এক রৌদ্রোজ্বল বিকেলে...

এক রৌদ্রোজ্বল বিকেলে...
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে

শুক্রবার, ১ সেপ্টেম্বর, ২০১৭

অবাস্তব শিক্ষাব্যবস্থা আমাদেরকে জাতীয়ভাবে পঙ্গু করে রেখেছে

অবাস্তব শিক্ষাব্যবস্থা আমাদেরকে জাতীয়ভাবে পঙ্গু করে রেখেছে। আমাদের দেশে শিক্ষা মানে শুধুই বুকিশ নলেজ। এখানে প্রাক্টিকাল কিছুই শেখানো হয়না। যেমন, পৃথিবীর সপ্তাশ্চর্য শেখানো হয়, উগান্ডার রাজধানীর নাম শেখানো হয়, আমাজন জঙ্গলের প্রাণীদের নাম মুখস্ত করানো হয়। কিন্তু সাঁতার শেখানো হয় না।
সাতার না জানার কারণে প্রতিবছর কত শিশু কিশোর এবং বয়স্ক মানুষ মারা যায় ধারণা আছে? লঞ্চডুবিতে, লেকের পানিতে, নদীতে, পুকুরে ডুবে কত মানুষ মারা যায়? সাতার জানলে নিশ্চয় এত মানুষ মারা যেতো না।
স্কুলগুলোতে শত শত পৃষ্ঠার বুকিশ জ্ঞান দেয়া হয়, সাতার শেখানো হয়না কেন? কারণ, এটাকে কোন শিক্ষা মনে করা হয় না।
জীবন বাঁচানোর জ্ঞান না দিয়ে আমাদের শুধু দেয়া হচ্ছে 'চাকরি পাবার' জ্ঞান।
আমি মনে করি, ১০ বছর বয়সের মধ্যে প্রত্যেক শিশুর সাতার শেখা বাধ্যতামূলক করা দরকার।
তারপর ধরুন, সাইকেল চালানো। সাইকেল চালাতে পারা একটা বেসিক স্কিল। কিন্তু কোন স্কুলে কি সাইকেল চালানো শেখায়? আমি অবাক হই, অসংখ্য ছেলে সাইকেল চালাতে পারেনা। মোটরসাইকেল বা কার ড্রাইভিং- এগুলোও বেসিক স্কিল। কিন্তু কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এইসব শেখানো হয় না। শিক্ষানীতিতে, শিক্ষাব্যবস্থায় এর কোন গুরুত্ব নেই।
বাচ্চাদের আত্মরক্ষার কৌশল শেখানো খুব জরুরি। বিশেষ করে মেয়েদের। কিছুদিন আগে মিরপুরে এক ইভটিজারকে ক্লাস সিক্স পড়ুয়া দুইটা বাচ্চা মেয়ে ব্যাপক প্যাদানি দিয়ে হাত ভেঙে দিয়েছিল। কারণ, ঐ বাচ্চারা তায়কোয়ান্দো জানতো।
কিন্তু কোন স্কুলে, কলেজে কোথাও আত্মরক্ষার কোন শিক্ষা দেয়া হয় না। ড্রিল ক্লাস বা শারীরিক শিক্ষা নামে যে ক্লাস হয় তা নামকাওয়াস্তে কিছু ইনডোর গেমস দিয়ে শেষ করা হয়।
স্কুলের বাচ্চারা কি জানে, কীভাবে ধান রোপন করতে হয়? কীভাবে ধানক্ষেতে সেচ দেয়া হয়? কীভাবে ধান মাড়াই করা হয়?
কৃষি শিক্ষা বইয়ে অনেক থিওরি আছে, কিন্তু বাস্তবে আমি কখনো দেখিনি স্কুলের বাচ্চাদের কোন ক্ষেতখামারে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এই বাচ্চারা বই-পুস্তকে কৃষকদের চেহারা দেখে, ধুলিমলিন খালি গায়ের কিছু মানুষ। তারা শুধু জানে- কৃষকেরা গরীব। অনেকেই এই কৃষকদের তুচ্ছতাচ্ছিল্য করতে শিখে যায়। ফসল ফলানো যে একটা মহৎ কাজ, জরুরি কাজ, এইটা কেউ উপলব্ধি করতে শেখে না। ধান উৎপাদন করার আগ্রহ কারো জন্মে না, সবাই শুধু শেখে ধান বিক্রির হিসাব। সুদের হার আর লাভ ক্ষতির হিসাব।
আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা আমাদের উৎপাদন করতে শেখায় না, শেখায় মধ্যস্বত্ত্ব ভোগী হতে।
কর্মমুখী শিক্ষার নামে যে কারিগরি বিভাগ চালু আছে, সেখানেও থিওরির কপচানি বেশি, বাস্তব কাজ শেখানো হয় খুবই কম। ঘরের একটা ইলেক্ট্রিক বাতি নষ্ট হলে আমরা ক'জন সেটা নিজে নিজে ঠিক করতে জানি? এই বেসিক শিক্ষাগুলো কি আমাদের স্কুল কলেজ থেকে পেয়ে আসা উচিত ছিলনা?
যতদিন শুধু এইরকম হাওয়াই জ্ঞাননির্ভর শিক্ষাব্যবস্থা চালু থাকবে, ততদিন আমরা অনেক শিক্ষিত 'তত্ত্ববাগীশ' জ্ঞানী মানুষ পেতে থাকবো। কিন্তু প্রকৃত অর্থে আমাদের অবস্থার উন্নতি হবে না

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন