এক রৌদ্রোজ্বল বিকেলে...

এক রৌদ্রোজ্বল বিকেলে...
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে

বুধবার, ২৪ মে, ২০১৭

ভুল চিকিৎসার অভিযোগ: বিল ফাঁকি দেয়াই উদ্দেশ্য

রাগ বা ক্ষোভ নয়, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ভুল চিকিৎসার অভিযোগ তোলা বা হাসপাতালে হামলা করার প্রধান উদ্দেশ্য হলো- হাসপাতালের বিল ফাকি দেয়া। এবং সম্ভব হলে হাসপাতালের মালিক পক্ষের কাছ থেকে বাড়তি কিছু আদায় করা। এতদিন ধরে ভুল চিকিৎসার অভিযোগ বা হামলার যত ঘটনার কথা শুনেছি এবং দেখেছি, সবখানেই ছিল একই চিত্র। এই উদ্দেশ্যে অনেক সময় মাস্তান ও সাংবাদিক ভাড়াও করা হয়।
গত বছরের ঘটনা। এক বেসরকারি হাসপাতালের আইসিইউ তে ডিউটি করছিলাম। পোস্ট অপারেটিভ রুম থেকে একজন রোগীকে আনা হলো। ব্লাড প্রেসার নন রেকর্ডেবল, গাস্পিং রেস্পিরেশন। Intubation, Ventilation, inotropes... কিছুক্ষণের মধ্যে Cardiac arrest. রোগীকে বাঁচানো গেলনা। ডায়াগনোসিসও করা গেলনা। ধারণা করা হলো ম্যাসিভ পালমোনারী এমবলিজম।
রোগীর লোকজনকে সব বুঝিয়ে বলা হলো। কিন্তু তারা ঘন্টাখানেক পরে কিছু মাস্তান এবং সাথে সাংবাদিক নিয়ে এলেন। রাত দুইটায় সাংবাদিকদের সাথে আমাদের ভালোরকম বচসা হয়ে গেল। তাদের নাম ধাম জেনে নিয়ে বললাম, অভিযোগ তুলেছেন ভালো কথা, কিন্তু তদন্ত কমিটির মাধ্যমে অভিযোগ প্রমাণিত হবার আগে নিউজ করলে আপনাদের নামে মামলা হবে।
কিছুক্ষণ পরেই রোগীর পার্টি লাশ নিয়ে গেলো। জানলাম, তারা কোন বিল পরিশোধ করেনি।
২.
দেশের স্বাস্থ্যখাতকে বিতর্কিত করতে একটা প্রচেষ্টা যে চলছে, সেটা স্পষ্টই বোঝা যায়। আর এই চেষ্টার মূল ক্রীড়নক হিসেবে কাজ করছে সংবাদমাধ্যম আর কিছু অবুঝ সাংবাদিক। কেউ অভিযোগ তুললেই তারা হেডলাইন দেয়ঃ ভুল চিকিৎসায় রোগীর মৃত্যু। যেন ভুল চিকিৎসার ব্যাপারে তারা শতভাগ নিশ্চিত।
তো এরকম শিরোনাম দিনের পর দিন দেখলে যে কারো মনে একটা বদ্ধমূল ধারণা জন্মাবে যে- দেশে প্রচুর ভুল চিকিৎসা হচ্ছে। ভুল চিকিৎসায় প্রচুর মানুষ মারা যাচ্ছে। এরপর কেউ মারা গেলেই প্রথম যে কথাটা মনে আসে- ভুল চিকিৎসা হলো নাতো! এখান থেকেই উগ্রতার উদ্ভব।
সুতরাং, এই অসহিষ্ণু পরিস্থিতির পেছনে সাংবাদিকদের দায় সিংহভাগ।
সংবাদ প্রকাশের ব্যাপারে স্পষ্ট আইন করা এখন জরুরী হয়ে পড়েছে। মিথ্যা সংবাদ পরিবেশন করলে সাংবাদিকের/সম্পাদকের শাস্তির ব্যবস্থা করে আইন করতে হবে। হাসপাতাল ভাংচুর, ডাক্তারের ওপর হামলা মামলায় যখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর যোগ দেন, তখন অবস্থার ভয়াবহতা আমলে না নিয়ে উপায় নেই।
সাংবাদিক ভাইদের উপলব্ধি করতে হবে- মতপ্রকাশের স্বাধীনতা মানে মিথ্যা প্রকাশের স্বাধীনতা নয়।
৩.
ডাক্তারদের কেউ কেউ পর্যাপ্ত কাউন্সেলিং করতেন না, এটা ঠিক। তবে দিন পাল্টেছে। এখন সবাই কাউন্সেলিং করে। আমার আহবান, যে ডাক্তার কাউন্সেলিং করেন না, তাদের কাছে কেউ চিকিৎসা নিতে যাবেন না। কেউ রোগী পাঠাবেন না।
কিন্তু একজন রোগীর জন্য প্রতিদিন ১৫-২০ জন লোক আলাদাভাবে ঘন্টায় ঘন্টায় জানতে আসবেন- 'রোগীর কী অবস্থা" সেটাও কারো পক্ষে সামাল দেয়া সম্ভব না।
অবস্থা যা দাঁড়াচ্ছে, তাতে করে এখন আর শুধু কাউন্সেলিং করলেই হবে না, অপারেশনের আগে যেভাবে Informed written Consent নেয়া হয়, কাউন্সেলিং এর পরও সেইভাবে কাগজে স্বাক্ষর নিয়ে রাখতে হবে। প্রমাণ রাখতে হবে।
এতে করে উটকো লোকদেরকে অতিরিক্ত কাউন্সেলিং এর চাপ যেমন কমবে, প্রফেশনাল নেগলিজেন্সির অভিযোগ উঠলেও এই ডকুমেন্ট কাজে লাগবে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন