শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়া রাজনীতিতে এসেছিলেন ‘দুর্ঘটনাক্রমে’
। প্রেসিডেন্টের রক্তের উত্তরাধিকার হিসেবে দল টিকিয়ে রাখার প্রয়োজনে দলের লোকেরা তাঁদের টেনে এনেছিল ।
জাতীয় পার্টির প্রধান হলেন এরশাদ , যিনি
‘পুরুষ’ হওয়ায় কেউ কেউ তাঁর নেতৃত্ব মানতে আপত্তি নেই বলেন । কিন্তু প্রকৃতপক্ষে খালেদা জিয়া বা শেখ হাসিনার চেয়ে এরশাদের দায় কম না । বরং বেশিই মনে হয় । এরশাদের স্ত্রী রওশন এরশাদকে তিনি জাতীয় পার্টির সিনিয়র প্রেসিডিয়াম সদস্য বানিয়েছেন । রওশন এরশাদ জাতীয় পার্টির হয়ে সংসদ নির্বাচনেও অংশ নেন । (শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন জোটে থাকার ব্যাপারে আগেই বলেছি )
সরাসরি ‘নারী নেতৃত্ব হারাম’
বলার অর্থ দাঁড়ায় যে- সর্বস্তরে,
কোন পুরুষের ওপরে কোন নারী নেতৃত্ব দিতে পারবে না । আর সেটা ইসলামের দৃষ্টিতে মদ খাওয়া, ব্যভিচার করার মতই মারাত্মক গুনাহ
!
হাসপাতালের গাইনী ওয়ার্ডে অনেক পুরুষ কাজ করেন , বিশেষত ইন্টার্ণশিপ করার সময় তো নারী-পুরুষ সকল ডাক্তারকেই কাজ করতে হয় । আর প্রায় সব হাসপাতালেই ‘গাইনী এন্ড অবস’
বিভাগের প্রধান থাকেন নারী । তাহলে কি সেখানে পুরুষ ডাক্তার যারা কাজ করেন,
তাঁরা হারাম কাজ করেন ?
জনগনের জন্য ফতোয়া কি এটাই হবে যে- নারীর অধীনে পরিচালিত হাসপাতালে ভর্তি করানো হারাম
!
বাস্তবতা হলো-
একজন নারী একজন পুরুষের চেয়েও যোগ্য হতে পারে । একজন মহিলা ডাক্তার একজন পুরুষ ডাক্তারের চেয়ে বেশি যোগ্য হতে পারেন
, শুধু গাইনী নয়-অন্যান্য ক্ষেত্রেও । একজন মহিলা শিক্ষক,
একজন পুরুষের চেয়ে বেশি দক্ষ ও যোগ্য হতে পারেন । একজন অর্থনীতিবিদ , একজন সাহিত্যিক হতে পারেন পুরুষের চেয়ে বেশি মেধাবী ।
একজন মহিলা কেন প্রিন্সিপাল হতে পারবেন না ? মহিলা প্রিন্সিপালের অধীনে কাজ করা কি হারাম হবে ?
আবেগ অনুভূতির দিক থেকে নারীরা বেশি নরম হয় । কিন্তু অনেক নারীই আছেন যারা অনেক পুরুষের চেয়ে মানসিকভাবে বেশি শক্ত
, বেশি সাহসী । ইসলামের ইতিহাসেও এর নজির আছে । অহুদের যুদ্ধে অনেক পুরুষ পালিয়ে গেছে, কিন্তু নারী অস্ত্র হাতে যুদ্ধ করেছেন ।
সুতরাং সরাসরি
‘নারী নেতৃত্ব হারাম’
বলাটা যে কতবড় কুপমন্ডুকতা আর বাস্তবতাবিবর্জিত কথা সেটা অকল্পনীয় । বলা যেতে পারে কিছু কিছু ক্ষেত্রে কাজের প্রকৃতি ও সংবেদনশীলতা অনুযায়ী নারীদের না থাকাই উচিৎ । যেখানে নারীর কাজ করাটা অপছন্দনীয়,
সেখানে নেতৃত্বও অপছন্দনীয় । কিন্তু যেখানে নারীর কাজ করাটা গ্রহনযোগ্য সেখানে যোগ্যতা থাকলেও নেতৃত্ব দিতে পারবেনা কেন
? শুধু নারী হওয়াতে তা
‘হারাম’ হবে কেন
?
রাসুল (স)
এর যুগে নারীরা ব্যবসা করার উদাহরণ আছে । বর্তমান সময়ে ব্যবসা করতে গেলে তার ফরম্যাট কী দাঁড়াবে ? ঐ নারীইতো তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান হবে নাকি ! এখন এই ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান হওয়া নারী নেতৃত্বের পর্যায়ে পড়ে কিনা
? সেটা হারাম হবে ?
একজন শিক্ষিত নারী একহাজার জন অশিক্ষিত পুরুষের ওপর নেতৃত্ব দিতে পারবেনা কেন
?
একজন সুস্থ সবল নারী শত শত পঙ্গু পুরুষের নেতৃত্ব দিতে পারবেনা কেন
?
একজন মুশরিক পুরুষ আর একজন মুমিন নারীর মধ্যে যদি আপনাকে কোন একজনের নেতৃত্ব মেনে নিতে হয় কার নেতৃত্ব আপনি গ্রহণ করবেন ? মুশরিক পুরুষের ? পুরুষ হওয়াটা বেশি জরুরী নাকি ঈমান বা অন্যান্য গুনাবলী বেশি গুরুত্বপুর্ণ
?
শুধুমাত্র নারী হওয়াটা কোনভাবেই
‘হারাম’ হতে পারেনা,
হারাম হবে যদি তাঁর পর্দার লংঘন ঘটে । শুধু নারী হওয়া কারো অযোগ্যতা হতে পারেনা
– বিবেচনায় থাকতে পারে কাজের ঝুঁকি, পর্দার মৌলিক বিধান ইত্যাদি ।
( প্রসঙ্গ নারী নেতৃত্বঃ প্রেক্ষিত বাংলাদেশ – ০৭
)
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন