এক রৌদ্রোজ্বল বিকেলে...

এক রৌদ্রোজ্বল বিকেলে...
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে

বুধবার, ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৭

পাত্র পছন্দের ক্ষেত্রে কোন বিষয়কে গুরুত্ব দেয়া উচিত?

পাত্রী নিয়ে যত কথা বলা হয়, পাত্র নিয়ে তত কথা বলা হয় না। কারণটা পুরুষের সামাজিক আধিপত্য। সবসময় ছেলেরাই পাত্রী পছন্দ করে, পাত্র পছন্দের ক্ষেত্রে মেয়েদের অংশগ্রহণ ছিলনা বললেই চলে। যদিও এটা ধর্মীয়ভাবে স্বীকৃত এবং অত্যাবশ্যক।
পাত্র পছন্দের ক্ষেত্রে কোন বিষয়কে গুরুত্ব দেয়া উচিত? এই প্রশ্নের উত্তরে আমরা তিন-চারটি বিয়ের ঘটনা উল্লেখ করবো। দেখা যাক, ইতিহাসের শ্রেষ্ঠ মানুষেরা কীভাবে পাত্র পছন্দ করেছেন।
১.
মুসলিম নারীদের মধ্যে অন্যতম সম্মানিত নারী হলেন খাদিজা (রাঃ)। তিনি সম্মানিত রাসুলের স্ত্রী হিসেবে, সেই সাথে তার নিজের মহান কর্মকান্ডের কারণে। মজার ব্যাপার হলো, মুহাম্মাদ (সাঃ) তাকে বিয়ের প্রস্তাব দেননি। তিনিই মুহাম্মাদ (সাঃ) কে বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছিলেন।
তিনি যখন রাসুল (সাঃ) কে বিয়ের প্রস্তাব দেন তখন তাঁর বয়স ৪০। ইতোপূর্বে তার দু'বার বিয়ে হয়েছিল। তিনি ছিলেন বড় মাপের ব্যবসায়ী ও ধনী মহিলা।
বয়স ও অভিজ্ঞতায় তিনি ছিলেন পরিপক্ক। সুতরাং খাদিজা অল্পবয়সী কিশোরী তরুণিদের মত আবেগে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলার সুযোগ আমাদের হাতে থাকছে না। এছাড়া, তার ছিল সংসার করার অভিজ্ঞতা। এর আগে তার দু'বার বিয়ে হয়েছিল। একজন স্বামী মারা যান, আরেকজনের সাথে ছাড়াছাড়ি হয়ে যায়।
অতএব তিনি জানতেন, সংসার করার জন্য কেমন পুরুষ দরকার। সেজন্য তার বিবেচনাকে অগ্রাহ্য করার কোন সুযোগ আমাদের হাতে নাই।
মক্কায় সেসময় অনেক ধনাঢ্য লোক ছিল। বড় ব্যবসায়ী ছিল। অনেক গোত্রপতি ছিল। খাদিজাকে বিয়ে করার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করেছিল অনেকেই।
অপরদিকে মুহাম্মাদ (সাঃ) ছিলেন এতিম। চাচা আঃ মুত্তালিবের আশ্রয়ে লালিত। ২৫ বছর বয়সে তিনি নিজে তেমন একটা ধনীও ছিলেন না। মুহাম্মাদ (সা) এর চাচা আবু তালিবের আর্থিক অবস্থাও সেসময় ভালো ছিলনা।
তবু কী কারণে তাঁকে পছন্দ করেছিলেন খাদিজা?
উত্তরটা হলোঃ তিনি পছন্দ করেছিলেন মুহাম্মাদের সততা, বিশ্বস্ততা এবং উত্তম চরিত্র।
মুহাম্মাদ (সাঃ) এর বয়স যখন পঁচিশ বছর, তখন চাচা আবু তালিব একদিন তাঁকে ডেকে বললেনঃ ভাতিজা, আমি একজন বিত্তহীন মানুষ। সময়টাও আমাদের জন্য খুব সঙ্কটজনক। আমরা মারাত্মক অভাবের মধ্যে আছি। আমাদের কোন ব্যবসা বা অন্য কোন উপায়-উপকরণ নেই। তোমার গোত্রের একটি বাণিজ্য কাফেলা সিরিয়ায় যাচ্ছে। খাদিজা তার পণ্যের সাথে পাঠানোর জন্য কিছু লোকের খোঁজ করছে। তুমি যদি তার কাছে যেতে, হযতো তোমাকে সে নির্বাচন করতো। তোমার চারিত্রিক নিস্কলুষতা তার জানা আছে। যদিও তোমার সিরিয়া যাওয়া আমি পছন্দ করিনা এবং ইহুদীদের পক্ষ থেকে তোমার জীবনের আশঙ্কা করি, তবুও এমনটি না করে উপায় নেই।
সেবছর মুহাম্মাদ (সাঃ) মজুরির বিনিময়ে খাদিজার বাণিজ্য কাফেলার দায়িত্ব নেন। এই সফরের সঙ্গীরা খাদিজার কাছে মুহাম্মাদের ব্যবহার ও চরিত্রের ভূয়সী প্রশংসা করেন। যদিও আগে থেকেই জানতেন, এবার খাদিজা মুহাম্মাদকে বিয়ের সিদ্ধান্ত নেন।
তিনি তার একজন দূতের মাধ্যমে মুহাম্মাদ (সাঃ)কে বলেনঃ হে আমার চাচাতো ভাই! আপনার বিশ্বস্ততা, সততা ও উন্নত নৈতিকতা আমাকে মুগ্ধ করেছে।
খাদিজার প্রতিনিধি নাফিসা বিনতে মুনইয়া'র ভাষায়ঃ মুহাম্মদ সিরিয়া থেকে ফেরার পর তাঁর মনোভাব জানার জন্য খাদিজা আমাকে পাঠালেন। আমি তাঁকে বললামঃ মুহাম্মদ! আপনি বিয়ে করছেন না কেন? তিনি বললেন, বিয়ে করার মতো অর্থ তো আমার হাতে নেই। বললামঃ যদি আপনাকে একটি সুন্দর প্রস্তাবের প্রতি আহবান জানানো হয়, অর্থ-বিত্ত, মর্যাদা ও অভিজাত বংশের প্রস্তাব দেওয়া হয়, রাজি হবেন? বললেনঃ কে তিনি? বললামঃ খাদিজা। বললেনঃ এ আমার জন্য কিভাবে সম্ভব হতে পারে? বললামঃ সে দায়িত্ব আমার।
তিনি রাজি হয়ে গেলেন।
পরে খাদিজা (রাঃ) নিজেই মুহাম্মাদ (সাঃ) এর সাথে কথা বলেন এবং তাঁর পিতার নিকট প্রস্তাবটি উত্থাপনের জন্য মুহাম্মাদকে (সাঃ) অনুরোধ করেন। কিন্তু মুহাম্মাদ (সাঃ) এই বলে অস্বীকৃতি জানান যে, দারিদ্র‍্যের কারণে হয়তো খাদিজার বাবা তাঁকে প্রত্যাখ্যান করবেন। অবশেষে খাদিজা নিজেই বিষয়টি তাঁর পিতার কাছে উত্থাপন করেন।
খাদিজা(রাঃ)র বাবা এই প্রস্তাবে রাজি ছিলেন না। তিনি বলেছিলেনঃ তোমাকে আমি আবু তালিবের এই এতিমের সাথে বিয়ে দিব? আমার জীবনের শপথ! কক্ষণও তা হবে না। কুরাইশ বংশের শ্রেষ্ঠ সন্তানরা তোমাকে বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছে, আর মুহাম্মদের সাথে আমি তোমাকে বিয়ে দেবো?
পরে খাদিজা কৌশলে বাবার সম্মতি আদায় করেন, এবং বিয়ে সম্পন্ন হয়।
খাদিজা (রাঃ) নিজেই উভয় পক্ষের যাবতীয় খরচ বহন করেছিলেন। তিনি দুই উকিয়া সোনা ও রুপা মুহাম্মাদ (সাঃ) এর কাছে পাঠান এবং তা দিয়ে উভয়ের পোশাক ও ওয়ালিমার ব্যবস্থা করতে বলেন। (তথ্যসূত্রঃ আসহাবে রাসুলের জীবন কথা)
চলবে...
(বিবাহ কথন- ৩২) 

২. 
নির্যাতনের শিকার নিজ গোত্রের একজন মানুষকে বাঁচাতে গিয়ে নির্যাতনকারী ব্যক্তিকে আঘাত করে বসেন মুসা (আঃ)। এতে ঐ লোক মারা যায়। অনাকাংখিত এই দুর্ঘটনায় মুসা (আঃ) খুব কষ্ট পান। পরে তার কাছে খবর আসে যে তাঁকে হত্যার জন্য ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। শুভাকাঙ্ক্ষীদের পরামর্শে মিশর ছেড়ে মাদিয়ানে (জর্ডান) চলে যান মুসা (আঃ)।
মাদিয়ানে প্রবেশ করে তিনি একটা কূপের কাছে পৌঁছলেন। দেখলেন, সেখান থেকে সবাই পানি নিচ্ছে, কিন্তু দু’টি মেয়ে তাদের তৃষ্ণার্ত পশুগুলি সহ অসহায়ভাবে দূরে দাঁড়িয়ে আছে। কেউ তাদের দিকে ভ্রুক্ষেপ করছে না। তারাও পানি নিতে পারছে না।
মুসা (আঃ) মেয়ে দু’টির দিকে এগিয়ে গেলেন। তিনি তাদের সমস্যার কথা জিজ্ঞেস করলে তারা বলল, ‘আমরা আমাদের পশুগুলিকে পানি পান করাতে পারি না, যতক্ষণ না রাখালরা তাদের পশুগুলিকে পানি পান করিয়ে চলে যায়। আর আমাদের পিতা খুবই বৃদ্ধ’ (যিনি ঘরে বসে আমাদের অপেক্ষায় উদগ্রীব হয়ে আছেন)।
মুসা (আঃ) তাদের পশুগুলোকে পানি পান করালেন’ (তারপর মেয়ে দু’টি পশুগুলি নিয়ে বাড়ী চলে গেল)।
তারপর মুসা একটি গাছের ছায়ায় বসে বিশ্রাম নিচ্ছিলেন। তিনি আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করলেন, ‘হে আমার পালনকর্তা! তুমি আমার উপর যে অনুগ্রহ নাযিল করবে, আমি তারই মুখাপেক্ষী’।
কিছুক্ষণ পর ঐ দুজন মেয়ের একজন সলজ্জ পদক্ষেপে তাঁর কাছে এগিয়ে এলো। মেয়েটি এসে লজ্জাজড়িত কণ্ঠে মুসাকে বলল, ‘আমার পিতা আপনাকে ডেকেছেন, যাতে আপনি যে আমাদের পশুগুলোকে পানি পান করিয়েছেন, তার বিনিময় স্বরূপ আপনাকে পুরস্কার দিতে পারেন’।
এই মেয়েদের বাবা ছিলেন মাদিয়ানবাসীদের কাছে প্রেরিত নবী হযরত শুআইব (আঃ)। মুসা (আঃ) ইতোপূর্বে কখনো তাঁর নাম শোনেননি বা তাঁকে চিনতেন না। তাঁর কাছে পৌঁছে মুসা (আঃ) সব বৃত্তান্ত বর্ণনা করলেন। শুআইব (আঃ) সবকিছু শুনে বললেন, ‘ভয় করো না। তুমি যালেম সম্প্রদায়ের কবল থেকে মুক্তি পেয়েছ’।
এমন সময় দুই মেয়ের একজন বলল, আব্বাজান! তাকে আমাদের বাড়িতে চাকরি দিয়ে নিয়োগ দিন। আপনার সাহায্যকারী হিসাবে এমন একজনই উত্তম হবে, যে শক্তিশালী এবং বিশ্বস্ত।
শুয়াইব (আঃ) ছিলেন একজন নবী ও বুদ্ধিমান মানুষ। তিনি মেয়ের মনের কথা বুঝতে পারলেন। তিনি মুসা (আঃ) কে বললেন, আমি আমার মেয়েদের একজনকে তোমার সাথে বিয়ে দিতে চাই।
মুসা রাজী হলেন। তারপর, আট থেকে দশ বছর তাঁদের সাথে থাকার শর্ত দিয়ে শুয়াইব (আঃ) তাঁর মেয়েকে মুসা (আঃ) এর সাথে বিয়ে দিলেন।
এভাবে শুয়াইব (আঃ) ও তাঁর মেয়ে এমন একজন যুবককে পাত্র হিসেবে বাছাই করলেন, ঐ বিদেশ বিভূঁইয়ে যিনি ছিলেন একজন নিঃস্ব, সহায়-সম্বলহীন মানুষ। খুনের দায়ে পলাতক এক ফেরারি যুবক।
সাহস, পরোপকারিতা আর বিশ্বস্ততাই ছিল শুয়াইব (আঃ) ও তার মেয়ের চোখে মুসা (আঃ) এর আসল গুণ, যেকারণে শুয়াইব (আঃ) এর মেয়ে তাঁকে নিজের স্বামী হিসেবে বাছাই করেছিলেন।
(তথ্যসূত্রঃ সুরা কাসাস, ২৩-২৮)
(বিবাহ কথন- ৩৩) চলবে... 

৩. ফাতেমা (রাঃ) কে বিয়ের জন্য রাসুল (সাঃ) এর কাছে আরো অনেকের মত প্রস্তাব নিয়ে গিয়েছিলেন হযরত আবু বকর এবং ওমরও (রাঃ)। কিন্তু রাসুল (সাঃ) বিনয়ের সাথে, ভদ্রোচিতভাবে তাদের প্রস্তাব ফিরিয়ে দেন।
দারিদ্র‍্যের কারণে রাসুল (সাঃ) এর কাছে ফাতিমাকে বিয়ের প্রস্তাব দিতে সাহস করতে পারছিলেন না হযরত আলী (রাঃ)। তখন অনেকেই আলী (রাঃ) কে উৎসাহিত করেন রাসুলের কাছে ফাতিমার ব্যাপারে প্রস্তাব নিয়ে যাওয়ার জন্য।
অনেকের প্ররোচনা ও উৎসাহে একদিন তিনি সাহস সঞ্চয় করে এগিয়ে গেলেন।
তাঁর ভাষায়ঃ অবশেষে আমি একদিন রাসুলুল্লাহর (সাঃ) নিকট গেলাম। তাঁর সামনে বসার পর আমি যেন বোবা হয়ে গেলাম। তাঁর মহত্ত্ব ও তাঁর মধ্যে বিরাজমান গাম্ভীর্য ও ভীতির ভাবের কারণে আমি কোন কথাই বলতে পারলাম না। এক সময় তিনিই আমাকে প্রশ্ন করলেনঃ কী জন্য এসেছো? কোন প্রয়োজন আছে কি? আমি চুপ করে থাকলাম। রাসুল (সাঃ) বললেনঃ নিশ্চয় ফাতিমাকে বিয়ের প্রস্তাব দিতে এসেছো?
আমি বললামঃ হ্যা। তিনি বললেনঃ তোমার কাছে এমন কিছু আছে কি, যা দ্বারা তুমি তাকে হালাল করবে? বললামঃ আল্লাহর কসম, ইয়া রাসুলুল্লাহ! নেই। তিনি বললেনঃ যে বর্মটি আমি তোমাকে দিয়েছিলাম সেটা কী করেছো?
বললামঃ সেটা আমার কাছে আছে। আলীর জীবন যে সত্তার হাতে- তাঁর কসম, সেটা তো একটি “হুতামী” বর্ম। তার দাম চার দিরহামও হবে না।
রাসুল (সাঃ) বললেনঃ আমি তারই বিনিময়ে ফাতিমাকে তোমার সাথে বিয়ে দিলাম। সেটা তার কাছে পাঠিয়ে দাও এবং তা দ্বারাই তাকে হালাল করে নাও।
আলী (রাঃ) খুব দ্রুত বাড়ি গিয়ে বর্মটি নিয়ে আসেন। কনের সাজগোজের জিনিসপত্র কেনার জন্য রাসুল (সাঃ) সেটি বিক্রি করতে বলেন।
বর্মটি উসমান ইবন আফফান (রাঃ) চারশ সত্তর দিরহাম দিয়ে কিনে নেন। এই অর্থ রাসূলুল্লাহর (সাঃ) হাতে দেয়া হয়। তিনি তা বিলালের (রাঃ) হাতে দিয়ে কিছু আতর-সুগন্ধি কিনতে বলেন, আর বাকি যা থাকে উম্মু সালামার (রাঃ) হাতে দিতে বলেন। যাতে তিনি তা দিয়ে কনের সাজগোজের জিনিস কিনতে পারেন।
সবকিছু ঠিকঠাক হয়ে গেলে রাসুল (সাঃ) সাহাবীদের ডেকে পাঠান। তাঁরা উপস্থিত হলে তিনি ঘোষণা দেন যে, তিনি তাঁর মেয়ে ফাতিমাকে চারশ মিছকাল রূপার বিনিময়ে আলী(রাঃ)র সাথে বিয়ে দিয়েছেন। তারপর আরবের প্রথা অনুযায়ী কনের পক্ষ থেকে রাসুল (সাঃ) ও বর আলী (রাঃ) নিজে সংক্ষিপ্ত খুতবা দান করেন। তারপর উপস্থিত অতিথি সাহাবায়ে কিরামের মধ্যে খোরমা ভর্তি একটা পাত্র উপস্থাপন করা হয়।
এভাবে অতি সাধারণ ও সাদাসিধে ভাবে আলীর সাথে নবী দুহিতা ফাতিমাতুয যাহরার বিয়ে সম্পন্ন হয়। স্থাপিত হয় ইসলামের ইতিহাসে একটি মহান গৌরবময় বৈবাহিক সম্পর্ক।
হিজরী দ্বিতীয় সনে, বদর যুদ্ধের পর আলী (রা) তাঁর স্ত্রীকে উঠিয়ে নেয়ার জন্য একটি ঘর ভাড়া করতে সক্ষম হন। সে ঘর ছিল অতি সাধারণ মানের। বিত্ত-বৈভবের কোন স্পর্শ সেখানে ছিল না। ছিলনা কোন মূল্যবান আসবাব পত্র, খাট-পালঙ্ক, জাজিম, গদি, কোনোকিছুই। ‘
আলীর (রাঃ) ছিল কেবল একটি ভেড়ার চামড়া, সেটি বিছিয়ে তিনি রাতে ঘুমাতেন আর দিনে সেটি মশকের কাজে ব্যবহার হতো। কোন চাকর-বাকরও ছিল না। আসমা বিনত উমাইস (রাঃ), যিনি আলী-ফাতিমার (রাঃ) বিয়ে ও তাঁদের বাসর ঘরের সাজ-সজ্জা প্রত্যক্ষ করেছিলেন, বলেছেন, খেজুর গাছের ছাল ভর্তি বালিশ-বিছানা ছাড়া তাঁদের আর কিছুই ছিল না।
আলী (রাঃ) তাঁর একটি বর্ম এক ইহুদীর কাছে বন্ধক রেখে কিছু যব আনেন। তা দিয়েই তৈরি হয়েছিল তাঁদের বাসর রাতের খাবার, সম্পন্ন হয়েছিল সাদাসিধে ওয়ালিমা।
****
কেন ফাতিমার জন্য আরো অনেক প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়ে নিঃস্ব আলীকে বাছাই করেছিলেন মহানবী (সাঃ)? উত্তরটা তিনিই দিয়ে গেছেন ফাতিমাকে।
আলীর প্রস্তাব সম্পর্কে ফাতিমাকে জানাতে গিয়ে তিনি বলেছিলেনঃ ফাতিমা! আমি তোমাকে সবচেয়ে বড় জ্ঞানী, সবচেয়ে বেশী বিচক্ষণ এবং প্রথম ইসলাম গ্রহণকারী ব্যক্তির সাথে বিয়ে দিচ্ছি।
বিয়ের পর বিদায় নেয়ার সময় আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন ফাতিমা (রাঃ)। তাঁর কান্নায় আবেগাপ্লুত হন রাসুল(সাঃ) নিজেও।
আবেগাক্রান্ত রাসুল (সাঃ) ফাতিমাকে বলেনঃ আমি তোমাকে সবচেয়ে শক্ত ঈমানের অধিকারী, সবচেয়ে বড় জ্ঞানী, সবচেয়ে ভালো নৈতিকতা আর উন্নত মন-মানসের অধিকারী ব্যক্তির নিকট গচ্ছিত রেখে যাচ্ছি।
(তথ্যসূত্রঃ আসহাবে রাসুলের জীবন কথা)
(বিবাহ কথন-৩৪) 

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন