এক রৌদ্রোজ্বল বিকেলে...

এক রৌদ্রোজ্বল বিকেলে...
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে

রবিবার, ১৮ জুন, ২০১৭

পাগলের চোখে জল!

পাড়ার সবাই তাকে অনেকটা পাগলই মনে করতো...নাম তার আশেক। ঘর সংসারের কিছু সে বোঝে বলে আমরাও ভাবিনি। বাপের সাথে নদীতে মাছ ধরে, বাপের সাথে বাজারে যায়। বয়স যখন ১৮ কি ২০, হুট করে একদিন তার বিয়ে হয়ে গেল।
মাস ছয়-সাত পরের ঘটনা। বিকেল বেলায় ঘরে বসে একটা গল্পের বই পড়ছি। আঙিনায় আম্মার সাথে চাচীরা গল্প করছেন। সবার ভেতর বেশ চাপা উত্তেজনা। আশেকের বউয়ের নাকি এবরশন হয়ে গেছে। তার চেয়ে আশ্চর্যের কথা শুনলাম, এবং আমি নিজেও গিয়ে দেখলাম মরা বাচ্চাটা কোলে নিয়ে হুহু করে কাঁদছে পাগলাটে আশেক!!!
সবার মত আমিও খুবই অবাক হয়ে গেলাম। এবরটেড একটা বাচ্চার জন্য... পাগলের চোখে জল... ইজ ইট ফাদারস লাভ?
বুঝলাম, টু বি এ ফাদার, মে বি দেয়ার ইজ সামথিং এক্সট্রাওর্ডিনারি ফিলিংস ইনডিড...
২.
মোজাম্মেল সাহেবের সাথে তার ছেলেদের সম্পর্ক ভালো ছিলনা। প্রায়ই দেখা যেত ও বাড়িতে হৈ চৈ লেগে আছে। ছেলেদের সাথে চিৎকার চেঁচামেচি করছেন। গায়ে হাতও তুলতেন। ছেলেরা কান্নাকাটি করতো, ঘর ছেড়ে বেড়িতে যেত... এসব কিছুই ছিল নিত্যদিনের ঘটনা।
সেদিন মোজাম্মেল সাহেব তার অফিসের কাজে দূরে কোথাও গিয়েছেন। এদিকে তার এক ছেলে রাস্তায় এক্সিডেন্ট করে মাথা ফাটিয়ে ফেলেছে। তাকে হাসপাতালে নেয়া হয়েছে। রাতে মোজাম্মেল সাহেব বাড়িতে ফিরলে তাকে খবরটা জানানো হলো।
তিনি ঘরের দরজা বন্ধ করে হুহু করে কাঁদতে লাগলেন। দরজার বাইরে থেকে অবাক বিস্ময়ে আমরা তার কান্নার চাপা শব্দ শুনতে পেলাম।
৩.
সিনিয়র কলিগ বলছিলেন, বাবা হও তখন বুঝবা, বাচ্চা কী জিনিস!! বাচ্চাটা যখন কাঁদে, তখন আমার বুকের ভেতরটা হুহু করে ওঠে। কি ঘুম, কি কাজ... কোনকিছুই ঠিক থাকে না।
বেকায়দা প্রশ্ন করা আমার বদভ্যাস। আমি প্রশ্ন করে বসলামঃ ভাই, ধরেন আপনি ঘুমাচ্ছেন। পাশের বাসার বাচ্চাটা খুব কাঁদছে। তখন তার জন্যও কি আপনার খুব মায়া হয়?
বড় ভাই বললেন, না। তখন বিরক্ত লাগে। আসলে নিজের বাচ্চার জন্য যে অনুভূতি, অন্যের বাচ্চার ক্ষেত্রে সেরকম না। এটা এমন এক ধরণের ভালোবাসা, যা আল্লাহ বিশেষভাবে বাবাদের অন্তরে সৃষ্টি করে দেন।
৪.
বাবারা সন্তানদের ভালোবাসেন। কিন্তু তারা সেটা বোঝাতে পারেন না। মায়ের চেয়ে বাবার সাথেই কেন যেন দূরত্বটা বেশি থাকে। একটা কারণ হলো, বাবারা বাচ্চাদের সাথে বেশি সময় কাটান না। আর যতক্ষণ থাকেন শুধুই শাসন করেন। একটা সময় তারা হয়ে ওঠেন শুধুই ডিক্টেটর। শুধুই মানি সাপ্লায়ার।
অনেকেই ভালোবাসার বদলে সব সময় একনিষ্ঠ আনুগত্য চান। অনেকেই ছেলেমেয়েদের মনে করেন নিজস্ব 'সম্পত্তি'। তাদের স্বাধীন অস্তিত্ব স্বীকার করতে চান না। তাদের চিন্তাভাবনাকে মোটেও আমলে না নিয়ে, আলোচনার বদলে সবখানেই নিজের সিদ্ধান্তটা চাপিয়ে দিতে চান।
ফলে বাবাদের সাথে সন্তানের তৈরি হয় অদৃশ্য দেয়াল, অনেক দূরত্ব।
এটা ভুল। এটা ক্ষতিকর।
যারা বাবা হয়েছেন, সন্তানদের সাথে মিশুন। তাদেরকে সময় দিন। Be a friend of your child... Let them feel the love you bear for them...
সন্তানদের সৎ, চরিত্রবান ও মানবিক হিসেবে গড়ে তুলুন।
অন্যথায় সে হয়তো বড় অফিসার হবে, কিন্তু আপনাকে রেখে আসবে কোন এক 'ওল্ড হোমে'। এরকম 'বাবা দিবস' গুলোয় হয়তো আপনাকে দিয়ে আসবে কিছু ফুল।
অখন্ড অবসরে তখন আপনার সম্বল হবে কিছু অশ্রুবিন্দু।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন