এক রৌদ্রোজ্বল বিকেলে...

এক রৌদ্রোজ্বল বিকেলে...
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে

শুক্রবার, ২৪ মার্চ, ২০১৭

হায় কান্ডজ্ঞান!

ভোর পাঁচটা। সরকারী হাসপাতালের হৃদরোগ বিভাগে রাত্রীকালীন দায়িত্বে আছেন ডাঃ মুনীর। ভোরের এই সময়ে বহির্বিভাগীয় রোগীর চাপ একটু কমেছে। এখন তিনি ঘুরে ঘুরে ভর্তি রোগীদের অবস্থা দেখছেন। খেয়াল করলেন, একজন ভদ্রলোক দরজা খুলে ভেতরে ঢুকে এদিক সেদিক তাঁকিয়ে শেষে এসে দাঁড়ালেন ডেস্কের সামনে। বেশ উদ্বিগ্ন দেখাচ্ছে তাকে।

কোন রোগীর এটেন্ড্যান্ট? পোস্ট সিসিইউ বা পোস্ট ক্যাথের কোন রোগীর সমস্যা? নাকি অন্য ওয়ার্ড থেকে রেফারেল? ভাবতে ভাবতে ডেস্কে ফিরে নিজের চেয়ারে বসলেন ডাঃ মুনীর। জিজ্ঞাসু চোখে তাঁকালেন আগত ভদ্রলোকের চোখে। আংকেল, বলুন কী সমস্যা?
ভদ্রলোকের চোখে আরো উদ্বেগ ফুটে উঠলো। তিনি অত্যন্ত আগ্রহ নিয়ে জিজ্ঞেস করলেন- আচ্ছা, 'তিন তলার ৩২ নম্বর বেডটা কোনদিকে?'

মেজাজটা প্রায় বিগড়েই যেতে বসেছিল ডাঃ মুনীরের। তবু অনেক কষ্টে মেজাজের লাগাম টেনে ধরে সুন্দর ভাবে উত্তর দিলেন। চাচা, এই ওয়ার্ডে তো ৩২ নম্বর বেড নাই। অমুক অমুক ওয়ার্ডে আছে। ওইখানে গিয়ে একটু খোঁজ করুন। পেয়ে যাবেন।

ভদ্রলোক চলে গেলেন। আর পেছন থেকে তার দিকে তাঁকিয়ে রইলেন ডাঃ মুনীর। অদ্ভুত ব্যাপার! নিচতলায় দুজন দারোয়ান, এই ওয়ার্ডের প্রবেশপথে দারোয়ান, নার্সেস ডেস্কে কয়েকজন নার্স, টুলে বসে থাকা ওয়ার্ডবয়, আয়া- বলা চলে চার স্তরের মানুষকে পেরিয়ে ইনি কিনা ডাক্তারকে জিজ্ঞেস করতে এসেছিলেন- ৩২ নম্বর বেডটা কোনদিকে? হায় কান্ডজ্ঞান!! এঁদের ধারণা, হাসপাতালের সবকিছু সম্পর্কে ডাক্তারকেই জিজ্ঞেস করতে হবে!!

লোকটা চলে যেতেই ডাঃ মুনীরের মনে পড়লো- একটা ভুল হয়ে গেছে। মনে কষ্ট পেতে পারে ভেবে তাকে বলা হয়নি যে এটা জিজ্ঞেস করার জন্য ডাক্তারের কাছে যাওয়ার দরকার নেই। হায়! কে জানে- এতক্ষণে হয়তো ভদ্রলোক অন্য ওয়ার্ডে গিয়ে কর্তব্যরত ডাক্তারকে খুঁজছেন। আর পেলেই জিজ্ঞেস করে বসবেন তার সেই মোক্ষম প্রশ্নটিঃ আচ্ছা, তিনতলার ৩২ নম্বর বেডটা কোনদিকে?

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন