এক রৌদ্রোজ্বল বিকেলে...

এক রৌদ্রোজ্বল বিকেলে...
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে

শুক্রবার, ২৫ জুলাই, ২০১৪

নারী নেতৃত্ব হারাম ? -১৭

সমসাময়িক খ্যাতিমান ইসলামী স্কলার ড. তারিক আল-সোয়াইদান নেতৃত্বের উপর একটি যুগান্তকারী বক্তব্য দিয়েছেন। চলতি বছরের ২২ ফেব্রুয়ারি মালয়েশিয়ায় এক কনফারেন্সে তিনি এ বক্তব্য প্রদান করেন। 



নারী নেতৃত্বের বিষয় আসলে অনেকেই যথাসম্ভব বিরোধিতা করেন। তারা নারী নেতৃত্বের বিরোধিতা করার সময় যে হাদীসটি উল্লেখ করে থাকেন তা হলো –‘যারা নারী নেতৃত্বের অধীনে থাকে তারা সফল হতে পারে না’। কেউ যদি কোনো হাদীসের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নিতে চায় তাহলে তাকে অবশ্যই সে সংক্রান্ত সবগুলো হাদীসের খুঁটিনাটি জানতে হবে। নারী নেতৃত্ব সংক্রান্ত তিনটি বিষয় আলোচনার দাবি রাখে।
প্রথমত, উল্লেখিত হাদীসটির অনেকগুলো সংস্করণ আছে। দুর্বল হাদীস বাদ দিয়েও এই হাদীসটির২০টি সংস্করণ আছে যার প্রত্যেকটি সহীহ।হাদীসশাস্ত্র আনুযায়ী, যদি একই বিষয়ে হাদীসের দুইটি সংস্করণ থাকে, তাহলে দুইটি হাদীসের সাথে সামঞ্জস্য রেখে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। যদি দুইটি হাদীসই সহীহ হয় তাহলে একটি গ্রহণ করে অন্যটিকে বাদ দেয়া যাবে না। যেমন, কুরআনে আল্লাহ সুবাহানাহু তায়ালা বলেছেন, ‘তোমরা দাসদের মুক্ত করে দাও’। অন্য আর একটি আয়াতে একই বিষয়ে আল্লাহ সুবাহানাহু তায়ালা বলেছেন, ‘তোমরা মুসলিম দাস মুক্ত করে দাও’।এখন, এ বিষয়ে আমাদের উচিত হবে একজন মুসলিম দাস মুক্ত করার অর্থকে গ্রহণ করা। যখন কেউ মুসলিম দাস মুক্ত করবেন তখন তার সাধারণ অর্থে দাস মুক্ত করাও হয়ে যাবে। কিন্তু যদি কেউ অমুসলিম দাস মুক্ত করেন তাহলে তিনি অন্য আর একটি আয়াতের নির্দেশনা মানছেন না।
নারী নেতৃত্ব নিয়ে যে হাদীসটির কথা বলা হয়ে থাকে, সেই হাদীসের একটি সহীহ সংস্করণে কতগুলো সুস্পষ্ট শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। যেমন, ‘মুলক’। আমরা জানি, ‘ওয়ালাও’ শব্দের অর্থ হলো কারো নেতৃত্বের অধীনে থাকা, আর ‘মালাকু’ শব্দের অর্থ হলো কোনো রাণীর অধীনে থাকা।হাদীসের ঐ বর্ণনায়একজন নারীর কোনো রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পর্যায়ে থাকা নিয়ে বলা হয়েছে। সুতরাং এই হাদীসটির বরাতে কেউ নারীদেরকে সংসদ সদস্য কিম্বা বিচারক ইত্যাদি হতে বারণ করতে পারেন না। কারণ, যদি কেউ তা করার চেষ্টা করেন, তাহলে হাদীসের অন্য একটি সহীহ বর্ণনাকেঅস্বীকার করা হবে।
দ্বিতীয়ত, ইমাম বুখারী বর্ণিত এই হাদীসটির পিছনে একটি ঘটনা আছে। ঘটনাটি হলো, পারস্যকে সাসানাইড সম্রাটরা এক হাজার বছরেরও বেশি সময় ধরে শাসন করেছেন। যখন প্রথম খসরুর শাসন চলছিল, তখন রাজ্যের ভবিষ্যত কর্ণধর কে হবে তা নিয়ে ব্যাপক ষড়যন্ত্র শুরু হয়। এ নিয়ে প্রথম খসরু খুবই বিরক্ত ছিলেন। তিনি একদিন সবাইকে অবাক করে যুবরাজ এবং নিজেকে বাদ দিয়ে সাসানাইড রাজবংশের সকল পুরুষ সদস্যকে হত্যা করার সিদ্ধান্ত দিলেন। তবে ভাগ্যক্রমে ইয়াযদেগারদ নামের একজন ছোট ছেলে বেঁচে যায়। পরবর্তীতে যাকে পারস্যের কিসরার রাজা বানানো হয়। মুসলমানরা যখন উমর (রা)-এর নেতৃত্বে কাদেসিয়ার যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়, সে সময় তিনি পারস্য সাম্রাজ্যের রাজা ছিলেন।
যা হোক, ঘটনাক্রমে সম্রাটের মৃত্যুর আগেই যুবরাজ মৃত্যুবরণ করেন। সে সময় তারা পারস্য শাসনের জন্য রাজপরিবারের কোনো পুরুষকে খুঁজে পাচ্ছিলেন না। তখন কিসরার মেয়েকে সিংহাসনে বসানো হয়। এই খবর রাসূল (সা)-এর কাছে পৌঁছলে তিনি আলোচ্য মন্তব্যটি করেন। রাসূল (সা) কোনো আদেশ করেননি। তিনি শুধুমাত্র তার অর্ন্তদৃষ্টি থেকে তাদের সম্পর্কে একটি সাধারণ ভবিষ্যৎবাণী করেছেন।
সহীহ বুখারী মনোযোগ দিয়ে পড়লে দেখবেন, ইমাম আবু ইসমাঈল আল-বুখারী হাদীস বিশেষজ্ঞের পাশাপাশি একজন ফকিহও ছিলেন। যদিও তিনি ফিকাহর উপর কোনো বই লিখেননি। তিনি তার মতামত সহীহ বুখারীর বিভিন্ন অধ্যায়ের শিরোনামের মাধ্যমে প্রকাশ করেছেন। ‘যারা নারী নেতৃত্বের অধীনে থাকে তারা সফল হতে পারে না’ এই হাদীসটি বুখারী শরীফের কোন অধ্যায়ে আছে?
বুখারী শরীফে ‘কিতাবুল ফিতনা’ একটি অধ্যায় এবং ‘কিতাবুল আহকাম’ আরেকটি অধ্যায়। এই হাদীসটি ‘কিতাবুল ফিতনা’য় সংযোজিত। ‘কিতাবুল আহকাম’ অধ্যায়ে ‘ইমারত’ তথা নেতৃত্ব সম্পর্কে বিস্তারিত বর্ণনা থাকা সত্ত্বেও এ হাদীসটিকে সে অধ্যায়ে রাখা হয়নি। সুতরাং নেতৃত্বের সাথে সর্বপর্যায়েজেন্ডারের সম্পর্ক খোঁজার চেষ্টা করাউচিত নয়। নারীরা যোগ্যতার প্রমাণ দিয়ে যে কোনো বিষয়ে নেতৃত্ব দিতে পারেন, তা হতে পারে রাষ্ট্রপ্রধানের মতো দায়িত্ব।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন