ডঃ
আব্দুল্লাহ এরকম একটি যুগান্তকারী আবিস্কার করে ফেলবেন- নিজেও জানতেন না ।
খামখেয়ালিপনার ভেতর দিয়ে মানবজাতির জন্য অতি প্রয়োজনীয় এই আবিস্কার হয়ে
যাবে কেউ কি কল্পনাও করেছিল ?
অবশ্য পৃথিবীর অনেক বড় বড় আবিস্কার হয়েছে আকস্মিকভাবেই । নিউটন আপেল গাছের নিচে বসে ছিলেন , তাঁর মাথায় আপেল পড়লো । তিনি আবিস্কার করলেন মাধ্যাকর্ষণ শক্তি । বিজ্ঞানী আর্কিমিডিস ন্যাংটা হয়ে চৌবাচ্চায় গোসল করতে করতে আবিস্কার করলেন তাঁর বিখ্যাত সুত্র । বিজ্ঞানী অগাস্ট কেকুল স্বপ্নে লেজ কামড়ানো সাপ দেখে আবিস্কার করে ফেলেছিলেন বেনজিনের গঠন ।
আজ বন্ধু ডালিম কোথায় ? মেডিকেল কলেজে ভর্তি হবার পর প্রথম দিকে হোস্টেলে ডঃ আব্দুল্লাহর রুমমেট ছিলেন বন্ধু ডালিম । ডালিম বিরক্তও হত, অবাকও হত যে আব্দুল্লাহ কোনদিন মশারি টাঙ্গায় না । অবশ্য তখন অলসতাই ছিল মূল কারণ । কিন্তু সে কথা আব্দুল্লাহ স্বীকার করবেন কেন ? তিনি বলতেন- আমরা মানুষ, আশরাফুল মাখলুকাত । আমরা বাঘ, ভাল্লুক, হাতি-ঘোড়া , অজগর সাপ , সব জন্তু জানোয়ারকে বশ করেছি । তাদেরকে খাঁচায় বন্দী করেছি । আর আমরা সেই মানুষ- সামান্য মশার ভয়ে নিজেই খাঁচায় বন্দী হয়ে থাকবো ? মশারি খাঁচা নয়তো কী ? মানব জাতির এত বড় অপমান আমি সইবো না । কামড়াক, যত পারে মশা আমাকে কামড়াক । আমি থাপ্পড় মেরে যে কয়টাকে পারি খতম করবো ।
আসলেই তাই হত । রাতের বেলা ঠাস ঠাস শব্দ শোনা যেত ডঃ আব্দুল্লাহর বেড থেকে । সকাল বেলা দেখা যেত বেডশিটে লাল রঙের আলপনা । আপাতদৃষ্টিতে সেগুলো মশার রক্ত মনে হলেও, আসলে তো ডঃ আব্দুল্লারই রক্ত ! তবু তাঁকে দমানো যায়নি ।
বন্ধু ডালিম ডঃ আব্দুল্লার নাম দিয়েছিল ‘মশা মারা পালোয়ান’ । মাঝে মাঝে সুযোগ বুঝে সে ডঃ আব্দুল্লাহর গা চাপড়ে দিত- ‘ইস , এই খানে একটা মশা বসেছিল’ !
হোস্টেলের নিচতলার রুম । পাশেই পাহাড় – জঙ্গল । চট্টগ্রাম এমনিতেই ম্যালেরিয়ার জন্য এন্ডেমিক রিজিওন । সবার ধারণা ছিল আজ নাহয় কাল আব্দুল্লাহ ম্যালেরিয়ার শিকার হবেই । কিন্তু না , ম্যালেরিয়া-ফাইলেরিয়া-ডেঙ্গু কোনটাই কাবু করতে পারেনি তাঁকে ।
হতে পারে ভাগ্যক্রমে কোন এডিশ বা এনোফিলিস মশা তাঁকে কামড়ায় নি । কিন্তু সেটাই বা কীভাবে বিশ্বাস করা যায় ?
বিয়ের পর ডঃ আব্দুল্লাহর স্ত্রী মিমুও প্রথম প্রথম অবাক হতেন । সবসময় তিনি নিজেই এরোসল স্প্রে করে রাখতেন । একবার স্প্রে ফুরিয়ে যায় । সেসময় তিনি বাবার বাড়িতে । কয়েকদিন পর ফিরে এসে দেখেন , আব্দুল্লাহ স্প্রে কেনেননি , মশারিও যেখানে ছিল সেখানেই বহাল তবিয়তে আছে । ঘটনা কি ?
ডঃ আব্দুল্লাহ স্ত্রীকেও সেই যুক্তি দেখান ।
আশরাফুল মাখলুকাত হয়ে মশার ভয়ে খাচার ভেতর বন্দী থাকা ? অসম্ভব । আর তাছাড়া মশারও তো রিজিক আছে । আল্লাহ যদি মশার রিজিক আমার শরীরেই রেখে থাকেন, তাহলে আমি বাধা দেয়ার কে ?
তবে মিমুর পাল্টা যুক্তিতে ধরা খেয়ে যান বেচারা ডঃ আব্দুল্লাহ ।
‘ও তাই নাকি ?’ ‘তাহলে এক কাজ করো তুমি- সুন্দরবনে চলে যাও । বাঘের সামনে গিয়ে দাঁড়াও । আল্লাহ যদি বাঘের রিজিক রাখেন তোমাকে দিয়ে, তাহলে তুমি বাধা দেয়ার কে ? তোমার উচিৎ নিজেই গিয়ে বাঘের রিজিক হওয়া ! আচ্ছা ধরো আমরা কোন বিপদে পড়লাম, বাসায় ডাকাত আসলো- তুমি কি বাধা দেবে না ? নাকি বলবে যে- যাক সব নিয়ে যাক । ডাকাতেরও তো রিজিক আছে নাকি !’
এবার সত্যিই লা-জবাব হয়ে যান ডঃ আব্দুল্লাহ । আসলেই তো ! এতদিন তিনি সরলমনে চিন্তা করতেন । উল্টোদিকটাতো ভাবেননি !
মাঝে মাঝে জ্ঞানী গুনী লোকেরা অনেক সহজ ব্যাপার বুঝতে পারেন না । যেমন পন্ডিত হরপ্রসাদ শাস্ত্রী । তাঁকে নাকি একদিন কেউ একজন এসে বলেছিল – ‘স্যার, মহা দুঃখের সংবাদ আছে আপনার জন্য । আপনার স্ত্রী তো বিধবা হয়ে গেছেন !’ পন্ডিত মশাই নাকি তখনই কাঁদতে কাঁদতে বাড়ির দিকে হাঁটা ধরেন । আহারে আমার বউটা ! বেচারি অল্পবয়সে বিধবা হয়ে গেল !
মখা স্কেল আবিস্কারের পর যে ধকলটা গিয়েছিল , সেটা কাটানোর জন্য ডঃ আব্দুল্লাহ প্ল্যান করেন – কিছুদিন পাহাড়ি পরিবেশে একটু নিরিবিলি কাটিয়ে আসার । সেই সাথে মশার ব্যাপারে একটা ফায়সালা করা দরকার । জীবনে এত মশার কামড় খেলেন- একবারও ম্যালেরিয়া বা ডেঙ্গু হলো না , এটা তো ঠিক না ! অভিজ্ঞতা বলে একটা কথা আছে না ? তাঁর মত মহান বিজ্ঞানী ম্যালেরিয়া-ডেঙ্গুর অভিজ্ঞতা ছাড়াই দুনিয়া ত্যাগ করবেন – এটা হতে পারেনা ।
মাইক্রোবায়োলজির সহকারী অধ্যাপক, গবেষক বন্ধু রাগিবও ইচ্ছা পোষণ করলেন । তাঁরও খুব জানার ইচ্ছা- ব্যাপার কী ? এত মশার কামড়েও আব্দুল্লাহ বহাল তবিয়তে থাকে কীভাবে ?
সবাই রেডি হলেন । ডঃ আব্দুল্লাহ, তাঁর স্ত্রী মিমু , মাইক্রোবায়োলজিস্ট ডাঃ রাগিব ও তাঁর পরিবার । ডঃ আব্দুল্লাহ ছাড়া সবাই কুইনাইনের প্রোফাইলেক্টিক (প্রতিরোধমূলক) ডোজ নিলেন । অধ্যাপক রাগিব নিলেন তাঁর গবেষণার যন্ত্রপাতি ।
প্রয়োজনীয় জরুরী ওষুধপত্রও নেয়া হলো । এক বিকালে দুটি গাড়িতে করে তাঁরা বান্দরবানের ম্যালেরিয়া প্রবণ এলাকায় পৌছলেন । সেখানে আগেই বাসা ভাড়া করা ছিল ।
ম্যালেরিয়া প্রতিরোধে বান্দরবানের মানুষকে বিশেষ ধরণের মশারি সাপ্লাই দিয়েছে জাতিসংঘ ও বিশ্বের অন্যান্য দাতা এনজিওগুলো । সেজন্য এখন ম্যালেরিয়ার প্রকোপ অনেকটাই কমে গেছে । তবে কেউ যদি মশারি ছাড়া ঘুমায়- তাহলে খবর আছে ।
যেই ভাবা সেই কাজ । ১০-১২ দিন ধরে বারান্দায় ঘুমিয়ে মশাদেরকে নির্বিঘ্নে কামড়ানোর সুযোগ দিলেন ডঃ আব্দুল্লাহ । সারাদিন ঘোরাফেরা করেন, সন্ধ্যার পর বাসায় ফেরেন । ১৫ দিনের মাথায় একদিন তাঁর শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে গেল । এইবার মনে হয় আর রক্ষা নাই । কুইনাইন (ম্যালেরিয়ার ওষুধ) শুরু করার আগে ব্লাড স্যাম্পল নিলেন মাইক্রোবায়োলজিস্ট ডাঃ রাগিব । শুরু হলো কাজ । ডঃ আব্দুল্লাহও সবসময় বন্ধুর সাথে থেকে কাজ করলেন । দুদিনের মাথায় আবিস্কৃত হল – ডঃ আব্দুল্লাহর রক্তে ম্যালেরিয়া, ফাইলেরিয়া, ডেঙ্গু – সবধরণের মশাবাহিত রোগের এন্টিবডি রয়েছে । তাঁরা এন্টিসেরাম তৈরি করে ফেললেন । একমাস ধরে দুজনে মিলে লিখে ফেললেন এ সংক্রান্ত গবেষণাপত্র ।
গবেষণাপত্র প্রকাশের পর বিশ্বের বড় বড় ওষুধ প্রস্তুতকারক কোম্পানি তাঁর সাথে যোগাযোগ করেছে । এ এক যুগান্তকারী আবিস্কার । বাণিজ্যিকভাবে এই এন্টিসেরাম উৎপাদন করার কাজ শুরু হয়েছে । শীঘ্রই সারাবিশ্বের মানুষ এর সুফল পাবে । মশাবাহিত রোগের কবল থেকে বাঁচবে মানবকুল ।
গবেষণাপত্রে তাঁরা উল্লেখ করেছেন যে- বান্দরবানের বানরের দেহ থেকে এই এন্টিসেরাম পাওয়া গেছে । এজন্য অবশ্য তাঁরা এন্টিসেরাম কিছু বানরের শরীরে ইঞ্জেক্ট করে ছেড়ে দিয়েছেন । আসলে যে ডঃ আব্দুল্লাহর রক্ত থেকে পাওয়া গেছে এই কথা কি আর বলা যায় ? দেখা যাবে – এক রাতে ডঃ আব্দুল্লাহকে অপহরণ করে শরীরের সকল রক্ত বের করে নেবে কেউ ! কে জানে- হয়তো ম্যালেরিয়া-ডেঙ্গু-ফাইলেরিয়ার ওষুধ প্রস্তুতকারক কোম্পানিগুলোই তাদের ব্যবসার স্বার্থে করতে পারে এই কাজ !
ডঃ আব্দুল্লাহ আজ খুবই আনন্দিত । মশার ভয়ে খাঁচায় বন্দী হয়ে থাকে মানুষ ! আশরাফুল মাখলুকাত মানবজাতিকে এই অপমান থেকে উদ্ধার করতে চলেছেন তিনি !
.............................. ...............
ডঃ আব্দুল্লাহর যুগান্তকারী আবিস্কার / ১১-০৮-২০১৩
অবশ্য পৃথিবীর অনেক বড় বড় আবিস্কার হয়েছে আকস্মিকভাবেই । নিউটন আপেল গাছের নিচে বসে ছিলেন , তাঁর মাথায় আপেল পড়লো । তিনি আবিস্কার করলেন মাধ্যাকর্ষণ শক্তি । বিজ্ঞানী আর্কিমিডিস ন্যাংটা হয়ে চৌবাচ্চায় গোসল করতে করতে আবিস্কার করলেন তাঁর বিখ্যাত সুত্র । বিজ্ঞানী অগাস্ট কেকুল স্বপ্নে লেজ কামড়ানো সাপ দেখে আবিস্কার করে ফেলেছিলেন বেনজিনের গঠন ।
আজ বন্ধু ডালিম কোথায় ? মেডিকেল কলেজে ভর্তি হবার পর প্রথম দিকে হোস্টেলে ডঃ আব্দুল্লাহর রুমমেট ছিলেন বন্ধু ডালিম । ডালিম বিরক্তও হত, অবাকও হত যে আব্দুল্লাহ কোনদিন মশারি টাঙ্গায় না । অবশ্য তখন অলসতাই ছিল মূল কারণ । কিন্তু সে কথা আব্দুল্লাহ স্বীকার করবেন কেন ? তিনি বলতেন- আমরা মানুষ, আশরাফুল মাখলুকাত । আমরা বাঘ, ভাল্লুক, হাতি-ঘোড়া , অজগর সাপ , সব জন্তু জানোয়ারকে বশ করেছি । তাদেরকে খাঁচায় বন্দী করেছি । আর আমরা সেই মানুষ- সামান্য মশার ভয়ে নিজেই খাঁচায় বন্দী হয়ে থাকবো ? মশারি খাঁচা নয়তো কী ? মানব জাতির এত বড় অপমান আমি সইবো না । কামড়াক, যত পারে মশা আমাকে কামড়াক । আমি থাপ্পড় মেরে যে কয়টাকে পারি খতম করবো ।
আসলেই তাই হত । রাতের বেলা ঠাস ঠাস শব্দ শোনা যেত ডঃ আব্দুল্লাহর বেড থেকে । সকাল বেলা দেখা যেত বেডশিটে লাল রঙের আলপনা । আপাতদৃষ্টিতে সেগুলো মশার রক্ত মনে হলেও, আসলে তো ডঃ আব্দুল্লারই রক্ত ! তবু তাঁকে দমানো যায়নি ।
বন্ধু ডালিম ডঃ আব্দুল্লার নাম দিয়েছিল ‘মশা মারা পালোয়ান’ । মাঝে মাঝে সুযোগ বুঝে সে ডঃ আব্দুল্লাহর গা চাপড়ে দিত- ‘ইস , এই খানে একটা মশা বসেছিল’ !
হোস্টেলের নিচতলার রুম । পাশেই পাহাড় – জঙ্গল । চট্টগ্রাম এমনিতেই ম্যালেরিয়ার জন্য এন্ডেমিক রিজিওন । সবার ধারণা ছিল আজ নাহয় কাল আব্দুল্লাহ ম্যালেরিয়ার শিকার হবেই । কিন্তু না , ম্যালেরিয়া-ফাইলেরিয়া-ডেঙ্গু কোনটাই কাবু করতে পারেনি তাঁকে ।
হতে পারে ভাগ্যক্রমে কোন এডিশ বা এনোফিলিস মশা তাঁকে কামড়ায় নি । কিন্তু সেটাই বা কীভাবে বিশ্বাস করা যায় ?
বিয়ের পর ডঃ আব্দুল্লাহর স্ত্রী মিমুও প্রথম প্রথম অবাক হতেন । সবসময় তিনি নিজেই এরোসল স্প্রে করে রাখতেন । একবার স্প্রে ফুরিয়ে যায় । সেসময় তিনি বাবার বাড়িতে । কয়েকদিন পর ফিরে এসে দেখেন , আব্দুল্লাহ স্প্রে কেনেননি , মশারিও যেখানে ছিল সেখানেই বহাল তবিয়তে আছে । ঘটনা কি ?
ডঃ আব্দুল্লাহ স্ত্রীকেও সেই যুক্তি দেখান ।
আশরাফুল মাখলুকাত হয়ে মশার ভয়ে খাচার ভেতর বন্দী থাকা ? অসম্ভব । আর তাছাড়া মশারও তো রিজিক আছে । আল্লাহ যদি মশার রিজিক আমার শরীরেই রেখে থাকেন, তাহলে আমি বাধা দেয়ার কে ?
তবে মিমুর পাল্টা যুক্তিতে ধরা খেয়ে যান বেচারা ডঃ আব্দুল্লাহ ।
‘ও তাই নাকি ?’ ‘তাহলে এক কাজ করো তুমি- সুন্দরবনে চলে যাও । বাঘের সামনে গিয়ে দাঁড়াও । আল্লাহ যদি বাঘের রিজিক রাখেন তোমাকে দিয়ে, তাহলে তুমি বাধা দেয়ার কে ? তোমার উচিৎ নিজেই গিয়ে বাঘের রিজিক হওয়া ! আচ্ছা ধরো আমরা কোন বিপদে পড়লাম, বাসায় ডাকাত আসলো- তুমি কি বাধা দেবে না ? নাকি বলবে যে- যাক সব নিয়ে যাক । ডাকাতেরও তো রিজিক আছে নাকি !’
এবার সত্যিই লা-জবাব হয়ে যান ডঃ আব্দুল্লাহ । আসলেই তো ! এতদিন তিনি সরলমনে চিন্তা করতেন । উল্টোদিকটাতো ভাবেননি !
মাঝে মাঝে জ্ঞানী গুনী লোকেরা অনেক সহজ ব্যাপার বুঝতে পারেন না । যেমন পন্ডিত হরপ্রসাদ শাস্ত্রী । তাঁকে নাকি একদিন কেউ একজন এসে বলেছিল – ‘স্যার, মহা দুঃখের সংবাদ আছে আপনার জন্য । আপনার স্ত্রী তো বিধবা হয়ে গেছেন !’ পন্ডিত মশাই নাকি তখনই কাঁদতে কাঁদতে বাড়ির দিকে হাঁটা ধরেন । আহারে আমার বউটা ! বেচারি অল্পবয়সে বিধবা হয়ে গেল !
মখা স্কেল আবিস্কারের পর যে ধকলটা গিয়েছিল , সেটা কাটানোর জন্য ডঃ আব্দুল্লাহ প্ল্যান করেন – কিছুদিন পাহাড়ি পরিবেশে একটু নিরিবিলি কাটিয়ে আসার । সেই সাথে মশার ব্যাপারে একটা ফায়সালা করা দরকার । জীবনে এত মশার কামড় খেলেন- একবারও ম্যালেরিয়া বা ডেঙ্গু হলো না , এটা তো ঠিক না ! অভিজ্ঞতা বলে একটা কথা আছে না ? তাঁর মত মহান বিজ্ঞানী ম্যালেরিয়া-ডেঙ্গুর অভিজ্ঞতা ছাড়াই দুনিয়া ত্যাগ করবেন – এটা হতে পারেনা ।
মাইক্রোবায়োলজির সহকারী অধ্যাপক, গবেষক বন্ধু রাগিবও ইচ্ছা পোষণ করলেন । তাঁরও খুব জানার ইচ্ছা- ব্যাপার কী ? এত মশার কামড়েও আব্দুল্লাহ বহাল তবিয়তে থাকে কীভাবে ?
সবাই রেডি হলেন । ডঃ আব্দুল্লাহ, তাঁর স্ত্রী মিমু , মাইক্রোবায়োলজিস্ট ডাঃ রাগিব ও তাঁর পরিবার । ডঃ আব্দুল্লাহ ছাড়া সবাই কুইনাইনের প্রোফাইলেক্টিক (প্রতিরোধমূলক) ডোজ নিলেন । অধ্যাপক রাগিব নিলেন তাঁর গবেষণার যন্ত্রপাতি ।
প্রয়োজনীয় জরুরী ওষুধপত্রও নেয়া হলো । এক বিকালে দুটি গাড়িতে করে তাঁরা বান্দরবানের ম্যালেরিয়া প্রবণ এলাকায় পৌছলেন । সেখানে আগেই বাসা ভাড়া করা ছিল ।
ম্যালেরিয়া প্রতিরোধে বান্দরবানের মানুষকে বিশেষ ধরণের মশারি সাপ্লাই দিয়েছে জাতিসংঘ ও বিশ্বের অন্যান্য দাতা এনজিওগুলো । সেজন্য এখন ম্যালেরিয়ার প্রকোপ অনেকটাই কমে গেছে । তবে কেউ যদি মশারি ছাড়া ঘুমায়- তাহলে খবর আছে ।
যেই ভাবা সেই কাজ । ১০-১২ দিন ধরে বারান্দায় ঘুমিয়ে মশাদেরকে নির্বিঘ্নে কামড়ানোর সুযোগ দিলেন ডঃ আব্দুল্লাহ । সারাদিন ঘোরাফেরা করেন, সন্ধ্যার পর বাসায় ফেরেন । ১৫ দিনের মাথায় একদিন তাঁর শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে গেল । এইবার মনে হয় আর রক্ষা নাই । কুইনাইন (ম্যালেরিয়ার ওষুধ) শুরু করার আগে ব্লাড স্যাম্পল নিলেন মাইক্রোবায়োলজিস্ট ডাঃ রাগিব । শুরু হলো কাজ । ডঃ আব্দুল্লাহও সবসময় বন্ধুর সাথে থেকে কাজ করলেন । দুদিনের মাথায় আবিস্কৃত হল – ডঃ আব্দুল্লাহর রক্তে ম্যালেরিয়া, ফাইলেরিয়া, ডেঙ্গু – সবধরণের মশাবাহিত রোগের এন্টিবডি রয়েছে । তাঁরা এন্টিসেরাম তৈরি করে ফেললেন । একমাস ধরে দুজনে মিলে লিখে ফেললেন এ সংক্রান্ত গবেষণাপত্র ।
গবেষণাপত্র প্রকাশের পর বিশ্বের বড় বড় ওষুধ প্রস্তুতকারক কোম্পানি তাঁর সাথে যোগাযোগ করেছে । এ এক যুগান্তকারী আবিস্কার । বাণিজ্যিকভাবে এই এন্টিসেরাম উৎপাদন করার কাজ শুরু হয়েছে । শীঘ্রই সারাবিশ্বের মানুষ এর সুফল পাবে । মশাবাহিত রোগের কবল থেকে বাঁচবে মানবকুল ।
গবেষণাপত্রে তাঁরা উল্লেখ করেছেন যে- বান্দরবানের বানরের দেহ থেকে এই এন্টিসেরাম পাওয়া গেছে । এজন্য অবশ্য তাঁরা এন্টিসেরাম কিছু বানরের শরীরে ইঞ্জেক্ট করে ছেড়ে দিয়েছেন । আসলে যে ডঃ আব্দুল্লাহর রক্ত থেকে পাওয়া গেছে এই কথা কি আর বলা যায় ? দেখা যাবে – এক রাতে ডঃ আব্দুল্লাহকে অপহরণ করে শরীরের সকল রক্ত বের করে নেবে কেউ ! কে জানে- হয়তো ম্যালেরিয়া-ডেঙ্গু-ফাইলেরিয়ার ওষুধ প্রস্তুতকারক কোম্পানিগুলোই তাদের ব্যবসার স্বার্থে করতে পারে এই কাজ !
ডঃ আব্দুল্লাহ আজ খুবই আনন্দিত । মশার ভয়ে খাঁচায় বন্দী হয়ে থাকে মানুষ ! আশরাফুল মাখলুকাত মানবজাতিকে এই অপমান থেকে উদ্ধার করতে চলেছেন তিনি !
..............................
ডঃ আব্দুল্লাহর যুগান্তকারী আবিস্কার / ১১-০৮-২০১৩
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন