের রব , আমরা এর সাক্ষ্য দিচ্ছি ৷ এটা আমি এ জন্য করেছিলাম যাতে কিয়ামতের দিন তোমরা না বলে বসো, আমরা তো একথা জানতাম না ৷ (সুরা আরাফ-১৭২ )

আমরা সাধারণভাবে চিন্তা করলে কী দেখি ? আমরা কেউ কি বলতে পারবো , ছোটবেলায় ঠিক কখন থেকে আমি বুঝতে শিখেছি ? আমরা কেউ জানিনা । ছোটবেলায়- জ্ঞান হবার আগে কে কী বলেছে, আমরা কে কী করেছি কিছুই আমাদের মনে নেই । কিছুই স্মরণে না থাকলেও এটা চিরসত্য যে, শিশুকালে অনেক কিছুই শুনেছি, বলেছি, দেখেছি । বাবা – মা , ভাইবোন কাউকেই তো চিনতাম না । বাবা মা কাকে বলে এটাও তো জানতাম না । সেজন্যেই মাকে জিজ্ঞেস করি- ‘এলেম আমি কোথা হতে ?’

সুতরাং , পৃথিবীতে আসার আগেই যে কথা বলেছি- সেটা স্মরণে থাকবে এটা আশা করা অবান্তর । কিন্তু আল্লাহ যখন আমাদের স্মৃতিতে সেটা আবার দিয়ে দেবেন , তখন সব মনে পড়বে ।
প্রাপ্তবয়স্ক মানুষেরও মেমোরি লস হবার ঘটনা আছে । মেমোরি রিগেইনের ঘটনাও আছে । এখান থেকেও আমরা সহজেই বুঝতে পারি – রুহের জগতের ঐ ঘটনা খুব খুব সম্ভব । মোটেই অযৌক্তিক নয় ।

তাফহীমুল কুরআন এই প্রশ্নের জবাব দিয়েছে এভাবে-
‘এর জবাবে বলা যায়, সেই অংগীকারের কথা যদি মানুষের চেতনা ও স্মৃতিপটে জাগরুক রাখা হতো তাহলে, মানুষকে দুনিয়ার বর্তমান পরীক্ষাগারে পাঠানো ব্যাপারটা একেবারে অর্থহীন হয়ে যেতো । কারণ এরপর পরীক্ষার আর কোন অর্থই থাকতো না । তাই এ অংগীকারের কথা চেতনা ও স্মৃতিপটে জাগরুক রাখা হয়নি ঠিকই কিন্তু অবচেতন মনে ও সুপ্ত অনুভূতিতে তাকে অবশ্যি সংরক্ষিত রাখা হয়েছে। তার অবস্থা আমাদের অবচেতন ও অনুভূতি সঞ্জাত অন্যান্য জ্ঞানের মতই। সভ্যতা, সংস্কৃতি, নৈতিক ও ব্যবহারিক জীবনের সকল বিভাগে মানুষ আজ পর্যন্ত যা কিছুর উদ্ভব ঘটিয়েছিল তা সবই আসলে মানুষের মধ্যে প্রচ্ছন্নভাবে বিরাজিত ছিল। বাইরের কার্যকারণ ও ভিতরের উদ্যোগ আয়োজন ও চেষ্টা সাধনা মিলেমিশে কেবলমাত্র অব্যক্তকে ব্যক্ত করার কাজটুকুই সম্পাদন করেছে। এমন কোন জিনিস যা মানুষের মধ্যে অব্যক্তভাবে বিরাজিত ছিল না, তাকে কোন শিক্ষা , অনুশীলন ,পরিবেশের প্রভাব ও আভ্যন্তরীন চেষ্টা-সাধনার বলে কোনক্রমেই তার মধ্যে সৃষ্টি করা সম্ভব নয় এটি একটি জাজ্বল্যমান সত্য। আর এ প্রভাব -প্রচেষ্টাসমূহ নিজের সর্বশক্তি নিয়োগ করলেও মানুষের মধ্যে যেসব জিনিস অব্যক্তভাবে বিরাজিত রয়েছে তাদের কোনটিকেও পুরোপুরি নিশ্চিহ্ন করে দেবার ক্ষমতা রাখে না। বড় জোর তারা তাকে তার মূল স্বাভাব প্রকৃতি থেকে বিকৃত করতে পারে মাত্র। তবুও সব রকমের বিকৃতি ও বিপথগামীতা সত্ত্বেও সেই জিনিসটি তার মধ্যে বিদ্যমান থাকবে, আত্মপ্রকাশের প্রচেষ্টা চালাতে থাকবে এবং বাইরের আবেদন সাড়া দেয়ার জন্যে সর্বক্ষণ উন্মুখ থাকবে । (তাফহীমুল কুরআন, সুরা আরাফের টীকা)

[[আরো বিস্তারিত জানতে চাইলে পড়ুন তাফহিমুল কুরআন সুরা আরাফের ব্যাখ্যা । তাফসীর ইবনে কাসীর এবং মারেফুল কুরআনে এই বিষয়টি খুব বেশি বিস্তারিত আলোচনা করেনি ।]]


১৪-০৮-২০১৩ 

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন