এক রৌদ্রোজ্বল বিকেলে...

এক রৌদ্রোজ্বল বিকেলে...
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে

সোমবার, ১০ জুন, ২০১৩

সৌভাগ্যবান আমি

অতীতের দিকে তাকালে আমার নিজেকে একজন সৌভাগ্যবান বলেই মনে হয় । এই ক্ষুদ্র জীবনে অনেক কিছুই দেখা হয়ে গেলো । অভিজ্ঞতার ঝুলি যথেষ্ট ভারী হলো । প্রাইমারী স্কুল পড়েছি গ্রামে । দেড় কিলোমিটার দূরে স্কুল । রাস্তার পাশে নদী । স্কুলের বিশাল মাঠ । মাঠের একপাশে জঙ্গল । একপাশে নদী । একপাশে ঈদগাহ মাঠ । সাথেই লাগোয়া আলিয়া মাদ্রাসা, হাফেজিয়া মাদ্রাসা । শৈশবে যেমন প্রয়োজন, ঠিক তেমনি একটি স্কুল । চিরায়ত গ্রামের স্কুল । স্যার, ম্যাডামদের আদর পেয়েছি সবচেয়ে বেশি । আম গাছের নিচে সবুজ ঘাসের ওপর বসে আম পাতা জোড়া জোড়া পড়েছি । স্যার ঘুমিয়ে গেছেন চেয়ারে । সেই দৃশ্যটাকে যেন স্বর্গীয়, নৈসর্গিক, অপার্থিব যেকোন বিশেষণে বিশেষিত করা যায় ।
হাইস্কুল ছিল মফস্বল থানা শহরে । বাড়ি থেকে ১০ কিলোমিটার দূরে । সাইকেলে সকালে স্কুলে যেতাম , সন্ধ্যায় ফিরতাম । সকাল সন্ধ্যা স্বাধীনতা । শত বছরের পুরনো স্কুল । স্কুলের সবুজ মাঠ । শতবর্ষী তেতুল গাছের নিচে বাধানো । তেঁতুল তলায় পন্ডিত স্যারের ব্যাকরণ ক্লাসটা এখনো যেন চোখে ভাসছে ।

কলেজ পড়লাম প্রায়-বিভাগীয় শহরে । বিশ্ববিদ্যালয় পড়লাম বিভাগীয় শহরে , বানিজ্যিক রাজধানীতে । সবগুলো স্টেজে সর্বোচ্চ ভালো ফলাফলই পেলাম । এরপর যাব মেগাসিটি রাজধানীতে । তারপর হয়তো বিদেশ । বয়সের সাথে সাথে এগিয়ে চলেছে জীবন । ঠিক যেন –যখন যেমন প্রয়োজন ।

বাবা মধ্যবিত্ত স্কুল-শিক্ষক । আমার মনে হয়- জীবনকে চেনার জন্য , জীবনের সুখ-দুঃখ গুলো কাছে থেকে উপলব্ধি করার জন্য এরকম মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ অনিবার্য প্রয়োজন । একটু অভাব , একটু স্বচ্ছলতা । কখনো না চাইতেই পাওয়া, কখনো কান্নাকাটি করেও না পাওয়া । এভাবেই অনুভূতিগুলো যেন একটা শক্ত কাঠামোর ওপর দিয়ে গড়ে উঠেছে ।

জাহেলিয়াতের খপ্পরে পড়ার আগেই পেয়েছি জান্নাতি সংগঠন ইসলামী ছাত্রশিবিরের দেখা । সংগঠনের সকল স্তরে – সব ধরণের শাখায় কাজ করার সুযোগ হল । মহানগর/সদস্য শাখা, শহর শাখা , জেলা শাখা, থানা শাখা, সাথী শাখা, সাংগঠনিক থানা শাখা , উপশাখা, আবাসিক ওয়ার্ড, স্কুল, কলেজ, সংস্কৃতি বিভাগ......আলহামদুলিল্লাহ্‌ । শত শত ছাত্রকে আল্লাহর দ্বীনের দাওয়াত দেয়ার সুযোগ পেলাম । সবচেয়ে বেশি মনে পড়ে এসএসসির পরের সময়টুকুর কথা । আমার থানা থেকে আমি প্রথম এ প্লাস পেয়েছিলাম । থানার স্কুলে স্কুলে দাওয়াতী টিম নিয়ে ঘুরে ঘুরে দাওয়াতী কাজ করাটা সত্যিই এক অসাধারণ স্বর্গীয় অনুভূতি । আমি কথা বলতাম , সবাই চুপচাপ শুনতো । প্রশ্ন করতো , উত্তর দিতাম । সে একটা নেশা হয়ে দাঁড়িয়েছিল তখন ।

ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতি করতে হলো ছাত্রদল, ছাত্রলীগ, ছাত্রইউনিয়ন সবার সাথে । বেস্ট থেকে অর্স্ট সব পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়েছে । অনেক সম্মান, অনেক নির্যাতন । জেনেছি সবার রুপ, কর্মপদ্ধতি, ইসলাম ও জাহেলিয়াতের পার্থক্য । আলহামদুলিল্লাহ্‌ ।
ছোটবেলায় কিশোর কন্ঠ , ইয়ুথ ওয়েভ এর এজেন্ট ছিলাম । লেখা পাঠাতাম , ছাপাত । নির্মল আনন্দ পেতাম । নিজেকে অনেক বড় কিছু মনে হত । বড় হয়ে বছর দুয়েক জাতীয় পত্রিকায় সাংবাদিকতাও করেছি ।

এখন বয়স ২৪ । 

আলহামদুলিল্লাহ্‌ । এই সময়টুকুর কথা যখন চিন্তা করি, মনে হয় অনেক অনেক বেশি দিয়েছেন মহান রাব্বুল আলামীন । সব ধরণের মানুষের সাথে মিশতে পেরেছি । অসংখ্য বই পড়ে আর নানান অভিজ্ঞতায় ইচড়ে পাকা হয়েছি ।

২৫ থেকে ৪০ আরেকটা পিরিয়ড । এই সময়টা নিজেকে গঠন করতে হবে । কাচামাল যোগাড় হয়েছে, এখন সেগুলোকে পোক্ত করতে হবে । ভুলত্রুটিগুলো খুঁজে বের করতে হবে । চিন্তাচেতনায় ঢালাই করতে হবে । পরিপক্ক করতে হবে মন-মানস । তারপর আল্লাহ বাচিয়ে রাখলে ৪০ থেকে ৬০ এই ২০ বছর এক কঠিন সংগ্রামে নেমে পড়তে হবে । মানুষের জন্য, সত্যের জন্য , আল্লাহর দ্বীনের জন্য । দেখা যাক আমার প্রভু সামনে আমার জন্য কী রেখেছেন । আল্লাহ তুমি তাওফিক দিও ভালো থাকার, ভালো কাজ করার । আমীন ।



10-06-2013

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন