১.
ডাক্তারের চেম্বারে এসেছেন রহমত সাহেব। দুমাস ধরেই খেয়াল করছেন একটু একটু জ্বর, শরীরটাও দুর্বল হয়ে আসছে। ওজন কমে যাচ্ছে। খাওয়ার রুচিও আগের মত নাই। ইদানিং অফিসের কাজও ঠিকঠাক করতে পারেন না। খুব ক্লান্ত লাগে।
ডাক্তার তার সবকথা শুনে ফুসফুসের ক্যান্সার মনে করলেন। তিনি বললেন FNAC করতে হবে। রোগীকে পরামর্শ দিলেন- পরীক্ষা অমুক ল্যাব থেকে করাবেন।
রহমত সাহেব কিছু বলতে গিয়েও বললেন না। কিন্তু চেম্বার থেকে বেরিয়ে তিনি আর নিজেকে সামলাতে পারলেন না। কথাটা বলেই ফেললেন তিনি। ঐ নির্দিষ্ট ল্যাবেই করাতে হবে কেন? আসলে সবই হইলো গিয়া এদের কমিশন খাওয়ার ধান্দা!!
২.
কিছুদিন ধরেই মাথা ঘুরায় খলিল সাহেবের। পেশায় সাংবাদিক তিনি। মাথা খাটিয়েই কাজ করতে হয়। ভেবেছিলেন ডাক্তারের কাছে যাবেন না। না খেয়ে মরুক ডাক্তারগুলা। এদেশের ডাক্তারে কিছু জানে নাকি?
কিন্তু কয়েকদিন হলো মাথাব্যথাটা বাড়ছে। শেষমেষ তিনি বাধ্য হয়েই একজন মেডিসিন স্পেশালিস্টের শরণাপন্ন হলেন। মেডিসিনের স্বনামধন্য প্রফেসর। খলিল সাহেব ভেবেছিলেন, এতবড় প্রফেসর, নিশ্চয় চেহারা দেখেই রোগ ধরে ফেলবেন। কিন্তু না, ডাক্তার ধরিয়ে দিলেন এমআরআই অব ব্রেইন। আর বললেন- অমুক ইমেজিং সেন্টার থেকে করাবেন।
যা বোঝার বুঝে ফেললেন সাংবাদিক খলিল সাহেব। কচি খোকা তো নন! চেম্বার থেকে বেরোতে বেরোতে মনে মনে একটা নিউজও গুছিয়ে ফেললেন তিনি। একেবারে হাতে নাতে প্রমাণ!! এভাবেই তাহলে কমিশন খাওয়ার ধান্দায় নির্দিষ্ট ডায়াগনোস্টিকে পাঠায় ডাক্তাররা!!
৩.
বুকের ব্যথাটা অনেকদিন থেকেই আছে কবির সাহেবের। প্রথমে এলাকার ফার্মেসি থেকে বিভিন্ন সময় ওষুধ কিনে খেয়েছেন। কিন্তু কাজের কাজ কিছু হয়নি। শেষমেষ বাধ্য হয়ে গতকাল গিয়েছিলেন একজন এমবিবিএস ডাক্তারের চেম্বারে। সিম্পল এমবিবিএস আরকি। ছোকরা ডাক্তার ইসিজি করিয়ে বললো হার্টে কিছু সমস্যা আছে। এতক্ষণ পর্যন্ত ঠিকই ছিল, কিন্তু এর পরেই বের হলো ছোকরা ডাক্তারের আসল চেহারা!! বলে কিনা- ইকোকার্ডিওগ্রাম করাতে হবে। কোথায় করাতে হবে তাও বলে দিলো!! অমুক সেন্টারে গিয়ে অমুক ডাক্তারের হাতে করাবেন।
কবির সাহেব তখনই সব বুঝেছেন। নিজের বয়স তো আর কম হলো না। ঐ ছোকরা ভেবেছে কি, তিনি কিছুই বোঝেন না? সোনালি ফার্মেসির ছেলেটার কথাই ঠিক। ইকো টিকো কিছুনা, সব ঐ ছোকরা ডাক্তারের কমিশন খাওয়ার ধান্দা আরকি!! ছোকরার অভ্যাস এখনই খারাপ হয়ে গেছে। বড় হলে তো নির্ঘাত কসাই হবে!!
****
আপনি অমুক জায়গা থেকে টেস্ট করাবেন। ডাক্তার এরকম কিছু বললেই অনেকের মনে খচ খচ করে ওঠে, নিশ্চয়ই কমিশন খাওয়ার ধান্দা আছে।
কমিশন কমিশন করে এমন শোরগোল তোলা হয়েছে, রোগীরা এখন সাধারণ পরীক্ষা নিরীক্ষা করতেও সন্দেহ করে- কমিশনের লোভে অপ্রয়োজনীয় টেস্ট দিলো না তো?
কিন্তু বাস্তবতা কী? আমার জানা মতে, কমিশনখোর ডাক্তারের সংখ্যা খুবই নগন্য। আর কমিশনখোররাও সহজে অপ্রয়োজনীয় টেস্ট দেয়না। যেমন পুলিশ বা সরকারি অফিসের কোন কোন কর্মচারী ঘুষ নেয়, সেটা খারাপ। কিন্তু ঘুষ নিয়ে কাজ করবেনা এতটা বেঈমান তারা এখনো হয়নি। কমিশনখোররাও হলো সেরকম। কমিশন খায় সেটা খারাপ। তাই বলে অপ্রয়োজনীয় টেস্ট দিয়ে কমিশন খাবে এতটা বেঈমান বোধহয় তারাও এখনো হয়নি।
নির্দিষ্ট ল্যাবে টেস্ট করাতে বললেই কমিশন খাওয়ার ধান্দা না। কিছু কিছু টেস্ট আছে - যার জন্য এক্সপার্টদের কাছ থেকেই রিপোর্ট নিতে হয়। যেমন FNAC, Histopathology, MRI, Echocardiogram, Endoscopy, Bronchoscopy ইত্যাদি। আর এক্সপার্টরা তো রাস্তাঘাটে ফুটপাতে বসেন না। তারা থাকেন বিশেষ কিছু সেন্টারে।
সুতরাং, কেউ আপনাকে নির্দিষ্ট ল্যাবে পাঠালেই কমিশন খাওয়ার ধান্দা মনে করে বসবেন না।
বিশ্বাস রাখুন, আমাদের সমাজটা সামগ্রিকভাবে পঁচে গেলেও ভালো মানুষের সংখ্যা এখনো অনেক বেশি।
ডাক্তারের চেম্বারে এসেছেন রহমত সাহেব। দুমাস ধরেই খেয়াল করছেন একটু একটু জ্বর, শরীরটাও দুর্বল হয়ে আসছে। ওজন কমে যাচ্ছে। খাওয়ার রুচিও আগের মত নাই। ইদানিং অফিসের কাজও ঠিকঠাক করতে পারেন না। খুব ক্লান্ত লাগে।
ডাক্তার তার সবকথা শুনে ফুসফুসের ক্যান্সার মনে করলেন। তিনি বললেন FNAC করতে হবে। রোগীকে পরামর্শ দিলেন- পরীক্ষা অমুক ল্যাব থেকে করাবেন।
রহমত সাহেব কিছু বলতে গিয়েও বললেন না। কিন্তু চেম্বার থেকে বেরিয়ে তিনি আর নিজেকে সামলাতে পারলেন না। কথাটা বলেই ফেললেন তিনি। ঐ নির্দিষ্ট ল্যাবেই করাতে হবে কেন? আসলে সবই হইলো গিয়া এদের কমিশন খাওয়ার ধান্দা!!
২.
কিছুদিন ধরেই মাথা ঘুরায় খলিল সাহেবের। পেশায় সাংবাদিক তিনি। মাথা খাটিয়েই কাজ করতে হয়। ভেবেছিলেন ডাক্তারের কাছে যাবেন না। না খেয়ে মরুক ডাক্তারগুলা। এদেশের ডাক্তারে কিছু জানে নাকি?
কিন্তু কয়েকদিন হলো মাথাব্যথাটা বাড়ছে। শেষমেষ তিনি বাধ্য হয়েই একজন মেডিসিন স্পেশালিস্টের শরণাপন্ন হলেন। মেডিসিনের স্বনামধন্য প্রফেসর। খলিল সাহেব ভেবেছিলেন, এতবড় প্রফেসর, নিশ্চয় চেহারা দেখেই রোগ ধরে ফেলবেন। কিন্তু না, ডাক্তার ধরিয়ে দিলেন এমআরআই অব ব্রেইন। আর বললেন- অমুক ইমেজিং সেন্টার থেকে করাবেন।
যা বোঝার বুঝে ফেললেন সাংবাদিক খলিল সাহেব। কচি খোকা তো নন! চেম্বার থেকে বেরোতে বেরোতে মনে মনে একটা নিউজও গুছিয়ে ফেললেন তিনি। একেবারে হাতে নাতে প্রমাণ!! এভাবেই তাহলে কমিশন খাওয়ার ধান্দায় নির্দিষ্ট ডায়াগনোস্টিকে পাঠায় ডাক্তাররা!!
৩.
বুকের ব্যথাটা অনেকদিন থেকেই আছে কবির সাহেবের। প্রথমে এলাকার ফার্মেসি থেকে বিভিন্ন সময় ওষুধ কিনে খেয়েছেন। কিন্তু কাজের কাজ কিছু হয়নি। শেষমেষ বাধ্য হয়ে গতকাল গিয়েছিলেন একজন এমবিবিএস ডাক্তারের চেম্বারে। সিম্পল এমবিবিএস আরকি। ছোকরা ডাক্তার ইসিজি করিয়ে বললো হার্টে কিছু সমস্যা আছে। এতক্ষণ পর্যন্ত ঠিকই ছিল, কিন্তু এর পরেই বের হলো ছোকরা ডাক্তারের আসল চেহারা!! বলে কিনা- ইকোকার্ডিওগ্রাম করাতে হবে। কোথায় করাতে হবে তাও বলে দিলো!! অমুক সেন্টারে গিয়ে অমুক ডাক্তারের হাতে করাবেন।
কবির সাহেব তখনই সব বুঝেছেন। নিজের বয়স তো আর কম হলো না। ঐ ছোকরা ভেবেছে কি, তিনি কিছুই বোঝেন না? সোনালি ফার্মেসির ছেলেটার কথাই ঠিক। ইকো টিকো কিছুনা, সব ঐ ছোকরা ডাক্তারের কমিশন খাওয়ার ধান্দা আরকি!! ছোকরার অভ্যাস এখনই খারাপ হয়ে গেছে। বড় হলে তো নির্ঘাত কসাই হবে!!
****
আপনি অমুক জায়গা থেকে টেস্ট করাবেন। ডাক্তার এরকম কিছু বললেই অনেকের মনে খচ খচ করে ওঠে, নিশ্চয়ই কমিশন খাওয়ার ধান্দা আছে।
কমিশন কমিশন করে এমন শোরগোল তোলা হয়েছে, রোগীরা এখন সাধারণ পরীক্ষা নিরীক্ষা করতেও সন্দেহ করে- কমিশনের লোভে অপ্রয়োজনীয় টেস্ট দিলো না তো?
কিন্তু বাস্তবতা কী? আমার জানা মতে, কমিশনখোর ডাক্তারের সংখ্যা খুবই নগন্য। আর কমিশনখোররাও সহজে অপ্রয়োজনীয় টেস্ট দেয়না। যেমন পুলিশ বা সরকারি অফিসের কোন কোন কর্মচারী ঘুষ নেয়, সেটা খারাপ। কিন্তু ঘুষ নিয়ে কাজ করবেনা এতটা বেঈমান তারা এখনো হয়নি। কমিশনখোররাও হলো সেরকম। কমিশন খায় সেটা খারাপ। তাই বলে অপ্রয়োজনীয় টেস্ট দিয়ে কমিশন খাবে এতটা বেঈমান বোধহয় তারাও এখনো হয়নি।
নির্দিষ্ট ল্যাবে টেস্ট করাতে বললেই কমিশন খাওয়ার ধান্দা না। কিছু কিছু টেস্ট আছে - যার জন্য এক্সপার্টদের কাছ থেকেই রিপোর্ট নিতে হয়। যেমন FNAC, Histopathology, MRI, Echocardiogram, Endoscopy, Bronchoscopy ইত্যাদি। আর এক্সপার্টরা তো রাস্তাঘাটে ফুটপাতে বসেন না। তারা থাকেন বিশেষ কিছু সেন্টারে।
সুতরাং, কেউ আপনাকে নির্দিষ্ট ল্যাবে পাঠালেই কমিশন খাওয়ার ধান্দা মনে করে বসবেন না।
বিশ্বাস রাখুন, আমাদের সমাজটা সামগ্রিকভাবে পঁচে গেলেও ভালো মানুষের সংখ্যা এখনো অনেক বেশি।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন