এক রৌদ্রোজ্বল বিকেলে...

এক রৌদ্রোজ্বল বিকেলে...
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে

বুধবার, ২৬ জুন, ২০১৩

ট্রাভেল 2013

টাইম স্টেশন -১২১ এ বসে আছে মুন (Human Identification Number 100020003000400050006000711111 ) । অপেক্ষা করছে ট্রেনের জন্য । রিসেন্টলি কিছু সুন্দর টাইম ট্রাভেলিং ট্রেন ছাড়া হয়েছে । এগুলোর নিরাপত্তাব্যবস্থা আগের গুলোর চেয়ে অনেক ভালো । পুরনো টাইম ট্রাভেলিং ট্রেনগুলি অনেক সময় আটকে যেত । দেখা গেল খ্রিষ্টপুর্ব ১০০০০ সালে গিয়ে আটকে আছে । চারিদিকে বিকটদর্শন জন্তু জানোয়ার ঘোরাফেরা করছে । বিরক্তিকর অবস্থা ।
হাতের বিশেষ ডিভাইসটির দিকে নজর দিল মুন । এটা তার বাবা নতুন কিনেছে তার জন্য । সর্বশেষ মডেলের ‘এনালিস-৯৯’ ডিভাইস । এটা একটা এনালাইসিস ডিভাইস । যেকোন কিছুকে এনালাইসিস করে তার সকল তথ্য মুহুর্তেই চোখের সামনে তুলে ধরবে এটা । এছাড়া এর মাধ্যমে আন্ত-সময় যোগাযোগ স্থাপন করা যায় । অতীতে কোথাও গিয়ে কোন সমস্যায় পড়লে এটার মাধ্যমে একজাক্ট লোকেশন ও টাইম জানিয়ে সাহায্য চাওয়া যায় ।
সময় দেখল মুন । এখন 22.50.43.21.06.2506 ।
অর্থাৎ ২৫০৬ সালের ২১শে জুন । এখন বাজে 22.50.43 ।
ট্রেন আসবে 23.00 তে । সে ১০ মিনিট আগেই চলে এসেছে । এই স্টেশনটা তার খুব ভালো লাগে । অনেকে অতীতের অনেক সময়ে ভ্রমণ করে , অনেক নমুনা নিয়ে আসে অতীত থেকে । মুন সেগুলো দেখে আর অবাক হয় । তার খুব ভালো লাগে । এটা পড়েছে প্লানেট আর্থ এর টেরিটরি-২৯১ এলাকায় । পৃথিবীতে এখন আর কোন দেশ নাই । পুরো পৃথিবী একটা একক সমন্বিত সিস্টেমে পরিচালিত হয় । পৃথিবীকে ভাগ করা হয়েছে বিভিন্ন টেরিটরিতে ।

মুন এস্ট্রোনোমিকাল ইঞ্জিনিয়ারিং এর ছাত্র হলেও ইতিহাস নিয়ে খুবই আগ্রহী । ‘টেরিটরি-২৯১’ এর ইতিহাস ঘাটতে গিয়ে সে জানতে পেরেছে এই এলাকাটা একসময় ‘বাংলাদেশ’ নামে পরিচিত ছিল । সেটা প্রায় পাঁচশ বছর আগের কথা । সেসময়ের মানুষ ছিল খুব সহজ সরল । আবার কেউ কেউ ছিল খুব নিষ্ঠুর । তারা দুই ভাগে বিভক্ত ছিল – ভালো মানুষ , খারাপ মানুষ । মানুষে মানুষে অনেক দল-উপদল ছিল । তারা মারামারি করত । এমনকি মানুষ নাকি মানুষকেই খুন করতো ! ইতিহাসের এই অংশটা পড়ে তার গা শিউরে ওঠে । মানুষ কিভাবে মানুষ খুন করতে পারে ?
মুন ঠিক করেছে সে ২০১৩ সালের বাংলাদেশে নামবে । ঐ সময় নাকি বাংলাদেশে একদল মানুষ আরেকদল মানুষকে বিনা কারণে খুন করেছিল ! এমনকি রাস্তায় নাকি রক্তের লাল রঙ ছোপ ছোপ হয়ে নক্সা তৈরি করেছিল !

.............................................

- ভাইয়া ভাইয়া , ২০১৩ সালের মানুষগুলো কি বিশাল ছিল তাইনা ! আর কত্ত শক্তি ছিল ওদের গায়ে ! ও মাগো !
- কেন ? ওরা তো আমাদের চেয়েও দুর্বল ছিল । পুষ্টিহীনতায় ভুগতো ।
- উম্ম , আমাকে বোকা পেয়েছ ? ৪-৫ জন লোক মিলে ৯ তলা বিল্ডিং ধাক্কা দিয়ে ভেঙ্গে ফেললো । আমি জানি না ভেবেছ ?
ভ্রমণ শেষে ফিরে এসে ক্লান্ত মুন ঘুমিয়ে পড়েছিল । এই ফাঁকে তার ‘এনাসিস-৯৯’ ডিভাইসটা নিয়ে বসেছে ছোট বোন মণি । ওখানে ২০১৩ সালের বাংলাদেশ সম্পর্কে অনেক তথ্য, ছবি , ভিডিও নিয়ে এসেছে মুন । সেগুলোই দেখছিল মণি । ভাইয়ার সবকিছুই সে গোপনে গোপনে দেখে । মুন চোখ খোলামাত্রই শুরু করে দিয়েছে কথা ।
দেয়ালের চতুর্মাত্রিক স্ক্রিণে চোখ রাখলো মুন । সেখানে ভেসে উঠেছে ২০১৩ সালের বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অগা অহিউদ্দিনের একটা উদ্ধৃতি । ‘হরতাল সমর্থকরা ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিয়েছে কানা প্লাজা’ ।
‘এনাসিস-৯৯’ এই ব্যক্তি সম্পর্কে এনালিসিস দিয়েছে ‘Mentally Retarded’ ।
মণি একের পর এক স্লাইড চালিয়ে যাচ্ছিল । এরপর আসলো একটা টাক মাথার লোক । এই লোক ছিলেন বাংলাদেশের অর্থমন্ত্রী কাল কুহিত । এই ব্যক্তি সম্পর্কে ‘এনাসিস-৯৯’ একটা তথ্যই দিচ্ছে – ‘রাবিশ’ ।
আবার চেষ্টা করলে এনাসিস-৯৯ এর স্ক্রিণে ভেসে উঠে ‘বোগাস’ ।
এর মানে কী মুন বুঝতে পারলোনা ।
একটা স্লাইডে একজন লোকের ছবি ভেসে উঠলো , নাম বাবুল হোসেন । এই ব্যক্তি বাংলাদেশের যোগাযোগমন্ত্রী ছিলেন । দুর্নীতি করে ধরা খাওয়ার পর পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দেন- ‘আমি সৎ লোক !’
-ভাইয়া ভাইয়া ! এই দেখো একটা বিড়াল ! কী সুন্দর !
মুন দেখলো পর্দায় একটা বিশালাকার কালো বিড়ালের ছবি । এই বিড়ালটাও নাকি ২০১৩ সালের বাংলাদেশের মন্ত্রী ছিল ! রেলপথ মন্ত্রী ! বিড়ালটার ছিল খুব টাকার লোভ । সেই সময় বাংলাদেশের কারেন্সি ছিল ‘টাকা’ ।
দুর্নীতির ‘টাকা’র বস্তাসহ ধরা পড়েছিল এই বিড়াল । বিড়াল কীভাবে মন্ত্রী হয় মুন বুঝতে পারেনা ।
এরপর স্লাইডগুলো ভয়ংকর হয়ে উঠতে লাগলো ।
চুহারা খাতুন নামের একজন কোন কারণ ছাড়াই বললো- ‘দেশের আইন শৃংখলা পরিস্থিতি যেকোন সময়ের তুলনায় ভালো !’
ভারুক খান নামের একজন এসেই বললো ‘কম খান’ ।
পাজাহান খান নামের একজন পর্দায় এসে বললো –‘চোখ তুলে ফেলবো’ ।
চিমরান সরকার নামের একজন পিঠ বেকিয়ে বললো –‘ফাঁসি চাই’ ।
বাংলাদেশের পার্লামেন্ট কেমন ছিল দেখার জন্য ক্লিক করতেই সাউন্ড হতে লাগলো ‘চুদুরবুদুর চুদুরবুদুর’ ।
আইনশৃংখলায় ক্লিক করতেই একের পর এক লাশের ছবি ভেসে উঠতে লাগলো দেয়ালের চতুর্মাত্রিক পর্দায় । চট্টগ্রামে ২ জন , চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ৪জন , চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে ৩ জন, ঢাকায় ৫০০০, খুলনা, সাতক্ষীরা, নীলফামারি, জয়পুরহাট, বগুড়া, রাজশাহী, চাপাইনবাবগঞ্জ, কক্সবাজার সংখ্যা সংখ্যা সংখ্যা । গুলি, বোমা আর লাশ ।
খুনির পরিচয় সম্পর্কে এনাসিস-৯৯ জানাচ্ছে- ‘কুত্তালীগুলিশ’ এসব খুন করেছে । সেই সময়ের একদল নৃশংস মানুষকে ‘কুত্তালীগুলিশ’ নাম দেয়া হয়েছে ।

মুনের মাথা ঝিম ঝিম করতে লাগলো । মণিকে বন্ধ করতে বললো ডিভাইস । মণি খুব জেদি মেয়ে । সে শেষ করেই ছাড়বে । একের পর এক স্লাইড আসতেই লাগলো ।
-ভাইয়া দেখো এই ছিল প্রধানমন্ত্রী । নামটা দেখ- ভেক আচিনা ।
-দাড়াও দাড়াও । এই স্লাইডে রাখ ।
মুন বিছানা ছেড়ে উঠে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী সম্পর্কে এনাসিস-৯৯ কে জিজ্ঞেস করতে লাগলো । প্রধানমন্ত্রীর হিংস্রতা গ্রেড এসেছে ১০০৭ ! তার একটি বক্তব্য এনাসিস-৯৯ হাইলাইট করলো –‘ একটা লাশের বদলে দশটা লাশ চাই’ ।
প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে ২০১৩ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি এবং ৬ মে এই দুই দিনে হাজারের ওপরে মানুষ হত্যা করে ‘কুত্তালিগুলিশ’ বাহিনী । আহত হয় কয়েক হাজার মানুষ । একে একে সেই সব বীভৎস ছবি চতুর্মত্রিক পর্দায় ভেসে উঠতে লাগলো । মুনের মাথার ঝিমভাবটা চিনচিনে ব্যথায় পরিণত হলো । মাথা ঘুরতে লাগলো তার । দুহাতে মাথা চেপে ধরে চিৎকার করে উঠলো সে- ‘স্টপ’ ।
চমকে উঠে ডিভাইসটা হাত থেকে ফেলে দিল মণি ।

- ট্রাভেল 2013 / ২৬-০৬-২০১৩

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন