মানুষ কেন বিয়ে করে? প্রশ্নের উত্তরটা এক কথায় দেয়া মুশকিল। কারণ, এখানে জৈবিক প্রয়োজনের চেয়েও বেশি কিছু আছে।
আদম (আঃ) এর জীবন থেকেই এর উত্তরটা আমরা সহজে পেয়ে যাই। ভালোই ছিলেন তিনি, জান্নাতের অফুরন্ত অভাবনীয় সব প্রাচুর্যের ভেতর সময় কাটছিল তাঁর। বলা হয়- জান্নাতে কোনকিছুরই অভাব নেই, একমাত্র যে বিষয়টা সেখানে অনুপস্থিত, তাহলো 'অভাব'। অথচ সেই জান্নাতে থেকেও কিসের যেন 'অভাব' বোধ করছিলেন আদম (আঃ)।
তিনি চরম নিঃসঙ্গ বোধ করছিলেন। বলা হয়, তার নিঃসঙ্গতা দূর করার জন্য আল্লাহ তায়ালা সৃষ্টি করেন হাওয়া (Eve) কে।
মানুষ কিছু সময়ের জন্য একা থাকতে ভালোবাসে, কিন্তু দীর্ঘ সময় সে একা থাকতে পারেনা। তার একজন সঙ্গী দরকার হয়। মানুষ এমন এক প্রাণী, যে কথা না বলে থাকতে পারেনা, কথা না শুনে থাকতে পারেনা। কিছু কিছু কথা থাকে, কাউকে বলতে না পারলে যেন দম আটকে আসে।
একটা মেয়ের বয়স যখন ১৮-২০ পার হয়, তখন থেকেই সে একে একে তার বান্ধবীদের হারাতে থাকে। অনেকের বিয়ে হয়ে যায়, অনেকেই দূরে চলে যায়। কারো সাথে বছরে দু'বছরে একবার দেখা হয়, কারো সাথে তাও হয় না। ধীরে ধীরে সে নিজেকে আবিস্কার করে নিঃসঙ্গ জগতে।
ছেলেদের ক্ষেত্রেও একই ব্যাপার। বয়স যতই বাড়তে থাকে, ততই বাড়তে থাকে একাকীত্ব, বাড়তে থাকে নিঃসঙ্গতা। পড়ালেখা শেষে বন্ধুরা কেউ বিয়ে করে পর হয়, কেউ চাকরি নিয়ে দূরে চলে যায়। কাছে থাকলেও ব্যস্ততার কারণে চাইলেই যখন তখন আর আগের মত টি-স্টলে বা কফিশপে আড্ডা দেয়া হয়ে ওঠে না।
কর্মস্থলে কলিগেরা থাকে, কিন্তু কলিগ কলিগই। কলিগের সাথে আন্তরিক বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে কম। কারণ, সেখানে কিছুনা কিছু স্বার্থের দ্বন্দ্ব থেকেই যায়।
অনেক কিছু ঘটে যায় প্রতিদিনকার জীবনে, কাউকে বলা যায় না। অনেক কথা জমে থাকে। কাউকেই বলা হয় না।
এসময় খুব বেশি করে এমন একজনের অভাব বোধ হতে থাকে, যাকে সবকিছু নিশ্চিন্তে বলা যায়। যার সবকিছু শোনা যায়।
এসময় খুব বেশি করে এমন একজনের অভাব বোধ হতে থাকে, যাকে সবকিছু নিশ্চিন্তে বলা যায়। যার সবকিছু শোনা যায়।
সবসময় দরকারী কথা শুনতে মানুষের ভালো লাগেনা, কখনো কখনো তার একদম অদরকারী, নিতান্তই অপ্রয়োজনীয় কথা শুনতে ইচ্ছে হয়। শুনতে ভালো লাগে। বলতে ইচ্ছে হয়। বলতে ভালো লাগে।
যে ছেলেটা মেসে থাকতে বিয়ের নামও মুখে নিতোনা, চাকরি নিয়ে দূরে চলে যাওয়ার ক'মাসের মধ্যে তার বিয়ের খবর শোনা যায়। যে ছেলেটা ছিল খুব সৌন্দর্যপ্রবণ, সুন্দরী মেয়ে ছাড়া যে বিয়েই করবে না বলে ঘোষণা দিয়েছিল, দেখা যায় নিঃসঙ্গতার আঘাতে সব পণ ভেঙ্গে গেছে তার। কারণ, সৌন্দর্যের চেয়েও বেশি প্রয়োজন হয়ে দাঁড়িয়েছিল একজন কথা বলার সঙ্গীর, একজন সমব্যথী মানুষের। সেটা খুঁজে পেলেই ঘটনা খতম হয়ে যায়।
জীবনের নানান সিদ্ধান্ত নিতে গিয়ে খুব কনফিডেন্ট ছেলেটাও একটা সময় কেমন যেন দ্বিধাদ্বন্দে ভোগে। সে চায়, কেউ অন্তত একজন তাকে সাহস যোগাক- কেউ একজন মন থেকে বলুকঃ 'তুমি ঠিক পথে আছো'। অথবা, কেউ একজন তাকে বলুক, ও কাজ করোনা। আমার মন বলছে- ওটা তোমার জন্য ভালো হবে না।
নির্মলেন্দু গুণের 'তোমার চোখ এত লাল কেন?' কবিতায় উঠে এসেছে এই আকাঙখার কাব্যিক রুপ।
"আমি বলছি না ভালোবাসতেই হবে , আমি চাই
কেউ একজন আমার জন্য অপেক্ষা করুক,
শুধু ঘরের ভেতর থেকে দরোজা খুলে দেবার জন্য।
বাইরে থেকে দরোজা খুলতে খুলতে আমি এখন ক্লান্ত।
কেউ একজন আমার জন্য অপেক্ষা করুক,
শুধু ঘরের ভেতর থেকে দরোজা খুলে দেবার জন্য।
বাইরে থেকে দরোজা খুলতে খুলতে আমি এখন ক্লান্ত।
আমি বলছি না ভালোবাসতেই হবে, আমি চাই
কেউ আমাকে খেতে দিক। আমি হাতপাখা নিয়ে
কাউকে আমার পাশে বসে থাকতে বলছি না,
আমি জানি, এই ইলেকট্রিকের যুগ
নারীকে মুক্তি দিয়েছে স্বামী -সেবার দায় থেকে।
আমি চাই কেউ একজন জিজ্ঞেস করুকঃ
আমার জল লাগবে কি না, নুন লাগবে কি না,
পাটশাক ভাজার সঙ্গে আরও একটা
তেলে ভাজা শুকনো মরিচ লাগবে কিনা।
এঁটো বাসন, গেঞ্জি-রুমাল আমি নিজেই ধুতে পারি।
কেউ আমাকে খেতে দিক। আমি হাতপাখা নিয়ে
কাউকে আমার পাশে বসে থাকতে বলছি না,
আমি জানি, এই ইলেকট্রিকের যুগ
নারীকে মুক্তি দিয়েছে স্বামী -সেবার দায় থেকে।
আমি চাই কেউ একজন জিজ্ঞেস করুকঃ
আমার জল লাগবে কি না, নুন লাগবে কি না,
পাটশাক ভাজার সঙ্গে আরও একটা
তেলে ভাজা শুকনো মরিচ লাগবে কিনা।
এঁটো বাসন, গেঞ্জি-রুমাল আমি নিজেই ধুতে পারি।
আমি বলছি না ভলোবাসতেই হবে, আমি চাই
কেউ একজন ভিতর থেকে আমার ঘরের দরোজা
খুলে দিক। কেউ আমাকে কিছু খেতে বলুক।
কেউ অন্তত আমাকে
জিজ্ঞেস করুকঃ 'তোমার চোখ এতো লাল কেন?'
কেউ একজন ভিতর থেকে আমার ঘরের দরোজা
খুলে দিক। কেউ আমাকে কিছু খেতে বলুক।
কেউ অন্তত আমাকে
জিজ্ঞেস করুকঃ 'তোমার চোখ এতো লাল কেন?'
(বিবাহ কথন-৩৫)
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন