এক রৌদ্রোজ্বল বিকেলে...

এক রৌদ্রোজ্বল বিকেলে...
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে

রবিবার, ১১ জুন, ২০১৭

কম আর পরিমিত রিযকই সর্বোত্তম

হযরত আলী(রাঃ) একবার মসজিদে নামাজ পড়তে ঢোকার সময় দেখলেন একটা বাচ্চা ছেলে মসজিদের বাইরে দাঁড়িয়ে আছে। তিনি ছেলেটাকে ডেকে বললেন- বাপু তুমি আমার বর্মটা কিছুক্ষণ রাখো, নামাজ শেষে আবার নিয়ে নেবো।
হযরত আলী (রাঃ) নামাজ শেষে ফিরে দেখলেন ছেলেটি তার জায়গায় নেই। আশেপাশে খোঁজাখুঁজি করেও তাকে পেলেন না। পরে বাজারে গেলে তাঁর চোখে পড়ে, এক দোকানে তাঁরই বর্মটি বিক্রির জন্য রাখা আছে। তিনি দোকানিকে জিজ্ঞেস করলেন- এই বর্ম কোথায় পেলেন? দোকানি বললো- এক বাচ্চা ছেলে বিক্রি করে গেছে। হযরত আলী জানতে চান- এটাতো আমার বর্ম, সে কত টাকায় বিক্রি করেছে? দোকানি জানায়- মাত্র ২ দিরহাম।
হযরত আলী আফসোস করে বললেন, "আহা! আমি তাকে ঠিক দুই দিরহামই বখশিস দেয়ার ইচ্ছা করেছিলাম। সে যদি আর কিছুক্ষণ দাঁড়াতো, তাহলে সে চুরি না করেই দুই দিরহাম পেয়ে যেত।"
রিযিকের জন্য আমরাও এরকম অধৈর্য হয়ে যাই। বৈধতা অবৈধতার তোয়াক্কা করি না। অথচ প্রত্যেকের জন্য আল্লাহ তায়ালা রিযিক নির্দিষ্ট করে দিয়েছেন। যার জন্য যতটুকু রিযিক বরাদ্দ করা হয়েছে, তার একবিন্দু পরিমাণ বাকি থাকতে কেউ মৃত্যুবরণ করবে না।
রিযিক নির্দিষ্টই। তবে একজন মানুষ সেটা বৈধ (হালাল) ভাবে উপার্জন করবে, নাকি অবৈধ (হারাম) ভাবে উপার্জন করবে সেটাই তার জন্য পরীক্ষা। কেউ ঐ ছেলেটির মত চুরি করে ২ দিরহাম আয় করতে পারে, আবার কেউ আরেকটু অপেক্ষা করে ২ দিরহাম বখশিসও পেতে পারে।
২.
সম্পদের পরিমাণের ওপর আমরা একজন মানুষের সাফল্য ব্যর্থতা নির্ণয় করি। আমাদের সমাজের চোখও এভাবেই বিচার করে। আরে অমুকে তো এই সেই করে ফেললো, গাড়ি কিনলো, ফ্ল্যাট কিনলো, এত টাকা তার পার মান্থ ইনকাম-- বলতে বলতে আমাদের চোখ চকচক করে ওঠে। অথবা হতাশায় চোখ বন্ধ হয়ে আসে।
কিন্তু ধন সম্পদ আল্লাহ যাকে ইচ্ছা তাকে দেন। এটা কারো যোগ্যতা অযোগ্যতার ওপর নির্ভর করেনা। আবার ধন সম্পদ কারো সাফল্য ব্যর্থতার মাপকাঠিও নয়। আমরা আমাদের আশেপাশে তাকালেই এটা বুঝতে পারবো। অনেক মানুষকেই দেখি- যার খুব বেশি জ্ঞান বা যোগ্যতা নেই। কোন বিষয়ে মতামত দিতে বললে কিছু বলতে পারেনা, কোন মজলিশে কথা বলতে দিলে থতমত খেয়ে যাবে, কাজেকর্মেও খুব একটা পটু নয়- অথচ তার ধন সম্পদ অনেক। আবার অনেক অনেক জ্ঞানী, যোগ্য, দক্ষ লোকও অভাবে দিন কাটান।
পৃথিবীর ইতিহাসে অনেক মহামানব না খেয়ে দিন কাটিয়েছেন, ছিন্ন বস্ত্র পরিধান করেছেন, জীর্ণ কুটিরে রাত কাটিয়েছেন। আবার অসংখ্য নরাধম নরপশু জীবন কাটিয়ে গেছে প্রাচুর্যের সমূদ্রে।
কেউ কেউ উত্তরাধিকার সূত্রেই অনেক সম্পদের মালিক হয়, আবার কেউ কেউ অনেক কষ্ট করেও সম্পদশালী হতে পারে না। কেউ সামান্য ব্যবসা থেকেই ফুলে ফেঁপে ওঠে, কেউবা ব্যবসায় নেমেই দেউলিয়া হয়ে যায়।
আল্লাহর একটি নামই হলো- আর রাজ্জাক। তিনিই রিযিকদাতা।
হাদীসে আছে, মায়ের পেটে ভ্রুণের ৪ মাস বয়স হলে আল্লাহর নির্দেশে একজন ফেরেশতা প্রত্যেকের জন্য চারটি বিষয়ে তাকদীর নির্দিষ্ট করে দেন। তার মধ্যে একটি হলো রিযিক।
"আল্লাহ তাঁর বান্দাদের মধ্যে যার জন্য ইচ্ছা করেন রিয্ক প্রশস্ত করে দেন এবং যার জন্য ইচ্ছা সীমিত করে দেন। নিশ্চয় আল্লাহ সকল বিষয়ে সম্যক অবগত।" (সূরা আনকাবুত:৬২)
৩.
আমরা কতটুকু খাই? কতটা কাপড় হলে শরীর ঢাকা যায়? আমাদের থাকার জন্য কতটুকু জায়গা প্রয়োজন? খুব বেশি নিশ্চয়ই নয়!! কারণ, মানুষের পেটের ধারণক্ষমতা যেমন অসীম নয়, শরীরের আয়তনও তেমনি সীমাবদ্ধ।
অথচ তবু আমরা অল্প সম্পদে সন্তুষ্ট হতে পারি না। বেশি সম্পদের জন্য কত প্রতিযোগিতা!! ধন-সম্পদের পেছনে কত ছোটাছুটি!! সম্পদের জন্য কত হানাহানি।
তাছাড়া, অতিরিক্ত সম্পদ মানেই কঠিন পরীক্ষা। আবার অনেক কম সম্পদও একটা পরীক্ষা। এই দুই অবস্থাতেই মানুষ নিজের ওপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে। খারাপ কাজে জড়িয়ে পড়ে। আল্লাহ তায়ালা কখনো বেশি সম্পদ দিয়ে পরীক্ষা করেন, কখনো অভাব দিয়ে পরীক্ষা করেন।
হযরত ওমর (রাঃ) তাই সবসময় দোয়া করতেন- ইয়া আল্লাহ! আমাকে যেন এত বেশি সম্পদ না দেন যাতে আমি সীমালংঘন করে বসি, আবার এত কম যেন না দেন যাতে কর্তব্য থেকে বিচ্যুত হতে হয়।
কম আর পর্যাপ্ত রিযকই হলো মানুষের জন্য সর্বোত্তম।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন