দৈনিক মতিকন্ঠের সম্পাদক মতিলাল
চক্রবর্তীর জ্বর হয়েছে । কিন্তু এইবার উনি ডাক্তারের কাছে যাবেন না । তিনি
একটা পণ করেছেন । এইবার তিনি ডাক্তারদের শায়েস্তা করার জন্য নতুন ধরণের
আন্দোলনে নামবেন । তিনি জনগনকে বোঝাবেন – আমরা ডাক্তারদের কাছে যাই বলেই
ওরা ‘রোগী’ পায় । আমরা নিজেরাই গিয়ে টাকা দিয়ে আসি , আর এতে করে ডাক্তারদের
ভাব বেড়ে গেছে !
সুতরাং ডাক্তারের কাছে যাওয়া বন্ধ করতে হবে । ওঝা, কবিরাজ, হোমিওপ্যাথিতে জনগনের বিশ্বাস ফিরিয়ে আনতে হবে । জনগন যদি অসুখ হলে ডাক্তারের কাছে না যায় – তাহলেই ডাক্তাররা না খেয়ে মরবে !
যেই ভাবা সেই কাজ । ছেলেমেয়েদের নিষেধ না শুনে মতিলাল চক্রবর্তী তাঁর পণে স্থির থাকলেন । তিনি তাঁর জ্বর সারাবার জন্যে একজন ভালো ওঝা ডাকতে বললেন ।
পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দেয়া হলো । ‘ওঝা আবশ্যক’ । জাতীয় দৈনিক পত্রিকার সম্পাদকের জ্বর সারাইবার নিমিত্তে একজন দক্ষ ওঝা আবশ্যক । বিজ্ঞাপন দেখে ওঝারাতো মহাখুশি । এইবার মনে হয় আমাদের কপাল ফিরছে ! শ’য়ে শ’য়ে ওঝা এলো মতিলাল বাবুর চিকিৎসা করতে । মতিলালও মহা খুশি । এত ওঝা এসেছে তাঁর জন্য ! এইবার ডাক্তারদের উচিৎ শিক্ষা দেয়া হবে । ব্যাটারা টের পাবে কত ধানে কত চাল আর কত গমে কত আটা ! সাংবাদিকের সাথে তেড়িবেড়ি !
অনেক ওঝার ভেতর থেকে একজনকে সিলেক্ট করা হলো । কালু ওঝা । কুচকুচে কালো চেহারা । লম্বা চুল কাঁধ পেরিয়ে পিঠে নেমেছে । জটাধারী ফকির- মানে চুলে জট পাকানো । দাড়ি গোঁফের বিশাল বহর । ঠোঁট তার কবেকার অন্ধকার বিদিশার নিশা – মানে দেখাই যায় না ! পরণে ময়লা ফতুয়া-ধূতি । এইতো চাই । এমন ওঝাই মনে মনে খুঁজছিলেন মতিলাল বাবু । যাক, এইবার জ্বর পালাবেই । এই সফলতার সংবাদ তিনি পত্রিকায় লাল কালিতে আট কলাম হেডিং করবেন । লিড নিউজ । দেশের মানুষ বুঝবে , ডাক্তারের কাছে যাবার কোন দরকার নেই !
ডাক্তারদের দুরবস্থার কথা কল্পনা করে এই জ্বরতপ্ত শরীরেও মতিলাল বাবু সাংবাদিকসুলভ পৈশাচিক আনন্দ পাচ্ছেন । কল্পনায় তিনি দেখছেন- ঢাকার ফুটপাতে দেশের বাঘাবাঘা ডাক্তাররা সারিবেঁধে ভিক্ষা করছেন । আমার আল্লা নবিজীর নাম , এই শাওয়াল মাসের চান, দুইটা টাকা করেন দান, আমার আল্লা নবিজীর নাম ।
ইন্টার্নি না ফিন্টার্নি , যারা আজকাল হলুদ সাংবাদিক দেখলেই পিটায় তারা ডাঃ এবিএম আব্দুল্লাহ, ডাঃ কাজী দ্বীন মোহাম্মদ, ডাঃ প্রাণ গোপালদের পেছনে পেছনে ভিক্ষার জন্য নিজের হাত-পা কেটে পঙ্গু অবস্থায় গড়াগড়ি খাচ্ছে । স্লামডগ মিলিওনিয়ার ইন বাংলাদেশ !
এইসব ভাবতে ভাবতে মতিলাল বাবু আবিস্কার করলেন তাঁকে একটা কক্ষে নিয়ে আসা হয়েছে । দরজা ভেতর থেকে বন্ধ । রুমে তিনি আর ওঝা ছাড়া কেউ নেই ।
ওঝাকে জিজ্ঞেস করলেন – ‘ওঝা বাবু, জ্বর পালাবে তো ?’
ওঝা চোখ পাকিয়ে তাকালেন । ঝোলা থেকে বের করলেন একটা চাবুক । গম্ভীর কন্ঠে গোঁফের জঙ্গলের ভেতর মুখ নাড়িয়ে বললেন- ‘পালাবে না মানে ? এমন পিটুনি দেবো, ব্যাটা জ্বরের চৌদ্দগুষ্ঠি পালাবে !’
ওঝার মুখের নাড়াচাড়া বাইরে থেকে দেখা না যাওয়ায় ওঝার কথাটাকে অনেকটা গায়েবী আওয়াজের মত লাগলো ।
এরপরের দশ-পনেরো মিনিট রুমের বাইরে থেকে ‘ও বাবাগো, মাগো, বাঁচাও, বাঁচাও’ শব্দ শোনা গেলো । শব্দ থেমে গেলে ওঝা ঘর্মাক্ত শরীরে বীরের বেশে বের হয়ে আসলেন । তিনি পিটিয়ে জ্বরকে তাড়িয়েছেন !
দৌড়ে রুমে ঢুকলেন মতিলাল বাবুর স্ত্রী, ছেলে, মেয়ে । দেখলেন , মতিলাল বাবু নির্জীব হয়ে পড়ে আছেন । তাঁর সারা শরীরে চাবুকের দাগ । কয়েক জায়গায় ফেটে রক্ত বেরুচ্ছে !
‘বাবা বাবা, কথা বলো’ ! আর্তনাদ করে উঠলো ছেলে মেয়েরা । মতিলাল বাবু ধীরে ধীরে চোখ খুললেন । অনেক কষ্টে কোনমতে মুখ খুলে বললেন – বাবারে, মা , ডাক্তারকে খবর দে । আমারে তাড়াতাড়ি হাসপাতালে নিয়া চল !
[ মতিলালের চিকিৎসা আন্দোলন ! / ০৮-০৫-২০১৪ ]
সুতরাং ডাক্তারের কাছে যাওয়া বন্ধ করতে হবে । ওঝা, কবিরাজ, হোমিওপ্যাথিতে জনগনের বিশ্বাস ফিরিয়ে আনতে হবে । জনগন যদি অসুখ হলে ডাক্তারের কাছে না যায় – তাহলেই ডাক্তাররা না খেয়ে মরবে !
যেই ভাবা সেই কাজ । ছেলেমেয়েদের নিষেধ না শুনে মতিলাল চক্রবর্তী তাঁর পণে স্থির থাকলেন । তিনি তাঁর জ্বর সারাবার জন্যে একজন ভালো ওঝা ডাকতে বললেন ।
পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দেয়া হলো । ‘ওঝা আবশ্যক’ । জাতীয় দৈনিক পত্রিকার সম্পাদকের জ্বর সারাইবার নিমিত্তে একজন দক্ষ ওঝা আবশ্যক । বিজ্ঞাপন দেখে ওঝারাতো মহাখুশি । এইবার মনে হয় আমাদের কপাল ফিরছে ! শ’য়ে শ’য়ে ওঝা এলো মতিলাল বাবুর চিকিৎসা করতে । মতিলালও মহা খুশি । এত ওঝা এসেছে তাঁর জন্য ! এইবার ডাক্তারদের উচিৎ শিক্ষা দেয়া হবে । ব্যাটারা টের পাবে কত ধানে কত চাল আর কত গমে কত আটা ! সাংবাদিকের সাথে তেড়িবেড়ি !
অনেক ওঝার ভেতর থেকে একজনকে সিলেক্ট করা হলো । কালু ওঝা । কুচকুচে কালো চেহারা । লম্বা চুল কাঁধ পেরিয়ে পিঠে নেমেছে । জটাধারী ফকির- মানে চুলে জট পাকানো । দাড়ি গোঁফের বিশাল বহর । ঠোঁট তার কবেকার অন্ধকার বিদিশার নিশা – মানে দেখাই যায় না ! পরণে ময়লা ফতুয়া-ধূতি । এইতো চাই । এমন ওঝাই মনে মনে খুঁজছিলেন মতিলাল বাবু । যাক, এইবার জ্বর পালাবেই । এই সফলতার সংবাদ তিনি পত্রিকায় লাল কালিতে আট কলাম হেডিং করবেন । লিড নিউজ । দেশের মানুষ বুঝবে , ডাক্তারের কাছে যাবার কোন দরকার নেই !
ডাক্তারদের দুরবস্থার কথা কল্পনা করে এই জ্বরতপ্ত শরীরেও মতিলাল বাবু সাংবাদিকসুলভ পৈশাচিক আনন্দ পাচ্ছেন । কল্পনায় তিনি দেখছেন- ঢাকার ফুটপাতে দেশের বাঘাবাঘা ডাক্তাররা সারিবেঁধে ভিক্ষা করছেন । আমার আল্লা নবিজীর নাম , এই শাওয়াল মাসের চান, দুইটা টাকা করেন দান, আমার আল্লা নবিজীর নাম ।
ইন্টার্নি না ফিন্টার্নি , যারা আজকাল হলুদ সাংবাদিক দেখলেই পিটায় তারা ডাঃ এবিএম আব্দুল্লাহ, ডাঃ কাজী দ্বীন মোহাম্মদ, ডাঃ প্রাণ গোপালদের পেছনে পেছনে ভিক্ষার জন্য নিজের হাত-পা কেটে পঙ্গু অবস্থায় গড়াগড়ি খাচ্ছে । স্লামডগ মিলিওনিয়ার ইন বাংলাদেশ !
এইসব ভাবতে ভাবতে মতিলাল বাবু আবিস্কার করলেন তাঁকে একটা কক্ষে নিয়ে আসা হয়েছে । দরজা ভেতর থেকে বন্ধ । রুমে তিনি আর ওঝা ছাড়া কেউ নেই ।
ওঝাকে জিজ্ঞেস করলেন – ‘ওঝা বাবু, জ্বর পালাবে তো ?’
ওঝা চোখ পাকিয়ে তাকালেন । ঝোলা থেকে বের করলেন একটা চাবুক । গম্ভীর কন্ঠে গোঁফের জঙ্গলের ভেতর মুখ নাড়িয়ে বললেন- ‘পালাবে না মানে ? এমন পিটুনি দেবো, ব্যাটা জ্বরের চৌদ্দগুষ্ঠি পালাবে !’
ওঝার মুখের নাড়াচাড়া বাইরে থেকে দেখা না যাওয়ায় ওঝার কথাটাকে অনেকটা গায়েবী আওয়াজের মত লাগলো ।
এরপরের দশ-পনেরো মিনিট রুমের বাইরে থেকে ‘ও বাবাগো, মাগো, বাঁচাও, বাঁচাও’ শব্দ শোনা গেলো । শব্দ থেমে গেলে ওঝা ঘর্মাক্ত শরীরে বীরের বেশে বের হয়ে আসলেন । তিনি পিটিয়ে জ্বরকে তাড়িয়েছেন !
দৌড়ে রুমে ঢুকলেন মতিলাল বাবুর স্ত্রী, ছেলে, মেয়ে । দেখলেন , মতিলাল বাবু নির্জীব হয়ে পড়ে আছেন । তাঁর সারা শরীরে চাবুকের দাগ । কয়েক জায়গায় ফেটে রক্ত বেরুচ্ছে !
‘বাবা বাবা, কথা বলো’ ! আর্তনাদ করে উঠলো ছেলে মেয়েরা । মতিলাল বাবু ধীরে ধীরে চোখ খুললেন । অনেক কষ্টে কোনমতে মুখ খুলে বললেন – বাবারে, মা , ডাক্তারকে খবর দে । আমারে তাড়াতাড়ি হাসপাতালে নিয়া চল !
[ মতিলালের চিকিৎসা আন্দোলন ! / ০৮-০৫-২০১৪ ]
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন