এক রৌদ্রোজ্বল বিকেলে...

এক রৌদ্রোজ্বল বিকেলে...
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে

রবিবার, ৭ মে, ২০১৭

কাঁচায় না নোয়ালে বাশ...

এইসময়ের গার্জিয়ানদের মাঝে ছেলেমেয়েদের বিয়ের ব্যাপারে এক অদ্ভুত রকমের উদাসীনতা লক্ষ করা যাচ্ছে। এইটা যে শুধু কোন নির্দিষ্ট অংশের মধ্যে সীমাবদ্ধ তাও নয়। কী উচ্চবিত্ত, কী নিম্নবিত্ত, কী মধ্যবিত্ত- সবার মাঝেই এই প্রবণতা প্রায় সমান। কেবল প্রান্তিক পর্যায়ের নিম্নবিত্তদের মাঝে কিছুটা কম বলা যায়।

আমি আমার নিকটাত্মীয়দের মধ্যেও দেখেছি, মেয়ের বয়স ২৫-২৬ হয়ে গেলেও তাদের বিয়ের ব্যাপারে কোন পেরেশানি নাই। ছেলের ক্ষেত্রে নাহয় এস্টাবলিশমেন্টের একটা ব্যাপার থাকে, কিন্তু মেয়েদের ব্যাপারে কেন এই উদাসীনতা তা আমার বুঝে আসে না। মেয়েকে অনার্স মাস্টার্স শেষ করতে হবে, চাকরি বাকরি করতে হবে, তারপরে বিয়ের কথা শুরু করতে হবে! কেন? অদ্ভুত এই মানসিকতার শুরু হয়েছে খুব সম্প্রতি। ৮-১০ বছর আগেও এই প্রবণতা এতটা প্রকট ছিল বলে আমার মনে হয় না। 

এর ফলে বিরাট সংখ্যক মেয়ের বিয়ে হচ্ছে লেট টুয়েন্টিতে। ২৭-২৮ এ। কেউ কেউ ৩০ পার করে দিচ্ছে।
প্রশ্ন হলো- ২৭-২৮ এ যদি মেয়ের বিয়ে হয়, বাচ্চা নিবে কবে? ৩০ এর আগে নিশ্চয়ই নয়! আর এইখানেই সমস্যার শুরু।

গবেষণায় এটা প্রমাণিত যে, বেশি বয়সে বাচ্চা নিতে চাইলেও বাচ্চা না হবার সম্ভাবনা বেশি। ইনফার্টিলিটি আজকের দিনে একটা বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। আর মেয়েদের দেরিতে বিয়ে হলো এর একটা প্রধান কারণ।
আমি আশেপাশের অনেকের কথাই জানি, যারা তাদের ৩০-৩২ বছর বয়সে এসে বাচ্চা নিতে চাইছেন। কিন্তু এখন তাদের প্রতিনিয়ত গাইনোকলজিস্টের চেম্বার আর ইনিফার্টিলিটি সেন্টারে যাতায়াত করতে হচ্ছে।

মেয়েদের বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে সন্তানধারণের সম্ভাবনা কমতে থাকে। বলা হয়, Age is the single most important factor affecting fertility and chances of having a child.

ত্রিশ এর আগে যদি সম্ভাবনা থাকে ২০%, ত্রিশ এর পর তা নেমে দাঁড়ায় ৫% এ। ৩৫ বছর বয়সে সন্তান ধারণে অক্ষম হবার সম্ভাবনা ২৫ বছর বয়সের তুলনায় কমপক্ষে তিনগুন বেশি। আর ৪০ এ এই সম্ভাবনা নেমে যায় অর্ধেকে।
বেশি বয়সে যাদের প্রথম বাচ্চা হয়, তাদের ডায়াবেটিস, হাইপারটেনশন, ওভারিয়ান সিস্ট, ফাইব্রয়েড ইউটেরাস, গর্ভের শিশুর বিকলাঙ্গতা, গর্ভাবস্থায় শিশুর মৃত্যু, মিসক্যারেজ, প্রসবকালীন ও প্রসব পরবর্তী ঝুঁকি এবং সিজারিয়ান অপারেশনের সম্ভাবনা কয়েকগুন বেড়ে যায়।

তাছাড়া বয়স যত বাড়ে, জীবিত বাচ্চার চেয়ে মৃত বাচ্চা জন্মের সম্ভাবনাও তত বাড়ে।

এমনকি বাচ্চার জন্মের পরেও তার মৃত্যু ঝুঁকি বেশি বয়সের মায়েদের ক্ষেত্রে বেশি থাকে।

আজকে যারা গার্জিয়ান তাঁদের বেশিরভাগের বিয়ে হয়েছিল নব্বইয়ের দশকে। তখন ছেলের বয়স থাকতো ২৫ এর মধ্যে আর মেয়ের বয়স ২০ এর মধ্যে। তখনো যৌথ পরিবার পদ্ধতি এস্টাবলিশড ছিল, সামাজিক ও পারিবারিক বন্ধন ভালো ছিল। সে কারণে এই অভিভাবকেরা বোঝেন না যে, এই সময়ে এসে ২৫ এর পর ছেলেমেয়েরা কীরকম নিঃসঙ্গতায় ভোগে। আর বেশি বয়সে বিয়ের ফলে ইনিফার্টিলিটি সহ অন্যান্য স্বাস্থ্যগত ক্ষতির দিক নিয়েও তাদের চিন্তা পরিস্কার নয়।

সুতরাং, আমার মনে হয়, আধুনিক ও সচেতন মেয়েরা যদি কেউ নিঃসন্তান জীবনের ঝুঁকি নিতে না চান, তাহলে লাজ লজ্জার মাথা খেয়ে উদাসীন বাপ মাকে নিজেই নিজের বিয়ের কথা বলার সময় এসেছে।

কথায় আছেঃ
কাঁচায় না নোয়ালে বাশ,
পাকলে করে ঠাশ ঠাশ।
(বিবাহ কথন-২৪) চলবে...

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন