এক রৌদ্রোজ্বল বিকেলে...

এক রৌদ্রোজ্বল বিকেলে...
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে

বৃহস্পতিবার, ১৭ অক্টোবর, ২০১৩

নারী নেতৃত্ব হারাম ? - ০৬



শেখ হাসিনা বা খালেদা জিয়া কারোই দল কিংবা দেশের নেতৃত্বে আসার কথা ছিলনা । তাঁরা দুজনেই এসেছেন ‘ঘটনাক্রমে’ । আরও স্পষ্ট করে বলতে গেলে – ‘দুর্ঘটনাক্রমে’ । আর তাদের নেতা বানিয়েছেন পুরুষেরাই । কারণ, পুরুষেরা নেতৃত্ব দিতে ব্যর্থ হচ্ছিলেন ।

১৯৭৫ এর আগস্টে শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করা হলে বিদেশে থাকা দুই মেয়ে শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা বেঁচে যান । এরপর কয়েক বছর রাজনৈতিক অঙ্গন থাকে মারাত্মক টালমাটাল । আওয়ামী লীগের কার্যক্রমেও আসে স্থবিরতা । কিছুদিন সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন বেগম জোহরা তাজউদ্দীন । এরপর কিছুদিন সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন আব্দুল মালেক উকিল । কিন্তু দল এতে করে চাঙ্গা হচ্ছিল না । হচ্ছিল ক্ষয়িষ্ণু ।  দলের স্বার্থে ১৯৮১ সালে, শেখ মুজিবের রক্তের উত্তরাধিকার হিসেবে  শেখ হাসিনাকে আওয়ামী লীগের সভানেত্রী করা হয় । জিয়াউর রহমান বহুদলীয় গনতন্ত্রের দ্বার খুলে দিলে ১৯৮১ সালের মে মাসে ভারত থেকে দেশে ফিরে আসেন হাসিনা । তিনি দেশে ফেরার কয়েকদিনের মধ্যেই চট্টগ্রামের সার্কিট হাউজে সেনাবাহিনীর কিছু অফিসারের হাতে হত্যার শিকার হন রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ।

জিয়াউর রহমানের মৃত্যুর পর তাঁর দল ‘জাতীয়তাবাদী দলের’ সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করেন বিচারপতি আব্দুস সাত্তার । তিনি এসময় রাষ্ট্রপতির দায়িত্বও পালন করেন । কিন্তু কয়েক মাসের মধ্যে ১৯৮২ সালের মার্চে তাঁকে হটিয়ে ক্ষমতা দখল করেন এরশাদ । বিচারপতি সাত্তার অসুস্থ হয়ে পড়েন । গৃহবধু থেকে দলকে টিকিয়ে রাখার স্বার্থে রাজনীতিতে টেনে নিয়ে আসা হয় বেগম খালেদা জিয়াকে । ১৯৮৩ সালে তিনি বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান এবং ১৯৮৪ সালের মে মাসে (১০মে) পার্টির চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন ।

গতকালই বলেছি যে শেখ হাসিনা বা খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে আসার দায় শুধুমাত্র তাদের নিজেদের নয় । জামায়াতের তো নয়ইসবার । আলেম ওলামারা নেতৃত্বের বিকল্প হিসেবে নিজেরা না দাঁড়ানো কিংবা অন্য কাউকে দাঁড় করাতে পারেননি –ফলে তাঁরা নেতৃত্বে এসেছেন । অথবা জনগন তাদেরকে নেতৃত্বে এনেছে ।  

এর উদাহরণ দেয়া যেতে পারে একটি পরিবারের সাথে । পরিবারের প্রধান –বাবা মারা গেলে তার ছোট বাচ্চারা নিরুপায় হয়ে পড়ে । পুরুষ বড় ভাই থাকলেও  তিনি বেকার, অকর্মন্য , অনির্ভরযোগ্য ও দায়িত্বজ্ঞানহীন হওয়ায় কিংবা ছোট ভাইবোনদের দায়িত্ব না নেয়ায়-  বড় বোন এবং মাকেই সমস্ত দায়িত্ব নিতে হয় ।
পরিবারের নেতৃত্ব গিয়ে পড়ে ‘নারীর’ ওপর । এখন এদের মধ্যে একটি ভাই মাদ্রাসায় পড়ুয়া – ছোটখাট আলেম হলেও তাকেও মেনে নিতে হয় ‘নারীর নেতৃত্ব’ ।

আরেকটি উদাহরণ দিই । বাংলাদেশে অনেক পরিবার এমন আছে যে পরিবারের স্বামী পুরুষটি অকর্মণ্যকাজকর্ম করেনা । জুয়া খেলে , সিগারেট গাঁজা খেয়ে দিন কাটায় । স্ত্রীকেই বাধ্য হয়ে গার্মেন্টসে কিংবা অন্যের বাড়িতে ঝিগিরি করে সংসার চালাতে হয় । অর্থাৎ ‘নেতৃত্ব’ নিতে হয় । বাইরে বের হতে হয় । (ডাক্তার হিসেবে প্রতিদিন অনেক নতুন নতুন মানুষের সাথে কথা বলতে হয় , এরকম অনেক পেয়েছি , খুবই বাস্তব ।)
অনেক পরিবারের পুরুষটি পঙ্গু । সেখানেও নারীকেই দায়িত্ব নিতে হয় এবং হয়েছে ।
এইটা হলো বাস্তবতা ।

বাংলাদেশের আলেম-ওলামাসহ পুরুষ নেতারা হলেন এইরকম । কেউ পঙ্গু, কেউ দায়িত্বজ্ঞানহীন, কেউ অকর্মন্য - বউয়ের কামাই খায় ।  কেউ স্বীকার করে, কেউ স্বীকার করেনা- এইটুকু পার্থক্য ।

সুতরাং, কথায় কথায় ‘নারী নেতৃত্ব হারাম’ বলার আগে বলুন- ‘মুসলিমদের মধ্যে অনৈক্য হারাম’ , বলুন- ‘ইসলামী সমাজ কায়েমের রাজনীতি থেকে দূরে থাকা হারাম’ , বলুন- ‘কুরআন সুন্নাহর মূলনীতির বাইরে আইন তৈরি করা হারাম’ , ফতোয়া দিন- ‘সেক্যুলার দলকে ভোট দেয়া , সমর্থন দেয়া হারাম’ । যদি সেকথা বলতে না পারেন, সে সাহস না থাকে – তাহলে ‘নারী নেতৃত্ব হারাম’ বলে মিউ মিউ করে মুখে ফেনা ওঠানোকে অনর্থক বিরক্তি উদ্রেককারী বাতুলতা ছাড়া অন্য কিছু ভাবার কোন সুযোগ জনগনের নেই । নিজেরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে বুক উঁচু করে দাঁড়ান, নিজেদের পুরুষত্ব প্রমাণ করুন ।  শুধুমাত্র বিশেষ কিছু হরমোন থাকলেই ‘পুরুষ’ হওয়া যায় না । শুধু ফতোয়া দেয়া নয় , ময়দানে দাঁড়িয়ে নিজেদের ‘পৌরুষ’ প্রমাণ করুণ- অন্যথায় ঘরের কোণে বসে গীবত-চোগলখুরি করা নারীর সাথে আপনাদের কোন পার্থক্য আমরা করতে পারছিনা । 

সংযুক্ত প্রশ্নঃ
যারা কোনরকম বাছবিচার ছাড়াই যেকোন অবস্থায় ‘নারী নেতৃত্ব ডাইরেক্ট হারাম’ বলতে অভ্যস্ত , তাঁদের কাছে আমার বিনীত প্রশ্ন- আচ্ছা, উদাহরণটা যদি বাস্তবে ঘটে অর্থাৎ সত্যি সত্যি একটা পরিবারের বাবা মারা গেল । পরিবারের দায়িত্ব যদি মা’কে নিতে হয় কিংবা বড় বোনকে নিতে হয় , তা-কি হারাম হবে ? অথচ ঐ পরিবারে ছেলে আছে- ছেলের বয়স হয়তো ১৮র বেশি কিন্তু এখনো পড়ালেখা করছে । হারাম হবে ?

[তাত্ত্বিক আলোচনা আরো পরে করা হবে । আগে বাস্তবতা তুলে আনা হচ্ছে । এতে আমাদের বুঝতে সুবিধা হবে । কারণ, ইসলাম কোন বাস্তবতা- বিবর্জিত কল্পনাবিলাসী জীবন বিধান নয় ।]

(নারী নেতৃত্ব প্রসঙ্গঃ বাংলাদেশ প্রেক্ষিত – ০৬ )

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন