এক রৌদ্রোজ্বল বিকেলে...

এক রৌদ্রোজ্বল বিকেলে...
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে

শুক্রবার, ২১ ফেব্রুয়ারী, ২০১৪

হে তরুণ, লজ্জিত হও



বিগত কয়েক বছরে বাংলাদেশে সবচেয়ে বিপর্যয়কর সিদ্ধান্ত হিসেবে আমি যেটাকে  বিবেচনা করি তা হলো তত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করার বিষয়টিকে ।
এই সময়ের বাংলাদেশে সবচেয়ে বড় সংকট কী ? গনতন্ত্রহীনতা । জনগনের ওপর জোর জবরদস্তি করে সরকার ক্ষমতায় থাকা । জনগনের ওপর নির্বিচারে গুলি চালানো । রাজনৈতিক দলগুলোকে সভা-সমাবেশ করতে না দেয়া । রাজনৈতিক দলগুলোর কার্যালয় বন্ধ করে রাখা । সরকারবিরোধী পত্রপত্রিকা বন্ধ করে রাখা । এই সবগুলো করছে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকার স্বৈরাচারীভাবে । আর এগুলোর মূল সূত্র হলো তত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করা ।
আমাদের , তরুণদের করণীয় কী হওয়া উচিৎ ছিল ?
যখন তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিল হলো তখন কেন আমরা তরুণরা এর প্রতিবাদে নামতে পারলাম না ? আদালতের রায় ? কিসের আদালত ? বিচারপতি খায়রুল  একাই আদালত ? তাহলে যেসব বিচারপতি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা  ছিলেন তাদের বিচার হবেনা কেন ? যদি অবৈধ হয় , তাহলে আগের বিচারপতিরা কীকরে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা হলেন ?

তরুনরা সবসময় ন্যায়ের পক্ষে থাকার কথা ছিল । কিন্তু আজ তা না হয়ে সবাই হয়ে পড়েছে- দলপন্থি । বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন, উনসত্তুরের গণঅভ্যুত্থান এবং স্বৈরাচার এরশাদ বিরোধী আন্দোলনে তরুণেরা নেমে এসেছিল প্রতিবাদ আন্দোলনে । সবাই রাস্তায় নেমেছে তা নয়- কিন্তু ভুমিকা রেখেছে যে যেভাবে যতটুকু সম্ভবকবিরা কবিতা লিখেছে , সাংবাদিকরা সংবাদ লিখেছে । প্রয়োজনে সংবাদ লেখা লেখা থেকে বিরত থেকেছে । ছাত্ররা ক্লাস বর্জন করেছে , রাস্তায় নেমে মিছিল সমাবেশ করেছে ।

বর্তমান বাংলাদেশে তরুণ সমাজ নানাভাবে বিভক্ত হয়ে আছে । বিভক্তি আগেও ছিলনা তা নয় , কিন্তু এখন মনে হয় আমরা খুব বেশি প্রান্তিকভাবে বিভক্ত । আজকের তরুণ সমাজের কেউ আওয়ামী লীগ, কেউ বিএনপি, কেউ জামায়াত , কেউ বাম দল সমর্থক । কেউ কেউ ‘রাজনীতি ঘৃণাকরি’ দলের । হতে পারে , কিন্তু দুঃখজনক বিষয়টি হলো নিজ দলীয় স্বার্থ ছাড়া অন্য কোন ন্যায়ানুগ ব্যাপারেও কাউকে কথা বলতে দেখা যায় না । বরং উল্টো কিছু তরুণ এতটাই দলান্ধ যে, তারা সরকারী দলের পক্ষে সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের ন্যায্য দাবির আন্দোলনে হামলা চালায় । সেটা আমরা দেখেছি ঢাকা ভার্সিটিতে কোটাবিরোধী আন্দোলনে এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে সান্ধ্য কোর্স বিরোধী আন্দোলনকারীদের ওপর ছাত্রলীগের হামলার ঘটনায় ।
আপনি যুদ্ধাপরাধের বিচার চান , কিন্তু গনতান্ত্রিক প্রক্রিয়া চালু রাখার দাবি করায়  সমস্যা কী ? যুদ্ধাপরাধের বিচার চাওয়ার অর্থ কি গনতন্ত্র হত্যাকে সমর্থন করা ?

শিবিরের ছেলেরা সরকারের নানান অন্যায়ের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নেমেছে কিন্তু সে আন্দোলন সরাসরি তত্ত্বাবধায়ক প্রতিষ্ঠার সার্বজনীন আন্দোলন ছিলনাতবুও  বলতে হয় - তারাই তারুণ্যের কিছুটা দাবি পুরণ করেছে ।  কিন্তু ছাত্রদল বা অন্যান্য ছাত্রসংগঠন গুলো কোন আন্দোলনেই নামেনি প্রয়োজন ছিল, এখনো রয়েছে- সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে একই দাবিতে আন্দোলনে নামা ।
ছাত্রলীগকে নিয়ে আমি আশাবাদী হতে পারছি না , কিন্তু সকল তরুণের এখন এগিয়ে আসা উচিৎ । সর্বদলীয় সার্বজনীন সংগ্রাম পরিষদ গঠন করে জনগনের অধিকার আদায়ের সংগ্রামে নামা ছাড়া এই অবস্থা থেকে উত্তরণের কোন উপায় নেই ।

হে তরুণ লজ্জিত হও । এই দেশের , এই দেশের মানুষের দুর্দশার কারণ তুমিও ।
একজন তরুণ হিসেবে আমি লজ্জিত ।

১৯৫২ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারি আমরা কী অর্জন করেছিলাম ? মাতৃভাষায় কথা বলার অধিকার । কিন্তু আজ কোন ভাষাতেই জনগনের ‘কথা বলার অধিকার’ই নেই । একের পর এক পত্রপত্রিকা বন্ধ করা হয়েছে, টিভি বন্ধ করা হয়েছে , ৫৭ ধারার নামে একটি কালো আইন করা হয়েছে । ফেসবুকে  সরকারবিরোধী লেখার ‘অপরাধে’ (!) গ্রেপ্তার করা হয়েছে ।
আর আমরা তরুণরা – সবাই, কী করেছি ? কী করছি ? আমাদের চেতনা আজ শুধু  গুন্ডে সিনেমার বিরোধিতা । পাকিস্তানের বিবৃতির প্রতিবাদ । আমাদের চেতনা হয়ে পড়েছে ‘হাওয়াই’ চেতনা । মন্ডা-মিঠাই চেতনা ।
আমরা বাংলার ইতিহাসকে কলংকিত করছি । আমরা আমাদের পুর্বপুরুষের ইতিহাসকে কলংকিত করছি ।
হে তরুণ, লজ্জিত হও ।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন