এক রৌদ্রোজ্বল বিকেলে...

এক রৌদ্রোজ্বল বিকেলে...
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে

বুধবার, ৫ জুন, ২০১৩

যুগসন্ধিক্ষণের প্রজন্ম আমরা

এখন যেসব বাচ্চার জন্ম হচ্ছে সম্ভবত তারা একটা নতুন যুগের প্রজন্ম । ডিজিটাল প্রজন্ম । এরা যদি হাজার বছর ধরে উপন্যাসটা পড়ে, খুব বেশি কিছু বুঝতে পারবে না । শত শত বছরের চিরায়ত বাংলার সেইসব ঘটনা তারা উপলব্ধি করতে পারবে না । তাদের মনে খুব বেশি দাগ কাটবে না । তারা কল্পনা করতে পারবে না , আসলে কী ঘটতো সেই সময় ।

আমাদের বয়সী যারা, তারা সৌভাগ্যবান । আমরাই বোধহয় হাজার বছর ধরে –তে চিত্রায়িত সেই বাংলার শেষ প্রজন্ম । আমি ঢেকি দেখেছি , ঢেকিতে ধান ভানা দেখেছি । গরুর গাড়ি দেখেছি- গরুর গাড়িতে চড়ে অনেক পথ পাড়ি দিয়েছি । পুথি পাঠ শুনেছি । গাজী-কালু-চম্পাবতীর কিচ্ছা শুনেছি । শহীদে কারবালার কাওয়ালি শুনেছি । গানে গানে ঝগড়ার পালাগান শুনেছি । বায়োস্কোপ দেখেছি । হা্ডুডু খেলেছি , ছি-বুড়ি-দাড়িয়াবান্ধা খেলেছি । বউ পেটানো মকবুল বুড়োকে দেখেছি-চিরায়ত বাংলায় ।

এই সময়ের বাচ্চারা আর সেইসব দেখতে পাবে না । ঐসব বিলুপ্ত হয়ে গেছে প্রায় সবই ।
ওলা বিবিকে তাড়ানোর জন্য থালাবাটি ঢাক ঢোল বাজিয়ে ইয়া আলী ইয়া আলী করাটাও এখন আর কোথাও পাওয়া যাবে না । ছোটবেলায় আমি দুয়েকবার ওলাবিবি তাড়ানোর সুযোগ পেয়েছিলাম । অনেক লোক রাস্তায় নেমেছিল । আম্মা বলেছিলেন, এইগুলা কুসংস্কার । তবু আমি একটা বড় থালা হাতে বাড়ির বাইরে গিয়েছিলাম । ইয়া আলী ইয়া আলী বলতে বলতে থালায় হাত দিয়ে শব্দ করেছিলাম ।
এরপর আর কখনো দেখিনি ।

আমাদের বেড়ে ওঠার সময়টাতে- গত দশ-পনেরো বছরে বিজ্ঞানের উন্নতি হয়েছে খুব দ্রুত । রঙ্গিন টেলিভিশন, মোবাইল, কম্পিউটার, ল্যাপটপ, ইন্টারনেট সবকিছু । আমরা এই সময়টাও পাচ্ছি এবং খুব ভালোভাবেই ভোগ করছি । কিন্তু আমাদের দাদারা এই সময়টা পান নি । তারা এই নতুন যুগটাকে পাননি । বাবা-চাচারা দেখছেন, কিন্তু ঠিকমত কাজে লাগাতে পারছেন না ।
আমরা –এখন তরুণ প্রজন্ম সত্যিই অনেক অনেক ভাগ্যবান । মনে হয় দুটি সহস্রাব্দের মাঝখানে আমাদের জন্ম । দুই সহস্রাব্দেরই মানুষ আমরা । ভাবতে ভালোই লাগে ।


05-06-2013

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন