এক রৌদ্রোজ্বল বিকেলে...

এক রৌদ্রোজ্বল বিকেলে...
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে

বৃহস্পতিবার, ১৭ অক্টোবর, ২০১৩

নারী নেতৃত্ব হারাম ? - ০৮



বিংশ শতাব্দীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ ইসলামী চিন্তাবিদ, উপমহাদেশের ইসলামী পুনর্জাগরণের পথিকৃত সাইয়েদ আবুল আ’লা মওদূদী (রঃ) তাঁর তাফসীরে এবং অন্যান্য লেখায় নারীর রাষ্ট্রীয় নেতৃত্বের বিরোধিতা করেছেন । কিন্তু তিনি ‘হারাম’ বলেন নি । তিনি  ‘উচিৎ নয়’ , ‘সুযোগ নেই’ এসব শব্দ ব্যবহার করেছেন । এবং প্রকৃত প্রস্তাবে এই উপমহাদেশের দেওবন্দ প্রভাবিত কিছু অতিউতসাহী আলেম ছাড়া কেউই নারীর নেতৃত্ব বা বাইরে কাজ করাকে সরাসরি ‘হারাম’ ফতোয়া দেননি । (বিস্তারিত অন্য পোস্টে দেয়া হবে ইনশাআল্লাহ্‌ )


১৯৬২ সালে পাকিস্তানের একনায়ক আইয়ুব খান নতুন সংবিধানের মাধ্যমে 'মৌলিক গণতন্ত্র' (Basic Democracy) নামে দেশে এক আজব 'গণতান্ত্রিক'  পদ্ধতি চালু করে  ব্যবস্থার অধীনে ১৯৬৪ সালের সেপ্টেম্বর মাসে পাকিস্তানে নির্বাচন ডাকা হয়। জামায়াতসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলো সেই নির্বাচনে অংশ নেয় ।  আর সেজন্যে জামায়াতে ইসলামী, নেজামে ইসলাম, আওয়ামী লীগ, ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি এইসব দলের সমন্বয়ে সম্মিলিত বিরোধী দল- COP নামে একটি মোর্চা গঠন করে। এই মোর্চা থেকে মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর বোন ফাতেমা জিন্নাহকে প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী হিসাবে আইয়ুবের বিরুদ্ধে বিরোধী দলসমূহের একমাত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন দেয়া হয়। যদিও সেই নির্বাচন ছিল এক ধরণের ‘প্রহসনের নির্বাচন’ এবং তাতে ফাতিমা জিন্নাহ পরাজিত হয়েছিলেন ।


এখানে আমরা দেখতে পাচ্ছি – স্বাধীন পাকিস্তানের সেসময়ের ইসলামপন্থী রাজনৈতিক দল ‘নেজামে ইসলাম’ এবং ‘জামায়াতে ইসলামী’  ‘নারীর নেতৃত্ব’ মেনে নিয়েছিল ।  


এ সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে মাওলানা মওদুদী (রঃ) যে উত্তর দিয়েছিলেন তা ছিল -

১।
পত্র নং- ৮৭, ২১শে নভেম্বর, ’৬৪
শ্রদ্ধেয়,
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ।
আপনার চিঠি পেয়েছি। আল্লার যমীনে আল্লার আইন প্রতিষ্ঠা করাই আমাদের উদ্দেশ্য। আমাদের পথ থেকে বর্তমান একনায়কত্ব হটানো ছাড়া এ উদ্দেশ্য হাসিল হতে পারে না। এ সময়ে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ফাতেমা জিন্নাহকে সহায়তা করা ছাড়া একনায়কত্ব হটানোর আর অন্য কোনা বাস্তব পন্থা নেই। এ সময়ে যদি তৃতীয় একজন প্রার্থীকে প্রেসিডেন্টের জন্যে দাঁড় করানো হয় তবে এটা প্রকৃতপক্ষে আইয়ুব খানকে একনায়কত্বে প্রতিষ্ঠিত রাখারই প্রচেষ্টা হবে।

খাকসার আবুল আলা
প্রাপক কাযী নাসীর আহমদ সাহেব নারুওয়াল।

২ ।
পত্র নং- ৮৯
শ্রদ্ধেয়,
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ।
আপনার পত্র পেয়েছি। আমাদের মত যুলুম ও স্বৈরাচারী নীতির প্রচলন থাকা মস্তবড় গুনাহ। এর পরিবর্তনের জন্য একজন মহিলার নেতৃত্ব গ্রহণ করা ছাড়া আর কোন উপায় যদি না থাকে তবে তা হবে একটি বড় বিপদকে দূর করার জন্য ছোট বিপদের সাহায্য গ্রহণ করা, যার অনুমোদন শরীয়াতে আছে।
খাকসার আবুল আলা

প্রাপক, আব্দুল হাই সাহেব, সুলতানপুর, আজমগড়, ইন্ডিয়া।
(মওদুদীর পত্রাবলীঃ আধুনিক প্রকাশনী)

এখানেও লক্ষ্য করুণ- মাওলানা মওদূদী নারীর নেতৃত্বকে ‘হারাম’ নয়- ‘বিপদ’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন । আর সেটা এমন এক ধরণের বিপদ , ‘একনায়কত্ব’ যার চেয়ে বড় বিপদ । আপনি মুত্তাকী হিসেবে সন্দেহজনক বিষয়কে এড়িয়ে যেতে পারেন  (শুধুমাত্র ব্যক্তিগত ক্ষেত্রে) , বিপদকে এড়িয়ে চলতে পারেন (যদিও বিপদকে এড়িয়ে চলা সবসময় মুত্তাকীর পরিচয় নয় ) কিন্তু  যা কুরআন ও হাদীসে সরাসরি ‘হারাম’ বলা হয়নি, হয়তো নিরুৎসাহিত করা হয়েছে বা উল্লেখ করা হয়নি , তা ‘হারাম’ ঘোষণা করা যেনতেন কোন ব্যাপার নয় । আকারে ইঙ্গিতে কোন জয়ীফ হাদীস পেয়েই ইচ্ছেমত ‘হারাম’ বলা যায় না ।   কোনকিছুকে ‘হারাম’ ঘোষণা শুধু আল্লাহ ও তাঁর রাসুল (সাঃ) এরই এখতিয়ার । 

( প্রসঙ্গ নারী নেতৃত্বঃ ০৮ )

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন