এক রৌদ্রোজ্বল বিকেলে...

এক রৌদ্রোজ্বল বিকেলে...
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে

রবিবার, ১৭ নভেম্বর, ২০১৩

ভুল চিকিৎসার অভিযোগ তুলে ডাক্তার গ্রেপ্তার



ঢাকার পল্লবী থানার এক এসআই অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তির পর মারা গেছেন । এরপর পুলিশ ভুল চিকিৎসার অভিযোগ তুলে তৎক্ষণাৎ কর্তব্যরত দুইজন ডাক্তারকে আটক করে নিয়ে গেছে ।
এই হলো বিভিন্ন পত্রপত্রিকার খবর । খবর পড়ে প্রথমেই আমার যেটা মনে হলো- ‘বেকুব কোথাকার’ ! এই কাজের মাধ্যমে বেকুব পুলিশের দল তাদের ‘বিনা চিকিৎসায় মৃত্যু’কে ত্বরান্বিত করলো ।
ক্ষমতার অপব্যবহার নিয়ে কথা বলে তো লাভ নাই, দেশে এটা এখন পুলিশের বানিজ্যের সবচেয়ে বড় খাত – যে কাউকে ধরে নিয়ে গিয়ে মামলা দেয়ার ভয় দেখিয়ে টাকা আদায় । চাহিদামাফিক টাকা না দিতে পারলে মামলা দায়ের । অথচ বিচারের নিয়ম অনুযায়ী আগে মামলা হবে, এরপর আদালতে তথ্য-প্রমাণ দাখিল করার পর আদালত নির্দেশ দিলে তবেই আটক করা যাবে । কিন্তু এটা আমাদের জন্মভূমি বাংলাদেশ, এখানে এসবের বালাই নেই ।
বিনা ওয়ারেন্টে তৎক্ষণাৎ আটকের মাধ্যমে এই মেসেজটা ডাক্তারদের কাছে পৌঁছে গেল, পুলিশ রোগী ‘সাবধানে’ ডিল করতে হবে । আর সাবধানে ডিল করার সবচেয়ে সরল অর্থ হলো – ‘আপন পরান বাঁচা’ । রোগী যদি পুলিশ হয়, তাহলে যেকোন উপায়ে রোগীকে ট্রান্সফার করো । রোগীর অবস্থা  খারাপ, এখানে ব্যবস্থা নাই- উন্নত চিকিৎসার জন্য অমুক হাসপাতালে নিয়ে যান । বলে রেফার টু সামহোয়ার এলস ।
এভাবে পুলিশের রোগী এক হাসপাতাল থেকে আরেক হাসপাতালে ঘুরতেই থাকবে । ডাক্তার ব্যস্ত থাকবেন চিকিৎসার চেয়েও প্রটোকল মেইনটেইনের দিকে । ফলাফল- বিনা চিকিৎসায়, হয়তো পথেই মৃত্যু । এবার তো আর অভিযোগ করতে পারবেন না !
কয়েকদিন আগে আমার এক স্যারের (মেডিসিন বিশেষজ্ঞ) কাছে একটা কাগজ এলো । এক পুলিশ কর্মকর্তা উপজেলা হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হন নাই, তিনি চিকিৎসায় অবহেলার অভিযোগ তুলেছেন একজন কার্ডিয়াক সার্জনের বিরুদ্ধে । তার তদন্ত করতে হবে । বেঁচে আছে বলে হয়তো মামলাতেই ক্ষান্ত, মারা গেলে নিশ্চয়ই এতদিনে বেচারা কার্ডিয়াক সার্জন থানা হাজতে গান গাইতেন !
সাংবাদিকরা তো আগেই চলে গেছে ঐ খাতায়, এবার পুলিশও যাচ্ছে । ওরা ভাবে- নিজেদের বেশি চালাক । কিন্তু আসলে তারা যে এই অনিয়মের মাধ্যমে নিজেদেরই দীর্ঘমেয়াদে ক্ষতি করছে- বেকুবগুলা এইটা হয়তো কোনদিনই বুঝবে না ।
ব্যক্তিগত জীবনে যত খারাপই হোক- কোন ডাক্তারই চাননা তার দায়িত্বে থাকা রোগী মারা যাক । সেজন্য সব ডাক্তারই রোগীর জীবন রক্ষায় আপ্রাণ চেষ্টা করেন- যতটুকু সামর্থ-সুযোগ থাকে তার ভেতরে থেকে ।
শুনেছিলাম, পুলিশের বুদ্ধি নাকি থাকে হাঁটুতে । এখন তো দেখছি তারও নিচে ! সামান্য ঘিলুও যদি মাথায় থাকে, তাদের উচিৎ হবে মাফ চেয়ে ডাক্তারদের ছেড়ে দেয়া । এরপর চাইলে তারা আইনের স্বাভাবিক পন্থায় যেতে পারেন ।

[‘ভুল চিকিৎসা’ বিষয়ে স্পষ্ট ধারণা পাওয়ার জন্য আগ্রহী পাঠক বহুদিন আগে লেখা আমার এই পোস্টটিও পড়ে দেখতে পারেন:  status-https://www.facebook.com/muhsin.abdullahmu/posts/3321779337205 অথবা note- http://goo.gl/bG8IP8 ]

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন