রংপুর
এমন কোন বড় যান্ত্রিক শহর নয় যে হাঁপিয়ে উঠতে হবে । তবুও অল্পদিনেই হাঁপিয়ে উঠত
মিন্টু । রংপুর এখন বিভাগীয় শহর হয়েছে , তবু খুব একটা
পরিবর্তন যে হয়েছে তা নয় । নতুন কিছু উঁচু ভবন উঠেছে এই যা । বাকিসব রয়ে গেছে
প্রায় আগের মতই । আমরা যেসময়ের কথা বলছি – তখন রংপুর ছিমছাম শান্ত একটা জেলা শহর ।
রাস্তাঘাট ফাঁকা ফাঁকা । রিক্সা আর বাইকই প্রধান বাহন । মাঝে মাঝে দুএকটা প্রাইভেট
কার সাইরেন দিয়ে যায় ।
সিটি
বাস নেই, সিএনজি নেই , রাস্তার মোড়ে মোড়ে ট্রাফিক জ্যাম নেই । সহজ সরল মানুষগুলো
কেমন যেন একমনে হেঁটে যায় ।
প্রায়
সাতবছর হয়ে গেছে । আজ রংপুরে এসে পুরনো দিনগুলির নানা কথা মনে পড়ছিলো মিন্টুর । যে
মিন্টু এই রংপুরেই হাঁপিয়ে উঠত, সে কেমন করে বিদেশে পড়ে আছে বছরের পর বছর ! জীবন
যে কখন কোথায় গিয়ে থামে কেউ বলতে পারে না । নিরন্তর তীরভাঙ্গা নদীর মতন ।
বেশিরভাগ
সময় চুপচাপ থাকা ছেলে মিন্টু । প্রথম দেখায় হয়তো কেউ কেউ তাকে বোকাই মনে করতো । কিন্তু গ্রামের স্কুল থেকে
সেরা রেজাল্ট করে সে ভর্তি হয়েছিল উত্তরাঞ্চলের শহর ‘রংপুরের’ নামকরা এক কলেজে ।
তারপর কলেজে ভালো রেজাল্ট করে চান্স পেয়েছিল রংপুর মেডিকেল কলেজে ।
দু’দিন
হলো ইউকে থেকে দেশে এসেছে মিন্টু । এমআরসিপি পাস করে তবেই দেশে এলো । দেশেই থাকবে
নাকি ইউকে-তেই কাটিয়ে দেবে বাকি জীবনটা, এখনো সিদ্ধান্তটা চূড়ান্ত করেনি । বিয়েটাও
করা দরকার, বয়স তো ত্রিশ পেরিয়ে গেল !
প্রথম
দু’দিন গ্রামের বাড়িতে সময় কাটিয়েছে । কিন্তু রংপুর তাঁকে টানছিল । কোথায় যেন একটা
মিহি সুতোর টান । পুরনো ক্যাম্পাস, পুরনো রাস্তাঘাট । আর পুরনো কিছু বিশেষ জায়গা ।
একা একা বসে কবিতা লেখার জায়গা । আকাশ দেখার জায়গা । শুকনো পাতার ঝরে যাবার দৃশ্য দেখার জায়গাগুলি ।
বেশিরভাগ জায়গাতে ও একাই ঘুরতে যেত । মাঝে মাঝে আরিফ সঙ্গ দিত । আরিফ ছিল ভোজন রসিক ।
মিন্টুও খেতে ভালোবাসতো । কোথায় কোথায় ভালো খাবার পাওয়া যায়- খুঁজে খুঁজে
ঠিকই হাজির হত তারা ।
দেশে আসার আগেই আরিফকে বলে রেখেছিল মিন্টু । হাতে কোন কাজ রাখা
যাবেনা । পুরনো দিনের মত একসাথে ঘুরবো, খাবো । আরিফ কি এই আমন্ত্রণ এড়াতে পারে ?
হেঁটে হেঁটে ওরা গেল মিতালী হোটেলে । যখন রংপুরে ভালো কোন নিরিবিলি
হোটেল ছিলনা – তখন ছিল মিতালী হোটেল । পায়রা চত্বরের পাশে গলির ভেতর ছোট্ট একটা
হোটেল । বেশ নিরিবিলি । বিকেলে ঘুরে ফিরে ওখানে গিয়ে বসতো ওরা । চিকেন ফ্রাই আর
সাথে কফি । কত কথা হত ! পড়াশোনা, রাজনীতি, সাহিত্য- সব কিছু নিয়ে কথা বলতো ওরা । কত
বিকেল কত সন্ধ্যা এখানেই কেটে গেছে । আজ যেতে যেতে মনে হলো যেন বুকের ভেতরে কোথাও
বাজছে-
‘কফি
হাউজের সেই আড্ডাটা আজ আর নেই’ !
আজও কফি
খাওয়া হবে । আজও অনেক কথা হবে । তবে আজ হয়তো স্মৃতিচারণই হবে বেশি । কতদিন পর দেখা
!
‘মিন্টু,
নির্ঝর কুঞ্জের কথা তোর মনে ছিল ?’ কফিতে চুমুক দিয়ে আরিফ কথা তোলে । যদিও সে
জানে, নির্ঝর কুঞ্জের কথা মিন্টু ভুলতে পারবে না । ওর কত বিকেল তো ওখানেই কেটেছে,
কত কবিতা তো ওখানেই লিখেছে !
ক্যান্টনমেন্টের
ভেতরে একটা ছোট পার্ক আছে । নাম নির্ঝর কুঞ্জ । তেমন একটা কেউ যায় না ওখানে ।
জুটিরা তো নয়ই । একে মিলিটারির এলাকা, তারওপর বেশ খোলামেলা আর ছোট । জুটিদের জন্য
উপযুক্ত ছিলনা জায়গাটা । আর তখনকার দিনের জুটিদেরও কিছু লজ্জা-শরম অবশিষ্ট ছিল
বৈকি !
হাতে
লালরঙ্গা ডায়েরিটা নিয়ে একটা কলম চিবুতে চিবুতে প্রায়ই ভর দুপুরে কিংবা বিকেল
বেলায় সেখানে গিয়ে বসতো মিন্টু । মানুষের মনের এই এক অদ্ভুত ব্যাপার – কখনো
একাকীত্ব চায়, কখনো একাকীত্ব ঘোচাতে চায় । দুটি বিপরীত ধরণের চাওয়া একসাথে খেলা
করে ! মিন্টু অবশ্য একাকীত্বই বেশি উপভোগ করতো । কখনো কখনো উপন্যাস পড়তো ছাউনির
নিচে বসে । বেশ কিছু দুর্লভ গাছ ছিল ওখানে । আর ছিল কয়েকটা বানর । বানরগুলোও হয়তো
একাকী বোধ করতো । তাই মিন্টুকে দেখলে তাদের ভেতর একটা প্রাণচাঞ্চল্য সৃষ্টি হত যেন
! অথবা মিন্টুর দেয়া বাদামের লোভ ।
‘হ্যারে
আরিফ, বানরগুলো কি এখনো আছে নির্ঝরকুঞ্জে ?’ মিন্টু জিজ্ঞেস করে । কিন্তু আরিফ নিজেও তো কতদিন যায়নি । সেও জানেনা এর উত্তর ।
মিন্টু দীর্ঘশ্বাস ফেলে কফির মগে ।
প্রথম
কাপ কফি ফুরিয়ে যায়, হাতে ওঠে দ্বিতীয় কাপ । স্মৃতিকাতর দু’জন – যেন নিজের কথাই
বলে চলে নিজেকেই ।
‘ঘাঘটের
তীরে যেতে হবে কাল একবার’ ।
শহরের
পশ্চিম দিকে রংপুর ক্যান্টনমেন্টের পেছন দিয়েই বয়ে গেছে ঘাঘট নদী । সমস্যা একটাই,
নদীর পাড়টা জায়গায় জায়গায় নোংরা । যদি সুন্দর করে নদীর এপাড়টা বাধাই করা থাকতো,
মাঝে মাঝে দুয়েকটা গাছ আর গাছের নিচে বেঞ্চি পাতা থাকতো – কতইনা ভালো হত । অবকাশ
যাপনের একটা ভালো জায়গা হতে পারতো এই জায়গাটা ।
ঘাঘটের
তীরে ওরা সুর্যাস্ত দেখতে যেত । ছোট নদী- শীতকালে পানি কমে আসে । শেওলা দেখা যায় ।
কে জানে – এককালে হয়তো এই ঘাঘটও খরস্রোতা ছিল কিনা ! গোধুলী বেলায় নদীর ওপর দিয়ে
পাখিগুলো উড়ে যায় নীড়ে ফেরার তাগিদে । হয়তো নদীর পানিতে ঝিলমিল করে তাদের ছায়া । হয়তো
তখনো দুয়েকটা বক খুঁজে চলেছে পুঁটি মাছ । আর সুর্য নেমে যাচ্ছে পশ্চিমে । জীবনটা
হঠাৎ করেই যেন অর্থবহ হয়ে উঠত তখন । এত সুন্দর ! এত সুন্দর !
তারপর
রংপুর চিড়িয়াখানায় লেকের ধারে ইট-সিমেন্টের বেঞ্চিতে বসে গল্পের বই পড়া । মাঝে
মাঝে শহর থেকে বেরিয়ে তাজহাট জমিদারবাড়ি । জমিদারবাড়ির সিঁড়িতে বসে জীবনের গল্প
করা । নানা সন্দেহ সংশয়- ইতিহাস চর্চা করা । আজও যেন মিন্টুর
চোখে সেই জিজ্ঞাসা ফুটে উঠছে- আচ্ছা, পেছনদিকের ঐ প্যাঁচানো সিঁড়িটা-যেটা নেমে
গেছে একটা কুয়োর ভেতর, কিজন্য বানানো হয়েছিল ? জমিদারবাবুর পালানোর গোপন পথ ?
তাহলে সুড়ংগটা কোথায় গিয়ে শেষ হয়েছে ?
শুধু
শহরের ভেতরটা কিংবা আশেপাশেই নয়- ওরা ঘুরে বেড়িয়েছে ইচ্ছেমত । ইচ্ছে হলো তো ব্যস,
চল যাই । ক্লাস, আইটেম, কার্ড কিছুই বাধা নয় । একবার রাতে ইচ্ছে হলো লালমনিরহাট
যাবার – তখন রাত ১১ টা । যেই ভাবা সেই কাজ ! ব্যাগ ঘাড়ে ঝুলিয়ে বেরিয়ে পড়লো রাতেই ।
পথে
নামলে , সা...থী মিলবে
শুধু
কখনো ভুল প্রলোভনে – প্রতারক পায়ে
ফিরে
যেও না ...
ট্রেনে
চড়ে চলে গেল তিনি বিঘা করিডোর । ঘাড়ে ব্যাকপ্যাক ঝুলিয়ে ঘুরে বেড়ালো আঙ্গরপোতা, দহগ্রাম – ভারতের ভেতর বাংলাদশের
ভূমি । ছিটমহল ।
ওখানকার
মানুষগুলো রাষ্ট্রের সব সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত । নেই স্কুল, নেই বিদ্যুৎ, নেই
স্বাস্থ্যসেবা । একটা কমিউনিটি ক্লিনিক থাকলেও কোন ডাক্তার ছিলনা । খুঁজে পাওয়া
গিয়েছিল একজন মেডিকেল এসিসটেন্টকে । স্বাস্থ্যসেবা বলতে তিনিই সেখানে সব ।
নীলফামারীর
নীলসাগর, দিনাজপুরের রামসাগর , পঞ্চগড়ের তেতুলিয়া । সবখানে গিয়েছিল ওরা । যখন
ইচ্ছে তখন । প্রকৃতি যেন চুম্বকের মত আকর্ষণ করতো মিন্টুকে ।
আর
খাওয়া দাওয়া । জীবনে এই একটা নির্মল বিনোদন হলো খাওয়া । ওরা সবসময় খোঁজ করতো ভিন্ন
স্বাদের । রংপুরের সিঙ্গারা হাউসে বসে একের পর এক সিঙ্গারা গিলেছে ওরা ।
প্রতিযোগিতা করে । নেহাল নামক একটা দোকানে ভালো পুরি পাওয়া যায়- গরুর গোশতের সাথে
পুরি ।
গ্র্যান্ড
হোটেলের মোড়ে একটা দোকানে খুব ভালো চা বানায় । আর পৌর বাজারের ফুটপাতে ফুচকা-চটপটি
। পায়রা চত্বরের পাশে একটা হোটেলে কবুতরের গোশত পাওয়া যায় ।
মিন্টুর
ইচ্ছে হল- ঘুঘুর মাংস খাবে । কোথায় পাওয়া যায় ? এমনিতে এখন ঘুঘুই দেখা যায় না ।
খবর পাওয়া গেল দিনাজপুরের এক দোকানে পাওয়া যায় ঘুঘুর মাংস । ব্যস, একদিন সকালে ওরা
গাড়িতে উঠে বসলো । দিনাজপুরে গিয়ে ঘুঘুর মাংস খেয়ে তবেই শান্তি !
‘চোরাবালির
কথাটা কি ভুলে গেছিস নাকিরে ?’ আরিফ প্রসঙ্গ তোলে ।
‘নাহ ।
সেকি ভোলা যায় ?’
ওদের
ঘোরাঘুরির আরেকটা জায়গা ছিল তিস্তা নদী । শহর থেকে ১৫-২০ কিলোমিটার পুর্বে তিস্তা
নদী । নদীতে আছে শতবর্ষের পুরনো রেলব্রিজ । আছে নৌকা । এখন অবশ্য ভালো ব্রিজ হয়েছে
। নদীর তীর ধরে হাঁটতে হাঁটতে ওরা অনেক দূর চলে যেত । কথা বলতো , গান গাইত ।
কোনদিন
প্রেম না করলেও এরকম পরিবেশে মিন্টু উদাস গলায় গান গাইতো –
আমার...
লাইন হয়ে যায় আকাবাকা......
ভালো না
হাতের লেখা ...
আসো যদি
বাঁশবাগানে, আসো যদি বাঁশবাগানে
আবার
হবে দেখা বন্ধু , আবার হবে দেখা...
পরিবেশের
সাথে এসব গান যেন মিশে যেত লবণ- পানির মত । মিন্টু পল্লীগীতি ভালোবাসে ।
পল্লীগীতিগুলো চিন্তাভাবনা করে লেখা কোন গান নয়, গাঁয়ের সহজ-সরল মানুষের মুখে মুখে
স্বতস্ফূর্তভাবে উঠে আসা হৃদয়ের কথা । আরিফ মিন্টুকে খোঁচায়- বাশবাগানে দেখা করতে
বলছিস কেন ? তোর মতলবটা কী হু ?
আরিফও গাইতো –
আকাশের
ঐ মিটিমিটি তারার সাথে কইবো কথা... নাইবা তুমি এলে ...
অথবা
‘ওকি গাড়িয়াল ভাই, হাকাও গাড়ি তুই চিলমারীর বন্দরে রে’ ...
এসব গান
হয়তো কোন কালে কোন এক বিরহী প্রেমিক গেয়েছিল । মিন্টু , আরিফ প্রেমের ধারেকাছেও
নেই । বরং ওদের প্রেম-বিদ্বেষীই বলা চলে । বিয়ের আগে ছেলেমেয়ের প্রেম অবৈধ , ওরা
ভালো করেই জানে । কিন্তু গানগুলো কেমন যেন ভালো লাগে । মন্দ কি ! বিয়ের পরে নাহয়
বউকেই শোনাবে !
একদিন
তিস্তার পাড়ে এক মসজিদে আসরের নামাজ পড়ে ওরা হাঁটতে নেমেছিল । স্যান্ডেল খুলে হাতে
নিয়েছে । প্যান্ট গুটিয়ে নিয়েছে হাঁটু অবধি । হাঁটতে হাঁটতে অনেকদূর চলে গিয়েছিল
ওরা । সুর্য ডোবে ডোবে অবস্থা । ফিরে গিয়ে মাগরিবের নামাজ পড়তে হবে । মানুষজন আর
তেমন একটা নেই । এদিকটায় বাড়িঘরও নেই । হয়তো ছিল কোন কালে, তিস্তাই হয়তো ভাংতে
ভাংতে গিলে ফেলেছে সেই সব মানুষের ভিটেমাটি । খেদিয়ে দিয়েছে তাদের সর্বস্বান্ত করে
।
হাঁটতে
হাঁটতে হঠাৎ এক জায়গায় কাদার ভেতর দেবে গেল মিন্টুর পা । কোনমতে পা উঠিয়ে পরের
পদক্ষেপ ফেললে পা আরো বেশি দেবে যেতে লাগলো । উদাসমনে গান গাইতে গাইতে আরিফ একটু
পিছিয়ে পড়েছিল । মিন্টু বুঝে ফেললো – এটা চোরাবালি । যতই নড়াচড়া করবে ততই ডুবে যেতে
থাকবে । চিৎকার করে আরিফকে বললো মিন্টু- চোরাবালিতে আটকে গেছি । কোন একটা ব্যবস্থা
কর ।
কিংকর্তব্যবিমূঢ়
আরিফ কিছুক্ষণ ভেবে পায়না কী করবে । পাড়ে উঠে সে পাগলের মত এদিক সেদিক দৌড়াদৌড়ি
করতে লাগলো । এদিকে ধীরে ধীরে আরো দেবে যাচ্ছিলো মিন্টুর পা ।
একটা
ডিঙ্গি নৌকা এসময় যাচ্ছিল নদীর মাঝ বরাবর । আরিফ ও মিন্টুর চিৎকার শুনে এগিয়ে এলো
মাঝি । ওদের সমবয়সী একটা ছেলে । আরিফ আর মাঝি ছেলেটা একটু দূরে দাঁড়িয়ে নৌকার লগি
হিসেবে ব্যবহারের লম্বা বাঁশটা মিন্টুর দিকে এগিয়ে দিল । মিন্টু বাঁশের একপ্রান্ত
ধরে উপুড় হয়ে শুয়ে পড়লো । আরিফ এবং মাঝি ছেলেটা অপর প্রান্ত ধরে টানতে লাগলো ।
ধীরে ধীরে মিন্টু বেরিয়ে এলো চোরাবালি থেকে । অবশ্য স্যান্ডেল জোড়ার মায়া ত্যাগ
করতে হল তার ! আর শরীরের সামনেটা লেপ্টে গেল কাদায় ।
নৌকার ওপরেই
মাগরিবের নামাজ আদায় করলো ওরা । দুজনেই দুই রাকাত করে অতিরিক্ত শুকরানা নামাজ পড়লো
। এইমাত্র মৃত্যুর দরোজা থেকে ফিরে এসেছে মিন্টু । মৃত্যু এরকমই, কখন যে কোথায়
হঠাৎ সাঙ্গ হবে মানুষের জীবন- কেউ জানেনা ।
দ্বাদশী
চাঁদের রাত শুরু হয়েছিল । ওরা নৌকায় করে চাঁদের আলোয় ভাটিতে নৌকা ছেড়ে বসে থাকলো । মাঝি ছেলেটা একটা ভাটিয়ালি গান
ধরলো- ও মাঝিরে... । ওর কন্ঠে একটা কেমন
যেন হৃদয়ছোঁয়া মাধুর্য আছে । নিস্তব্ধ নদীতে অলৌকিক লাগছিল সেই সুর ...
নৌকার
পাটাতনে বসে উদাস কৃতজ্ঞ মিন্টু সেদিন আরিফকে বলেছিল – বন্ধু, কাদার চোরাবালি থেকে
হয়তো মুক্তি পাওয়া যায়- কিন্তু আরো কত চোরাবালিতেই না আটকে থাকে মানুষের জীবন !
স্মৃতি
। মায়া । মোহ । ভালোবাসা । বন্ধন । এইসব চোরাবালি থেকে মানুষের মুক্তি নেই । যতই
মুক্ত হতে চায়- ততই তলিয়ে যায় , বাড়তে থাকে গভীরতা ।
আজ
এতদিন পরেও যেন সেই কথাটা কানে বাজছে আরিফের । এইযে, এখন ওরা তলিয়ে যাচ্ছে স্মৃতির
চোরাবালিতে ।
এইতো
জীবন । নানা চোরাবালিতে আটকে থাকা জীবন ।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন