এক রৌদ্রোজ্বল বিকেলে...

এক রৌদ্রোজ্বল বিকেলে...
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে

বৃহস্পতিবার, ৯ ফেব্রুয়ারী, ২০১৭

মেয়ের অমতে বিয়েঃ জ্যান্ত কবর

বিয়ের ক্ষেত্রে মেয়ের মতামতকে কতটা গুরুত্ব দেয়া হয়? আমাদের সমাজে একে সাধারণত তেমন ধর্তব্যের মধ্যে গণ্য করা হয় না। প্রথমত, মতামত নেয়াই হয়না। দ্বিতীয়ত, মেয়েরা মতামত দিলেও তা উপেক্ষা করা হয়। অথবা এমন অবস্থায় এনে ফেলা হয়, যখন মেয়ের যতই অপছন্দ হোক, 'হ্যা' বলা ছাড়া গত্যন্তর থাকে না।

মুসলিমদের মাঝেও এর ব্যতিক্রম দেখা যায় না। যদিও ইসলামী বিধানে মেয়েদের ব্যাপক স্বাধীনতা দেয়া হয়েছে।

"হযরত সালামা বিনতে আব্দুর রহমান (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক মেয়ে রাসুল (সাঃ) এর কাছে এসে বললো, হে আল্লাহর রাসুল! আমার পিতা! কতইনা উত্তম পিতা! আমার চাচাত ভাই আমাকে বিয়ের প্রস্তাব দিল আর তিনি তাকে ফিরিয়ে দিলেন। আর এমন এক ছেলের সাথে বিয়ে দিতে চাইছেন যাকে আমি অপছন্দ করি। এ ব্যাপারে রাসুল (সাঃ) তার পিতাকে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বললেন, মেয়েটি সত্যি বলেছে। তখন রাসুল (সাঃ) মেয়েটিকে বললেন, “এ বিয়ে হবে না, তুমি যাও, যাকে ইচ্ছে বিয়ে করে নাও”। (সুনানে সাঈদ বিন মানসূর)
---
ইসহাক ইবনু মানসূর (রহঃ) .... আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন যে, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, অকুমারী মহিলাকে তার সুস্পষ্ট অনুমতি ব্যতিরেকে বিবাহ দেওয়া যাবে না। কুমারী মহিলাকেও তার সম্মতি ব্যতিরেকে বিবাহ দেওয়া যাবে না।( ইবনু মাজাহ, বুখারি, মুসলিম, তিরমিজী)
---
এমনকি মেয়ের অমত থাকলে বিয়ে হয়ে যাবার পরেও রাসুল (সাঃ) তা বাতিল করার অধিকার দিয়েছেন।

"হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। এক কুমারী মেয়ে রাসুল (সাঃ) এর কাছে এসে বলল, আমার পিতা আমার অপছন্দ সত্বেও বিয়ে দিয়েছেন। তখন রাসুল (সাঃ) সে মেয়েকে অধিকার দিলেন, [যাকে ইচ্ছে বিয়ে করতে পারে বা এ বিয়ে রাখতেও পারে]।" (মুসনাদে আহমাদ, সুনানে ইবনে মাজাহ, সুনানে আবু দাউদ)
---
সাবালিকা মেয়ের নিজ বিয়ের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার অভিভাবক অপেক্ষা তার নিজেরই বেশি। (মুসলিম, আবু দাউদ, তিরমিযী)
এমনকি কোনো মেয়ে যদি প্রাক্তন স্বামীকে আবার বিয়ে করতে চায়, তাতেও বাধা দিতে নিষেধ করা হয়েছে।
"তারা যদি ন্যায়সঙ্গতভাবে পরস্পর সম্মত হয়, তবে স্ত্রীগণ নিজেদের (প্রাক্তন) স্বামীদেরকে বিবাহ করতে চাইলে তোমরা তাদের বাধা দিও না। (সূরা বাকারা : ২৩২)"
---
মেয়েদের এই অধিকার ও স্বাধীনতা সম্পর্কে পুরুষদের স্বচ্ছ ধারণা থাকা দরকার। বিয়ের মত এত গুরুত্বপূর্ণ একটা ব্যাপারে যদি কারো পছন্দ অপছন্দকে গুরুত্ব না দেয়া হয়, এর অর্থ দাঁড়ায় মানুষ হিসেবে তার স্বাধীন স্বত্ত্বাকে অস্বীকার করা। নিজের জীবনের গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেয়ার যোগ্যতা একজন মেয়ের আছে, এই বিশ্বাস সকল পুরুষকেই রাখতে হবে।

সবচেয়ে গুরুতর ব্যাপারটা হলো- কোন মেয়ের অমতে তার বিয়ে দেয়া হলে তা জায়েজ/বৈধই হয় না। আর এই সময়ের মুসলিম স্কলাররা মনে করেন- একজন মেয়েকে জোর করে তার অপছন্দের কারো সাথে বিয়ে দেয়া আসলে ইসলামপূর্ব যুগে মেয়েশিশুকে জ্যান্ত কবর দেয়ার সমতুল্য।

(বিবাহ কথন-১১)

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন