এক রৌদ্রোজ্বল বিকেলে...

এক রৌদ্রোজ্বল বিকেলে...
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে

সোমবার, ৬ ফেব্রুয়ারী, ২০১৭

সাধ্যাতীত মোহরানাঃ দায়ী কে?

"নিমকহারাম" বলে হঠাৎ চিৎকার করে উঠলো বুড়ো মকবুল। তারপর অকস্মাৎ এক অবাক কান্ড ঘটিয়ে বসলো সে। ঘরের মাঝখানে, এতগুলো লোকের সামনে হঠাৎ আমেনা আর ফাতেমা দুজনকে একসঙ্গে তালাক দিয়ে দিলো সে। রাগে কাঁপতে কাঁপতে বললো, তোরা বাইরইয়্যা যা আমার বাড়ি থাইক্যা।
(হাজার বছর ধরে/জহির রায়হান)।

বর্তমান সময়ে অতিরিক্ত/সাধ্যাতীত মোহরানা কাবিনে লেখা হয় মূলত আর্থিক নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখে।
অদ্ভুত ব্যাপারটা হলোঃ একটা বিয়ের শুরুতেই মাথায় রাখা হয় 'তালাকের' কথা!!

কীভাবে এই অবস্থার উদ্ভব হলো? আমার বিশ্বাস, এর জন্য নারীসমাজ দায়ী নয়। পুরুষরাই দায়ী। আজ থেকে কয়েক বছর আগেও প্রতিটি গ্রামে আট দশজন করে তালাকপ্রাপ্তা নারীর দেখা মিলত। হাজার বছর ধরে উপন্যাসের মকবুল বুড়োর মত পুরুষরা বিনাকারণে একাধিক বিয়ে করতো, আর যখন তখন বলে দিত- "তিন তালাক"।

এইসব নারীর বেশিরভাগই পেতেন না তাদের মোহরানা, পেতেন না বাবার সম্পত্তির ভাগ। কারো কারো দ্বিতীয় বিয়ে হত। সতীনের ঘরে জুটতো লাঞ্চনা গঞ্জনা। আর যাদের তাও হতনা, তাদেরকে হাতে নিতে হত ভিক্ষার ঝুলি।
এখনো গ্রামে গঞ্জে যেসব নারী ভিক্ষুক দেখা যায়, তারা আসলে তালাকপ্রাপ্তা নারী, যারা বঞ্চিত হয়েছেন মোহরানা থেকে, বঞ্চিত হয়েছেন বাবার সম্পত্তি থেকে। বঞ্চিত তারা রাষ্ট্রের আইন এবং সমাজের সুরক্ষা থেকে।

তালাকের এই অপব্যবহার রোধের প্রয়োজনেই শুরু হয়েছে অতিরিক্ত এবং সাধ্যাতীত মোহরানা নির্ধারণের চল। যদিও বর্তমান তরুণ প্রজন্ম এর জন্য দায়ী নয়, কিন্তু আগের প্রজন্মের কৃতকর্মের বিষফল ভোগ করতে হচ্ছে তাদেরকেই।
(বিবাহ কথন-৯)

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন