বিগত
কয়েক বছরে বাংলাদেশে সবচেয়ে বিপর্যয়কর সিদ্ধান্ত হিসেবে আমি যেটাকে বিবেচনা করি তা হলো তত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা
বাতিল করার বিষয়টিকে ।
এই
সময়ের বাংলাদেশে সবচেয়ে বড় সংকট কী ? গনতন্ত্রহীনতা । জনগনের ওপর জোর জবরদস্তি করে
সরকার ক্ষমতায় থাকা । জনগনের ওপর নির্বিচারে গুলি চালানো । রাজনৈতিক দলগুলোকে
সভা-সমাবেশ করতে না দেয়া । রাজনৈতিক দলগুলোর কার্যালয় বন্ধ করে রাখা । সরকারবিরোধী
পত্রপত্রিকা বন্ধ করে রাখা । এই সবগুলো করছে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকার
স্বৈরাচারীভাবে । আর এগুলোর মূল সূত্র হলো তত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করা ।
আমাদের
, তরুণদের করণীয় কী হওয়া উচিৎ ছিল ?
যখন
তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিল হলো তখন কেন আমরা তরুণরা এর প্রতিবাদে নামতে পারলাম না ?
আদালতের রায় ? কিসের আদালত ? বিচারপতি খায়রুল একাই আদালত ? তাহলে যেসব বিচারপতি তত্ত্বাবধায়ক
সরকারের উপদেষ্টা ছিলেন তাদের বিচার হবেনা কেন ? যদি অবৈধ হয় ,
তাহলে আগের বিচারপতিরা কীকরে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা হলেন ?
তরুনরা
সবসময় ন্যায়ের পক্ষে থাকার কথা ছিল । কিন্তু আজ তা না হয়ে সবাই হয়ে পড়েছে- দলপন্থি
। বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন, উনসত্তুরের গণঅভ্যুত্থান এবং স্বৈরাচার এরশাদ বিরোধী
আন্দোলনে তরুণেরা নেমে এসেছিল প্রতিবাদ আন্দোলনে । সবাই রাস্তায় নেমেছে তা নয়- কিন্তু
ভুমিকা রেখেছে যে যেভাবে যতটুকু সম্ভব । কবিরা কবিতা লিখেছে , সাংবাদিকরা সংবাদ লিখেছে । প্রয়োজনে সংবাদ লেখা লেখা থেকে বিরত
থেকেছে । ছাত্ররা ক্লাস বর্জন করেছে , রাস্তায় নেমে মিছিল সমাবেশ করেছে ।
বর্তমান
বাংলাদেশে তরুণ সমাজ নানাভাবে বিভক্ত হয়ে আছে । বিভক্তি আগেও ছিলনা তা নয় , কিন্তু
এখন মনে হয় আমরা খুব বেশি প্রান্তিকভাবে বিভক্ত । আজকের তরুণ সমাজের কেউ আওয়ামী
লীগ, কেউ বিএনপি, কেউ জামায়াত , কেউ বাম দল সমর্থক । কেউ কেউ ‘রাজনীতি ঘৃণাকরি’
দলের । হতে পারে , কিন্তু দুঃখজনক বিষয়টি হলো নিজ দলীয় স্বার্থ ছাড়া অন্য কোন
ন্যায়ানুগ ব্যাপারেও কাউকে কথা বলতে দেখা যায় না । বরং উল্টো কিছু তরুণ এতটাই
দলান্ধ যে, তারা সরকারী দলের পক্ষে সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের ন্যায্য দাবির আন্দোলনে
হামলা চালায় । সেটা আমরা দেখেছি ঢাকা ভার্সিটিতে কোটাবিরোধী আন্দোলনে এবং রাজশাহী
বিশ্ববিদ্যালয়ে সান্ধ্য কোর্স বিরোধী আন্দোলনকারীদের ওপর ছাত্রলীগের হামলার ঘটনায়
।
আপনি
যুদ্ধাপরাধের বিচার চান , কিন্তু গনতান্ত্রিক প্রক্রিয়া চালু রাখার দাবি করায় সমস্যা কী ? যুদ্ধাপরাধের বিচার চাওয়ার অর্থ কি
গনতন্ত্র হত্যাকে সমর্থন করা ?
শিবিরের
ছেলেরা সরকারের নানান অন্যায়ের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নেমেছে কিন্তু সে আন্দোলন সরাসরি
তত্ত্বাবধায়ক প্রতিষ্ঠার সার্বজনীন আন্দোলন ছিলনা । তবুও
বলতে হয় - তারাই তারুণ্যের কিছুটা দাবি
পুরণ করেছে । কিন্তু ছাত্রদল বা অন্যান্য ছাত্রসংগঠন গুলো কোন আন্দোলনেই নামেনি । প্রয়োজন ছিল, এখনো রয়েছে- সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে একই
দাবিতে আন্দোলনে নামা ।
ছাত্রলীগকে
নিয়ে আমি আশাবাদী হতে পারছি না , কিন্তু সকল তরুণের এখন এগিয়ে আসা উচিৎ । সর্বদলীয়
সার্বজনীন সংগ্রাম পরিষদ গঠন করে জনগনের অধিকার আদায়ের সংগ্রামে নামা ছাড়া এই
অবস্থা থেকে উত্তরণের কোন উপায় নেই ।
হে তরুণ
লজ্জিত হও । এই দেশের , এই দেশের মানুষের দুর্দশার কারণ তুমিও ।
একজন
তরুণ হিসেবে আমি লজ্জিত ।
১৯৫২
সালের ২১শে ফেব্রুয়ারি আমরা কী অর্জন করেছিলাম ? মাতৃভাষায় কথা বলার অধিকার ।
কিন্তু আজ কোন ভাষাতেই জনগনের ‘কথা বলার অধিকার’ই নেই । একের পর এক পত্রপত্রিকা
বন্ধ করা হয়েছে, টিভি বন্ধ করা হয়েছে , ৫৭ ধারার নামে একটি কালো আইন করা হয়েছে ।
ফেসবুকে সরকারবিরোধী লেখার ‘অপরাধে’ (!)
গ্রেপ্তার করা হয়েছে ।
আর আমরা
তরুণরা – সবাই, কী করেছি ? কী করছি ? আমাদের চেতনা আজ শুধু গুন্ডে সিনেমার বিরোধিতা । পাকিস্তানের বিবৃতির
প্রতিবাদ । আমাদের চেতনা হয়ে পড়েছে ‘হাওয়াই’ চেতনা । মন্ডা-মিঠাই চেতনা ।
আমরা
বাংলার ইতিহাসকে কলংকিত করছি । আমরা আমাদের পুর্বপুরুষের ইতিহাসকে কলংকিত করছি ।
হে তরুণ, লজ্জিত হও ।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন