শেখ
হাসিনা বা খালেদা জিয়া কারোই দল কিংবা দেশের নেতৃত্বে আসার কথা ছিলনা । তাঁরা
দুজনেই এসেছেন ‘ঘটনাক্রমে’ । আরও স্পষ্ট করে বলতে গেলে – ‘দুর্ঘটনাক্রমে’ । আর
তাদের নেতা বানিয়েছেন পুরুষেরাই । কারণ, পুরুষেরা নেতৃত্ব দিতে ব্যর্থ হচ্ছিলেন ।
১৯৭৫ এর
আগস্টে শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করা হলে বিদেশে থাকা দুই মেয়ে শেখ
হাসিনা ও শেখ রেহানা বেঁচে যান । এরপর কয়েক বছর রাজনৈতিক অঙ্গন থাকে মারাত্মক
টালমাটাল । আওয়ামী লীগের কার্যক্রমেও আসে স্থবিরতা । কিছুদিন সভাপতির দায়িত্ব পালন
করেন বেগম জোহরা তাজউদ্দীন । এরপর কিছুদিন সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন আব্দুল মালেক
উকিল । কিন্তু দল এতে করে চাঙ্গা হচ্ছিল না । হচ্ছিল ক্ষয়িষ্ণু । দলের স্বার্থে ১৯৮১ সালে, শেখ মুজিবের রক্তের
উত্তরাধিকার হিসেবে শেখ হাসিনাকে আওয়ামী
লীগের সভানেত্রী করা হয় । জিয়াউর রহমান বহুদলীয় গনতন্ত্রের দ্বার খুলে দিলে ১৯৮১
সালের মে মাসে ভারত থেকে দেশে ফিরে আসেন হাসিনা । তিনি দেশে ফেরার কয়েকদিনের
মধ্যেই চট্টগ্রামের সার্কিট হাউজে সেনাবাহিনীর কিছু অফিসারের হাতে হত্যার শিকার হন
রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ।
জিয়াউর
রহমানের মৃত্যুর পর তাঁর দল ‘জাতীয়তাবাদী দলের’ সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করেন
বিচারপতি আব্দুস সাত্তার । তিনি এসময় রাষ্ট্রপতির দায়িত্বও পালন করেন । কিন্তু
কয়েক মাসের মধ্যে ১৯৮২ সালের মার্চে তাঁকে হটিয়ে ক্ষমতা দখল করেন এরশাদ । বিচারপতি
সাত্তার অসুস্থ হয়ে পড়েন । গৃহবধু থেকে দলকে টিকিয়ে রাখার স্বার্থে রাজনীতিতে টেনে
নিয়ে আসা হয় বেগম খালেদা জিয়াকে । ১৯৮৩ সালে তিনি বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান
এবং ১৯৮৪ সালের মে মাসে (১০মে) পার্টির চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন ।
গতকালই
বলেছি যে শেখ হাসিনা বা খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে আসার দায় শুধুমাত্র তাদের নিজেদের নয়
। জামায়াতের তো নয়ই । সবার । আলেম ওলামারা নেতৃত্বের বিকল্প হিসেবে নিজেরা না দাঁড়ানো কিংবা অন্য
কাউকে দাঁড় করাতে পারেননি –ফলে তাঁরা নেতৃত্বে এসেছেন । অথবা জনগন তাদেরকে নেতৃত্বে এনেছে ।
এর
উদাহরণ দেয়া যেতে পারে একটি পরিবারের সাথে । পরিবারের প্রধান –বাবা মারা গেলে তার
ছোট বাচ্চারা নিরুপায় হয়ে পড়ে । পুরুষ বড় ভাই থাকলেও তিনি বেকার, অকর্মন্য , অনির্ভরযোগ্য ও
দায়িত্বজ্ঞানহীন হওয়ায় কিংবা ছোট ভাইবোনদের দায়িত্ব না নেয়ায়- বড় বোন এবং মাকেই সমস্ত দায়িত্ব নিতে হয় ।
পরিবারের
নেতৃত্ব গিয়ে পড়ে ‘নারীর’ ওপর । এখন এদের মধ্যে একটি ভাই মাদ্রাসায় পড়ুয়া – ছোটখাট
আলেম হলেও তাকেও মেনে নিতে হয় ‘নারীর নেতৃত্ব’ ।
আরেকটি
উদাহরণ দিই । বাংলাদেশে অনেক পরিবার এমন আছে যে পরিবারের স্বামী পুরুষটি অকর্মণ্য । কাজকর্ম করেনা । জুয়া
খেলে , সিগারেট গাঁজা
খেয়ে দিন কাটায় । স্ত্রীকেই বাধ্য হয়ে গার্মেন্টসে কিংবা অন্যের বাড়িতে ঝিগিরি করে
সংসার চালাতে হয় । অর্থাৎ ‘নেতৃত্ব’ নিতে হয় । বাইরে বের হতে হয় । (ডাক্তার হিসেবে
প্রতিদিন অনেক নতুন নতুন মানুষের সাথে কথা বলতে হয় , এরকম অনেক পেয়েছি , খুবই
বাস্তব ।)
অনেক
পরিবারের পুরুষটি পঙ্গু । সেখানেও নারীকেই দায়িত্ব নিতে হয় এবং হয়েছে ।
এইটা
হলো বাস্তবতা ।
বাংলাদেশের
আলেম-ওলামাসহ পুরুষ নেতারা হলেন এইরকম । কেউ পঙ্গু, কেউ দায়িত্বজ্ঞানহীন, কেউ
অকর্মন্য - বউয়ের কামাই খায় । কেউ স্বীকার
করে, কেউ স্বীকার করেনা- এইটুকু পার্থক্য ।
সুতরাং,
কথায় কথায় ‘নারী নেতৃত্ব হারাম’ বলার আগে বলুন- ‘মুসলিমদের মধ্যে অনৈক্য হারাম’ , বলুন-
‘ইসলামী সমাজ কায়েমের রাজনীতি থেকে দূরে থাকা হারাম’ , বলুন- ‘কুরআন সুন্নাহর
মূলনীতির বাইরে আইন তৈরি করা হারাম’ , ফতোয়া দিন- ‘সেক্যুলার দলকে ভোট দেয়া ,
সমর্থন দেয়া হারাম’ । যদি সেকথা বলতে না পারেন, সে সাহস না থাকে – তাহলে ‘নারী
নেতৃত্ব হারাম’ বলে মিউ মিউ করে মুখে ফেনা ওঠানোকে অনর্থক বিরক্তি উদ্রেককারী
বাতুলতা ছাড়া অন্য কিছু ভাবার কোন সুযোগ জনগনের নেই । নিজেরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে বুক
উঁচু করে দাঁড়ান, নিজেদের পুরুষত্ব প্রমাণ করুন ।
শুধুমাত্র বিশেষ কিছু হরমোন থাকলেই ‘পুরুষ’ হওয়া যায় না । শুধু ফতোয়া দেয়া
নয় , ময়দানে দাঁড়িয়ে নিজেদের ‘পৌরুষ’ প্রমাণ করুণ- অন্যথায় ঘরের কোণে বসে
গীবত-চোগলখুরি করা নারীর সাথে আপনাদের কোন পার্থক্য আমরা করতে পারছিনা ।
সংযুক্ত
প্রশ্নঃ
যারা
কোনরকম বাছবিচার ছাড়াই যেকোন অবস্থায় ‘নারী নেতৃত্ব ডাইরেক্ট হারাম’ বলতে অভ্যস্ত
, তাঁদের কাছে আমার বিনীত প্রশ্ন- আচ্ছা, উদাহরণটা যদি বাস্তবে ঘটে অর্থাৎ সত্যি
সত্যি একটা পরিবারের বাবা মারা গেল । পরিবারের দায়িত্ব যদি মা’কে নিতে হয় কিংবা বড়
বোনকে নিতে হয় , তা-কি হারাম হবে ? অথচ ঐ পরিবারে ছেলে আছে- ছেলের বয়স হয়তো ১৮র
বেশি কিন্তু এখনো পড়ালেখা করছে । হারাম হবে ?
[তাত্ত্বিক
আলোচনা আরো পরে করা হবে । আগে বাস্তবতা তুলে আনা হচ্ছে । এতে আমাদের বুঝতে সুবিধা
হবে । কারণ, ইসলাম কোন বাস্তবতা- বিবর্জিত কল্পনাবিলাসী জীবন বিধান নয় ।]
(নারী
নেতৃত্ব প্রসঙ্গঃ বাংলাদেশ প্রেক্ষিত – ০৬ )
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন