-কী রুবেল মিয়া, মন খারাপ করে বসে আছো ক্যান?
-আইজকা ঈদের দিন ছার, বাড়িত যাইতে পারলাম না।
-তো কী হইছে, আমিও তো আছি, না?
-আপনে তো ছার ব্যাচেলার মানুষ। আপনার চিন্তা কী! বাচ্চাডায় খুব কানতেছিলো ছার। ইচ্ছা হইতাছিল চাকরি বাকরি ছাইড়া চইলা যাই।
-আইজকা ঈদের দিন ছার, বাড়িত যাইতে পারলাম না।
-তো কী হইছে, আমিও তো আছি, না?
-আপনে তো ছার ব্যাচেলার মানুষ। আপনার চিন্তা কী! বাচ্চাডায় খুব কানতেছিলো ছার। ইচ্ছা হইতাছিল চাকরি বাকরি ছাইড়া চইলা যাই।
চোখ ছলছল করে ওঠে হাসপাতালের ওয়ার্ডবয় রুবেল মিয়ার। মনটা আনচান করে ওঠে ডাঃ মুনীরেরও।
-রুবেল মিয়া, যাও সবার জন্যে চা নিয়া আসো। আর সবাইকে আমার রুমে আসতে বলো।
-রুবেল মিয়া, যাও সবার জন্যে চা নিয়া আসো। আর সবাইকে আমার রুমে আসতে বলো।
ঈদের দিনেও যাদের ছুটি হয় না তাদের একটা বড় অংশ হলেন এরা। হাসপাতালের ডাক্তার, নার্স, আয়া, ওয়ার্ডবয়, দারোয়ান, হাসপাতালের অন্যান্য স্টাফ। কী সরকারি হাসপাতাল, কী বেসরকারি। ঈদের সময়কার ডিউটির জন্য নেই অতিরিক্ত এলাউয়েন্স। মনটা অনেকেরই খারাপ থাকে। সকাল থেকেই তাই কর্মচারীদের দিকে খেয়াল রাখছিলেন ডাঃ মুনীর। অনেকেরই বিমর্ষ মুখ চোখে পড়ে তার।
সবাই চলে এসেছে ডক্টরস রুমে। সবার হাতে চায়ের কাপ। এই ক্ষুদ্র পরিসরে কিছু সময়ের জন্যে হলেও সবার ভেতর যেন একটা সাম্যের অনুভূতি তৈরি হয়।
ডাঃ মুনীর চায়ে চুমুক দিয়ে কথা শুরু করেন। আজকে ঈদের দিন। আপনারা যারা আজ এখানে ডিউটি করছেন, আমি খেয়াল করেছি, অনেকেরই মন খারাপ। আমার অনুরোধ, আপনারা মন খারাপ করবেন না। আপনারা যে কত বড় একটা কাজ করছেন, সেটা হয়তো এখন উপলব্ধি করতে পারছেন না। আমি শুধু এটুকু বলবো, এই হাসপাতালে যে শত শত রোগী ভর্তি আছেন, তাদের কথা একবার চিন্তা করুন তো! তারা, তাদের পরিবার, কতটা কষ্টে আছে! আজ এমনও তো হতে পারতো, হাসপাতালের বেডে এরকম অবস্থায় আপনি বা আমিও থাকতে পারতাম! কিংবা আমাদেরই কোন নিকটাত্মীয়! কিন্তু তা না হয়ে আমরা এই অসুস্থ মানুষগুলোর সাথে আছি। এটাকি আল্লাহর রহমত না?
আজ হয়তো ভালো আছি, কিন্তু অন্যকোন ঈদে, পূজায়, কোন ছুটির দিনে, আমরা অসুস্থ হয়ে যেতে পারিনা! আজ যদি আমরা কষ্ট স্বীকার না করি, সেদিন আমাদের জন্য কে কষ্ট করবে?
আজ হয়তো ভালো আছি, কিন্তু অন্যকোন ঈদে, পূজায়, কোন ছুটির দিনে, আমরা অসুস্থ হয়ে যেতে পারিনা! আজ যদি আমরা কষ্ট স্বীকার না করি, সেদিন আমাদের জন্য কে কষ্ট করবে?
মন খারাপ করবেন না। সবকিছুর প্রতিদান আল্লাহ সরাসরি দেন না। আবার সবকিছুর প্রতিদান এই দুনিয়ায় পাওয়া যায় না। শুধু এইটুকু মনে রাখবেন, কোন ভালো কাজই শেষ পর্যন্ত আনপেইড থাকে না। দুনিয়ায় এবং আখেরাতেও, যেকোন ভালো কাজের প্রতিদান আল্লাহ তায়ালা অনেকগুণ বেশি করে ফিরিয়ে দেন।
কথা বলতে বলতে রুবেল মিয়াকে খেয়াল করেন ডাঃ মুনীর। বেদনার কালো মেঘ সরে গিয়ে ধীরে ধীরে তার মুখে ফিরে আসছে স্বাভাবিক সূর্যের আলো।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন