এক রৌদ্রোজ্বল বিকেলে...

এক রৌদ্রোজ্বল বিকেলে...
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে

সোমবার, ১৮ নভেম্বর, ২০১৩

আন্তর্জাতিক বেহায়া প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশের সাফল্য !



.
কাঁদো কাঁদো মুখে ঘরে ঢুকলেন রওশন এরশাদ লেজেহুমু এরশাদ তখন আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে রুপচর্চা করছিলেন ঘরে ঢুকেই ভ্যা ভ্যা করে কেঁদে ফেললেন রওশন কিছু বুঝতে না পেরে এরশাদ জিজ্ঞেস করলেন, ‘এই সাত সকালে কী কান্নাকাটি শুরু করলে ? কী হয়েছে বলবে তো !’
কাঁদতে কাঁদতে রওশন এরশাদ বললেন, ‘কুকুরটাকে সকাল থেকে পাওয়া যাচ্ছে না দেখোনা একটু খুঁজে প্লিজ, কোথায় গেল আমারডগি...হু হু হু...’

.
প্রতিবছরের মত এবারো আন্তর্জাতিক পশু সম্মেলন অনুষ্ঠিত হচ্ছে সুন্দরবনে অনেক দিন আগেই সম্মেলনের তারিখ সবাইকে জানিয়ে দেয়া হয়েছিল সে অনুযায়ী বিশ্বের বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধি পশুরা উপস্থিত হয়েছে রাতের অন্ধকারে লুকিয়ে লুকিয়ে তারা চলে এসেছে সম্মেলনে যোগ দেয়ার জন্য নানা দেশের নানা পশু বিগত বছরগুলোর চেয়ে এবার অনেক বেশি পশু এসেছে এত পশু দেখে তোডগি চক্ষু চড়কগাছ ! এবারই ডগি প্রথম আন্তর্জাতিক পশু সংঘের সদস্যপদ পেয়েছে
সম্মেলনের তারিখ তাকেও আগেই জানানো হয়েছিল কিন্তু সে তো থাকে ঢাকায় মেমসাহেব তাকে ছাড়া থাকতেই পারে না ! কীভাবে সম্মেলনে আসবে তা নিয়ে খুব চিন্তিত ছিল সে কিন্তু শেষমেষ উপায় একটা হয়েই গেল মেমসাহেব ঢাকার বাইরে- রংপুরে গিয়েছিলেন এবার কী কারণে যেন ডগিকে নিয়ে যাননি তিনি এইতো সুযোগ জানালা খুলে সন্ধ্যাবেলাতেই চম্পট দিয়েছে ডগি তারপর বিভিন্নভাবে সে ঠিকঠিক পৌঁছে গেছে সম্মেলন শুরুর কিছুক্ষণ আগে

এবারের সম্মেলনে এত বেশি পশু আসার কারণটা জানতে পারলো ডগি এবার বিশ্বসুন্দরী প্রতিযোগিতার মত এখানে বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে পদক দেয়া হবে বিশ্বসুন্দরী প্রতিযোগিতাও এর মধ্যে আছে এই সুযোগে অনেক সুন্দরী কুত্তিকেও দেখা যাবে, মন্দ কী !

সম্মেলন শুরু হয়ে গেল একে একে বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হতে লাগলো বিশ্বসুন্দরী প্রতিযোগিতা, বিশ্ব দৌড়বিদ প্রতিযোগিতা , শ্রেষ্ঠ খাদক প্রতিযোগিতা, সাদা মনের পশু প্রতিযোগিতা দুঃখের বিষয় এর কোনটাতেই কোন কুকুর পদক পেলনা কুকুর জাতির জন্য এটা খুবই অপমানজনক মনে হলো ডগির কাছে তারচেয়েও বড় ব্যাপার হলো- বাংলাদেশের কেউই কোন পদক পেলনা বাংলাদেশের প্রতিযোগিরা সবাই খুব বিমর্ষ হয়ে আছে তাদের দীর্ঘশ্বাসে ভারী হয়ে উঠেছে সুন্দরবনের আকাশ বাতাস

মাইকে ঘোষিত হলো- এবারের প্রদেয় পদকের নামবিশ্ব বেহায়া পদক এই পর্বে বিজয়ীকেমিস্টার বিশ্ববেহায়া হিসেবে বিশেষ সম্মান দেয়া হবে

প্রস্তাবনায় বলা হলো- আমরা পশু হায়া বা লজ্জা জিনিসটা আমাদের মানায় না আমাদের ভেতর থাকতে হবে পশুসুলভ মনোবৃত্তি আমাদের ভেতর পশুসুলভ আচার আচরণ তৈরির জন্য আমাদের হায়া বিসর্জন দিতে হবে যার হায়া যত কম, তার মাঝে ততবেশি পশুত্ব প্রকাশিত হয় আর এই বিষয়টিকে উৎসাহিত করার জন্য, নতুন প্রজন্মের কাছে একে মহিমান্বিত করে তোলার জন্য আমাদের এই উদ্যোগ
পশুগন, আপনারা জানেন মানুষেরানোবেল পদক দেয় তাতে তারা নানারকম কারসাজি করে কিন্তু আমরা কোন দুইনম্বরি করবো না আমরা ঠিক ঠিক সবচেয়ে যোগ্য পশুকেই এই পুরস্কারে ভূষিত করতে চাই আপনারা আপনাদের যুক্তি তুলে ধরুন, কাকে এইবিশ্ববেহায়া পদক দেয়া উচিৎ হবে

ডগি এইবার একটা সম্ভাবনা দেখতে পেল কিন্তু দেখা গেল শুকরেরা তাদের পক্ষে জোরালো যুক্তি উপস্থাপন করছে বেশিরভাগ পশু তৃণভোজী অথবা মাংসাশী কিন্তু আমরা শুকরের জাত বিষ্ঠা খাই যদিও মানুষের বিষ্ঠাই আমাদের সবচেয়ে বেশি প্রিয়, কিন্তু অন্য প্রাণীর বিষ্ঠাও আমরা খাই আর সবচেয়ে বড় কথাএইশুওর শব্দটা মানুষ গালি হিসেবে ব্যবহার করছে যদি আমাদের হায়া থাকতো তাহলে কি মানুষ এই শুওর শব্দটা গালি হিসেবে ব্যবহার করতো ? আর আমরা কি হায়া থাকলে এর প্রতিবাদ করতাম না ?

শুওরদের বক্তব্য শেষ হলে এক তাগড়া জোয়ান কুকুর উঠে দাঁড়ালো তেজোদ্দীপ্ত কন্ঠে ঘেউ ঘেউ করে সে এর প্রতিবাদ জানালো তার বক্তব্য হচ্ছে- মানুষের বিষ্ঠা আমরাও খাই এছাড়া আমরা সারাদিন শত শত মানুষের সামনে পোষাক ছাড়াই ঘুরে বেড়াই কেউ কি আমাদের পরণে প্যান্ট দেখেছে ? অথচ আমরা চাইলে হাজার হাজার প্যান্ট চুরি করে পরতে পারতাম শুধু তাই নয়, আমরা জনগনের সামনে প্রকাশ্যে মূত্রত্যাগ করি
আর সবচেয়ে বড় কথা ভাদ্র মাসে আমরা প্রকাশ্য রাস্তা ঘাটে কী করি সেটা আপনারা সবাই জানেন সুতরাং এই পদক আমাদেরই প্রাপ্য
পুরো সমাবেশ স্থল ঘেউ ঘেউ শব্দে মুখর হয়ে উঠলো সবাই সমর্থন দিল এক বৃদ্ধ সিংহ বললো , এরকম জোরালো বক্তব্য নাকি স্বাধীনতার পর থেকে আর শোনা যায়নি রাজনীতিতে এই কুকুরের ভবিষ্যত অত্যন্ত উজ্জ্বল

মনের আনন্দে ডগিও গলা চড়িয়ে ঘেউ ঘেউ করে চলছিল জুনিয়র সদস্য হিসেবে  সে বসেছে পেছনের দিকে এক প্রান্তে এই চিৎকার চেচামেচির মাঝেই হঠাৎ সে কাঁধে কার যেন স্পর্শ অনুভব করলো মাথা ঘুরিয়ে ডগি দেখলো, তার মেমসাহেব  রওশন এরশাদ সাথে সাহেব লেজেহুমু এরশাদও আছেন কীভাবে তাকে খুঁজে বের করলো ভেবে পাচ্ছিলো না ডগি হঠাৎ করেই তার মনে পড়লো গলার চেনের সাথে কী যেন আটকানো জিপিএস ডিভাইস উফ ! কেন যে এইটা খুলে রেখে আসেনি সে ! সাহেব কোথায় কোথায় যায় জানার জন্য মেমসাহেব এইটা ডগির গলায় ঝুলিয়ে দিয়েছিল নিজের লোম ছিড়তে ইচ্ছে করলো ডগির কিন্তু এখন কী আর করা , সাহেব-মেমসাহেবরা তো এসেই পড়েছেন

.
সম্মেলন স্থলের পেছন দিকে দুজন মানুষকে দেখে আয়োজক কমিটি তো হতবাক ! নিরাপত্তা বেষ্টনী ভেদ করে এরা ঢুকলেন কী করে ? কী তাদের পরিচয় ?
সম্মেলন নিরাপত্তা বাহিনীর প্রধান, নেকড়ে মাইকে এল বললো, বন্ধুরা আপনারা ভয় পাবেন না আপনাদের পেছনে যে দুজন মানুষকে দেখছেন তারা আমাদের জন্য ক্ষতিকর নন সুদর্শন পুরুষ যাকে দেখছেন চেহারা মানুষের মত হলেও প্রকৃতপক্ষে আচার আচরণে তিনি প্রায় আমাদের সমগোত্রীয় বিশেষ করে যদিহায়া কে বিবেচনায় নেয়া হয় তার বাসায় থাকে আমাদের আন্তর্জাতিক পশু সংঘের তরুন সদস্যডগি ডগি মনিবকে আপনারা সবাই হয়তো চেনেন অন্তত নামটা হয়তো আপনারা শুনে থাকবেন পশু সমাজে তাঁকে নিয়ে বিস্তর আলোচনা হয় তিনি বাংলাদেশের সাবেক স্বৈরাচারী রাষ্ট্রপতি, কবি প্রেমিক লেজেহুমু এরশাদ সবাই ক্ষুরতালি দিয়ে তাঁকে স্বাগত জানান যাদের ক্ষুর নেই তারা যার যার রীতি অনুযায়ী শব্দ করুন এখন আমাদের এই অতিথি সম্পর্কে আরো বিস্তারিত বলবে তারই বাসায় থাকা আমাদের তরুণ সদস্য – ‘ডগি লেজেহুমু এরশাদের হায়া কতটা কম, সে সম্পর্কে বিস্তারিত আলোকপাতের জন্য আমি ডগিকে অনুরোধ করছি

.
গাড়ির পেছনের সিটে আরামে বসে আছে ডগি তারা এখন ঢাকার পথে ডগির হাতেবিশ্ববেহায়া পদক সে খুব আনন্দে আছে তার মনিব লেজেহুমু এরশাদের হায়া সম্পর্কে সে খুব ভালো বক্তৃতা দিয়েছে তিনি কীভাবে সকালে এক কথা, দুপুরে আরেক কথা এবং রাতে ঘুমানোর আগে সম্পুর্ণ ভিন্ন কথা বলে জাতির সাথে খেলছেন সে সম্পর্কে বিস্তারিত বলেছে সে শুনে তো বিচারকরা খুবই সন্তুষ্ট ! এমনিতেই তারা আগে থেকেই লেজেহুমু এরশাদ সম্পর্কে মোটামুটি জানতো , কিন্তু আজ তারই ঘরের কুকুরের কাছ থেকে বিস্তারিত শুনে আর তাঁকে সরাসরি দেখে সবাই মুগ্ধ হয়েছে অবশেষে সর্বসম্মতিক্রমে সিদ্ধান্ত হয়েছে- 'পদকটা লেজেহুমু এরশাদকেই দেয়া হোক মানুষ হয়েও যতটা লজ্জাহীনতা তথা বেহায়ার পরিচয় তিনি দিয়েছেন তা অতুলনীয় আমরা পশুরা একে অসম্মান করতে পারিনা '

ডগি ভাবছিল , যাক অবশেষে দেশের জন্য সে কিছু একটা করতে পারলো এই সাফল্য শুধু লেজেহুমু এরশাদের নয় , এই সাফল্যের অংশীদার ডগিও এই সাফল্য সমগ্র বাংলাদেশের !

[আন্তর্জাতিক বেহায়া প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশের সাফল্য ! / ১৯-১১-২০১৩]  ফেসবুক স্ট্যাটাস লিংক- ( https://www.facebook.com/muhsin.abdullahmu/posts/10200472205121558 )

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন