দরজা বন্ধ করে ফারিহা বালিশে মুখ গুঁজে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে লাগলো । দরজার বাইরে মা হতভম্ব হয়ে বসে রইলেন । কি জানি কী হলো ? ছেলে কি ওর পছন্দ হয়নি ? পছন্দ না হলে বলুক , কান্নাকাটির কী দরকার ? মেয়েটা বড্ড ছিঁচকাঁদুনে । সেই ছোটবেলা থেকেই । কিছু না পেলেও কাঁদে, কিছু পেলেও কাঁদে । বড্ড আবেগী ।
একটাই মেয়ে রেহানা বেগমের । ছোট্ট পুতুলের মত জন্ম হয়েছিল ওর । সারাক্ষণ বুকে-পিঠে জড়িয়ে রাখতেন । এক মুহুর্ত চোখের আড়াল করতেন না । রান্নার সময়ও পিঠে বেঁধে রাখতেন । ও যেন নিজের দেহেরই একটা অংশ । মেয়েটাও ছিল মায়ের ন্যাওটা । সারাক্ষণ আঁচল ধরে থাকত ।
ধীরে ধীরে বড় হল মেয়ে । শরীরের অংশটা যেন শরীর থেকে আলাদা হতে লাগলো । কলেজ পড়া পর্যন্ত মেয়েকে চোখে চোখে রেখেছিলেন রেহানা । স্কুলে নিয়ে যাওয়া, স্কুল ছুটি না হওয়া পর্যন্ত গার্ডিয়ান টেন্টে বসে থাকা । অন্য বাচ্চাদের মায়ের কাছে ফারিহার গল্প করা । এভাবেই কেটে গিয়েছিল দিনগুলি । সে কম সময় নয় , এক যুগেরও বেশি ।
একটু একটু করে মেয়ে বড় হল, আর শরীরের অংশও যেন একটু একটু করে দূরে সরে গেল । একসময় মেয়ে ইন্টারমিডিয়েট পাস করলো । বিভিন্ন ভার্সিটিতে ভর্তি পরীক্ষা দিল । চান্স পেল ঢাকা ডেন্টাল কলেজে । মেয়েকে রেখে আসতে হল ঢাকায় । রেহানার সেদিন মনে হয়েছিল যেন তাঁর নিজের জীবনটাই ঢাকায় রেখে যাচ্ছেন । বিদায়ের আগ মুহুর্তে মা-মেয়ে সেকি কান্না । সেসব কথা কি কোনদিন ভোলা যায় ?
ফারিহার বাবা ব্যাংকার । অনেক চেষ্টা করেও ঢাকায় পোস্টিং নিতে পারেন নি । আর যে বেতন পান- সেই বেতনে জেলা শহরে ভালোভাবে থাকা যায় , কিন্তু ঢাকা শহরে সম্ভব না । বাসা ভাড়াতেই তো সব চলে যাবে । ফারিহাকে ঢাকায় একা রেখে আসতে বুক ফেটে গেলেও তাই ঢাকায় থাকার চিন্তাটা বাদ দিতে হয়েছিল ।
প্রথম প্রথম মেয়ে প্রতি সপ্তাহে বাড়িতে আসত । ধীরে ধীরে সেটাও কমে গেল । মেয়ের পড়াশোনার খুব চাপ । মাসে-দুমাসে একবার করে আসে । রেহানাও তখন আরেকটা ছেলে পুতুল পেয়েছেন । তাঁর একাকীত্বটাও ততটা নেই আর । ফারিহার শুন্যতা পুরণ করেছে জীয়ন । মেয়ের সাথে মোবাইলে কথা হত প্রতিদিন ।
আজ আবার সেই পুরনো অনুভুতিটা বোধ করছেন রেহানা । ফারিহাকে ঢাকায় রেখে আসার সময় যে শুন্যতা বুকে চেপে বসেছিল , আজ হঠাৎ সেই শুন্যতাটা যেন ফিরে আসছে । কীই বা করার আছে ? মেয়ের পড়াশনা শেষ । বাসায় বসে আছে ছয় মাস । বয়স ২৪ হয়ে গেছে । বিয়ে তো দিতেই হবে ।
কাউকে পছন্দ আছে কিনা ফারিহা কখনো বলে নি । মাঝে মাঝে বিয়ের প্রসঙ্গ তুললে সে এড়িয়ে যেত । ‘মা , এই প্রসংগটা বাদ দাওতো । অন্য কথা বল । আমাকে এ বাড়ি থেকে বের করে দিতে ইচ্ছে করছে তোমার ? তাহলে বল, আমি কালকেই কোথাও চলে যাব’ । এরপর আর কথা চলে না ।
গতকাল রাতে রেহানার ছোটভাই মন্টু এসেছে । সে একটা ছেলের ছবি নিয়ে এসেছে । ছেলের চাচার সাথে একই অফিসে কাজ করেন । পুরনো কলিগ । কলিগের ভাতিজাও ঢাকা ডেন্টাল কলেজ থেকে পাস করেছে । ফারিহার এক বছর সিনিয়র । রাতে ভাইয়ের সাথে এসব নিয়ে কথা হয় রেহানার । সকাল বেলা টিভি দেখার ফাঁকে ফারিহাকে ছবিটা দেখায় তাঁর মামা । ছবির নিচে নামও লেখা ছিল, ফারহান । এরপর ফারিহা হঠাৎ উঠে গিয়ে রুমের দরজা বন্ধ করে দিল । এখন ফুঁপিয়ে কাঁদছে । কী হলো কিছুই বুঝতে পারছেন না রেহানা ।
.............................................
‘মা , তুমি যাও । দরজার সামনে বসে থাকার দরকার নেই’ ।
দরজা খুলে কথাটা বলেই আবার দরজা বন্ধ করে দিল ফারিহা । তাঁর নিজস্ব ড্রয়ারটা খুলে একটা জন্মদিনের কার্ড বের করলো । কার্ডের উপরে বড় অক্ষরে লেখা- ফারিহাকে ফারহান । ব্রাকেটে লেখা ‘দাঁত তুলে ফেলবো’ ।
ফারহানের সাথে প্রথম দেখার দিনটা যেন চোখের সামনে ভেসে উঠলো । ওরা ক্যাম্পাসে আসার মাসখানেক পরে নবীণ বরণ অনুষ্ঠান হয় । অনুষ্ঠানে উপস্থাপক ছিল সেকেন্ড ইয়ারের ফারহান । ফারিহার একটা গান গাওয়ার কথা । মাইকে ঘোষণা করলো ফারিহার নাম । ফারিহা স্টেজে ওঠার সময় ফারহান বললো- এই পিচ্চি, গান ভালো না হলে কিন্তু দাঁত তুলে ফেলবো ! ফারিহা তো অবাক । নতুন একজনকে প্রথম বার কথাতেই কেউ এরকম কথা বলে নাকি ? দাঁত তুলে ফেলবো !
পারফর্মেন্স ভালো হয়েছিল । কিন্তু ফারিহা সেই কথাটা ভুলতে পারেনি । একদিন ক্যান্টিনে দেখা হল ফারহানের সাথে । ফারিহা বললো- ভাইয়া , দাঁত তুলে ফেলবেন না ? ফারহান বললো- ‘নাহ ! গান ভালোই গেয়েছ । এখন দাঁত তুলে ফেলার দরকার নেই । তবে আমার সাথে কখনো বেয়াদবি করলে কিন্তু ঠিকই দাঁত তুলে ফেলবো’ ।
হিহি করে হেসে ফেলে ফারিহা । ফারহান কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকে । হাসিটা তাঁর ভালো লেগেছিল । পরে একদিন ফারহান বলেছিল- ‘ফারিহা, তোমার হাসিটা না খুব সুন্দর । তোমার দাঁত আমি কখনোই তুলতে পারবো না’ ।
এরপর থেকে ঘন ঘন দেখা হয় । কীভাবে কীভাবে যেন একটা কমন রুটিন তৈরি হয়ে যায় । দুজনে একই সময়ে ক্যান্টিনে আসে । টুকটাক কথা হয় । ফার্স্ট প্রফে ফারহান ভালো মার্কস পেয়েছিল । ফারিহা ওর কাছে বিভিন্ন পরামর্শ নেয় । ধীরে ধীরে কথার পরিমাণ বাড়তে থাকে । মোবাইল নাম্বার বিনিময় হয় । কে আগে মোবাইল নাম্বার নিয়েছিল ? মনে পড়ে, প্রথম কলটা ফারিহাই করেছিল ফারহানকে । কী একটা বিষয়ে যেন পরামর্শ নেয়ার জন্য । ধীরে ধীরে ঘনিষ্ঠতা বাড়ে । ক্যাম্পাসের ভেতরেও দুজনকে একসাথে দেখা যায় । ক্যাম্পাসের গন্ডি পেরিয়ে তা একসময় চাইনিজ রেস্তোরাঁয় গড়ায় ।
ক্যাম্পাসে কানাকানি হয় । বন্ধুরা খাতার ওপর লিখে দেয় – ফারহান + ফারিহা । নামের মিলটাও খুব ভালো লাগে ওদের । কীভাবে এই মিলটা হলো ওরা ভেবে পায় না । কিন্তু মনে করে- তাদের জুটিটা আসলে পারফেক্ট । সারাজীবন ওরা একসাথে থাকবে ।
এক বছর খুব ভালোই ছিল । হাসি ঠাট্টা , মোবাইলে কথা , চিঠি, গিফট বিনিময় । মিরপুরের সব জায়গায় ওদের পা পড়েছে । সারাদিন একজন আরেকজনের কথা ভাবে । ফারিহা তো ফারহানের গল্প করতে করতে বান্ধবীদের কান ঝালাপালা করে দিয়েছিল । ফারহান কথায় কথায় বলে – দাঁত তুলে ফেলবো !
ছোটবেলায় একবার ডাঙ্গুলি খেলতে গিয়ে বন্ধুদের সাথে মারামারি হয়েছিল ফারহানের । তখন বয়স আট কি দশ । দুধদাঁত পড়ে গিয়ে পার্মানেন্ট দাঁত ওঠার বয়স । ফারহান ওর বন্ধু মিন্টুকে একটা ঘুষি মেরেছিল । ঘুষিটা মিন্টুর গালে লাগে । মিন্টুর মুখে রক্ত চলে আসে । থুতু ফেললে দেখা যায় , মিন্টুর একটা দাঁত পড়ে গেছে । সবাই বলতে লাগলো – ফারহান ঘুষি মেরে মিন্টুর দাঁত ফেলে দিয়েছে । আসলে মিন্টুর একটা দাঁত আগে থেকেই নড়বড়ে ছিল । কিন্তু কে শোনে কার কথা । পাড়ায় বাচ্চাদের মাঝে খবর রটে গেল , ফারহান ঘুষি মেরে দাঁত ফেলে দেয় । বাচ্চারা একজন আরেকজনকে ভয় দেখাতে লাগলো – ফারহান ভাইয়াকে ডাকবো ? ঘুষি মেরে তোর দাঁত ফেলে দিবে ! ফারহান হিরো হয়ে গেল । সে তখন এই ডায়লগটা দেয়া শুরু করলো – ‘দাঁত তুলে ফেলবো’ । পরে সে যখন ঢাকা ডেন্টাল কলেজে চান্স পেল – তাঁর মনে হল , এটাই ভাগ্যে ছিল । ভবিষ্যতে আসলেই তাকে দাঁত তুলতে হবে । টুথ এক্সট্রাকশন । বিশেষ করে থার্ড মোলার । যাকে বলে আক্কেল দাঁত । ডায়লগটা সে আর ছাড়েনি । কিছু হলেই বলে – ‘দাঁত তুলে ফেলবো’ !
...........................
ফারিহার ফার্স্ট প্রফ পরীক্ষার রেজাল্ট হয়ে গেছে । ফারিহা প্লেস করেছে । নাইন্থ প্লেস । কিন্তু ফারহানের মাঝে কেমন যেন একটা পরিবর্তন লক্ষ্য করছিল সে কিছুদিন ধরেই । আগের মত অতটা উচ্ছাস দিয়ে কথা বলে না , সহজে দেখা করতে চায়না । দেখা করতে বললে একা না এসে সাথে আরেকজন বন্ধুকে নিয়ে আসে । আগে রংচঙ্গা টি-শার্ট, ছেড়া জিন্স এসব হাল ফ্যাশনের কাপড় পড়ত । এখন অনেকটা ফরমাল কাপড়চোপড় পড়ে । দেখতে অবশ্য অনেক স্মার্ট দেখায় । মনে হয় – আগের চেয়ে এখনকার পোষাকেই ওকে বেশি ভালো লাগে । আগে জিন্সের প্যান্ট যেন রাস্তায় ঝাড়ু দিত । এখন প্যান্ট একটু উপড়ে থাকে । ছোট ছোট দাড়িও রেখেছে । দেখতে আগের চেয়ে একেবারে প্রায় ভিন্ন, কিন্তু অনেক ভদ্র, আরো বেশি সুন্দর, হ্যান্ডসাম লাগে ।
একদিন ফারহান ফারিহাকে ফোন করে দেখা করতে বললো । একা । মিরপুর-১০ এ । অনেক দিন পরে ফারহান এভাবে দেখা করতে ডাকলো । ফারিহা অনেক খুশি মনে গিয়েছিল । গিয়ে দেখে রেস্টুরেন্টের একটা টেবিলে ফারহান গম্ভীর মুখে বসে আছে । আইসক্রিম আর জুসের অর্ডার দিল ফারহান ।
‘ফারিহা , আজ আমি তোমাকে কিছু খুব গুরুত্বপুর্ণ কথা বলবো । তুমি মনকে শক্ত কর’ ।
ফারিহার বুক কেঁপে ওঠে । কী বলতে চায় ফারহান ? ব্রেক আপ ?
‘ফারিহা, তুমি আমাকে কতটা ভালোবাস ?’
‘তোমাকে কতটা ভালোবাসি আমি বোঝাতে পারবো না’ । কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বলেছিল ফারিহা ।
‘ফারিহা, আমিও তোমাকে ভালোবাসি । সেজন্যেই আমি চাইনা তোমার কোন ক্ষতি হোক । তুমি কি চাও আমার কোন ক্ষতি হোক ?’
‘কী বলছ তুমি ? তোমার বিন্দুমাত্র ক্ষতি হবার আগে যেন আমার মরণ হয় !’
‘দেখ ফারিহা , তুমি কি জান- এইযে আমরা দুজনে এভাবে দেখা করি, কথা বলি এতে আমাদের দুজনেরই ক্ষতি হয় ? আমরা মুসলিম । আমাদের সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ । তিনি আমাদের সৃষ্টি করে দুনিয়াতে এমনিতেই ছেড়ে দেননি । আমাদের জন্য ম্যানুয়াল দিয়েছেন । টিউটর দিয়েছেন । তুমি জান সেটা কি ? ম্যানুয়ালটি হচ্ছে আল কুরআন । আর টিউটর হলেন নবী । তুমি নিশ্চয়ই আল্লাহকে সৃষ্টিকর্তা, রাসুলকে আল্লাহর প্রেরিত বার্তাবাহক, এবং কুরআনকে আল্লাহর বাণী বলে বিশ্বাস কর ?
’‘হু, করি’ ।
‘সমাজের মঙ্গলের জন্য , মানব জাতির মংগলের জন্য এতে বিধান দেয়া হয়েছে । বিয়ের আগে আমাদের এভাবে দেখা করা , যোগাযোগ রাখা, অবাধে মেলামেশা করা ইসলামে নিষেধ আছে । এতে আমাদের পাপ হচ্ছে, গুনাহ হচ্ছে । আল্লাহ অসন্তুষ্ট হচ্ছেন । আল্লাহ ক্ষমা না করলে এর জন্য আমাদের পরকালে শাস্তি পেতে হবে । আমাকে শাস্তি পেতে দেখলে , আগুনে পুড়তে দেখলে তুমি খুশি হবে ?’
‘না । তার আগে আমি আগুনে পুড়বো’ ।
‘কিন্তু আমি চাইনা তুমি আগুনে পোড় । মুসলিমরা চায় সকল মানুষের জন্য মৃত্যুর আগে এবং পরে সবসময়ের জন্য শান্তি’ ।
‘তাহলে চল আমরা বিয়ে করে ফেলি’ ।
‘ফারিহা, সেটা এখনই সম্ভব নয় । আমার এখনো গ্র্যাজুয়েশন কমপ্লিট হয়নি । তোমারও হয়নি । তোমার এবং আমার কোন পরিবারের কেউই রাজী হবে না । বাবা-মা’র অমতে বিয়ে করলে জীবনে সুখি হবনা আমরা । আর এখন আমার কী আছে বলো ? তুমি তো আমার অবস্থা জানো’ ।
‘আমি অতকিছু বুঝিনা । তুমি আমার কাছ থেকে সরে যেতে পারবে না’ ।
‘ফারিহা, আমি তোমাকে ভালবাসি, তুমি আমাকে ভালবাস । কিন্তু সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ, আমাদের বাবা মা আমাদেরকে এরচেয়েও বেশি ভালবাসেন । তাঁদেরকে কষ্ট দেয়া ঠিক না । আমি তোমার জন্য অপেক্ষা করবো । গ্রাজুয়েশন শেষে আমি মোটামুটি গুছিয়ে নিতে পারলেই আমরা বিয়ে করবো । তুমি আমার জন্য অপেক্ষা করতে পারবে না ?’
ফারিহার চোখ ভিজে গিয়েছিল । সে কী বলবে ? ফারহান আরো বলেছিল – ‘ফারিহা, যদি তুমি আমাকে সত্যিই ভালোবেসে থাক তাহলে অপেক্ষা করো । এটা আমাদের দুজনেরই ভালবাসার পরীক্ষা । সময় হলে , আমি প্রথমে তোমাকেই খুজবো । যদি তুমি আমার জন্য অপেক্ষা করতে পারো, তাহলে আমরা সারাজীবনের জন্য একসাথে থাকবো’ । ফারিহার রুমাল চোখের পানিতে ভিজে গিয়েছিল । ফারহানের চোখেও জল টলমল করছিল । কিন্তু ও খুব শক্ত ছিল । হয়তো ফারহানও কেঁদেছিল তাঁর রুমে ফিরে । গোপনে, নীরবে ।
তাদের আর কথা হয়নি । যতদিন ক্যাম্পাসে ছিল, মাঝে মাঝে করিডোরে চোখাচোখি হত । ফারিহা জিজ্ঞেস করতো- ‘কেমন আছেন ?’ ফারহান হয়তো মাথা নাড়ত, অথবা ছোট্ট করে উত্তর দিত –আলহামদুলিল্লাহ্ । তুমি ভালো আছ ? তারপর প্রায় পাঁচ বছর কেটে গেছে । ফারিহা অপেক্ষা করেছে । জসীমউদ্দিনের ‘নকশী কাঁথার মাঠ’ কবিতায় সোনাই যেভাবে অপেক্ষা করেছিল রুপাইর জন্য , ফারিহা সেভাবেই অপেক্ষা করেছে । ফারহান তার কথা রেখেছে । তার চাচার কলিগ, ফারিহার মন্টু মামার মাধ্যমে তার ছবি পাঠিয়েছে । আসলে বিয়ের প্রস্তাবই পাঠিয়েছে ।
...................................................
বিকেলে মামাকে নিয়ে বিলের ধারে বেড়াতে গেল ফারিহা । মামাকে বললো, এই প্রস্তাবে তার কোন অমত নেই । মামার কাছে খোজখবর নিল- মামা ফারহানকে দেখেছে কিনা , তাকে মামার পছন্দ হয়েছে কিনা এইসব । ফারহানের কাছে পৌছানোর জন্য একটা খাম দিল ফারিহা । এনগেজমেন্টের দিন যেন এটা নিয়ে আসে । খামে একটা এক লাইনের চিঠি আছে ।
তিনদিন পর । ফারিহাদের বাড়িতে ছোটখাট আয়োজন করা হয়েছে । ফারিহা জানে , আজ এনগেজমেন্ট হবে । ফারহান তার বাবা-মা ভাই বোন সবাইকে নিয়ে এসেছে । আংটি পড়ানোর সময় ফারহানের আব্বা বললেন – ‘আমরা কিন্তু কাজী সাথে করেই নিয়ে এসেছি । ফারিহা মা রাজি থাকলে আজই কবুল করে ফেলতে চাই’ ।
ফারিহা ফারহানের দিকে তাকিয়ে বললো – ‘আজই’ ?
ফারহান ফারিহার দেয়া খামটা খুলে চোখের দিকে চেয়ে নিচুস্বরে বললো – ‘দাঁত তুলে ফেলবো’ !
..............................
দাঁত তুলে ফেলবো / ০৮-০৭-২০১৩
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন