এক রৌদ্রোজ্বল বিকেলে...

এক রৌদ্রোজ্বল বিকেলে...
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে

শুক্রবার, ২ আগস্ট, ২০১৩

রাসুল প্রেরণের উদ্দেশ্য

আল্লাহ তায়ালা নবী রাসুলদের কেন পাঠালেন ? এই প্রশ্নের উত্তরে ছোটবেলায় ইসলাম শিক্ষা বইয়ে পড়েছি- ‘যুগে যুগে পথভোলা মানুষকে পথ দেখানোর জন্য আল্লাহ তায়ালা নবী রাসুল পাঠিয়েছেন’ । কথাটা ঠিকই আছে । কিন্তু এতে নবী রাসুলদেরকে ধর্মপ্রচারকের বেশি মর্যাদা দেয়া হয় না । বিশেষ করে শেষ নবী মুহাম্মাদ (সাঃ) এর ব্যাপারে এই কথাটা যথেষ্ট নয় ।

কুরআন শরীফে আল্লাহ তায়ালা বলেন-

﴿هُوَ الَّذِي أَرْسَلَ رَسُولَهُ بِالْهُدَىٰ وَدِينِ الْحَقِّ لِيُظْهِرَهُ عَلَى الدِّينِ كُلِّهِ وَلَوْ كَرِهَ الْمُشْرِكُونَ﴾
৩৩) আল্লাহই তার রসূলকে পথনির্দেশ ও সত্য দীন সহকারে পাঠিয়েছেন যাতে তিনি একে সকল প্রকার দীনের ওপর বিজয়ী করেন, মুশরিকরা একে যতই অপছন্দ করুক না কেন ৷
-সুরা তাওবা ।

এখান থেকে আমরা কী দেখতে পাই ? রাসুল প্রেরণের উদ্দেশ্য হচ্ছে – আল্লাহ্‌র দ্বীনকে পৃথিবীর অন্য সকল প্রকার দ্বীন বা মতবাদের ওপর বিজয়ী করা । নিছক কোন ধর্ম-প্রচার নয় ।

রাসুল (সাঃ) কে এবং তাঁর মাধ্যমে মানবজাতিকে যে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে – সেসবের উদ্দেশ্য হচ্ছে আসল লক্ষ্য বাস্তবায়ন । এরকম কোন আয়াত আমার জানা নেই যেখানে বলা হয়েছে যে –আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তাঁর নবীকে পাঠিয়েছেন নামাজ পড়ার জন্য , হজ্ব করার জন্য । কিন্তু এখানে স্পষ্ট করে বলা হচ্ছে রাসুল (সাঃ) কে প্রেরণ করা হয়েছে যেন তিনি আল্লাহ্‌র দ্বীনকে অন্য সকল মত-পথের ওপর বিজয়ী, সুপিরিয়র রাখতে পারেন ।

প্রশ্ন আসতে পারে, তাহলে কেন নামাজ-রোযা এসব ফরয করা হয়েছে ?
ধরা যাক একজন বাবা তাঁর ছেলেকে মেডিকেল কলেজে ভর্তি করালেন । উদ্দেশ্য কী ? উদ্দেশ্য অবশ্যই ছেলেকে ডাক্তার বানানো –যেন ছেলে ডাক্তার হয়ে মানুষের চিকিৎসা করতে পারে । মানুষের দুঃখ-কষ্ট লাঘব করতে পারে । বাবা ছেলেকে উপদেশ দেয়ার সময় বলেন- তোকে পাঠাচ্ছি ডাক্তার হবার জন্য । ভালো করে লেখাপড়া করবি ।

ডাক্তার হবার জন্য ছেলেকে সময়-রুটিন মত কলেজে যেতে হয় , ক্লাস করতে হয় , প্র্যাক্টিকাল করতে হয় । একজন ছাত্র কী করে ভালো ডাক্তার হবে ? যদি সে তাঁর আসল উদ্দেশ্য- মানুষের চিকিৎসা করতে হবে এই কথা মনে রাখে ।
আমাদের উদ্দেশ্য আর পাথেয় এই দুয়ের পার্থক্য বুঝতে হবে । ডাক্তার হওয়া উদ্দেশ্য- ক্লাস, পড়া এসব হচ্ছে ট্রেনিং, পাথেয় ।

সুতরাং- নামাজ রোযা এবং অন্যান্য আমল সবকিছু হচ্ছে আল্লাহ্‌র দ্বীনকে বিজয়ী করার জন্য পাথেয় । এই ট্রেনিং ছাড়া যেমন আল্লাহ্‌র দ্বীনকে বিজয়ী করা এবং বিজয়ী রাখা সম্ভব নয়, তেমনি উদ্দেশ্য না বুঝে – লক্ষ্য অর্জনের জন্য কাজ না করলে সবকিছু অর্থহীন ।

আল্লাহ আমাদের হেদায়াত দান করুন । আল্লাহ্‌র দ্বীনকে বিজয়ী করার জন্য কাজ করার তাওফিক দান করুন । আমীন ।


০২-০৮-২০১৩ 

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন