গল্প
কবিতা খুব একটা পছন্দ করে না ইমরান । এগুলোকে সে বেহুদা কাজ মনে করে । সে
কঠিন কঠিন প্রবন্ধ পড়ে । পত্রিকার কলাম পড়ে । কিন্তু কীভাবে কীভাবে যেন
তাঁর মাথায় সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের কবিতাটা ঢুকে যায় স্কুলে থাকতেই । এরপর
হঠাৎ হঠাৎ কবিতা আবৃত্তি করতে শুরু করতো সে । টেনশন করার মত পরিস্থিতি
দাঁড়ালে তখনো তাঁর মুখে শোনা যেত কবিতাটা ।
এমনিতে ইমরান খুবই শান্ত শিষ্ট ভদ্র ছেলে । কারো সাথে কোন ঝামেলায় সে কখনোই জড়াত না । চেহারা নাদুস নুদুস । একজন আদর্শ পড়ুয়া ছাত্র ।
স্কুলে অংকের মনির স্যার ছিলেন খুব রাগী । একদিন স্যার ক্লাসে এলেন । স্যারের মেজাজ কোন কারণে আগে থেকেই বিগড়ে ছিল । এদিকে হোমওয়ার্কের খাতা দেখতে চাইলে দেখা গেল অনেকেই হোমওয়ার্ক করে আসেনি । ইমরানও তাদের মধ্যে একজন । আসলে ইমরান হোমওয়ার্ক ঠিকই করেছিল । কিন্তু ঝামেলাটা হয়েছে অন্য জায়গায় । স্কুলে আসার সময় মামাতো বোন রুনার খাতার সাথে খাতা পরিবর্তন হয়ে গেছে । রুনা পড়ে ক্লাস থ্রিতে , ইমরান নাইনে ।
যাদের হোমওয়ার্ক করা হয়নি তাদের দাঁড়াতে বললেন মনির স্যার । হাতের উল্টোপিঠে বেত দিয়ে পেটানো ছিল মনির স্যারের বিশেষ স্টাইল । ইমরানের সামনে এসে স্যার দেখলেন- টেবিলে গণিত খাতা । খাতার ওপরে লেখা ‘রুনা’ ।
স্যার কী মনে করলেন কে জানে- তিনি ইমরানের ওপর ক্ষেপে গেলেন । ইমরানের দুহাতের উল্টোপিঠে পেটাতে লাগলেন । ইমরান এ অবস্থায় সুনীলের কবিতা আবৃত্তি করতে শুরু করলো ।
কেউ কথা রাখেনি, তেত্রিশ বছর কাটলো, কেউ কথা রাখেনি
ছেলেবেলায় এক বোষ্টুমী তার আগমনী গান হঠাৎ থামিয়ে বলেছিল
শুক্লা দ্বাদশীর দিন অন্তরাটুকু শুনিয়ে যাবে
তারপর কত চন্দ্রভূক অমাবস্যা চলে গেলো, কিন্তু সেই বোষ্টুমী
আর এলোনা
পঁচিশ বছর প্রতিক্ষায় আছি ।
মামা বাড়ির মাঝি নাদের আলী বলেছিল, বড় হও দাদাঠাকুর
তোমাকে আমি তিন প্রহরের বিল দেখাতে নিয়ে যাবো
সেখানে পদ্মফুলের মাথায় সাপ আর ভ্রমর
খেলা করে!
নাদের আলী, আমি আর কত বড় হবো ? আমার মাথা এ ঘরের ছাদ
ফুঁড়ে আকাশ স্পর্শ করলে তারপর তুমি আমায়
তিন প্রহরের বিল দেখাবে?
স্যার থেমে গিয়েছিলেন । স্যার হয়তো নিজেও এরকম আশা করেননি ।
রুনা ইমরানের মামাতো বোন । মামার বাসা পাশেই হওয়ায় রুনাকে স্কুলে নেয়ার দায়িত্ব প্রায়ই পালন করতে হত ইমরানকেই । মামা মামী দুজনেই কর্মজীবি । তাঁদের একমাত্র মেয়ে রুনা । রুনার স্কুল ছিল ইমরানের স্কুলে যাওয়ার পথেই । রুনাকেও এই কবিতাটাই শোনাতো ইমরান । রুনা একবার জিজ্ঞেস করেছিল- ইমরান ভাইয়া, তুমি তিন প্রহরের বিল দেখেছ ? ইমরান বলেছিল সে দেখেনি । তবে শুনেছে দাদাবাড়ির গ্রামে একটা বিল আছে । রুনা বলেছিল- আমাকে নিয়ে যাবে একদিন ? আমিও বিল দেখবো । ইমরান বলেছিল- একদিন নিয়ে যাবে বিল দেখাতে ।
সে অবশ্য অনেকদিন আগের কথা । প্রায় বছর দশেক । এর মধ্যে কত কিছু হয়ে গেছে ।
ইমরান বসে আছে মামার বাসায় , বেডরুমে । মামী কফি বানিয়ে এনেছেন । কফির মগে চুমুক দিচ্ছিলো ইমরান । রুনার ছোট ভাইটা আশেপাশে ঘোরাঘুরি করছিল । ওর বয়স ছয় । ক্লাস ওয়ানে পড়ে । মোবাইল পাগলা । ইমরানের মোবাইল নেয়ার জন্য ঘোরাফেরা করছে । মামী থাকায় সুবিধা করতে পারছে না ।
মামী বললেন- ‘বাবা, অনেকদিন পর এলি । আমাদের ভুলেই গেছিস । তোর মা-টাও চলে গেল, আর যোগাযোগটাও কমে গেল’ ।
ইমরান কী বলবে ভেবে পাচ্ছিলো না । মায়ের সাথে মামীর সম্পর্ক ছিল প্রাণের বান্ধবীর মত । সাধারণত পরিবারে ননদ-ভাবী একটা দ্বন্দ্ থাকে , কিন্তু ইমরানের মায়ের সাথে মামীর সম্পর্ক ছিল গলায় গলায় । ইমরানের একটাই মামা । মায়ের ছোট ভাই ।
তখন ইমরানদের বাসা এদিকেই ছিল । সময় পেলেই মা ইমরানকে নিয়ে মামার বাসায় আসতেন ।
ঐ বয়সেও তারা লুডু খেলতেন । ইমরান আর ওর মা একপক্ষে, মামী আর রুনা একপক্ষে । দারুণ উত্তেজনাকর খেলা হত । মাঝে মাঝে বিকেল বেলা পার্কে ঘুরতে যেতেন দুজনে । ইমরান আর রুনাও সাথে থাকতো ।
কথায় কথায় মা মামীকে বলতেন , তোর মেয়েটাকে আমি নিয়ে যাবো ।
মামী বলতেন- তা হতে দেবো না । আপনার ছেলেটাকে আমি নিয়ে আসবো ।
আমার ছেলেকে আমি ঘরজামাই হতে দেব ভেবেছিস ? মা বলেন ।
দুজনে হাসতেন খুব । হাসি রোগ ছিল তাঁদের । হাসি শুরু করলে সহজে থামে না । চোখে পানি না আসা পর্যন্ত হাসেন ।
ইমরান স্কুল কলেজ পেরিয়ে মেডিকেল কলেজে চান্স পেল । ঢাকা ছেড়ে যেতে হবে চট্টগ্রামে । সবকিছু গোছগাছ করা হচ্ছে । ছেলেটা হোস্টেলে কীভাবে থাকবে, কী খাবে এসব নিয়ে মায়ের চিন্তার শেষ নেই । কলেজে নাকি মারামারিও হয় । ছেলেটা তো বেশি দৌড়াতেও পারবে না । ও একটু মোটাসোটা । কী যে করবে । ওকে নিয়ে চিন্তার শেষ নেই ।
ফার্স্ট ইয়ারের ক্লাস শুরু হবার দুদিন আগে সবকিছু গোছগাছ করা হল । মা সারাদিন ধরে ব্যাগ গুছিয়ে দিলেন । কোনকিছু বাদ পড়লো কিনা দেখলেন । চিড়াভাজার বয়াম দিলেন, আচারের বয়াম দিলেন । একটু পরপর ইমরানকে ধরে মুখে কপালে চুমু দিলেন । ঐদিন যে মা কতবার ইমরানকে চুমু দিয়েছিলেন গুনে শেষ করা যাবে না । ইমরানেরও মনটা খুব খারাপ ছিল সারাদিন । বাসা ছেড়ে চলে যেতে হবে । অচেনা শহর, অচেনা মানুষজন । সে কি পারবে মানিয়ে নিতে ?
রাতের বেলা আব্বার সাথে বেরিয়ে পড়লো ব্যাগ নিয়ে । বাস পর্যন্ত মা এগিয়ে দিয়ে গেলেন । মা লং জার্নি করতে পারেন না । তাঁর কোমড়ে ব্যথা হয়, আর মোশন সিকনেস । বমি হয় । নাহলে তিনিও সাথে যেতেন ।
সকালবেলা চট্টগ্রামে নেমে হোস্টেলে গেল ইমরানরা । হোস্টেল অফিসে কথা বলতে গেল । সেখান থেকে রুম বরাদ্দ হবে । হোস্টেলে বিভিন্ন সংগঠনের ছেলেরা এসে তাঁদেরকে অনেককিছু বোঝানোর চেষ্টা করলো । হোস্টেলের রুম নাকি কলেজের নিয়ন্ত্রণে নাই । ছাত্রসংগঠনগুলো নিজেদের শক্তি অনুযায়ী ভাগ করে নিয়েছে । যাদের রুমে উঠবে- তাদের লোক হয়ে যাবে । মহা ফ্যাসাদের ব্যাপার । কেউ কেউ সিগারেট খাচ্ছিল- সিগারেট খেয়ে খেয়ে ঠোঁট কালো করে ফেলেছে । রংচটা জিন্স পড়া , নিচের দিকে ছেড়া । এরা কেউ জাতীয়তাবাদের কথা বলে, কেউ আবার মুক্তিযুদ্ধ চেতনার কথা বলে । তারা বারবার মৌলবাদী গোষ্ঠীর ব্যাপারে সতর্ক করছিল । ওরা আপনার ছেলেকে জঙ্গী বানিয়ে ফেলবে । মধ্যযুগীয় ধ্যানধারণার বই পড়ে আপনার ছেলেকে মৌলবাদী হয়ে যাবে ।
ইমরানের আব্বা চিন্তা করলেন – এ কেমন চেতনা ? মুক্তিযুদ্ধের চেতনা কি সারাদিন সিগারেট ফোঁকা ? কেউ কেউ বললো- এরা মদ গাঁজাও খায় । অবশ্য দেখেই বোঝা যায়- নামাজ কালামের ধার ধারে না । নামাজী ছেলের চেহারা এরকম হয় না ।
কিছু ছেলে এসে সুন্দর করে সালাম দিয়ে কথা বলেছিল । তারা কারো বিরুদ্ধে বিষোদগার না করে সমস্ত পরিবেশ পরিস্থিতি স্পষ্ট করে ব্যাখ্যা করেছিল । তাঁদের কথার সাথে পরিবেশের মিল খুঁজে পেয়েছিলেন ইমরানের বাবা । সবকিছু ভেবেচিন্তে তিনি এরকম একজন ভদ্র নামাজী ছেলের রুমে ছেলেকে তুলে দিয়েছিলেন ।
সেদিন বিকেল বেলা ফোন এলো । ইমরানের আম্মা খুব অসুস্থ । অনেক বেশি জ্বর উঠেছে । বমি করেছেন । এখন অজ্ঞান হয়ে গেছেন । মামা মামী তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছেন ।
ব্যাগে কিছু কাপড় নিয়ে আবার ঢাকা যাওয়ার জন্য বের হলো ইমরান ও তাঁর আব্বা । ইমরানের রুমমেট ছেলেটা কীভাবে কীভাবে ইন্সট্যান্ট একটা বাসের টিকেট করে ফেললো । ভালো সিটের ব্যবস্থা করে দিল । বাসে উঠে ইমরান নীরবে কাঁদতে লাগলো ।
মধ্যরাতে ঢাকায় পৌঁছে হাসপাতালে গিয়েছিল ইমরান ও আব্বা । মায়ের জ্ঞান ছিল । দুর্বল হাতে তিনি ইমরানকে কাছে টেনে মাথায় চুমু দিয়ে বলেছিলেন – আমার বাবা, তুই আমাকে ফেলে কোথাও যাবি না ।
ইমরান কোথাও যায়নি, কিন্তু সকালবেলা মায়ের ঘুম আর ভাঙ্গেনি । তিনি ইমরানকে রেখে চলে গেছেন ।
ইমরান এক সপ্তাহ কোন কথা বলেনি । সারাক্ষণ চুপচাপ । রুমের দরজা বন্ধ করে কেঁদেছে ।
তারপর একসময় বাস্তবতা মেনে নিয়ে চলে গিয়েছিল চট্টগ্রামে । পড়াশোনায় ব্যস্ত হয়ে পড়েছিল । ঢাকায় ওরা বাসা চেঞ্জ করে । মামার বাসায় আর তেমন একটা যাওয়া হয় না । মামী মাঝে মাঝে ফোন করতেন । কথা হত ।
ইমরান যখন মেডিকেল কলেজে ভর্তি হয় রুনা তখন ক্লাস সেভেনে । মাঝে মাঝে রুনা চিঠি লিখত । ইমরান খুব একটা উত্তর দেয়না । ধীরে ধীরে রুনাও একসময় চিঠি লেখা বন্ধ করে দেয় । দুবছর আগে রুনা এসএসসি পাস করার পর মামী ইমরানের সাথে পরামর্শ করেছিলেন- রুনাকে কোথায় ভর্তি করানো যায় । রুনা ভালো রেজাল্ট করেছিল । রুনাকে হলিক্রস কলেজে ভর্তি করানো হয়েছিল ।
ইমরান এমবিবিএস পাস করে , ইন্টার্ণশিপ শেষ করে এখন ঢাকায় । থাকে বন্ধুদের সাথে শাহবাগে এক বাসায় । মেডিকেলের উচ্চশিক্ষার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় একটিই । বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়- বিএসএমএমইউ । শাহবাগে । সারাদেশ থেকে তরুণ ডাক্তাররা পোস্টগ্রাজুয়েশনের নেশায় ঢাকা ছুটে আসে । তারা এসে ভিড় জমান বিএসএমএমইউ- এর আশেপাশে । শাহবাগের গণ্ডিতেই শত শত বাসায় ব্যাচেলর ডাক্তাররা থাকেন । দিনরাত পড়াশোনা করেন । সবার ধারণা- বিএসএমএমইউ-র আশেপাশে থাকলে বুঝি পড়ালেখা ভালো হবে ! অবশ্য আরো একটা কারণ আছে- বিএসএমএমইউ-র লাইব্রেরিতে নির্বিঘ্নে পড়াশোনা করা যায় । এসি আছে ।
কয়েকদিন থেকে মামী ফোন করছেন । বাসায় যেতে বলছেন । ইমরান এফসিপিএস পার্ট- ওয়ান পরীক্ষা নিয়ে খুব ব্যস্ত ছিল এ কয়দিন । সময় করে উঠতে পারেনি । নাক ডুবিয়ে পড়াশোনা করেছে । তার ফলও পেয়েছে । পার্ট-১ এ পাস করে ফেলেছে সে । একজন ডাক্তারের জন্য এ এক বিশাল রিলিফ ।
সামনে আবার বিসিএস ভাইভা আছে । এখন কিছুদিন রেস্ট নেয়ার চিন্তা করেছে ইমরান । বিসিএস নিয়া এত চিন্তা নাই ।
আজ সকালবেলাটা ঘুমিয়ে বিকেলে বের হয় মামার বাসায় আসার জন্য । পথে হলিক্রস কলেজ পার হবার সময় রুনার কথা মনে পড়েছিল । রুনা এবার এইচএসসি পরীক্ষা দিয়েছে । রেজাল্ট এখনো হয়নি । পড়াশোনা করছে মেডিকেল- ভার্সিটি ভর্তি পরীক্ষার জন্য ।
ছোটবেলায় রুনাকে স্কুলে নিয়ে যাবার স্মৃতিগুলোও মনে পড়ে যাচ্ছিল । ছোটবেলায় রুনা দেখতে খুব কিউট ছিল । এখন কেমন হয়েছে কে জানে !
.............................. ............
মামীর সাথে কিছুক্ষণ আলাপ হলো । স্মৃতিচারণ । মায়ের কথা, ইমরানের ছোটবেলার কথা । কথা বলতে বলতে মামীর চোখ ছলছল করে ওঠে । ইমরানের মনটাও উদাস হয়ে যায় ।
রুনাকে একবার দেখা গেল দরজার সামনে দিয়ে হেঁটে যেতে । রুনা কি আড়ালে থেকে কথা শুনছে নাকি ? এই বয়সের মেয়েদের এই একটা বদভ্যাস । আড়ালে থেকে বড়দের কথা শোনে ।
কফি শেষ করতে না করতেই মামা চলে এলেন । সাথে ইমরানের আব্বাও । ইমরান অবাক হয়ে গেল । আব্বা এসময় এখানে আসবেন – এমনটা তো কথা নয় ।
মামা বললেন- অবাক হচ্ছিস কেন ? তোর বাবাকে আমিই ডেকেছি ।
চা এলো । চা খেতে খেতে আব্বা বললেন- বাবা ইমরান, একটা জরুরী বিষয়ে কথা বলার জন্য আমি এসেছি । তোর মামীর খুব ইচ্ছে- তোর সাথে রুনার বিয়েটা দিয়ে দেন । তোর মামার এবং আমারও মত আছে । তোর মাও একথা বলতো । আমাদের ইচ্ছা- এ সপ্তাহেই বিয়েটা সেরে ফেলি । তোর মতামত টা জানার জন্যই এখানে এসেছি । তুই কি বলিস ? রুনা মা খুব ভালো । তুই তো জানিস, তোর মা ওকে কতটা পছন্দ করতেন ।
ইমরান সবার দিকে তাকালো । মামীর চোখ ছলছল করছে ।
ইমরান এমনটা আশা করেনি । তাঁর অমত নেই, বরং মনে মনে এমন একটা ইচ্ছা যে তারও জাগেনি তা নয় ।
তবু আমতা আমতা করে বললো- কিন্তু ও তো এখনো ছোট ।
পিচ্চি ভাইটা এসময় ইমরানের চেয়ারের কাছে এসে ইমরানের হাতে একটা নীল কাগজ ধরিয়ে দিল ।
ইমরান খুলে দেখলো তাতে লাল কালিতে লেখা –
নাদের আলী, আমি আর কত বড় হবো ? আমার মাথা এ ঘরের ছাদ
ফুঁড়ে আকাশ স্পর্শ করলে তারপর তুমি আমায়
তিন প্রহরের বিল দেখাবে?
-(রুনা) ।
.............................. .
তিন প্রহরের বিল / ২২-০৭-২০১৩
এমনিতে ইমরান খুবই শান্ত শিষ্ট ভদ্র ছেলে । কারো সাথে কোন ঝামেলায় সে কখনোই জড়াত না । চেহারা নাদুস নুদুস । একজন আদর্শ পড়ুয়া ছাত্র ।
স্কুলে অংকের মনির স্যার ছিলেন খুব রাগী । একদিন স্যার ক্লাসে এলেন । স্যারের মেজাজ কোন কারণে আগে থেকেই বিগড়ে ছিল । এদিকে হোমওয়ার্কের খাতা দেখতে চাইলে দেখা গেল অনেকেই হোমওয়ার্ক করে আসেনি । ইমরানও তাদের মধ্যে একজন । আসলে ইমরান হোমওয়ার্ক ঠিকই করেছিল । কিন্তু ঝামেলাটা হয়েছে অন্য জায়গায় । স্কুলে আসার সময় মামাতো বোন রুনার খাতার সাথে খাতা পরিবর্তন হয়ে গেছে । রুনা পড়ে ক্লাস থ্রিতে , ইমরান নাইনে ।
যাদের হোমওয়ার্ক করা হয়নি তাদের দাঁড়াতে বললেন মনির স্যার । হাতের উল্টোপিঠে বেত দিয়ে পেটানো ছিল মনির স্যারের বিশেষ স্টাইল । ইমরানের সামনে এসে স্যার দেখলেন- টেবিলে গণিত খাতা । খাতার ওপরে লেখা ‘রুনা’ ।
স্যার কী মনে করলেন কে জানে- তিনি ইমরানের ওপর ক্ষেপে গেলেন । ইমরানের দুহাতের উল্টোপিঠে পেটাতে লাগলেন । ইমরান এ অবস্থায় সুনীলের কবিতা আবৃত্তি করতে শুরু করলো ।
কেউ কথা রাখেনি, তেত্রিশ বছর কাটলো, কেউ কথা রাখেনি
ছেলেবেলায় এক বোষ্টুমী তার আগমনী গান হঠাৎ থামিয়ে বলেছিল
শুক্লা দ্বাদশীর দিন অন্তরাটুকু শুনিয়ে যাবে
তারপর কত চন্দ্রভূক অমাবস্যা চলে গেলো, কিন্তু সেই বোষ্টুমী
আর এলোনা
পঁচিশ বছর প্রতিক্ষায় আছি ।
মামা বাড়ির মাঝি নাদের আলী বলেছিল, বড় হও দাদাঠাকুর
তোমাকে আমি তিন প্রহরের বিল দেখাতে নিয়ে যাবো
সেখানে পদ্মফুলের মাথায় সাপ আর ভ্রমর
খেলা করে!
নাদের আলী, আমি আর কত বড় হবো ? আমার মাথা এ ঘরের ছাদ
ফুঁড়ে আকাশ স্পর্শ করলে তারপর তুমি আমায়
তিন প্রহরের বিল দেখাবে?
স্যার থেমে গিয়েছিলেন । স্যার হয়তো নিজেও এরকম আশা করেননি ।
রুনা ইমরানের মামাতো বোন । মামার বাসা পাশেই হওয়ায় রুনাকে স্কুলে নেয়ার দায়িত্ব প্রায়ই পালন করতে হত ইমরানকেই । মামা মামী দুজনেই কর্মজীবি । তাঁদের একমাত্র মেয়ে রুনা । রুনার স্কুল ছিল ইমরানের স্কুলে যাওয়ার পথেই । রুনাকেও এই কবিতাটাই শোনাতো ইমরান । রুনা একবার জিজ্ঞেস করেছিল- ইমরান ভাইয়া, তুমি তিন প্রহরের বিল দেখেছ ? ইমরান বলেছিল সে দেখেনি । তবে শুনেছে দাদাবাড়ির গ্রামে একটা বিল আছে । রুনা বলেছিল- আমাকে নিয়ে যাবে একদিন ? আমিও বিল দেখবো । ইমরান বলেছিল- একদিন নিয়ে যাবে বিল দেখাতে ।
সে অবশ্য অনেকদিন আগের কথা । প্রায় বছর দশেক । এর মধ্যে কত কিছু হয়ে গেছে ।
ইমরান বসে আছে মামার বাসায় , বেডরুমে । মামী কফি বানিয়ে এনেছেন । কফির মগে চুমুক দিচ্ছিলো ইমরান । রুনার ছোট ভাইটা আশেপাশে ঘোরাঘুরি করছিল । ওর বয়স ছয় । ক্লাস ওয়ানে পড়ে । মোবাইল পাগলা । ইমরানের মোবাইল নেয়ার জন্য ঘোরাফেরা করছে । মামী থাকায় সুবিধা করতে পারছে না ।
মামী বললেন- ‘বাবা, অনেকদিন পর এলি । আমাদের ভুলেই গেছিস । তোর মা-টাও চলে গেল, আর যোগাযোগটাও কমে গেল’ ।
ইমরান কী বলবে ভেবে পাচ্ছিলো না । মায়ের সাথে মামীর সম্পর্ক ছিল প্রাণের বান্ধবীর মত । সাধারণত পরিবারে ননদ-ভাবী একটা দ্বন্দ্ থাকে , কিন্তু ইমরানের মায়ের সাথে মামীর সম্পর্ক ছিল গলায় গলায় । ইমরানের একটাই মামা । মায়ের ছোট ভাই ।
তখন ইমরানদের বাসা এদিকেই ছিল । সময় পেলেই মা ইমরানকে নিয়ে মামার বাসায় আসতেন ।
ঐ বয়সেও তারা লুডু খেলতেন । ইমরান আর ওর মা একপক্ষে, মামী আর রুনা একপক্ষে । দারুণ উত্তেজনাকর খেলা হত । মাঝে মাঝে বিকেল বেলা পার্কে ঘুরতে যেতেন দুজনে । ইমরান আর রুনাও সাথে থাকতো ।
কথায় কথায় মা মামীকে বলতেন , তোর মেয়েটাকে আমি নিয়ে যাবো ।
মামী বলতেন- তা হতে দেবো না । আপনার ছেলেটাকে আমি নিয়ে আসবো ।
আমার ছেলেকে আমি ঘরজামাই হতে দেব ভেবেছিস ? মা বলেন ।
দুজনে হাসতেন খুব । হাসি রোগ ছিল তাঁদের । হাসি শুরু করলে সহজে থামে না । চোখে পানি না আসা পর্যন্ত হাসেন ।
ইমরান স্কুল কলেজ পেরিয়ে মেডিকেল কলেজে চান্স পেল । ঢাকা ছেড়ে যেতে হবে চট্টগ্রামে । সবকিছু গোছগাছ করা হচ্ছে । ছেলেটা হোস্টেলে কীভাবে থাকবে, কী খাবে এসব নিয়ে মায়ের চিন্তার শেষ নেই । কলেজে নাকি মারামারিও হয় । ছেলেটা তো বেশি দৌড়াতেও পারবে না । ও একটু মোটাসোটা । কী যে করবে । ওকে নিয়ে চিন্তার শেষ নেই ।
ফার্স্ট ইয়ারের ক্লাস শুরু হবার দুদিন আগে সবকিছু গোছগাছ করা হল । মা সারাদিন ধরে ব্যাগ গুছিয়ে দিলেন । কোনকিছু বাদ পড়লো কিনা দেখলেন । চিড়াভাজার বয়াম দিলেন, আচারের বয়াম দিলেন । একটু পরপর ইমরানকে ধরে মুখে কপালে চুমু দিলেন । ঐদিন যে মা কতবার ইমরানকে চুমু দিয়েছিলেন গুনে শেষ করা যাবে না । ইমরানেরও মনটা খুব খারাপ ছিল সারাদিন । বাসা ছেড়ে চলে যেতে হবে । অচেনা শহর, অচেনা মানুষজন । সে কি পারবে মানিয়ে নিতে ?
রাতের বেলা আব্বার সাথে বেরিয়ে পড়লো ব্যাগ নিয়ে । বাস পর্যন্ত মা এগিয়ে দিয়ে গেলেন । মা লং জার্নি করতে পারেন না । তাঁর কোমড়ে ব্যথা হয়, আর মোশন সিকনেস । বমি হয় । নাহলে তিনিও সাথে যেতেন ।
সকালবেলা চট্টগ্রামে নেমে হোস্টেলে গেল ইমরানরা । হোস্টেল অফিসে কথা বলতে গেল । সেখান থেকে রুম বরাদ্দ হবে । হোস্টেলে বিভিন্ন সংগঠনের ছেলেরা এসে তাঁদেরকে অনেককিছু বোঝানোর চেষ্টা করলো । হোস্টেলের রুম নাকি কলেজের নিয়ন্ত্রণে নাই । ছাত্রসংগঠনগুলো নিজেদের শক্তি অনুযায়ী ভাগ করে নিয়েছে । যাদের রুমে উঠবে- তাদের লোক হয়ে যাবে । মহা ফ্যাসাদের ব্যাপার । কেউ কেউ সিগারেট খাচ্ছিল- সিগারেট খেয়ে খেয়ে ঠোঁট কালো করে ফেলেছে । রংচটা জিন্স পড়া , নিচের দিকে ছেড়া । এরা কেউ জাতীয়তাবাদের কথা বলে, কেউ আবার মুক্তিযুদ্ধ চেতনার কথা বলে । তারা বারবার মৌলবাদী গোষ্ঠীর ব্যাপারে সতর্ক করছিল । ওরা আপনার ছেলেকে জঙ্গী বানিয়ে ফেলবে । মধ্যযুগীয় ধ্যানধারণার বই পড়ে আপনার ছেলেকে মৌলবাদী হয়ে যাবে ।
ইমরানের আব্বা চিন্তা করলেন – এ কেমন চেতনা ? মুক্তিযুদ্ধের চেতনা কি সারাদিন সিগারেট ফোঁকা ? কেউ কেউ বললো- এরা মদ গাঁজাও খায় । অবশ্য দেখেই বোঝা যায়- নামাজ কালামের ধার ধারে না । নামাজী ছেলের চেহারা এরকম হয় না ।
কিছু ছেলে এসে সুন্দর করে সালাম দিয়ে কথা বলেছিল । তারা কারো বিরুদ্ধে বিষোদগার না করে সমস্ত পরিবেশ পরিস্থিতি স্পষ্ট করে ব্যাখ্যা করেছিল । তাঁদের কথার সাথে পরিবেশের মিল খুঁজে পেয়েছিলেন ইমরানের বাবা । সবকিছু ভেবেচিন্তে তিনি এরকম একজন ভদ্র নামাজী ছেলের রুমে ছেলেকে তুলে দিয়েছিলেন ।
সেদিন বিকেল বেলা ফোন এলো । ইমরানের আম্মা খুব অসুস্থ । অনেক বেশি জ্বর উঠেছে । বমি করেছেন । এখন অজ্ঞান হয়ে গেছেন । মামা মামী তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছেন ।
ব্যাগে কিছু কাপড় নিয়ে আবার ঢাকা যাওয়ার জন্য বের হলো ইমরান ও তাঁর আব্বা । ইমরানের রুমমেট ছেলেটা কীভাবে কীভাবে ইন্সট্যান্ট একটা বাসের টিকেট করে ফেললো । ভালো সিটের ব্যবস্থা করে দিল । বাসে উঠে ইমরান নীরবে কাঁদতে লাগলো ।
মধ্যরাতে ঢাকায় পৌঁছে হাসপাতালে গিয়েছিল ইমরান ও আব্বা । মায়ের জ্ঞান ছিল । দুর্বল হাতে তিনি ইমরানকে কাছে টেনে মাথায় চুমু দিয়ে বলেছিলেন – আমার বাবা, তুই আমাকে ফেলে কোথাও যাবি না ।
ইমরান কোথাও যায়নি, কিন্তু সকালবেলা মায়ের ঘুম আর ভাঙ্গেনি । তিনি ইমরানকে রেখে চলে গেছেন ।
ইমরান এক সপ্তাহ কোন কথা বলেনি । সারাক্ষণ চুপচাপ । রুমের দরজা বন্ধ করে কেঁদেছে ।
তারপর একসময় বাস্তবতা মেনে নিয়ে চলে গিয়েছিল চট্টগ্রামে । পড়াশোনায় ব্যস্ত হয়ে পড়েছিল । ঢাকায় ওরা বাসা চেঞ্জ করে । মামার বাসায় আর তেমন একটা যাওয়া হয় না । মামী মাঝে মাঝে ফোন করতেন । কথা হত ।
ইমরান যখন মেডিকেল কলেজে ভর্তি হয় রুনা তখন ক্লাস সেভেনে । মাঝে মাঝে রুনা চিঠি লিখত । ইমরান খুব একটা উত্তর দেয়না । ধীরে ধীরে রুনাও একসময় চিঠি লেখা বন্ধ করে দেয় । দুবছর আগে রুনা এসএসসি পাস করার পর মামী ইমরানের সাথে পরামর্শ করেছিলেন- রুনাকে কোথায় ভর্তি করানো যায় । রুনা ভালো রেজাল্ট করেছিল । রুনাকে হলিক্রস কলেজে ভর্তি করানো হয়েছিল ।
ইমরান এমবিবিএস পাস করে , ইন্টার্ণশিপ শেষ করে এখন ঢাকায় । থাকে বন্ধুদের সাথে শাহবাগে এক বাসায় । মেডিকেলের উচ্চশিক্ষার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় একটিই । বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়- বিএসএমএমইউ । শাহবাগে । সারাদেশ থেকে তরুণ ডাক্তাররা পোস্টগ্রাজুয়েশনের নেশায় ঢাকা ছুটে আসে । তারা এসে ভিড় জমান বিএসএমএমইউ- এর আশেপাশে । শাহবাগের গণ্ডিতেই শত শত বাসায় ব্যাচেলর ডাক্তাররা থাকেন । দিনরাত পড়াশোনা করেন । সবার ধারণা- বিএসএমএমইউ-র আশেপাশে থাকলে বুঝি পড়ালেখা ভালো হবে ! অবশ্য আরো একটা কারণ আছে- বিএসএমএমইউ-র লাইব্রেরিতে নির্বিঘ্নে পড়াশোনা করা যায় । এসি আছে ।
কয়েকদিন থেকে মামী ফোন করছেন । বাসায় যেতে বলছেন । ইমরান এফসিপিএস পার্ট- ওয়ান পরীক্ষা নিয়ে খুব ব্যস্ত ছিল এ কয়দিন । সময় করে উঠতে পারেনি । নাক ডুবিয়ে পড়াশোনা করেছে । তার ফলও পেয়েছে । পার্ট-১ এ পাস করে ফেলেছে সে । একজন ডাক্তারের জন্য এ এক বিশাল রিলিফ ।
সামনে আবার বিসিএস ভাইভা আছে । এখন কিছুদিন রেস্ট নেয়ার চিন্তা করেছে ইমরান । বিসিএস নিয়া এত চিন্তা নাই ।
আজ সকালবেলাটা ঘুমিয়ে বিকেলে বের হয় মামার বাসায় আসার জন্য । পথে হলিক্রস কলেজ পার হবার সময় রুনার কথা মনে পড়েছিল । রুনা এবার এইচএসসি পরীক্ষা দিয়েছে । রেজাল্ট এখনো হয়নি । পড়াশোনা করছে মেডিকেল- ভার্সিটি ভর্তি পরীক্ষার জন্য ।
ছোটবেলায় রুনাকে স্কুলে নিয়ে যাবার স্মৃতিগুলোও মনে পড়ে যাচ্ছিল । ছোটবেলায় রুনা দেখতে খুব কিউট ছিল । এখন কেমন হয়েছে কে জানে !
..............................
মামীর সাথে কিছুক্ষণ আলাপ হলো । স্মৃতিচারণ । মায়ের কথা, ইমরানের ছোটবেলার কথা । কথা বলতে বলতে মামীর চোখ ছলছল করে ওঠে । ইমরানের মনটাও উদাস হয়ে যায় ।
রুনাকে একবার দেখা গেল দরজার সামনে দিয়ে হেঁটে যেতে । রুনা কি আড়ালে থেকে কথা শুনছে নাকি ? এই বয়সের মেয়েদের এই একটা বদভ্যাস । আড়ালে থেকে বড়দের কথা শোনে ।
কফি শেষ করতে না করতেই মামা চলে এলেন । সাথে ইমরানের আব্বাও । ইমরান অবাক হয়ে গেল । আব্বা এসময় এখানে আসবেন – এমনটা তো কথা নয় ।
মামা বললেন- অবাক হচ্ছিস কেন ? তোর বাবাকে আমিই ডেকেছি ।
চা এলো । চা খেতে খেতে আব্বা বললেন- বাবা ইমরান, একটা জরুরী বিষয়ে কথা বলার জন্য আমি এসেছি । তোর মামীর খুব ইচ্ছে- তোর সাথে রুনার বিয়েটা দিয়ে দেন । তোর মামার এবং আমারও মত আছে । তোর মাও একথা বলতো । আমাদের ইচ্ছা- এ সপ্তাহেই বিয়েটা সেরে ফেলি । তোর মতামত টা জানার জন্যই এখানে এসেছি । তুই কি বলিস ? রুনা মা খুব ভালো । তুই তো জানিস, তোর মা ওকে কতটা পছন্দ করতেন ।
ইমরান সবার দিকে তাকালো । মামীর চোখ ছলছল করছে ।
ইমরান এমনটা আশা করেনি । তাঁর অমত নেই, বরং মনে মনে এমন একটা ইচ্ছা যে তারও জাগেনি তা নয় ।
তবু আমতা আমতা করে বললো- কিন্তু ও তো এখনো ছোট ।
পিচ্চি ভাইটা এসময় ইমরানের চেয়ারের কাছে এসে ইমরানের হাতে একটা নীল কাগজ ধরিয়ে দিল ।
ইমরান খুলে দেখলো তাতে লাল কালিতে লেখা –
নাদের আলী, আমি আর কত বড় হবো ? আমার মাথা এ ঘরের ছাদ
ফুঁড়ে আকাশ স্পর্শ করলে তারপর তুমি আমায়
তিন প্রহরের বিল দেখাবে?
-(রুনা) ।
..............................
তিন প্রহরের বিল / ২২-০৭-২০১৩
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন