এক রৌদ্রোজ্বল বিকেলে...

এক রৌদ্রোজ্বল বিকেলে...
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে

রবিবার, ৬ অক্টোবর, ২০১৩

মাইনকা চিপায় ডাক্তার



বাংলাদেশের ডাক্তারকুলের জন্যে মাঝে মাঝে ‘আবেগে কাইন্দালাইতে’ ইচ্ছা করে । বেচারারা আছে মাইনকা চিপায় । মানুষজন হাসপাতালে রোগী নিয়া আসে ‘জান অর্ধেক কবজ’ অবস্থায় , হাত-পা বাইন্ধা (প্রয়োজনীয় সাপোর্ট না থাকা)  ডাক্তারকে লাগায় দেয় আজরাইলের সাথে যুদ্ধ করতে । এরপর জিতলে ঠিকাছে, হারলে মাইর !! ‘যা আছে তাই’ দিয়া  চিকিৎসা দেয়ার পর মরলে – ‘ডাক্তারে ইঞ্জেকশন দিয়া মারছে, আর চিকিৎসা দেয়ার আগে মারা গেলে ডাক্তারের অবহেলায় মারা গেছে !’

হাসপাতালে মুমূর্ষু রোগী আসলে শেষ চেষ্টা হিসেবে কিছু লাইফ সেভিং ড্রাগ দেয়া হয় । যেমন – স্টেরয়েড, ব্রড স্পেকট্রাম এন্টিবায়োটিক, ডোপামিন, এড্রেনালিন ইত্যাদি । সিনিয়র এক ডাক্তার ভাই সেদিন উপদেশ দিলেন যে রোগী বেশি খারাপ অবস্থায় আসলে কোন ড্রাগ দেয়ার আগে ‘পেশেন্ট পার্টি’র দিকে নজর দিবা । যদি মনে হয় বুঝদার পার্টি, তাহলে কথা বলে তারপর দিতে পারো । কিন্তু পেশেন্টের লোকজন উড়াধুরা হলে ড্রাগ দিবা তো মরছো । বলবে- ভালো রোগী নিয়া আসলাম, ডাক্তারে ইঞ্জেকশন দিয়া রোগী মাইরা ফেলছে ! এরপর কপালে জুটবে মাইর । পরদিন পত্রিকায় খবর আসবে- ভুল চিকিৎসায় রোগীর মৃত্যু , ডাক্তার প্রহৃত !!

‘টাঙ্গাইল সদর হাসপাতালে ইনজেকশন পুশের সঙ্গে সঙ্গে চার শিশুর মৃত্যু
চিকিত্সকরা ইঞ্জেকশন পুশ করার কিছু সময়ের মধ্যেই শিশুটি মারা যায়। মারা যাওয়া শিশুদের পরিবারের অভিযোগ, শিশুরা সবাই হাসপাতালের চিকিত্সক সাইফুল ইসলামের তত্ত্বাবধানে ছিল। সাইফুল ইসলাম গতকাল রাতে শিশুদের জন্য ব্যবস্থাপত্র লিখে যান। গতকাল ওই ব্যবস্থাপত্র মোতাবেক শিশুদের সিডোব্যাক নামের ইঞ্জেকশন পুশ করা হয়। এর দশ থেকে পনেরো মিনিটের মধ্যেই মারা যায় শিশুরা। অভিভাবকরা ইনজেকশনগুলো মেয়াদোত্তীর্ণ বলেও দাবি করেন।
এদিকে ঘটনার পর হাসপাতালের শিশু বিভাগের ডাক্তাররা গা ঢাকা দেন হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডাক্তার নুর মোহাম্মদ-এর সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে দুপুর দেড়টার দিকে তিনি শিশু ওয়ার্ডের কনসালটেন্ট ডাক্তার মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলমকে হাসপাতালে পাঠান।
ভুল চিকিত্সার অভিযোগ অস্বীকার করে তিনি সাংবাদিকদের জানান, যদি কোনো অভিভাবক সুনির্দিষ্টভাবে অভিযোগ করেন তাহলে অবশ্যই তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে। (আমার দেশ)’’



এই খবরটা দেখে সিনিয়রের কথার সত্যতা হাতেনাতে পাইলাম । মূলত চিকিৎসকের কাজ হলো ডায়াগনোসিস করে ব্যবস্থাপত্র দেয়া । ওষুধ সরবরাহ করা, ইঞ্জেকশন পুশ করা কোনটাই ডাক্তারের কাজ নয় । এগুলো ব্যবস্থাপত্র অনুযায়ী নার্স, ওয়ার্ড বয়, রোগীর লোকজনের কাজ । কিন্তু সব দোষ পড়ে ডাক্তারের ঘাড়ে । চিকিৎসা ভুল হয়েছে কিনা সেটা বুঝতে হলে তো বিশেষজ্ঞ ডাক্তারদের বোর্ড গঠন করতে হবে । কিসের বোর্ড, আগে মাইর হবে !!

ইনভেস্টিগেশনের যন্ত্রপাতি নাই, টেকনিশিয়ান নাই, নার্স নাই, ওষুধ নাই, ওটিতে যন্ত্রপাতি নাই – এতসব নাইয়ের মধ্যেও ডাক্তাররা যা করেন তার সব দায়ভার নিমেষেই  ডাক্তারের উপরে চাপিয়ে দেয়া হয় ।

অনেক কারণেই রোগীর মৃত্যু হতে পারে – কোন অবস্থায় রোগী আনা হয়েছে, সরঞ্জামের অপ্রতুলতা, প্রয়োজনীয় ওষুধ ও অন্যান্য সাপোর্টিভ ব্যবস্থার দুষ্প্রাপ্যতা, ডাক্তার কিংবা নার্সের অবহেলা , রোগীর লোকদের অবহেলা,  –আরো অনেক । মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধও হতে পারে । সেজন্য রোগীর লোকজন তদন্তও দাবী করতে পারেন । তদন্তে ডাক্তার দোষী সাব্যস্ত হলে তার শাস্তিও আমরা চাই । কিন্তু ডাক্তার কি ব্যবস্থাপত্রে লিখে দেন নাকি যে- মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ খাবেন !!! সে দায় ডাক্তারের ওপর চাপানো কেন ?

একজন রোগী মারা গেলে ডাক্তারের খুব খারাপ লাগে । সারাদিন মাথায় চিন্তা থাকে- আচ্ছা রোগীটা কেন মারা গেল ? আমাদের কি আরো কিছু করার ছিল ? (গুটিকয়েক দুশ্চরিত্র ডাক্তার হয়তো এর বাইরে থাকতে পারেন যারা ডাক্তার হয়েছেন, মানুষ হননি)

খবরে প্রকাশ- ‘ঘটনার পর হাসপাতালের শিশু বিভাগের ডাক্তাররা গা ঢাকা দেন’ এছাড়া আর উপায় কিরে আবুল ! বিনা কারণে মাইর খাবার জন্যে বসে থাকবে নাকি ??

যাই হোক- ডাক্তার ভাই-বইনেরা , আপনাদের জন্যে এই অধমের কথা একটাই – ‘চাচা, আপন পরাণও বাঁচা’ ।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন