এক রৌদ্রোজ্বল বিকেলে...

এক রৌদ্রোজ্বল বিকেলে...
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে

শুক্রবার, ১১ জুলাই, ২০১৪

নিরাপত্তাহীন ডাক্তার, ক্ষতিগ্রস্ত জনগন

কয়েকদিন পরেই বিদেশ যাওয়ার কথা ছিল । কিন্তু চোখের সামনে একটা মেয়েকে সন্ত্রাসীরা অপহরণ করে নিয়ে যাবে , আর তিনি নিজের কথা ভেবে চুপ থাকবেন তাঁর বিবেক এটা মানতে পারেনি । নিজের বিপদকে উপেক্ষা করে বিপদগ্রস্ত মানুষকে বাঁচাতে এগিয়ে এসেছিলেন গেট সিকুরিটি লিটন । সন্ত্রাসীরা গুলি করলো তাঁর বুকে । ধীরে ধীরে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়লেন লিটন ।
এটি কয়েকদিন আগে ঢাকার উত্তরায় ঘটে যাওয়া একটি ঘটনা । লিটনের সাহসিকতা ও মানবতা প্রশ্নাতীত । কিন্তু আমাদের দৃষ্টি অন্যখানে । একটি দৈনিক পত্রিকায় রিপোর্ট এসেছে - লিটনকে স্থানীয় দুইটি ক্লিনিকে নিয়ে গেলে, পুলিশ কেস হিসেবে পুলিশী হয়রানির ভয়ে তাঁর চিকিৎসা দেয়া হয়নি । ঢাকা মেডিকেলে রেফার করা হয়েছিল ।
যদিও সাংবাদিক অন্যসব বিষয় উপেক্ষা করে যথারীতি ডাক্তারদেরকেই দোষারোপ করে আত্মতৃপ্তি পেয়েছেন । হয়তো ডাক্তারদের নিয়ে নেগেটিভ নিউজ করার লক্ষ্যেই রিপোর্টটি করাও হয়েছে । কিন্তু বিষয়টি আসলেই ভয়ংকর । ডাক্তাররা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগলে , চিকিৎসাক্ষেত্রে নিজেকে অনিরাপদ বোধ করলে আল্টিমেট ক্ষতি যে জনগনেরই সেটা আবারো স্পষ্ট হয়েছে । অবশ্য ঐ ক্লিনিকে এরকম রোগীর চিকিৎসার ব্যবস্থা ছিল কিনা সেটা আমার জানা নেই ।
মুমূর্ষু রোগী বাঁচতেও পারেন , মারাও যেতে পারেন । ডাক্তারের কাজ হলো বাঁচানোর সর্বোচ্চ চেষ্টা করা । কিন্তু অবস্থা যা দাঁড়িয়েছে , কোনভাবে রোগী মারা গেলেই ডাক্তারের ওপর চড়াও হওয়া , হাসপাতাল ভাংচুর করা রীতি হয়ে দাঁড়িয়েছে । আর কোনরকম তদন্ত ছাড়াই সাংবাদিক মহোদয়গন ডাক্তারের ওপর দোষ চাপিয়ে সংবাদ ছাপিয়ে মানুষকে উস্কে দেন । বেশ কিছ ক্ষেত্রে দেখা গেছে, কোনরকম তদন্ত কিংবা মামলা ছাড়াই পুলিশ ডাক্তারকে গ্রেপ্তারও করেছে । ডাক্তারদের কমুনিটিতে এসব সংবাদ এখন খুব দ্রুত ছড়ায় । ফলে ডাক্তাররাও নিজেদের নিরাপত্তা নিয়ে শংকার কারণে ঝামেলা এড়াতে চাচ্ছেন ।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষও ঝামেলা এড়ানোর জন্য খারাপ রোগী রেফার করতে ডাক্তারের ওপর চাপ প্রয়োগ করে । জানা থাকা ভালো , হাসপাতালের মালিকরা ব্যবসায়ী । ব্যবসা তাদের মূল লক্ষ্য ।
অবহেলা যে একেবারে কোথাও হয়না তা নয় । তবে তার দায় বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ডাক্তারের চেয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষেরই বেশি ।
যার স্বজন মারা যায় সেই বোঝে কষ্ট । কিন্তু তার মানে এই নয় ডাক্তাররা কষ্ট পায়না । রোগীকে সুস্থ করতে না পারলে ডাক্তারেরও কষ্ট লাগে । তারওপর ডাক্তার এবং হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ যদি নিরাপত্তাহীন বোধ করে তাহলে তারা গুরুতর অসুস্থ রোগীকে চিকিৎসা দিতে চাইবেন না এটাই স্বাভাবিক । প্রত্যেকেরই ব্যক্তিগত জীবন আছে ।
এছাড়া ভয় আছে পুলিশি ঝামেলার । এরকম ক্রিমিনাল অফেন্সে কখনো কখনো ডাক্তারদের সাক্ষী বানিয়ে টানাহেঁচড়া করা হয় । বাঘে ছুঁলে আঠারো ঘা , পুলিশ ছুঁলে ছত্রিশ ঘা । সেটাও ডাক্তারদের জন্য অহেতুক ঝামেলা ছাড়া আর কিছুই নয় ।
আমাদের নিজেদের স্বার্থেই এখন ডাক্তারদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা জরুরী । অবহেলা বা ভুল চিকিৎসা প্রতিরোধের জন্য বিশেষজ্ঞ ডাক্তার ও প্রশাসনিক লোকের সমন্বয়ে বিশেষ কমিটি গঠিত হোক । কিন্তু সাংবাদিক বা রোগীর আত্মীয়রা নিজেরাই যেন বিচারক হয়ে না যান । ডাক্তাররা নিরাপত্তাহীনতাবোধ করলে, শেষমেশ আমাদেরই ক্ষতি হবে ।
আমাদের মূর্খতার কারণে আর কোন লিটন যেন চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত না হন ।
কোন লিটনের চিকিৎসা দিতে ডাক্তাররা যেন ভয় না পান ।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন