এক রৌদ্রোজ্বল বিকেলে...

এক রৌদ্রোজ্বল বিকেলে...
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে

শুক্রবার, ৫ জুলাই, ২০১৩

আরিফ মইনুদ্দিন ভাইয়ের অকালে চলে যাওয়াঃ স্মৃতি ভোলার নয়

তাঁর সাথে খুব বেশি কাজ করা হয়নি । তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সেক্রেটারি ছিলেন , আমি মেডিকেলের দায়িত্বশীল । মাঝে মাঝে রেটিনায় স্টুডেন্ট ভর্তি কিংবা হাসপাতালে পরিচিত কোন রোগীর খোঁজখবর নেয়ার জন্য ফোন করতেন । রেটিনার একটা খন্ডকালীন অফিস ইনডেক্স ভবনে থাকায় মাঝে মাঝে দেখা হত রেটিনা কিংবা ইনডেক্স অফিসে । ততদিনে তিনি সংগঠন থেকে বিদায় নিয়েছেন । দেখা হত গুলজার মোড়ে । দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে অনেক কথা হত । মেডিকেল, বিশ্ববিদ্যালয়, মহানগরী, সার্বিক আন্দোলনের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে ।

আরিফ মইনুদ্দিন ভাই । হ্যাংলা পাতলা শুকনো লম্বা চেহারাটা এখনো চোখে ভাসছে । মনে হচ্ছে , গুলজার মোড়ে গেলে আজও হয়তো দেখা হয়ে যাবে । কথা হবে । কোথাও দাঁড়িয়ে দু’কাপ চা খাওয়া হবে ।

কিন্তু আসলে তা আর কখনোই হবে না । গতকাল তিনি চিরবিদায় নিয়েছেন নীরবে, কাউকে কিছু না জানিয়েই ।

২০১০ সালের ১২ই ফেব্রুয়ারির কথা আমার আজীবন মনে থাকবে । চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শহীদের লাশ মেডিকেল কলেজ মর্গে । পুলিশ টালবাহানা করছে লাশ দিতে । কথা ছিল শহীদের লাশ নিয়েই শহীদি মিছিল হবে । শেষমেষ লাশ ছাড়াই মর্গের সামনে থেকে শুরু হলো বিক্ষোভ মিছিল । জামালখান মোড়ে পুলিশ মিছিলে হামলা করলো । মুহুর্মুহু টিয়ারশেল মারা শুরু করলো । লোকজন বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়লো ।
একটা গলিতে ঢুকে পড়েছি । দেখি সাথে আছেন আরিফ ভাই । বিপদের সময় পাশে দায়িত্বশীল থাকলে কত যে ভালো লাগে ! বুকের ছাতি একহাত বেড়ে যায় । ‘ভয় কিরে বোকা ?’ তাঁর সাথে থেকে কিছুক্ষণ পুনরায় সংঘবদ্ধ হবার চেষ্টা করেছিলাম আমরা ।
সেই দৃশ্যটা কোনদিন ভোলা যাবে না ।

আমাদের চোখে ওনার চলে যাওয়াটা বড্ড ‘অসময়ে’ ।
শাহাদাতের তামান্না থাকলে নিজের বিছানায় মৃত্যুও শাহাদাতের মর্যাদা পায় । দয়াময় প্রভুর কাছে সেটাই মুনাজাত, আল্লাহ আমাদের প্রিয় ভাইকে, প্রিয় দায়িত্বশীলকে শহীদ হিসেবে কবুল করে নিন । আমীন । 


০৫-০৭-২০১৩ 

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন